তুর্কী রাজনীতির না বলা কথা..... পর্ব-এক

লিখেছেন লিখেছেন মুহামমাদ সামি ০৩ জুন, ২০১৪, ০৪:২০:৪৪ বিকাল

তুরস্ক ৯৯% মুসলমানের দেশ। ইসলামি অনুশাসন মেনে না চললেও নিজেকে মুসলমান হিসেবে পরিচয় দিতে খুব গর্ববোধ করেন তারা। কোন বিদেশী নিজেকে মুসলমান বলে যখন পরিচয় দেন তখন টার্কিশরা পরম শ্রদ্ধা ও মমতায় তাকে বুকে টেনে নেন। খাতির যত্ন করেন খুব।

অনেক সময় কোন হোটেলে নাস্তা করে বিল দিতে গিয়ে দেখা যায় কেউ একজন বিল দিয়ে চলে গেছেন, যা জানেনই না। এ হল তুরস্কের মানুষদের সাধারন বৈশিস্ট।

তুরস্ক রজব তায়েফ এরদোগানের কল্যাণে মুসলমানদের পক্ষে কথা বলার একমাত্র নিরাপদ ভুমিতে পরিণত হয়েছে বিশ্বের বুকে। সেসনিয়া, বসনিয়া, আরাকান, বাংলাদেশ, মিশর, কাশ্মীর, সিরিয়াসহ অন্যান্য দেশের বিপদগ্রস্থ মুসলমানদের পাশে প্রথমই দাঁড়িয়েছে তুরস্ক। রজব তাইয়েফ এরদোগানের জনপ্রিয়তাও তুঙ্গে। তিন তিন বার বিপুল ভোটে প্রধানমন্ত্রী নির্বাচিত হন তিনি। আগামী আগস্ট মাসে অনুস্টিতব্য প্রেসিডেন্সিয়াল নির্বাচনে প্রার্থী হওয়ার সমুহ সম্ভাবনা রয়েছে। এবং জরিপে দেখা গেছে সেখানেও তিনি ৪৫% এর উপর ভোট পেয়ে নির্বাচিত হবেন।

কিন্তু কেমন আছেন সেই রজব তাইয়েফ এরদোগান?

তিনি মোটেই ভাল নেই। নানা রকম সমস্যায় জর্জরিত আছেন তিনি। বিরুধি শক্তি তার জনপ্রিয়তাকে ঠেকাতে না পেরে তাকে জীবনে মেরে ফেলার ষড়যন্ত্রে লিপ্ত। অতি সম্প্রতি তাকে দুই বারা মেরে ফেলার ষড়যন্ত্র করা হয়েছে। কারণ হিসেবে এখানে আমাকে কিছু কথা বলতেই হবে। যা হয়ত কারো কারো পছন্দ নাও হতে পারে। এখানে বলতে দ্বিধা নেই যে এরদোগান আমেরিকার সাহায্যে ক্ষমতায় আরোহণ করে এবং পরবর্তীতে আমেরিকা এবং পশ্চিমাদের থেকে সরে এসে মুসলিম বিশ্ব তথা মিডল ইষ্ট এবং আফ্রিকার সাথে তার সম্পর্ক বৃদ্ধি করার জন্য কাজ করে যান। যেটা স্বাভাবিক ভাবে আমেরিকার পছন্দ হয়নি। তাই তারা গুলেন মুভমেন্টকে এরদোগানের পিছনে লাগিয়ে দেন। আমেরিকা চিরাচরিত নিয়ম অনুযায়ি শত্রু দিয়ে শত্রু ধ্বংসের কাজটিও এ ক্ষেত্রে ব্যবহার করে গুলেন মুভমেন্টকে ব্যবহার করে। গত বছরের ডিসেম্বরের ১৭ তারিখ থেকে ব্যাপকহারে শুরু হয় এরদোগান বিরুধি ষড়যন্ত্র। এবং গত কয়দিন আগে ''মাভি মারমারা'' কেইসে চার ইসরাইলি সৈন্যের বিরুদ্ধে গ্রেফতারী পরোয়ানা জারি করাও এ ষড়যন্ত্রের একটা অংশ হিসেবে বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন এবং তারা এটা তুরস্কেকে বিশ্বের বুকে এ রায় দ্বারা একটি হাসির পাত্র হিসেবে উপস্থাপন করা হয়েছে বলেও মনে করেন। ধারণা করা হচ্ছে যে বিচারক রায় দিয়েছেন তিনি গুলেন মুভমেন্টের একজন লোক। বিশষজ্ঞদের বক্তব্য হল, রায়ের শর্ত হল ইন্টারপোলের আদেশ ছাড়া ইসরাইলি সেনাদেরকে আটক করা যাবেনা, আর ইন্টারপোল কোনদিন এ রায়কে সাপোর্ট করবেনা সুতরাং দেশকে একটা হাসির পাত্র পরিণত করা হয়েছে এ রায়ের মাধ্যমে।

আমেরিকা তাদের তাবেদার সরকার হিসেবে কোনদিন জনগণের সাপোর্ট পাওয়া লোককে চায়না। তারা চায় কোন পুতুল সরকার। কিন্তু এরদোগান হলেন একজন জনপ্রিয় ব্যক্তিত্ব। প্রতি নির্বাচনে ৪৫% এর উপরে ভোট পেয়ে আসছেন। সুতারাং উনি ক্ষমতায় থাকলে আমেরিকার কোন লাভ নেই। তাই তারা তাকে চিরদিনের জন্য শেষ করে দেয়ার ষড়যন্ত্রে লিপ্ত।

তবে আমি এ পরিস্তিতির জন্য এরদোগান এবং তার দলকেই দায়ী করার পক্ষে।কারণ হিসেবে প্রথমেই চলে আসে একটা মেইন স্ট্রিম ইসলামি আন্দোলন থেকে বের হওয়ার পরও আমেরিকাকে বন্ধু মনে করা এবং তাদের সাহায্য নিয়ে ক্ষমতায় আরোহণ করা। পার্টি গঠন করতে যার প্রধান ভুমিকা ছিল তাদের একজন আব্দুল্লাহ গুলের বক্তব্য ছিল ''ইসলাম পশ্চিমাদের হাতে পরাজিত হয়েছে, তাই তাদের সাথে না চললে পিছিয়ে পড়তে হবে।'' অথচ তাদের উস্তাদ নাজমুদ্দিন এরবাকান তাদেরকে কিশোর বয়স থেকে শিখিয়ে আসতেছিলেন ইসলাম বাতিলের (পশ্চিমা) কাছে পরাজিত হতে পারে কিন্তু আঁতাত করতে পারেনা। এবং মুহাম্মাদুর রাসুলুল্লাহ সঃ থেকে শুরু করে আজ পর্যন্ত চিরাচরিত সত্যও সেটাই যে ইসলাম বাতিলের কাছে পরাজিত হতে পারে কিন্তু আঁতাত নয়। তারা সেই শিক্ষাকে ভুলে গিয়ে বাতিলের সাথে আঁতাত করে ক্ষমতায় আরোহণ করেন। তবে অনেকেই হুদায়বিয়ার সন্ধিকে এখানে টেনে নিয়ে আসতে চান। তাদেরকে হুদায়বিয়ার সন্ধির বিষয়টা আরও ভালভাবে স্টাডি করার আহবান জানাব। আচ্ছা যাই হউক মুল কথায় ফিরে আসি। আমেরিকা যেহেতু তাদেরকে ক্ষমতায় নিয়ে এসেছে এমনি এমনিতে আনেনি নিশ্চয়ই। পেছনে আমেরিকার বিশাল কোন উদ্দেশ্য ছিল সেটা একটা ছোট শিশুও বুঝতে পারে। কিন্তু তায়েফ এরদোগান যেহেতু এখন মুসলিম বিশ্বের সাথে সম্পর্ক বৃদ্ধিকে ব্যস্থ সেটা তারা স্বাভাবিকভাবে মেনে নিবেনা। অনেকে হয়ত বলতে পারেন তখনকার পরিস্থিতি ঐ রকমই ছিল, অন্যথায় ক্ষমতায় আরোহণ সম্ভব হতনা হয়ত বামপন্থী কেউ ক্ষমতায় আসত। তাদেরকে প্রথমি বলব ইসলামী রাজনীতি যারা করেন তাদের উদ্দেশ্য কোনদিন ক্ষমতা কেন্দ্রিক হতে পারেনা। এবং ক্ষমতায় আরোহণের জন্য কোনদিন বাতিলের সাহায্য নিতে পারেনা, কারণ কোরআনুল করিমে আল্লাহ স্পষ্টভাবে বলে দিয়েছেন, ইহুদী-নাসারারা কোনদিন মুসলমানদের বন্ধু হতে পারেনা, বরং তারা নিজেরা নিজেদের বন্ধু। তারা মুসলমানদের ক্ষতি সাধনে সর্বদা বদ্ধপরিকর। তারা যদি কোনদিন মুসলমানদের সাহায্যও করে থাকে তবে তার পিছনে বিশাল কোন কারণ আছে সেটা বুঝতে হবে। তাই এখন এরদোগান যেহেতু মুসলমানদের পক্ষে কাজ করা শুরু করেছেন সেহেতু আমেরিকা এবং তার দুসররা এরদোগানের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রে লিপ্ত হয় এবং সেটাই স্বাভাবিক ছিল। তাকে মেরে ফেলার ষড়যন্ত্র করছে। এবং বিভিন্ন রকমের চাপের মধ্যে রাখা হয়েছে। বিভিন্ন ধরণের চাপে এখন তিনি জর্জরিত। কয়দিন আগে কয়লাখনিত আগুণ লেগে(!) মারা গেল ৩০১ শ্রমিক। এখন মুল কথা বের হয়ে আসতেছে, এ আগুণ লাগানোর পেছনের মুল কারণ কি ছিল সেটা বলাবলি হচ্ছে, আগুণ লাগানোর পিছনে কাজ করেছে মোসাদ। মিশরের ৫২৯ ভাইকে যেন ফাঁসিতে ঝুলানোর সময় তুরস্ক কোন উচ্চবাক্য করতে না পারে তার জন্য তুরস্কের ভিতরে একটা পরিস্থিতি সৃষ্টি করা খুব প্রয়োজন ছিল। আর সেটা তারা করল কয়লা খনিতে আগুণ দিয়ে। যার বলি হতে হল ৩০১ শ্রমিককে। গতবছর ঠিক এ সময়ে শুরু হয়েছিল গেজি পার্ক বিপ্লব এর পর শুরু হল ১৭ ডিসেম্বরের তথাকথিত দুর্নীতির বিরুদ্ধে অপারেশন, হত্যা চেস্টা এবং সর্বশেষ ইসরাইলি চার সেনার বিরুদ্ধে গ্রেফতারী পরোয়ানা।

--চলবে

বিষয়: বিবিধ

১৫৮৫ বার পঠিত, ৭ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

230171
০৩ জুন ২০১৪ রাত ০৮:০৫
রিদওয়ান কবির সবুজ লিখেছেন : একেপি ক্ষমতায় আসার আগে তুরুস্কে ইসলামের নাম নেওয়াই ছিল অপরাধ। সরকারি কর্মকর্তারা নামাজ পড়লেই শাস্তির মুখোমুখি হতেন। সেই অবস্থা থেকে যতটুক উত্তরন হয়েছে সেটাও আল্লাহর রহমত।
০৪ জুন ২০১৪ রাত ১২:১০
176992
মুহামমাদ সামি লিখেছেন : এ সম্পরকে আল্লাহ চাহেতো আগামী পর্বে আলোচনা করব। ধন্যবাদ আপনাকে।
230238
০৩ জুন ২০১৪ রাত ১০:৩৬
সাদাচোখে লিখেছেন : ভাল লিখেছেন। এরদোগানের জন্য এটাই স্বাভাবিক এবং তিনি নিশ্চয়ই তা জানতেন এবং মুরসীর ঘটনা দেখে ওনার শেখার অনেক কিছুই আছে।

কোরআনুল করিমে আল্লাহ স্পষ্টভাবে বলে দিয়েছেন, ইহুদী-নাসারারা কোনদিন মুসলমানদের বন্ধু হতে পারেনা, বরং তারা নিজেরা নিজেদের বন্ধু।

আপনার উপরোক্ত কমেন্ট এর রেফারেন্সটি
5:51 (Asad) O YOU who have attained to faith! Do not take the jews and the christians for your allies: they are but allies of one another [72] and whoever of you allies himself with them becomes, verily, one of them; behold, God does not guide such evildoers.

কিন্তু রিসেন্টলী আমি একজন স্কলার হতে জানলাম - কোরআন-হাদীসে খৃষ্টান ও ইয়াহুদী নিয়ে যা কিছু উল্লেখ আছে - তার সাথে উপরোক্ত ট্রান্সলেশান কন্ট্রাডিক্ট করে। সুতরাং উনি বললেন আয়াতটির ট্রান্সেলেশান হবে,

5:51 (Asad) O YOU who have attained to faith! Do not take those jews and christians as your allies who themselves are allies of one another [72] and whoever of you allies himself with them becomes, verily, one of them; behold, God does not guide such evildoers.

ধন্যবাদ।
০৪ জুন ২০১৪ রাত ১২:১২
176994
মুহামমাদ সামি লিখেছেন : আপনাকেও ধন্যবাদ। জাজাকাল্লাহু খাইরান।
230292
০৪ জুন ২০১৪ রাত ০১:৪০
খন্দকার মুহাম্মদ হাবিবুল্লাহ লিখেছেন : ভালো লাগলো অনেক ধন্যবাদ
১৮ জুন ২০১৬ সকাল ০৮:১৯
309130
মুহামমাদ সামি লিখেছেন : আপনাকেও অনেক ধন্যবাদ Good Luck
231578
০৬ জুন ২০১৪ রাত ১১:৫৩
মুহামমাদ সামি লিখেছেন : পর্ব দুই পড়তে ক্লিক করুন
http://www.onbangladesh.org/blog/blogdetail/detail/6483/Mother/46756#.U4XPQvmSykg

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File