তুর্কী রাজনীতির না বলা কথা...পর্ব-২
লিখেছেন লিখেছেন মুহামমাদ সামি ০৬ জুন, ২০১৪, ১১:৪৭:০৬ রাত
এবার ফিরে যাই ১৯৯৯ সালে। তুরস্কের মেইন স্ট্রিম ইসলামী পার্টির নতুন নাম ফাযিলাত পার্টি। ফাযিলাত পার্টির কংগ্রেস চলতেছে। পার্টি প্রধান নির্বাচিত করা হবে এ কংগ্রেসে। দুইজন প্রার্থী রয়েছেন একজন হলেন একটু বয়স্কদের দলে আরেকজন হলেন যুবক।
বয়স্ক প্রার্থী হলেন তুরস্কের ইসলামী আন্দোলনের অন্যতম সিপাহসালার নাজমুদ্দিন এরবাকানের সবসময়ের সঙ্গী এবং ইসলামি আন্দোলনে যে কয়জন নেতা সামনে থেকে নেতৃত্ব দিয়েছেন তাদেরই একজন রেজাই কুতান এবং যুবক প্রার্থী ছিলেন তুরস্কের বর্তমান প্রেসিডেন্ট আব্দুল্লাহ গুল। আব্দুল্লাহ গুলের পক্ষ থেকে কংগ্রেসে আগত অতিথিদের মাঝে একটা লিপলেট বিতরণ করা হয়। লিপলেটটির একটা কপি আমি অনেক কস্টে সংগ্রহ করি। লিপলেটটার সারাংশ ছিল এরকম '' দুঃখজনক হলেও সত্য ইসলামিক সভ্যতা পশ্চিমা সভ্যতার কাছে হার মেনেছে, তাই ইউরোপীয় ইউনিয়ননে প্রবেশ করাই হবে আমাদের মেইন টার্গেট।'' অথচ এ আব্দুল্লাহ গুল ০৮-০৩-১৯৯৫ সালে সংসদে বলেছিলেন, ''আমরা কোনদিন ইউরোপীয় ইউনিয়নে প্রবেশ করতেই পারিনা, কারণ ইউরোপীয় ইউনিয়ন হল খ্রিস্টানদের ঐক্যসংঘের নাম।''
যাই হোক আব্দুল্লাহ গুল পরাজিত হয় এবং ঠিক একবছর পর ফাযিলাত পার্টিকে নিষিদ্ধ করা হয়। এ নিয়ে পঞ্চমবার নিষিদ্ধ করা হল নাজমুদ্দিন এরবাকানের পার্টিকে। যার পার্টি তুরস্কে ইসলামের প্রতিনিধিত্ব করে আসছিল ১৯৬৯ থেকে। এরপরপই আবার গঠন হয় সাদেত পার্টি। যেটা এখনো মেইন স্টিম ইসলামী দল হিসেবে কর্মকাণ্ড চালিয়ে যাচ্ছেন। সাদেত পার্টি গঠিত হওয়ার পর দেখা যায় আব্দুল্লাহ গুলসহ বেশ কিছু তরুণ এ পার্টিতে যোগ না দিয়ে নতুন অন্য একটা পার্টি গঠন করেন। যার নাম দেয়া হয় একে পার্টি। একেপার্টি গঠনের এক বছরের মাথায় ক্ষমতায় আসে আমেরিকা আর পশ্চিমাদের পছন্দের ‘’মডারেট ইসলাম’’কে হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করে। ক্ষমতায় আসতে সর্বধরণের সাহায্য দেয় আমেরিকা। এবং CIA আর FBI এর সাথে গভীর সম্পর্ক রাখা ‘গুলেন মুভমেন্টে’র সাথে একতার বন্ধনে আবদ্ধ হন। গুলেন মুভমেন্টের সাথে ‘এফবিআই’ সম্পর্কের কথা সেই ৯০দশক থেকে ওপেন সিক্রেট। যে গুলেন মুভমেন্টের প্রধান ফেতুল্লাহ গুলেন ইসলামিক স্কলার হিসেবে পরিচিত হলেও কর্মকাণ্ড তার কোন চাপতো নেই বরং যারা ইসলামি আন্দোলনের কাজে অগ্রগামী ভুমিকা পালন করে আসছেন তাদের বিরুদ্ধে ব্লেইমে করে আসছেন আজীবন। তার বিভিন্ন সময়ের টিভিতে দেয়া সাক্ষাৎকার থেকে আমরা তার প্রমাণ পাই। তার সম্পর্কে আরও আগে বর্ণনা করেছিলাম তাই এখানে আর দীর্ঘায়িত না করে মূল কথায় ফিরে আসি, রজব তায়েফ এরদোগানের ক্ষমতায় আরোহণের জন্য একটি বড় গোষ্ঠীর ভোটের প্রয়োজন ছিল। কারণ তুর্কীবাসির বিশাল একটা অংশের উপর গুলেনের বিশাল প্রভাব রয়েছে যারা গুলেন যেটা বলেন সেটাকে মুখ-চোখ বুঝে সত্য বলে শিকার করে নেন। তাই গুলেন মুভমেন্টের সাথে গভীর একটা সম্পর্ক গড়ে তুলেন এবং পার্টি গঠনের একবছরের মাথায় ক্ষমতায় আসেন। ক্ষমতায় আসার পর ফেতুল্লাহ গুলেন যেন অদৃশ্য প্রধানমন্ত্রী বনে গেলেন। তিনি আমেরিকার পেনসিলভানিয়াতে বসে যাকে যে পোস্টে দিতে বলেন তাকে সে পোস্টে দেয়া হয় এক পর্যায়ে দেখা যায় পুলিশ-সেনাবাহিনি থেকে শুরু অফিস-আদালত পর্যন্ত সব জায়গায় গুলেন মুভমেন্টের লোকের ব্যাপক এবং ভয়ঙ্কর উপস্থিতি। তুর্কীতে অনেক জামা'ত বা গোষ্ঠী রয়েছেন যারা ইসলামের খেদমত করে যাচ্ছেন। কিন্তু প্রশাসনের কোন স্থানে তাদেরকে যোগ্য হওয়া স্বত্বেও স্থান দেয়া হয়নি। গুলেন মুভমেন্টের লোক হলেই পদ দেয়া হয়েছে। যা জেনেশুনে পায়ে কুড়াল মারারই শামিল বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা। যার ফলাফল হিসেবে গত বছরের ১৭ ডিসেম্বর ট্রাজেডির উৎপত্তি। দেশজুড়ে রয়েছে গুলেন মুভমেন্টের হাজার হাজার কোচিং সেন্টার। সেসব কোচিং সেন্টারের গোপনে গুলেন মুভমেন্ট সম্পর্কে ব্রেইন ওয়াশ করা হয়। সেটা ছিল ওপেন সিক্রেট একটা ব্যাপার। এবং কোচিং সেন্টার গুলোর ফিও ছিল গরীবদের ধরাছোঁয়ার বাইরে। এরদোগান তৃতীয়বারের মত প্রধানমন্ত্রি নির্বাচিত হওয়ার পর থেকে ক্রমান্বয়ে মুসলিম বিশ্বের সাথে সম্পর্ক বৃদ্ধির কাজটা করে যাচ্ছিলেন এবং গত বছর সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন সব ধরণের কোচিং সেন্টার বন্ধ করে দিয়ে তদস্থলে ফ্রি কোর্সের ব্যবস্থা করা হবে। এরকম একটা সিদ্ধান্ত গুলেন মুভমেন্ট সহজভাবে নিতে পারেনি। তারা এর পর থেকে এরদোগানের বিরুদ্ধে উঠে পড়ে লাগে। এর মধ্যে এরদোগানের বিরুদ্ধে ফেতুল্লাহ গুলেনের করা একটা ভিডিও সোশ্যাল মিডিয়াতে ব্যাপক আলোচনা-সমালোচনার শিকার হয়েছে। এবং গত ১৭ ডিসেম্বর তথাকথিত দুর্নীতির অভিযোগ এনে এরদোগানসহ মন্ত্রী পরিষদের কিছু গুরুত্বপূর্ণ মন্ত্রীকে গ্রেফতারের ষড়যন্ত্র করা হয়েছে। যেটা চলে ২৫ ডিসেম্বর ২০১৩ পর্যন্ত। কিছু মন্ত্রীর রদবদলের মাধ্যমে কোন রকম কাটিয়ে উঠেন এ বিপদ থেকে। ঐ দিকে গুলেন মিডিয়াতে এরদোগানের বিরুদ্ধে চলছে ব্যাপক প্রোপাগান্ডা। এখানে গুলেন মিডিয়া সম্পর্কে একটা কথা বলা সমীচীন মনে করছি। কয়েকমাস আগে ইসরাইলি হামলায় সাত ফিলিস্তিনি শহিদ হলে গুলেনর মুখপাত্র সামানিয়ল টিভি বলে, ‘’ইসরাইলি হামলায় ফিলিস্তিনের ৭ সন্ত্রাসী নিহত হয়েছে।‘’ আল কুদসের রক্ষার সংগ্রামে অবিরাম যুদ্ধরত ফিলিস্তিনি মোজাহিদদেরকে সন্ত্রাসী বলতে দ্বিধা করেনি এ তথাকথিত ইসলামি(!?) জামাত গুলেন মুভমেন্টের মিডিয়া। এরদোগান যে কয়টি বড় বড় ভুল করেছেন তার মধ্যে অন্যতম হল আমেরিকার দুষর গুলেন মুভমেন্টের সাথে সম্পর্ক করা। যদিও তিনি ১৭ ডিসেম্বরের ঘটনার পর বলে আসছেন, আমি তোমাদেরকে(গুলেন মুভমেন্ট) বিশ্বাস করেছিলাম, কিন্তু তোমরা আমার এতবড় ক্ষতি করলে।‘’ অথচ আগেই উল্লেখ করেছি গুলেন মুভমেন্টের সাথে ‘এফবিআই’ এর সম্পর্কের কথা ৯০ এর দশক থকে ওপেন সিক্রেট এবং ২০০৫ সালে এফবিআই নিজেদের ওয়েবসাইটে তাদের সহযোগী সংস্থাদের নাম প্রকাশ করেন যাতে চার নাম্বারে ছিল ‘’দি গুলেন ইন্সটিটিউট’’ তথা গুলেন মুভমেন্ট।
--চলবে
বিষয়: বিবিধ
১৩১৬ বার পঠিত, ১৩ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন