স্থানীয় নির্বাচনে এরদোগানের একেপার্টির বিস্ময়কর সাফল্য

লিখেছেন লিখেছেন মুহামমাদ সামি ০৬ এপ্রিল, ২০১৪, ১২:২৪:০২ রাত

নানাবিধ কারণেই এই নির্বাচনের আমেজ অন্যান্য সময়ের চেয়ে ভিন্ন আর অধিক গুরুত্বপূর্ণ। মুসলিম বিশ্বের প্রতি এরদোগানের বন্ধুত্বপূর্ণ সতর্কদৃষ্টি , মিশর, বাংলাদেশসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশের মজলুম মুসলমানদের পক্ষে কথা এবং দেশের ভিতরে একের পর এক আইন পরিবর্তন করে ইসলামের আদলে গঠন করতে চেষ্টা করায় এক সময়ের পাশ্চাত্যবন্ধু এরদোগান পাশ্চাত্যের চোখে হয়ে গেলেন চক্ষুশূল। এই নির্বাচনকে সামনে রেখে ইহুদী লবি সহ পাশ্চাত্যে সকল শক্তি এরদোগানও তাঁর সরকারের বিরুদ্ধে নানা রকমের আন্দোলন গড়ে তুলার পাশাপাশি সূদের হারকে বাড়িয়ে দেয়ার মাধ্যমে অর্থনীতিকভাবে অস্থিতিশীল করার চেষ্টা করে। গেজি পার্ক সহ অন্যন্য সরকার বিরুধি সকল আন্দোলনে দেয় ব্যাপক সমর্থন। জানা যায় গেজি পার্কের আন্দোলনকারীদের জন্য টাকা বরাদ্দ দেয়া হয় ইংল্যন্ড থেকে। এসব পরিস্থিতিতে এরদোগান সরকারের ১২ বছরের বন্ধু ফেন্সিল্ভানিয়ায় সেচ্চা নির্বাসনে থাকা ফেতুল্লাহ গুলেনের ইসলামিক সংগঠন হিসেবে পরিচিত ‘’গুলেন মুভমেন্ট’’ প্রকাশ্যে সরকারের বিরুদ্ধে এবং পাশ্চাত্যের পক্ষ নিয়ে সর্বশক্তি দিয়ে সরকার পতনের ঘৃণ্য প্রয়াস চালায়। এখানে উল্লেখ্য যে, গুলেন মুভমেন্ট ও এরদোগানের মধ্যে আদর্শগত মিল থাকার কারণে কিন্তু তাঁরা জোটবদ্ধ হয়নি, একমাত্র কারণ ছিল গুলেন মুভমেন্টের কর্মকাণ্ড গতিশীল করার জন্য একটি রাজনৈতিক শক্তির সাহায্য প্রয়োজন আর এরদোগানেরও নতুন দল হিসেবে একটি নির্দিষ্ট দল বা গ্রুপের ভোট প্রয়োজন ছিল, তাই তাঁরা এক হয়েছিল বলে জানা যায়। প্রায় এক যুগের বন্ধুত্বের খাতিরে এরদোগান ফেতুল্লাহ গুলেনের কোন কথাকেই তুচ্ছ জ্ঞান করেননি। বরং গুলেনের কথা মত গুলেন জামাতের অনেক লোককে সরকারী বিভিন্ন উচ্চ পদে আসীন করেন। সেটাই পরবর্তীতে এরদোগানের জন্য কাল হয়ে দাঁড়ায়। গুলেন মুভমেন্টের সরকার বিরুধি ঘৃণ্য থাবা শুরু হয় গত বছরের ১৭ ডিসেম্বর। ১৭-২৫ ডিসেম্বর পর্যন্ত চলমান অপারেশনের মাধ্যমে গুলেন জামাতের সাথে সরাসরি সম্পৃক্ত পুলিশ প্রশাসন

তথাকথিত দুর্নীতির স্কান্ডাল এর নামে মন্ত্রী পরিষদের কিছু প্রভাবশালী মন্ত্রীদের বিরুদ্ধে ক্যাসেট প্রকাশ করে। এমনকি তথাকথিত এ ইসলামী দল গুলেন মুভমেন্ট এরদোগানের বিরুদ্ধে পর্ণোগ্রাপি তৈরি করতেও দ্বিধা করেনি। এতসব কারণে গুলেন মুভমেন্ট আর এরদোগান সরকারের মাঝে নানাধরনের বিরুধের সৃষ্টি হয়। এই স্থানীয় নির্বাচনটি গুলেন মুভমেন্টের বাঁচা-মরার লড়াই হয়ে দাঁড়ায়। তারা মনে করে এরদোগান আবার ক্ষমতায় আসলে তাদের অস্তিত্ব শুদ্ধ বিলোপ করে দিবে। তাই তাদের নিয়ন্ত্রিত সোশ্যাল মিডিয়া, নিউজ এজেন্সি ইত্যাদির মাধ্যমে তারা তুর্কি সরকারে বিরুদ্ধে প্রপাগন্ডা চালিয়ে জনগণকে একেপার্টিকে ভোট দেয়া থেকে বিরত রাখার ব্যর্থ প্রচেস্টা চালায়। এবং তাদের নিউজ পেপার গুলুতে সিএইচপি তথা আতাতুরকের রিপাবলিকান পার্টির বিজ্ঞাপন দেয়া থেকে শুরু করে এহেন কোন কাজ নেই তাঁরা বাকী রাখেনি। কিন্তু তুরস্কের জনগন আবার এরদোগানের একেপার্টির উপর আস্থার প্রমাণ দেয় এবং গুলেন মুভমেন্টের কালো থাবাকে ভেস্তে দেয়। এবছর স্থানীয় নির্বাচনে ভোটার ছিল ৫কোটি ২৬ লক্ষ ৯৫ হাজার ৮৩২ জন যা মোটা জনসংখ্যার ৬৮,৭৩%। নির্বাচনে অংশগ্রহণকৃত ভোটার ৮৭,৯৬%। ২০১৪ সালের স্থানীয় নির্বাচনে একেপার্টি পেয়েছে ২ কোটি ২ লক্ষ ৬৪ হাজার ৫২ টি। প্রধান বিরুধি রিপাবলিকান দল(সি এইসপি) পেয়েছে ১ কোটি ২৪ লক্ষ ৮ হাজার ৫৬১ ভোট। ইস্তানবুল, আংকারা ও ইজমির বৃহত্তম ৩ শহর হওয়ায় এ শহর গুলোর গুরুত্ব ছিল অত্যধিক। অনেক জল্পনা কল্পনা হচ্ছিল সর্ববৃহৎ শহর ইস্তানবুল এবং রাজধানী আংকারা এবার একেপার্টি রাখতে পারবেনা কিন্তু সব জল্পনা-কল্পনা ধুলিশ্যাত করে একে পার্টি আবার এ দুই বৃহত্তম শহর করতল গত করে। এর মধ্যে ইস্তানবুলে একে পার্টি ভোট পায় ৪৮,০% আর প্রধান বিরুধিদল পায় ৪০,১%। তবে আঙ্কারায় চলে হাড্ডাহাড্ডি লড়াই আঙ্কারায় একে পার্টি ৪৪,৮% আর সিএইসচপি পায় ৪৩,৮%। কিন্তু তৃতীয় বৃহত্তম শহর আতাতুরক প্রেমিকদের তীর্থভুমি ইজমিরের আসন বরাবরের মত ধরে রাখে সিএইচপি তারা ইজমিরে ভোট পায় ৪৯,৫% অন্যদিকে একে পার্টি পায় ৩৬,০% ভোট। সারা তুরস্কে একে পার্টি ভোট পায় ৪৫,৬%, ২০০৯ সালের স্থানীয় নির্বাচনে তাঁরা ৪০,০৪% ভোট পেয়েছিল। অন্যদিকে সিএইচপি ২০১৪ সালে পেয়েচেহ ২৯,৬%, ২০০৯ সালে পেয়েছিল ২৮,১৬%। তৃতীয় বৃহত্তম দল এমএইচপি তথা ন্যশনালিস্ট পার্টি ২০১৪ সালে পেয়েছে ১৪,৭%, ২০০৯ সালের স্থানীয় নিরবাচনেও তারা একেই তথা ১৪,৭% ভোট পেয়েছিল। ৩০ মেগাসিটির মধ্যে ১৮টি এবং জেলা শহরের মধ্যে ৩২টিতে একে পার্টির প্রার্থী জয়ী হয় অন্যদিকে সিএইচপি মেগাসিটির মধ্যে ৬ এবং অন্যান্য জেলা শহরের মধ্যে ৭ টিতে জিতেছে। বাকী শহর গুলোতে অন্যান্য ছোট দল গুলোর প্রার্থীরা জয়ী হয়। উল্লেখ্য যে তুরস্কে মেগাসিটির সংখ্যা ৩০ এবং জেলা শহরের ৫১ টি রয়েছে। অন্যদিকে থানার সংখ্যা হল ৯২৩ টি। ৯২৩ থানার মধ্যে একেপার্টি পায় ৫৫৯ টি, সিএইচপি পায় ১৬০ টি। বাকী ২০৪ টি থানার মধ্যে তৃতীয় বৃহত্তম দল এমএইচপি পায় ১০৬, তারা বড় শহরের মধ্যে ৩ টিতে জয়ী হয় এবং ছোট শহরের মধ্যে ৫ টিতে জয়ী হয়। এককথায় বলা যায় একেপার্টি নিরন্সকুশ বিজয় অর্জন করে এবং এ জয় একেপার্টির জন্য খুব প্রয়োজন ছিল। তথাকথিত ইসলামিদল গুলেন মুভমেন্ট সহ পাশ্চাত্যের সকল ষড়যন্ত্রের একটা উচিৎ জবাব দেয়া হয়েছে বলে মনে করেন দেশের বিশিষ্ট জনেরা। তুরস্কের তিন তিনবারের সফল প্রধানমন্ত্রী রেজেব তাইয়েফ এরদোগান স্থানীয় নির্বাচনে জয়ী হওয়ার পর-পরই আঙ্কারাস্থ একে পার্টির কেন্দ্রীয় অফিসে বক্তব্যে বলেন দেশের জনগণ যদি আমার সাথে থাকে তবে সকল ষড়যন্ত্র আমরা ন্যশ্যাত করে দিতে পারব ইনশাআল্লাহ। তিনি আরও বলেন ‘’আমাদের এ জাতি(তুর্কি) মুসলিম উম্মাহর আশা-আকাঙ্ক্ষার প্রতীক।‘’ এ সময় তাস্ত্রী এমিনে এরদোগান ছেলে বিলাল এরদোগান, মেয়ে সুমাইয়া এরদোগান এবং পররাষ্ট্রমন্ত্রী আহমেদ দাউদঅউলুসহ বিশিষ্ট কয়েকজন মন্ত্রী-এমপি উপস্থিত ছিলেন।।

নির্বাচনে জয়লাভের পর ইরানের প্রেসিডেন্ট রুহানি, গ্রিসের প্রধানমন্ত্রী সামারাস, ইয়েমেনের প্রধানমন্ত্রী বাসেন্দবা এবং ফিলিস্তিন প্রেসিডেন্ট ইসমাইল হানিয়া প্রধানমন্ত্রী এরদোগানকে শুভেচ্ছা জানান।

বিঃদ্রঃ ৫ এপ্রিলের 'দৈনিক সংগ্রামে' প্রকাশিত লেখা।। http://www.dailysangram.com/news_details.php?news_id=142778

বিষয়: বিবিধ

১৩৩৪ বার পঠিত, ১২ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

203097
০৬ এপ্রিল ২০১৪ রাত ০১:৪৬
বিভীষিকা লিখেছেন : অনেক ধন্যবাদ
০৬ এপ্রিল ২০১৪ রাত ০৩:৪১
152498
মুহামমাদ সামি লিখেছেন : আপনাকেও ধন্যবাদ কষ্ট করে পড়ার জন্য।
203122
০৬ এপ্রিল ২০১৪ সকাল ০৫:০২
তহুরা লিখেছেন :
০৭ এপ্রিল ২০১৪ রাত ০৮:১৫
153187
মুহামমাদ সামি লিখেছেন : বসফরাসের নিচ দিয়ে যে ট্রেন লাইনটি করা হয়েছে সেটার উদ্বোধন করার দিনের ছবি এটি। পাশে যে মানুষটার অর্ধেক চেহারা দেখা যাচ্ছে উনি হলেন ইস্তানবুলের তিন তিনিবার(এবার সহ) নির্বাচিত মেয়র কাদির তোপবাস। ছবিটা আপলোড করার জন্য ধন্যবাদ। Good Luck
203146
০৬ এপ্রিল ২০১৪ সকাল ০৯:২২
egypt12 লিখেছেন : আল্লাহ এই মহান নেতাকে সুরক্ষিত রাখুন...ইরান ও তুরস্কের ঐক্য এখন খুবই দরকার
০৭ এপ্রিল ২০১৪ রাত ০৮:১৬
153188
মুহামমাদ সামি লিখেছেন : আমীন। সত্যি বলেছেন ভাই তাদের ঐক্য এখন সময়ের ব্যাপার। ধন্যবাদ কষ্ট করে পড়ার জন্য।
203199
০৬ এপ্রিল ২০১৪ সকাল ১১:৪৯
রিদওয়ান কবির সবুজ লিখেছেন : অনেক ধন্যবাদ। তথাকথিত মিডিয়া গুলি যা প্রকাশ করে তার বেশিরভাগই যে সত্য নয় এই ফলাফল তাই প্রমান করে।
০৭ এপ্রিল ২০১৪ রাত ০৮:১৭
153189
মুহামমাদ সামি লিখেছেন : আপনাকেও ধন্যবাদ। তথাকথিত মিডিয়া গুলোর অপপ্রচার রোধে নিজেকেই মিডিয়া হতে হবে ভাই। Good Luck
203283
০৬ এপ্রিল ২০১৪ বিকাল ০৪:০৭
খোয়াব লিখেছেন : ভালো লাগলো ধন্যবাদ
০৭ এপ্রিল ২০১৪ রাত ০৮:১৭
153190
মুহামমাদ সামি লিখেছেন : আপনাকেও ধন্যবাদ ভাই ।Good Luck
203339
০৬ এপ্রিল ২০১৪ বিকাল ০৪:৪৭
০৭ এপ্রিল ২০১৪ রাত ০৮:১৮
153191
মুহামমাদ সামি লিখেছেন : আল্লাহ্‌ আপনাকে উত্তম প্রতিদান দান করুক। Good Luck Good Luck

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File