ফিরে দেখা প্রবাসের রমজানগুলো
লিখেছেন লিখেছেন মুহামমাদ সামি ২৮ জুন, ২০১৪, ০৫:২১:০৫ সকাল
তারাবীহের নামাজ পড়ে আসলাম মাত্র। বছর ঘুরে আবার আসল রহমাত, বরকত ও মাগফেরাতের মাস মাহে রমজান। প্রথমেই সেই মহান রবের কাছে শুকরিয়ার মস্তক অবনত করি, যিনি আমাকে আরও একটি রমজানের রহমতে উপনীত হওয়ার তাওফিক দান করেন।
দেশের বাইরে তৃতীয় রমজান মাস এটি। ২০১২ সালের রমজানটা আসলে তুরস্কের রাজধানী আঙ্কার করার কথা ছিলনা। কথা ছিল তৃতীয় বৃহত্তম শহর ইজমিরে করার। কিন্তু প্রিয় ভাই SAYO(http://www.sayoturkey.org) সেক্রেটারি জেনারেলেরনিমন্ত্রণ অগ্রায্য করার ক্ষমতা আমার ছিলনা। তাই রমজানটি উনার সাথেই কাটাই। রমজানটা বিভিন্ন কারণে স্মরণীয় হয়ে থাকবে। প্রথমত কিছু নতুন মানুষের সাথে পরিচয় হয়েছিলাম ঐ রমজান মাসে। তুরস্কস্থ প্রিয় মানুষদের লিস্ট করতে গেলে অনায়েশেই যাদের নাম প্রথম সারিতে চলে আসবে। যাই হোক রমজান মাস শুরু হল।
বোরহান ভাই খুব ভাল রাঁধুনি এ কথাটা আমি দ্বিধাহীনভাবে বলতে পারি। শুধু আমি না তুরস্কস্থ বাঙ্গালী মহলেও উনার খুব সুনাম। ভাই কিন্তু রান্না করার সময় রান্না ঘরে কেউ থাকলে বিরক্ত হতেন তাই রান্না করার সময় কেউ যেতেননা। অবশ্য রমজান মাসে আমি আর বোরহান ভাই ছাড়াও অন্য এক ফিলিস্তিনি ভাই ছিল একেই বাসায়। বাসার অন্যান্যরা ছুটিতে দেশের বাড়িতে ছিল। ফিলিস্তিনিটা থেকেও না থাকার মত। কালেভদ্রে দেখা মিলত তার। ইফতারির সময় প্রায় সময়ই বিভিন্ন জায়গায় দাওয়াত থাকত। সাদেত পার্টির কেন্দ্রীয় কার্যালয় আঙ্কারয় হওয়ায় কেন্দ্রীয় সব নেতা আঙ্কারাতে বসবাস করতেন। তাঁরা একেকদিন একেজন দাওয়াত করতেন। সবচেয়ে ভাল লাগত নিজেরা এসেই গাড়ি করে নিয়ে যেতেন আবার দিয়েও যেতেন। যদিও এটুকু না করলেও আমরা কিছু মনে করতাম না যাই হউক এসব নেতাদের উদারয্যের কথা বলে শেষ করা যাবেনা। একদিন যোগ দিলাম সাদেত পার্টি আয়োজিত মুসলিম দেশ সমুহের রাষ্ট্রদূতদের সম্মানে আয়োজিত ইফতার প্রোগ্রামে SAYO'র প্রতিনিধি হিসেবে।
যাইহোক মেইন কথায় ফিরে আসি, আগেই বলেছি বোরহান ভাইয়ের রান্নার কথা। সেহরিতে সবকিছু রেডি করার পর আমাকে ডাকতেন। আমার অবশ্য এভাবে বসে বসে খেতে লজ্জা লাগত। যদিও বলিনি বা বলতে পারিনি। উনি আমাকে সবসময় ছোট ভাইয়ের মত স্নেহ করতেন তাই কোন কাজই করতে দিতেননা। তবে খুব সম্ভবত ১৫ তম রমজানের দিন উনি হঠাৎ করে অসুস্থ হয়ে গেলেন। এমন অসুস্থ যে বিছানা থেকেও উঠতে পারতেননা। তখন রান্না করার দায়িত্ব রীতিমত আমার উপর বর্তায়, আসলে আমি নিজে থেকেই চেয়েছিলাম উনাকে কিছু রান্না করে খাওয়াই। আজীবন মায়ের রান্না খাওয়া এবং হোস্টেলে রেডিমেট খাওয়া ছেলে আমি, ( অনেক সময় মেসে থাকলেও বুয়া রান্না করে দিত) কোনদিন রান্না শিখতে হবে বা করতে হবে তা ভাবিনি। তবে এখন সে দায়িত্ব আমার উপর সুতরাং কিছু একটা করতেই হবে। রান্না শুরু করলাম আল্লাহর নামে, ভাত রান্না করব, কোথায় জানি শুনেছিলাম ভাত রান্না হতে দশ মিনিট লাগে। আমি চুলায় রান্না চড়াই দিয়ে দশ মিনিট পর ফোনে এলারম দিতাম :D । প্রথম দিনেই ঘটল বিপত্তিটা এলারম বেজে উঠল আমি রান্নাঘরে গিয়ে দেখি পুড়া পুড়া গন্ধ। প্রথমে বুঝতে পারিনি কি পুড়ল। পরে যখন দেখলাম পাত্রসহ ভাত কয়লার রঙ ধারণ করেছে, তখন বুঝতে বাকী রইলনা গন্ধটা এখান থেকেই। কি করব বুঝতে পারছিলাম না। তবে আমি কিন্তু এত সহযে ছেড়ে দেয়ার পাত্র না, বেশ কয়েকটা পাত্র পুড়েছিলাম। শেষে পাত্র পুড়ানো ছাড়া রান্না করেছিলাম যেটা মোটামটি খাওয়ার মত ছিল, তবে নিজেরই ভাল লাগত না তাই রান্না করাই ছেড়ে দিলাম। সবাইকে দিয়ে নাকি সব হয়না :P আমাকে দিয়েও রান্না হয়নি। শেষ পর্যন্ত কোথাও দাওয়াত না থাকলে তরমুজই একমাত্র ভরসা। আগেই বলে রাখি এখানে বাংলাদেশের মত ইফতারে এত বাহারি রকমের খাবারের আয়োজন হয়না। বাংলাদেশ ইফতারির ট্র্যাডিশনের দিক দিয়ে সমৃদ্ধ একটা দেশ। তুরস্কবাসী ইফতারে নরমাল রাতের খাবারই খায় সাথে কয়েকটা আইটেম হয়ত বেশী থাকে এই। আর সেহরিতে সকালের যে নাস্তাটা করত ঐটাই। (জয়তুন, রুটি, পনির, চকলেট...।) যেটা বলতেছিলাম তরমুজই একমাত্র ভরসা আমাদের এমন অনেকদিন গেছে তরমুজ দিয়েই ইফতার, তরমুজ দিয়েই সেহরি করেছি। অন্য কিছু ছিলনা তা না, ফ্রিজ ভর্তি জিনিস থাকলে ঐ যে রান্না, যেটা আমারে দিয়ে হবেনা, আর বোরহান ভাই বেচারাতো অসুস্থ। অসুস্থ হওয়াতে তেমন কিছু খেতেও চাইতেননা। এক কথায় অসাধরণ, এবং স্মরণীয় হয়ে থাকবে হৃদয়ের মনিকোঠায় ২০১২ সালের রমজান মাসটি।
--চলব
ছবিঃ রমজানে ইস্তানবুলের মসজিদের ছবি।।
বিষয়: বিবিধ
১১০৩ বার পঠিত, ২ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন