প্রবাসে কোরবানির ঈদ...
লিখেছেন লিখেছেন মুহামমাদ সামি ২৪ সেপ্টেম্বর, ২০১৫, ০১:১৫:৫৪ দুপুর
‘লিখি বা লিখিতে পারি এটাই বড় কথা না, বড় কথা হল না লিখে আমার উপায় নেই। জীবনযাপনের এত চাপ, প্রতি মুহূর্তের ক্রোধ, ঘৃণা, হতাশা, ক্লান্তি, ভালোবাসা, সাধ, স্বপ্ন, বিশ্বাস এসব ধারণ করব কিভাবে? কাজেই লিখতে হবে আমাকে। এখানে অহংকার বা আত্মশ্লাগার কোন ব্যাপার নেই, গোটা ব্যাপারটা আমার কাছে অন্তহীন দায়।’
'এ দায়িত্ব কারো দ্বারা চাপিয়ে দেয়া হয়নি আমার উপর। এ আমার অন্তরের তাগিদ, কাজেই বানিয়ে বলা কেচ্ছার কোন স্থান এখানে নেই। সুন্দর বা কুৎসিত যাই আমার চেতনায় আঘাত করে তাই আমি লিখি।'
দেশ ছেড়ে তুরস্কে পাড়ি জমিয়েছি ৪ বছর হতে চলল। সময় কত দ্রুত কালের গহবরে হারিয়ে যাচ্ছে বুঝতেই পারিনা। চার বছরে প্রকৃতির নিয়ম অনুসারে ৮ বার ঈদ এল গেলো। প্রবাসের ৪ কোরবানির মধ্যে দ্বিতীয়টিই এখানে আলোচ্য। ঈদটা ছিল ২০১৩ সালের এক শীতের দিনে। আমরা তিন বন্ধু ( Monjur Elahe & Monir Ujjaman ) সকাল সকাল ঘুম থেকে উঠে মসজিদে গেলাম। এখানে ঈদের জামাত খুব ভোরে হয়ে থাকে। সকাল সাতটার পর পরই ঈদের জামাত হয়ে যায়। আমাদের দেশে কোরবানির দিন ঈদের জামাতের পর পরই সবখানে কোরবানির পশু জবাইয়ের আয়োজন শুরু হয়ে গেলেও এখানে আমরা তিনজন মিলে দুই-তিন ঘণ্টা ইস্তানবুলে আনাচে-কানাচে ঘুরাঘুরি করেও কোথাও কোন পশুর রক্তও দেখিনি। শেষে একটা 'বিনোদন পার্কে' গিয়ে ঈদের আনন্দ উপভোগ করার ব্যর্থ চেষ্টা করলাম। পরে গোস্তের দোকান থেকে কিছু গোস্ত কিনে বাসায় নিয়ে গেলাম। ঈদের দিন গোস্ত কিনতে হবে কখনও না ভাবলেও ঐটাই হয়েছিল। জানিনা কালকের ঈদটা কেমন হবে। পূর্বের পুনরাবৃত্তি হবে নাকি কোন পরিবর্তন। যদিও আমার সেই দুই বন্ধু এখন কাছে নেই। দুইজনই সংসার জীবনে গমন করেছে। সংসার জীবনে প্রবেশের দৌড়ে আমি ফেল মেরে দিলাম তাদের কাছে :P । একজন সস্ত্রীক ফ্রান্সে পাড়ি জমিয়েছে, ফুটফুটে একটা মেয়ের বাবা সে এখন, অন্যজন দেশে করবে ঈদ। এখন অবশ্য একা থাকতেই বেশি স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করি।
তুরস্কের বেশীরভাগ মানুষই নিজের কোরবানির ভাগটা সোমালিয়া, আরাকান, বাংলাদেশ, ফিলিস্তিন অথবা অন্য যেকোন দেশের গরীব, অসহায়, নির্যাতিত মুসলমানদের জন্য পাঠিয়ে দেন। ত্রাণসংস্থাগুলো এসব কোরবানির ভাগ নির্দিষ্ট মনজিলে পৌঁছে দিতে নিরলস কাজ করে যায়। এমনি একটি ত্রাণসংস্থার সাথে সাহায্য নিয়ে একবার দেশে গিয়েছিলাম কক্সবাজার অঞ্চলস্থ আরাকান রোহিঙ্গা মুসলমানদের মুখে ঈদের দিন এক টুকরো গোস্ত তুলে দেয়ার তাগিদে। যদিও সেবারের অভিজ্ঞতাটা মোটেও সুখকর ছিলনা। সকাল সন্ধ্যা হোটেলে এসে বাংলাদেশের গোয়েন্দা সংস্থার লোকদের জ্বালাতনে একেবারে অসহ্য হয়ে গিয়েছিলাম। শেষে আমার সাথের ৫ তুরস্কের নাগরিককে গ্রেফতার করে ঢাকা বিমান বন্দরে পাঠিয়ে দিয়েছিলো বাংলাদেশের পুলিশ। গ্রেফতারকৃত ৫ জনের একজন ক্ষমতাসীন একেপার্টির এমপিও ছিলেন।
আর যারা দেশের ভিতরে কোরবানি দেন তাঁরা কোরবানির বাজার থেকে পশু কিনে কোন কসাইয়ের কাছে রেখে আসেন। কোরবানির দিন পশু জবেহের নির্দিষ্ট স্থানে জবেহ করে গোস্ত নিয়ে আসেন নিজের বাড়িতে। পরিবেশকে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখার তাগিদে এ ব্যবস্থা রাখা হলেও নিজের হাতে কোরবানি দেয়ার মজা থেকে তাঁদেরকে বঞ্চিতই মনে হয়...।।
Eid Mubarak,
ঈদ মোবারক সবাইকে।।
উল্লেখ্য, বাকি দুই ঈদ দেশে দুস্থ মানুষদের সাথে কাটানোর সৌভাগ্য হয়েছিল।। ব্যস্ততার কারণে অবসর না মেলাতে এবার যাওয়া হলনা।।
বিষয়: বিবিধ
১১৯৮ বার পঠিত, ৬ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন