তুরস্কের ঐতিহাসিক প্রেসিডেন্ট নির্বাচনঃ দৌড়ে এগিয়ে বর্তমান প্রধানমন্ত্রী
লিখেছেন লিখেছেন মুহামমাদ সামি ১৬ জুন, ২০১৪, ০২:১৬:২১ রাত
তুরস্কের ইতিহাসে প্রথম প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হবেন জনগণের ভোটে। এ বছরের ১০ আগস্ট অনুষ্ঠিত হবে ঐতিহাসিক এ নির্বাচনটি। সকলের আগ্রহের কেন্দ্রবিন্দু এখন ১০ আগস্টের প্রেসিডেন্সিয়াল নির্বাচনকে ঘিরে। কোন দল তাদের প্রার্থী নির্ধারণ না করলেও বর্তমান প্রধানমন্ত্রী তাইয়েফ এরদোগান প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে প্রার্থী হচ্ছেন সেটা সবখানে বলাবলি হচ্ছে। এবং এ নিয়ে জরিপেরও শেষ নেই।
গত ১২ জুন
বৃহস্পতিবার তুরস্কের উপপ্রধানমন্ত্রী বুলেন্ট আরিস্ন রাজধানী আঙ্কারাস্থ সকল টিভি চ্যানেলের প্রতিনিধিদের সাথে মত বিনিমিয় সভা করেন। অনেক কথার মাঝে উঠে আসে আসন্ন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনও। তাদের দল একেপার্টির প্রার্থী কে হবেন এমন প্রশ্নের জবাবে বুলেন্ট আরিস্ন বলেন, ‘’আমাদের প্রার্থী নির্ধারণ করা আছে, ঐ প্রার্থীই প্রতিদ্বন্দ্বীতা করবেন সেটা ৯০% নিশ্চিত। তবে আমরা প্রার্থীর নাম প্রকাশ করব ১ জুলাই।‘’
একেপার্টির মত অন্য কোন পার্টিও তাদের প্রার্থী কে হবে সে ব্যাপারে দুদুল্যমান অবস্থায় আছে। অন্যান্য পার্টিরা চাচ্ছেন কোয়ালিশনের মাধ্যমে একটা প্রার্থী নির্ধারণ করতে। কারণ, তাদের বিপরিতে হেভি ওয়েট প্রার্থী থাকার সম্ভাবনা থাকায় তারা একা প্রার্থী দেয়ার সাহস কেউ করতেছেন না। এ ব্যাপারে সর্ববৃহৎ বিরোধীদল কামাল আতাতুরকের দল সিএইচপি’র চেয়ারম্যান কামাল কিলিসদারঅগলু অন্যান্য পার্টিদের কেন্দ্রীয়কারযালয় জিয়ারাত করে প্রার্থী নির্ধারণের ব্যাপারে আলাপ-আলোচনা চালিয়ে যাচ্চেন। সবার সাথে যোগাযোগ করার পর তাদের মতামত জানাবেন বলে জানা যায়।
এদিকে বর্তমান প্রধানমন্ত্রী এরদোগানে প্রার্থী হওয়া মোটামটি নিশ্চিত যতই উনার পার্টি না প্রকাশ নাই করেন না কেন। এ নিয়ে চলছে পক্ষে-বিপক্ষে ব্যাপক আলোচনা-সমালোচনা। অনেকে তাঁর প্রার্থী হওয়াকে সমীচীন মনে করছেন না। কিন্তু তাঁর ইদানিংকার কথা বার্তায় নির্বাচনে প্রার্থী হওয়ার আভাস পাওয়া যায়।
২০১২ সালে অনুষ্ঠিত একেপার্টি কংগ্রেসে রজব তাইয়েফ এরদোগান বলেছিলেন, ‘’আমি শেষবারের মত পার্টির চেয়ারম্যান পদে নির্বাচনে প্রার্থী হলাম আপনাদের দোয়ায়।‘’ সুতরাং প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে প্রার্থী হওয়া ছাড়া তাঁর আর কোন পথ খোলা নেই, অন্যথায় রাজনীতিক অঙ্গন থেকে অবসর নেয়া ছাড়া উপায় নেই। তবে অনেকে শংকায় আছেন তিনি প্রেসিডেন্ট নির্বাচন করলে পার্টির কি অবস্থা হবে সেটা ভেবে !! এখন একে পার্টি বলা যায় পুরোটাই এরদোগান নির্ভর। এরদোগান আছেন বলে অন্যান্য নেতারা সবাই নির্ভার। কিন্তু উনি চলে যাওয়ার পর পার্টির হাল ধরবেন কে সে ব্যাপারে সবাই একটা অনিশ্চয়তার মধ্যে সময় কাটাচ্ছেন। কারণ, পার্টি প্রধান থেকে ইস্তফা দিয়েই তবে প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে প্রার্থী হতে হবে। আর যদি ইস্তফা না দেন তবে প্রার্থী হতে পারবেন না। প্রার্থী না হয়ে যদি পার্টি প্রধান হিসেবে আবার নির্বাচন করেন তবে সেটা এরদোগানের মত হেভি ওয়েট পারসোনালিটির জন্য ভাল হবেনা। কারণ গত পার্টি কংগ্রেসে তিনি শেষ বারের মত প্রার্থী হচ্ছেন সেটার ঘোষণা দিলেন। সব কিছুর জবাব পাওয়া যাবে ১ জুলাই।
সকল পার্টির মধ্যে যখন প্রার্থী কে হবেন এ সেটা নিয়ে দুদুল্যমান অবস্থা বিরাজমান ঠিক সে সময়ই দেশের সেরা জরিপ প্রতিষ্ঠানগুলো প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে কে নির্বাচিত হবেন সেটা নিয়ে জরিপ চালাতে ব্যস্থ। বেশ কটি জরিপের ফলাফলে এরদোগানকে প্রার্থী দেখানো হয়েছে এবং তিনি এগিয়ে আছেন সবাইকে ছাড়িয়ে।
এদের মধ্যে দেশের অন্যতম সেরা জরিপ প্রতিষ্ঠান ‘সোনার রিসার্চ ও মার্কেটিং কোম্পানি’ প্রেসিডেন্ট নির্বাচনকে কেন্দ্র করে তাদের জরিপ শেষে ফলাফল প্রকাশ করেন। তারা ২৬ জেলা এবং ৩০ টি গ্রামে ২ হাজার ৮৫০ জনের উপর জরিপ চালান।
জরিপে অংশগ্রহণকারীদেরকে জিজ্ঞেস করা হয় পার্টির প্রার্থী নির্ধারিত না হলেও কোন প্রার্থীকে আপনারা ভোট দিবেন। সেখানে ৩৪.২% একেপার্টি ১৩.৫%সিএইচপি, শতকরা ১০.২ দ্বিতীয় বৃহত্তম বিরোধী দল এমএইচপি এবং শতকরা ১.৪% অন্যান্য দলকে ভোট দেয়ার কথা বলে। জরিপে অংশ গ্রহণকারীদের ১৮.৮% বিরোধীদলগুলোর সবাই একজন প্রার্থীকে মনোনীত করলে তাকে ভোট দেয়ার কথা বলার সময় শতকরা ১৫.১% প্রার্থী কে হবে সেটা দেখে ভোট দেয়ার কথা বলেন। এবং শতকরা ৬.৮ এ ব্যাপারে তাদের মতামত দিতে সক্ষম হয়নি।
জরিপে অংশ নেয়া শতকরা ৬৩.৪ বিরোধীদল গুলোর সবার একজন প্রার্থী হলে ভাল হয় বলে উল্লেখ করলেও শতকরা ২৯.২ সকল পার্টির পৃথক প্রার্থী হলে ভাল হয় বলে উল্লেখ করেন। এবং শতকরা ৭.৪ কোন মতামত নাই সেটা বলেন।
অন্যদিকে প্রধান বিরোধী দলের নেতা ডেনিজ বাইকাল সব বিরোধীদলের প্রার্থী হলে এবং অপরদিকে রজব তাইয়েফ এরদোগান প্রার্থী হলে কাকে ভোট দিবে এ প্রশ্নের উত্তরে তাইয়েফ এরদোগানকে শতকরা ৪৭ সাপোর্ট ডেনিজ বাইকাল শতকরা ৪৬.২ সাপোর্ট করেন।
প্রধান বিরোধী দলের আরেক শীর্ষনেতা ইলহান কেসিজি সকল বিরোধী দল থেকে প্রার্থী হলে কাকে ভোট দিবে এ প্রশ্নের জবাবে শতকরা ৪৭.৩ এরদোগানকে এবং শতকরা ৪৫.৬ ইলহান কেসিজিকে ভোট দিবেন বলে জানান।
এটা হল জরিপের ফলাফল। কোনদল থেকে কে প্রার্থী কনফার্ম হবে সেটা জানার জন্য আমাদেরকে ১ জুলাই এবং কে প্রেসিডেন্ট হবেন সেটা জানার জন্য আমাদেরকে ১০আগস্ট পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হবে।
বিষয়: বিবিধ
১৩৮৬ বার পঠিত, ১০ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
ভালো লাগলো। অনেক অনেক ধন্যবাদ।
কিছু জানতে পারলাম
লিখে যান আপনার
মতো
||
মন্তব্য করতে লগইন করুন