তুর্কী রাজনীতির না বলা কথা..... পর্ব-৩
লিখেছেন লিখেছেন মুহামমাদ সামি ১০ জুন, ২০১৪, ০৬:২২:৫৩ সকাল
২০০৫ সালে এফবিআই এর সহযোগী সংগঠনগুলোর তালিকায় গুলেন ইন্সটিটিউট তথা গুলেন মুভমেন্টের নাম থাকলেও এতদিন পর্যন্ত এরদোগান ও তার সরকার নিশ্চুপ ভূমিকা পালন করেছে। এর পিছনে কাজ করেছে গুলেন মুভমেন্টের বিশাল ভোট ব্যাংক তাতে কোন সন্দেহ নেই, কারণ তখন একেপার্টির অবস্থা আজকের মত ছিলনা। যখন এরদোগানের হাত একটু শক্তিশালী হল দেশের জনগণ যখন তার উপর আস্থা রাখা শুরু করেছে তখন তিনি গুলেন মুভমেন্টকে শায়েস্থা করার কাজে হাত দেন। প্রথম উদ্যোগের একটি ছিল গুলেন মালিকানাধীন কোচিং সেন্টার বন্ধ করে দেয়া। তবে এরদোগান এ উদ্যোগটা নিতে অনেক দেরী করে ফেলেছিলেন। তাদেরকে প্রশ্রয় দিতে দিতে এমন অবস্থা করে ফেলেছিলেন প্রশাসনের প্রতিটি স্থরে গুলেনের লোকে ভরপুর হয়ে গিয়েছিল। যেন তুরস্কে অন্য মতের লোকের বড়ই অভাব। এরদোগান যদি একটা ব্যালন্স করে কাজে নিয়োগ দিতেন এ প্রবলেমটা অনেকাংশে কাটিয়ে উঠতে পারতেন বা হতইনা এমন প্রবলেম।
যাই হোক এরদোগান নিজ রাজনৈতিক যোগ্যতার বলে এ সমস্যা থেকে কাটিয়ে উঠতে পেরেছেন। তিনি জনগণকে বুঝাতে সক্ষম হয়েছেন যে তার উপর জুলুম করছে একটি পক্ষ। এবং তিনি দুর্নীতি বিরোধী ঐ অপারেশনকে দেশ বিরুধি ষড়যন্ত্র হিসেবে বুঝাতে সক্ষম হয়েছিলেন। ৮১ টা জেলার প্রায় সব জেলাতেই নির্বাচনের পূর্বে নিজেই ভাষণ দিয়েছেন। ভাষণে তিনি বলেছেন, ''আমি তাদেরকে (গুলেন মুভমেন্ট) বিশ্বাস করে কাছে টেনে নিয়েছিলাম অথচ তারা আমার সাথে কতবড় বেঈমানিটা করল।'' এটা একটা রাজনৈতিক ভাষণ ছাড়া আর কিছু নয়। এরদোগানের কাছে গুলেন মুভমেন্টের প্রধান ফেতুল্লাহ গুলেনের ব্যাপারে সব কিছু ক্লিয়ার তাতে সন্দেহের অবকাশ নেই। গুলেন ২৮ ফেব্রুয়ারি ১৯৯৭ সালে নাজমুদ্দিন এরবাকানের ইসলামি সরকারের বিরুদ্ধে করা সেনা বিপ্লবকে সমর্থন দিয়েছিলেন তা এরদোগানের চেয়ে ভাল খুব কম মানুষেই জানে। কারণ এরদোগান নিজেই সেনা বিপ্লবের শিকার হয়ে জেলে গিয়েছিলেন নাজমুদ্দিন এরবাকানের পার্টির একজন উচ্চপদস্থ নেতা হিসেবে।
এ সেনা বিপ্লবের পর পরই ১৯৯৯ সালে ফেতুল্লাহ গুলেন আমেরিকার ফেন্সিলভানিয়ায় স্বেচ্ছা নির্বাসনে চলে যান। এবং ঐখানে বসেই সকল কলকব্জা নাড়ছেন। যে গুলেন বলেছিল, ''আমরা কোন রাজনৈতিক দল বা গ্রুপ না, আমরা কোনদিন রাজনীতিতে জড়াব না, আল্লাহর নবী জিব্রাইল আঃ নিজে এসেও যদি কোন দল গঠন করেন তবুও না।'' (নাউজুবিল্লাহ)। সে গুলেন এখন পর্দার আড়াল থেকে রাজনীতির সব কলকব্জা নাড়ছেন বিদেশী শক্তির সাহায্যে। এই ভদ্রলোকের এরকম আরও অনেক অভদ্র এবং ইসলামি মূল্যবোধে আঘাত হানে এমন অনেক বক্তব্য রয়েছেন। একটি ছোট্ট ঘটনার বিবরণ দিলে সহজেই অনুমান করতে পারবেন, তুরস্কে প্রতিবছর ''তারকিশ অলিম্পিয়াড'' নামের একটা অনুষ্ঠান হয়।যেখানে বিশ্বের আনাচে-কানাচে স্থাপিত গুলেন মালিকানাধীন তারকিশ ইন্টারন্যাশনাল হোপ স্কুল থেকে ছেলে মেয়ে জড়ো করে নাচ গানের আসর করা হয়। উল্লেখ্য যে, বিশ্বের ১৭০এরও অধিক দেশে তাদের স্কুল রয়েছে। যেখানে ষোড়শী মেয়েরা নাচে গায়। দর্শক মাহরেম কেউ না। নেই কোন পর্দার বালাই। গত বছরের তারকিশ অলিম্পিয়াড সম্পর্কে ফেতুল্লাহ গুলেন বলেন, ''আমি এ অনুষ্ঠানে মুহাম্মাদ সাঃ কে দেখেছি'' নাউজুবিল্লাহ। এ নাচ-গানের আসরে নাকি যে নবী সঃ তবলার সাউন্ড শোনার পর কানে হাত দিয়েছিলেন সাউন্ড শুনা না যাওয়া পর্যন্ত হাত রেখেছিলেন এমন নবীকে নাকি সে ঐ অনুষ্ঠানে দেখেছে!। ভণ্ডামির একটা সীমা থাকা উচিৎ। তারকিশ অলিম্পিয়াড সম্পর্কে আমি অন্ধকারে ছিলাম, জানা ছিলনা কি ঘটে সেখানে, গতবছর এক বন্ধুর দাওয়াত উপেক্ষা করতে না পেরে গিয়েছিলাম, তাদের অবস্থা দেখে আমি হতবাক। মেয়েরা যেন বিয়ের পাত্রি সেজে এসেছে। নাচছে, গাইছে। আমরা যে কয়জন গেছিলাম ৩০ মিনিট পর মনঃকষ্ট নিয়ে ফিরে আসি সবাই। আমার বিশ্বাস আপনিও বেশিক্ষন থাকতে পারবেননা।
যাইহোক, তাদের সাথে জোটবদ্ধ এবং স্বার্থের সম্পর্ক থাকায় এরদোগান টু শব্দ করেনি এতদিন। তবে আমার কাছে মনে হয় এরদোগানের আগে থেকে প্ল্যান ছিল গুলেন মুভমেন্টকে শিক্ষা দেয়ার এবং তিনি একটা পরিক্ষা করতে চাইছিলেন তাদের ভোট ব্যাংক কত বড় তা দেখার। তাদের বিরুদ্ধে কোন পদক্ষেপ নিলে সেটা নির্বাচনে কতটুকু প্রভাব পড়ে তা দেখার জন্য স্থানীয় নির্বাচনের কিছুদিন আগেই কোচিং সেন্টার বন্ধ করার পরিকল্পনাটি করেছিলেন। এখানে একটা কথা বলা উচিৎ বলে মনে করছি তা হল, গুলেন মুভমেন্ট নিজেদের স্বার্থের জন্য সবকিছু করতে পারে। কিছু উদাহরণ দিলেই দিবালোকের মত স্পষ্ট হয়ে যাবে। সারা বিশ্বের মুসলমানরা যখন নির্যাতন নিপীড়নের শিকার তখন সবাই যেকোন ভাবে মুসলমানদের পক্ষে সাপোর্ট দিয়ে যাচ্ছিলেন। কিন্তু তাদের মুভমেন্টের পক্ষ থেকে এ ব্যাপারে কোন উক্তি বা বক্তব্য বা কোন সভা সমাবেশ লক্ষ্য করা যায়নি। বরং তারা আরাকানে নিপীড়িত মুসলমানদের পক্ষে না বলে বৌদ্ধ ধর্মকে হক দ্বীন বলা এবং ফিলিস্থিনের আল কুদস আন্দোলনের যুদ্ধাদেরকে তাদের টিভি চ্যানেলে সন্ত্রাসী উপাধি দেয়াসহ আরও অনেক কর্মকাণ্ড চালিয়ে যাচ্ছেন। সর্বশেষ শহীদ মোল্লা ভাইয়ের শাহাদাতে আগ মুহূর্তে তুর্কীর টুইটটারে ঝড় উঠে। ওয়ার্ল্ড ট্রেন্ডে এক দুইয়ে উঠা নামা করছিল ''স্টপ একজিকিউশন ইন বাংলাদেশ''এর তারকিশ ভার্শন। যেটা করেছিল তুরস্কের ইসলামিক দল সাদেত পার্টির সাইবার দলরা। সেখানে গুলেন মুভমেন্টের পক্ষ থেকে কোন টুইট করা হয়নি। টুইটার নিউজ খুব সহজে সারাবিশ্বে ছড়িয়ে দেয়ার দ্রুত এক মাধ্যম হওয়াতে একটা টুইটও খুব ইম্পরট্যান্ট অনেক সময়। তবে যখন কোচিং সেন্টার বন্ধ করে দেয়ার পরিকপ্লনা করা হয় তখনি তারা ৪ দিনের মাথায় কোচিং সেন্টার বন্ধ না করার জন্য টুইট করে ৪ মিলিয়ন তথা চল্লিশলক্ষ। এখানে শেষ নয়, গুলেন মুভমেন্টের মহামান্য নেতা ফেতুল্লাহ গুলেনের একটি উক্তি তখন সোশ্যাল মিডিয়াতে ঝড়তোলে, তিনি বলেন, ''রাসুল সাঃ আমাকে স্বপ্নে এসে বলেছেন, (কোচিং সেন্টার সম্পর্কিত) প্রতিটা টুইটকে যেন রিটুইট করে ডাবল করা হয়।'' নাউজুবিল্লাহ।
-- চলবে
বিষয়: বিবিধ
১১৮৫ বার পঠিত, ১০ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন