গুলেন আন্দোলন ও ফেতুল্লাহ গুলেন
লিখেছেন লিখেছেন মুহামমাদ সামি ২৬ এপ্রিল, ২০১৪, ০৫:৩১:৩৬ সকাল
ফেতুল্লাহ গুলেন ১৯৪১ সালের ২৭ এপ্রিল তুরস্কের এরজুরুম নামক শহরে জন্মগ্রহন করেন।
১৯৪৫ সালে তিনি কুরআন শিক্ষা শুরু করেন। এর পর তিনি ১৯৪৬ সালে প্রথমিক বিদ্যালয়ে ভর্তি হন। ১৯৪৯ সালে তার বাবা অন্য একটা শহরে বদলি হওয়াই তিনিও সেখানে চলে যান।পরবর্তিতে তিনি কুরআনে হাফিয হন ১৯৫১ সালে। এরপর বিভিন্ন শিক্ষকদের কাছ থেকে শিক্ষা গ্রহন করেন ও তার প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষার সমাপ্তি ঘটান। এর পর তিনি ইমাম হিসাবে তার কর্মজীবন শুরু করেন। আবেগঘন ওয়াজ নাসিহাত এর মাধ্যমে তিনি অল্প সময়ের মধ্যেই তুরস্কের তৃতীয় বৃহত্তম শহর ইজমিরে খুবি জনপ্রিয়তা লাভ করেন। তার আন্দোলনের প্রথম পর্যায়ে সে সময়ের অন্যতম আলেম বদিউযযামান সাইদ নুরসির আন্দোলন থেকে ইস্তিফা দেন কিন্তু তিনি তার জনপ্রিয়তাকে ধরে রাখার জন্য সাইদ নুরসির লেখা তাফসির 'রিসালায়ই নুর'কে অবলম্বন করে তার ওয়ায নাসিহাত চালিয়ে যেতে থাকেন।
ফেতুল্লাহ গুলেন সেই সময়ের রাজনৈতিক ব্যাপারে তার নিজস্ব দৃষ্টি ভঙ্গি তুলে ধরেন ও সেনা অভ্যুত্থান এর বিরুদ্ধে তার অভিমত ব্যক্ত করেন। এই সকল কারণে তিনি জনগনের মধ্যে জনপ্রিয়তা লাভ করেন। ১৯৯০সাল পর্যন্ত তার ওয়ায নাসিহাত ইসলামের আলোকে হওয়াই তিনি জনগনের ভালবাসা ও সহানুভূতি অর্জন করেন। এই কারনে ফেতুল্লাহ গুলেন
এর জীবন কে ২ ভাগে ভাগ করা যায়।
১. মানুষের মধ্যে ইসলাম প্রচারের কাজঃ যেটা ছিল তার মাসজিদে মাসজিদে ওয়ায নাসিহাত এর মাধ্যমে
২. তুরস্কের রাজনীতিতে পর্দার আড়ালে থেকে গুরুত্বপূর্ণ ভুমিকা পালন।
আমাদের এই পর্যন্ত আলোচনা তার প্রথম জীবন বললেই চলে। এখন আমরা তার জীবনের ২য় পর্যায় সম্পর্কে আলোচনা করব। তুরস্কে নাজিমুদ্দিন এরবাকান এর নেতৃত্বে রেফাহ পার্টির জনপ্রিয়তা ও পরবর্তীতে ক্ষমতা গ্রহণ তুরস্কের মুসলিমদের মনে এক আশার আলো জলে উঠে। এরবাকান সেই সময়ে প্রায় সকল ইসলাম পন্থি জমিয়ত ও তারিকাত থেকে সমর্থন লাভ করলেও কিন্তু ফেতুল্লাহ গুলেন থেকে তিনি কোন রকম সাহায্য সহযোগিতা লাভ করেন নাই। এরবাকান ক্ষমতায় আরোহণ করার পর পরই ইসলাম ও মুসলিম উম্মাহর জন্য কাজ করা শুরু করেন। যেটা আমেরিকা-ইসরাইলসহ অন্যান্য ইয়াহুদিবাদী শক্তি ভাল ভাবে নেয়নি। এবং এরবাকান কে ক্ষমতাচ্যুত করার জন্য তারা উঠে পড়ে লাগে, এরই ধারাবাহিকতায় ১৯৯৭সালের ২৮ ফেব্রুয়ারী তাকে পদচ্যুত করে। দুখজনক হলেও সত্য এর পেছনে ফেতুল্লাহ গুলেনের ও হাত ছিল। ১৯৯৭ সালের ১৬ এপ্রিল তিনি এক টেলিভিশন প্রোগ্রামে বলেছিলেন ''এরবাকান তার উপর অর্পিত দায়িত্ব পালন করারা যোগ্য ছিলেন না। তিনি জনগণের আমানত কে যথাযত ভাবে মূল্যায়ন করতে পারেননি তিনি জাতির আমানত কে জাতির নামে করতে পারেননি’’
তার এই মন্তব্যে মুসলিমরা খুবই মর্মাহত হন। আর ময়দানে একদিক থেকে বাতিল শক্তি অন্য দিক থেকে ফেতুল্লাহ গুলেন এর এই রকম কথা বার্তা ও তাদের বিভিন্ন বক্তৃতা বিবৃতি রেফাহ পার্টির জন্য মোকাবেলা করতে খুবি হিমশিম খেতে হয়। শুধু এটাই নয় সেই সময়ের তার অন্যান্য কর্মকাণ্ডের মধ্যে ছিল তার মাদরাসা বন্ধ করার ব্যাপারে তার প্রকাশ্য সম্মতি এবং বিশ্ব বিদ্যালয়ে মেয়েদের হিজাব পরার উপর নতুন করে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করায় সর্বত্র এর বিপক্ষে নতুন করে আন্দোলন গড়ে উঠে। তিনি এই সকল আন্দোলন কে কুতর্ক হিসাবে আখ্যায়িত করেন এবং তার সংগঠনের অধীনস্থ মেয়েদেরকে হিজাব খুলে ক্লাস করার জন্য বলেন। যে ফেতুল্লাহ গুলেন রেফাহ পার্টি যাতে ক্ষমতায় না থাকতে পারে সে জন্য ইয়াহুদিদের সাথে হাত মিলান সেই গুলেন পরবর্তীতে ১৯৯৯ সালের নির্বাচনে গণতান্ত্রিক বাম আন্দোলনের নেতা বুলেন্ত এযেভিত কে সমর্থন করেন। সেই সময়ে টিভি-পত্র-পত্রিকাতে এরবাকান কে সবচেয়ে বড় সমস্যা হিসাবে আখ্যায়িত করেন এবং আখিরাতে তিনি বুলেন্ত এযেভিত কে শাফায়াত করবেন বলে ঘোষণা করেন। একবার তিনি টিআরটি টিভিতে লাইভ সাক্ষাৎকারে বলেন ''এরবাকান ইসলামের ক্ষতি করতেছে।'' সে সমানহারে একটা মেইন ইস্ট্রিম ইসলামি আন্দোলনের সমালোচনা করতেছিল এবং বামদেরকেরও সাপোর্ট দিয়ে যাচ্ছিল। এবং পরবর্তীতে ১৯৯৯ সালে তিনি আমেরিকাতে পাড়ি জমান।
২০০০ সালে রেফাহ পার্টি কে নিষিদ্ধ করে দেওয়ার পর ফাযিলেত পার্টি খুলা হয়। আর সেখানে যুবক নেতা হিসাবে পরিচিত আব্দুল্লাহ গুল;রিজেপ তায়্যিপ এরদগান ; বুলেন্ত আরিঞ্ছ দের সাথে ভাল সম্পর্ক গড়ে তুলেন। ২০০১ সালে এদের নেতৃত্বেএকে পার্টি গঠন করার সময় সব থেকে বেশি সহযোগিতা করেন ফেতুল্লাহ গুলেন ও তার সংগঠন গুলেন আন্দোলন যেতা তুরস্কে 'হিযমেত' নামে সমধিক পরিচিত। মিল্লি গুরুশ কে ভাগ করে নতুন দল গঠন করে ক্ষমতায় আসার পেছনে সব চাইতে বেশি ভুমিকা পালন করে ফেতুল্লাহ গুলেন ও তার আন্দোলন। এরদোগানও তার প্রথম ৯ বছরের শাসনামলী তাদের কে সর্বাত্মক ভাবে সহযোগিতা করেন। সরকারি সকল জায়গাতেই তারা স্থান দখল করে সরকার এর ভেতর সরকার গঠন করেন। কিন্তু নানা বিষয় কে কেন্দ্র করে ফেতুল্লাহ গুলেন এর সাথে এরদোগানের একে পার্টির সম্পর্ক খারাপ হতে থাকে পরবর্তীতে ২০১৩ সালে একেপি ও গুলেন এর দ্বন্দ্ব প্রকাশ্যে রুপ নেয় শুরু হয় একজন এর উপর আরেক জনের অভিযোগ ও পাল্টা অভিযোগ।
প্রায় ১০ বছর ধরে গুলেন এর সাথে কাধে কাধ মিলিয়ে কাজ করার পর এরদগান বলেন যে গুলেন আমার সাথে ছলনা করেছে।
ধর্মীয়ও ব্যাপারে ফেতুল্লাহ গুলেন এর মতামতঃ
আমরা এই পর্বে ফেতুল্লাহ গুলেন এর ধর্মীয়ও ব্যাপারে মতামত কে তুলে ধরার চেষ্টা করব। ফেতুল্লাহ গুলেন ১৯৯০ সালে নতুন কিছু কর্মসূচি নিয়ে জনগনের সামনে আসেন যেগুলার সাথে তুরস্কের জনগন এর কোন ধারনা ছিলনা । এর মধ্যে গুরুত্বপূর্ণ হল আন্ত ধর্মীয়ও সংলাপ(Interfaith Dialogue)। তার এই প্রজেক্টের জন্য পোপ এর কাছে যে চিঠি লেখেন সেটা খুবি প্রনিধানযোগ্য। চিঠিটা পাঠকের সমিপে তুলে ধরা হলঃ
সম্মানিত পোপ;
তিনটি মহান ধর্মের জন্মস্থান এই পৃথিবীকে বসবাস করার জন্য আপনারা যে মহানউদ্যোগ নিয়েছেন আমরা সেটা জানি; এবং আমি আপনাদেরকে অন্তরের অন্তঃস্থল থেকে সালাম জানাই। অনেক বাস্ততার মধেও আমাদের সাথে বসার জন্য আপনারা যে সদয় সম্মতি জ্ঞাপন করেছেন এই জন্য আপনাদেরকে জানাই অনেক কৃতজ্ঞতা ও মুবারাকবাদ। ষষ্ট পোপ পাউল এর পক্ষ থেকে শুরু করা আন্ত ধর্মীয়ও সংলাপ(Interfaith Dialogue) এর (PCID) যে লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য আছে সেটার সাথে একমত হয়ে আমি আপনাদের পাশে আছি। আমরা আপনাদের এই কর্মকাণ্ডে শরিক হয়ে আর কাছ থেকে দেখতে চাই। আমরা আপনাদের এই মহান কাজে শরিক হয়ে নিজেরদের কে ধন্য করতে চাই। আশা করি আপনারা আমাদের কে এই সুযোগটা দান করবেন। ইসলাম কে একটি মিথ্যা দিন হিসাবে প্রতিপন্ন করার চেষ্টা করা হচ্ছে আর মুসলিমদেরকে একটি সন্ত্রাসী জাতি হিসাবে আখ্যা দেওয়া হচ্ছে। এখন এ একটি উপযুক্ত সময় আপনাদের সাথে আলোচনার মাধ্যমে এর বিরুদ্ধে অপবাদ গুলোকে ঘুচানোর।
মুসলিম বিশ্ব তাদের শতবছরের গ্লানি মুছে ফেলে এক নতুন দিগন্তের সুচনা করার মত এক সুযোগ পাবে। মানুষের মধ্যে বিরাজমান চিন্তা চেতনা সময় সময়ে বিজ্ঞানের নামে দ্বীন; দ্বীনের নামে বিজ্ঞান কে অস্বীকার করছে। অথচ জ্ঞান-বিজ্ঞান ও দ্বীন সম্পূর্ণ ভাবেই আল্লাহ তালার সাথে সম্পৃক্ত। মানুষের মধ্যে চিন্তার ঐক্য সৃষ্টি এবং আন্তঃ ধর্মীয় সংলাপ এক্ষেত্রে এক নব দিগন্তের সূচনা করতে পারে। আমাদের দেশে অবস্থিত বিভিন্ন ক্রিস্টান সম্প্রদায়ের সাথে এই পর্যন্ত আমাদের অনেক সংলাপ হয়েছে। আমাদের ঐ সংলাপ আশা করি ফলপ্রসূ হয়েছে । আমাদের উদ্দেশ্য হল এই বড় তিনটি ধর্মে বিশ্বাসীদের মধ্যে সম্প্রীতি ও সহযোগিতা বৃদ্ধি করে এক ভ্রাতৃত্ত্যের সম্পর্ক তৈরি করা। আমরা সকলে এক হয়ে সভ্যতার যে দ্বন্দ্ব আছে এবং যারা আমাদের পারস্পারিক সম্পরককে বিনষ্ট করতে চায় তাদের বিরুদ্ধে সোচ্চার হয়ে তাদের বিরুদ্ধে দাঁড়াব। গত বছর আমরা আন্তর্জাতিক খ্যাতিমান বিজ্ঞানিদের কে নিয়ে আন্তঃসভ্যতার শান্তি প্রতিষ্ঠা শীর্ষক এর সংলাপ এর আয়োজন করেছিলাম। আমরা আমাদের সেই অভিজ্ঞতা কে আরও অন্যান্য ক্ষেত্রে কাজে লাগানোর চেষ্টা করে যাব। প্রতিশ্রুতি বদ্ধ ৩তি ধর্মের মধ্যে সম্পর্ক বৃদ্ধি ও শক্তিশালী করার লক্ষ্যে ভ্যাটিকানের প্রতিনিধিত্তের মধ্য দিয়ে একটি সুন্দর ও সার্থক সম্মেলন এর আয়োজন করতে পারব বলে আশা করি। আমরা এটা দাবি করতে চাই না যে এক্ষেত্রে আমাদের অন্য কোন উদ্দেশ্য আছে। আবার ও বলতে চাই যে আমাদের উদ্দেশ্য এখানে পরিষ্কার , আমাদের এই পরিকল্পনাকে বাস্তবে রুপ দেওয়ার জন্য আপনাদের নিকট বিনিত ভাবে কিছু প্রস্তাবনা রাখতে চাই; খ্রিস্টান ধর্মের ৩য় হাজার বছরে পদার্পণ উপলক্ষে ও এই অনুষ্ঠানকে কে উদযাপন করার জন্য মধ্যপ্ররাচের Antakya, Tarsus, Ephesus এবং বাইতুল মুকাদ্দাসে প্রোগ্রাম আয়োজন করে আপনাদের কার্যকলাপে আমরা ও শরিক হয়ে শিক্ষা গ্রহন করতে চাই। আমরা আশা করি আমাদের সম্মানিত রাষ্ট্র প্রধান সুলেইমান দেমিরেল এক্ষেত্রে আপনাদেরকে আমন্ত্রন জানাবেন ও আপনাদের সকল কিছুর সুন্দর বাবস্থাপনা করবেন। আনাতলিয়ার জনগন আপনাদের কে অভ্যর্থনা জানানোর জন্য অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করছে।ফিলিস্তিনের নেতৃবৃন্দের সাথে সংলাপ এর মাধ্যমে আমরা একসাথে বাইতুল মুকাদ্দাসে গমন করতে পারি। এই সফর এবং ইয়াহুদি ; খ্রিস্টান ও মুসলিমদের পবিত্র নগরি হিসাবে পরিচিত বাইতুল মুকাদ্দাসে। এটি কারো একার নয় এটি সবার জন্য। এটি একক কোন গোষ্ঠীর সম্পত্তি নয় এবং এটাকে একটি আন্তর্জাতিক নগরি হিসাবে ঘোষণা করতে পারি। এমনকি এটাতে ভ্রমন করতে জাতে কোন ভিসা বা অনুমতি না লাগে সেটার ও একটা বন্দোবস্ত করা যেতে পারে। এই তিনটি ধর্মের নেতাদের সমন্নয়ে একটি সংগঠন কায়েম করে প্রথম সম্মেলন ওয়াশিংটন ডি. সি থেকে শুরু করে সকল দেশের রাজধানিতে একটি করে সম্মেলনের আয়োজন করা যেতে পারে। আর এর ২য় সম্মেলন করা যেতে পারে হযরত ইসা (আঃ) এর জন্মস্থানে। আর এটা ২০০০ তম একটি অনুষ্ঠানও হতে পারে।
আরেকটা হল ছাত্র বিনিময় প্রোগ্রাম এটাও একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রোগ্রাম হতে পারে। ৩ ধর্মের বিশ্বাসী মানুষের এক সাথে শিক্ষা গ্রহন তাদের মধ্যে পারস্পারিক সম্পর্ক বৃদ্ধি করবে। ছাত্র বিনিময় চুক্তির আলোকে ৩ টি বড় ধর্মের পিতা হযরত ইব্রাহীম আঃ কে যেখানে আগুনে ফেলা হয়েছিল সেই উরফা (তুরস্কের একটা শহর) নামক শহরে একটি ধর্মতত্ত্ব স্কুল প্রতিষ্ঠা করা যেতে পারে। এটা হার্ভার্ড ইউনিভার্সিটি অথবা অন্য নামে একটি ইউনিভার্সিটির মাধ্যমে প্রতিষ্ঠা করে সেখানে ৩ ধর্মের পণ্ডিতদের কে নিয়ে একটি স্কুল খুলা যেতে পারে। এই পরিকল্পনার আলোকে ভবিষ্যতে আরও পরিকল্পনা গ্রহন করা যেতে পারে। দুনিয়াতে ২ ধরনের মানুষ রয়েছে এক ধরনের মানুষ হল যারা তাদের নিজেদের কৃষ্টি কালচার অনুযায়ী বেড়ে উঠে ও কার্যক্রম পরিচালনা করে আর ২য় ধরনের মানুষ হল তারা তাদের সমাজের পাশাপাশি অন্য সমাজের মানুষদের কে নিয়েও চিন্তা গবেষনা করে। ও অন্যদেরকেও আদর্শ হিসাবে গ্রহন করে। এরাই হল সমাজের উত্তম ব্যক্তি ও আল্লাহ তালার প্রিয় বান্দাদের অন্তর্ভুক্ত। গোটা মানব জাতি তাদের কাছে ঋণী এবং আল্লাহ তা'লা তাদেরকে সৃষ্টি করেছেন বলে তার শুকুর আদায় করছি।
ফেতুল্লাহ গুলেন/ মহান রবের একজন সম্মানিত বান্দা/৯ ফেব্রুয়ারী ১৯৯৯
আমরা তার এই বহুল আলচিত ও সমালোচিত চিঠি পাঠ করে দেখলাম যে পোপদের পরিকল্পনার নিজেও একজন অংশীদার সেটা তিনি নিজেই স্বীকার করলেন । উনার লিখিত বই পুস্তকে আহলে সুন্নেত ওয়াল জামায়াত এর আকিদার বিপরিত কথা বার্তা সমূহ দেখলেই আমরা তার সম্পর্কে ধারণা পাব বলে আশা করি ফাসিল থেকে ফাসিলা (Fasıldan Fasıla )বইয়ের ৩ নব্বর খণ্ডের ১৪৪ নম্বর পৃষ্ঠায় তিনি লিখেছেন যে ‘’ বিশেষ করে কালেমায়ি শাহাদাত সম্পর্কে আমাদের দৃষ্টি ভঙ্গি কে নতুন করে বিবেচনা করা দরকার।এমন কি সেই কালেমার অর্ধেক অর্থাৎ ‘’ মুহাম্মাদুর রাসুলুল্লাহ’’ যারা না বলবে তারাও মরহুম ও রহতের দৃষ্টিতে দেখার যোগ্য । কেননা হাদিসে বলা আছে আল্লাহ তার বিশাল রহমতের দ্বারা আখেরাতে এমনভাবে নুরান্নিত করবেন যে ; শয়তান পর্যন্ত বলবে যে ‘’ আমিও যদি ফিরে আসি তাহলে মুক্তি পাব কি ? ‘’ এই কথা বলে শয়তানও আশা পোষণ করতে থাকবে। এখন এমন এক দয়াবান রবের দয়ার বিপরীতে আমাদের কৃপণতা এবং সেই কৃপণতার প্রতিনিধিত্ব আমরা কেন করব? সেই সাথে আমাদের কি আসে যায়? সমগ্র সৃষ্টি জগত তার; সকল সম্পদ এর মালিক তিনি সকল বান্দার রব ও হলেন তিনি । তাই আমাদের সকলকেই আমাদের সীমাবদ্ধতা সম্পর্কে জানা থাকা উচিত।‘’ হশগরুরু এবং ডায়লগ(Hoşgörü ve Diyalog İklimi) বইয়ের ২৪১ নম্বর পৃষ্ঠায় তিনি বলেন ‘’ কুরআনে কারিমে দেখুন আল্লাহ তায়ালা আহলে কিতাবকে সম্বোধন করার সময়ঃ ‘’ বলঃ হে আহলি কিতাব! এসো এমন একটি কথার দিকে, যা আমাদের ও তোমাদের মধ্যে একই ধরনের ৷ তা হচ্ছেঃ আমরা আল্লাহ ছাড়া কারোর বন্দেগী ও দাসত্ব করবো না৷ তাঁর সাথে কাউকে শরীক করবো না৷’’ (al/Imarn 64) আল্লাহ তায়ালা এটা বলেছেন । এখানে খেয়াল করে দেখুন এখানে ‘’মুহাম্মাদুর রাসুলুল্লাহ ‘’ নেই।
লেখক ও সাংবাদিক সংগঠন এর দ্বারা প্রকাশিত কুরেসেল বারিশা দরু (খুজাদান কেলেবেগে-৩) নামক বইয়ে তিনি উল্লেখ করেছেন যে “ইয়াহুদি ও খ্রিস্টানদের সম্পর্কে নাযিলকৃত আয়াতসমুহ ; অথবা হযরত মুহাম্মাদ সঃ এর সময়ে কিংবা তাদের নিজেদের নবীদের সময়ে বসবাস রত ইয়াহুদি ও খ্রিস্টানদের সম্পর্কে সেই আয়াতগুলো এখন আর প্রযোজ্য নয়।'' এ ব্যাপারে গুলেন সম্পর্কে লিখা প্রথম খণ্ডে আরও বিস্তারিত আলোচনা করা হয়েছে।
আমরা তার লেখা এই সকল বই থেকে জানতে পারলাম যে ইয়াহুদি ও খ্রিস্টানদের কে রক্ষা করার জন্য তার চেষ্টার অন্ত নেই। শুদু এগুলাই নয় এটা হল তার সম্পর্কে ও তার আকিদার অংশ মাত্র। সারা দুনিয়ার প্রায় ১৮০ টি দেশে স্কুল রয়েছে সেই সকল স্কুল থেকে প্রতিবছর ১৫/ ১৬ বসরের যুবতি মেয়েদের কে নিয়ে তারকিশ অলিম্পিয়াডের নামে নাচ গানের অনুষ্ঠান করে থাকে । সে সম্পর্কে তিনি বলছেন যে সেখানে নাকি রাসুলুল্লাহ সঃ স্বয়ং উপস্থিত থাকেন (নাউজুবিল্লাহ) । আর সেই অনুষ্ঠানে দায়িত্ব পালন করা নাকি উহুদের ময়দানে জিহাদ করার সমতুল্য ।
.
গুলেন আন্দোলন কিভাবে কাজ করে থাকেঃ
ম্যাসনিক ও মিশ্র ভাবে পরিচালিত গুলেন আন্দোলন কিভাবে পরিচালিত হয় সোটা জানা দুস্কর; বলতে গেলে এখনো তা অনাবিষ্কৃত । এটা কাদের দ্বারা; কিভাবে পরিচালিত হয়, কে এর পরিকল্পনা প্রনয়ন করেন এটাও অজানা । এদের সর্বনিম্নস্থর হল বিভিন্ন মেস; কোচিং সেন্টার ; প্রাইভেট স্কুল ; হোস্টেল ও তাদের পরিচালিত ব্যবসা প্রতিষ্ঠান ও হাসপাতাল। তাদের এই সকল মেসে ও বাসার ছাত্র দের কে তাদের মন মানসিকতার আলোকে গড়ে তুলা হয়। তাদের বাসা ও মেসে থাকা অধিকাংশ ছাত্র নিজেদের পরিচয় কে গোপন করে চলে। তারা এতটায় গোপনীয় যে একই বিল্ডিং এ ২ টা এপার্টমেন্টে এ থাকলেও তারা একজন আরেকজন সম্পর্কে বেখবর । তাদের তৈরি করা এই সকল যুবক শ্রেণী তাদের বড়দের পরিকল্পনা মত কেউ সেনাবাহিনীতে কেউবা আবার সরকারি প্রতিষ্ঠানে অর্থাৎ তাদের হর্তা কর্তাদের মন মত তারা নিজের দের কে গঠন করে থাকে।
এই ভাবে লোক তৈরি করার ফলে ও তাদের জানা অজানা সকল সম্পত্তির পরিমান প্রায় সরকারি বাজেটের কাছাকাছি। তাদের প্রচারিত পত্রিকার গ্রাহক সংখা প্রায় ১ মিলিয়ন ও তাদের টিভি মিডিয়া হল সামানইয়ল টিভি পাশাপাশি তাদের ৩৯ টি প্রকাশনা প্রতিষ্ঠান রয়েছে। এর পাশাপাশি দুনিয়ার প্রায় ১৭০ টি দেশে এদের স্কুল রয়েছে এগুলোতে ইসলামী শিক্ষা দেওয়া হয় একথা বলা হলেও মুলতঃ পাশ্চাত্য ধাঁচেই শিক্ষা দেওয়া হয়ে থাকে।
http://www.istanbultimes24.com
বিষয়: বিবিধ
৪৬৬০ বার পঠিত, ১৩ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন