একে পার্টি ও সমকালীন তুরস্কঃ পর্ব এক
লিখেছেন লিখেছেন মুহামমাদ সামি ৩১ মার্চ, ২০১৪, ০৮:০৮:৩৫ রাত
ওসমানী খিলাফাতের পতনের পর তুরস্কের বুকে নেমে আসে ঘোর অমানিশা। ঐ সময়ে মুসলিমরা সীমাহীন জুলুম ও নির্যাতনের মধ্য দিয়ে সময় কাটিয়েছে। আধুনিক তুরস্ক গঠনের নামে ধর্ম নিরপেক্ষ রূপে গড়ে উঠা তুরস্কে মুসলমানদের উপর নেমে আসে অত্যাচারের ষ্টীম রুলার। আল্লাহ্ তায়ালাকে ডাকা, প্রকাশ্যে ইসলামের কথা বলা, আরবীতে আজান দেয়াসহ ইসলামিক কর্মকাণ্ডকে নিষিদ্ধ করে তৎকালীন ক্ষমতাসীন দল পিপলস রিপাবলিকান পার্টি(সিএইচপি)। তাদের এহেন কর্মকাণ্ডে জনগণ রিপাবলিকান পার্টি থেকে মুখ ফিরিয়ে নেয়। শুধুমাত্র আরবিতে আজান দেয়া, মসজিদে আজান দেয়া
এবং নিরবিগ্নে কোরআন-হাদিস পড়ার অনুমতি দেয়ার প্রতিশ্রুতি দেয়ায় ডেমোক্রেটিক পার্টিকে তুরস্কের মুসলিমরা বিপুল ভোট বিপ্লবের মাধ্যমে ক্ষমতায় আসীন করান। তুরস্কের এই পরিস্থিতি অতিবাহিত হওয়ার সময় ১৯৬৯ সালে তৎকালীন বড় আলেম-ওলামাদের (উনাদের মধ্যে প্রনিধান যোগ্যঃ জাহিদ কুতকু রহঃ এবং আবদুল আজিজ বাক্কানি) পরামর্শে ও আরও অন্যন্য ইসলামিক সংগঠনের সাহায্যে যুগের শ্রেষ্ঠ ম্যকানিকাল ইঙ্গিনিয়ার প্রফেসর ডঃ নাজমুদ্দিন এরবাকান ‘’মিল্লি গুরুশ’’ তথা
নামে একটা সম্পূর্ণ ইসলামী রাজনৈতিক সংগঠন গঠন করেন। তুরস্কের মুসলমানদের একান্ত সহযোগিতা ও মহান আল্লাহর ইচ্ছায় এই আন্দোলনটি খুব কম সম্যের মধ্যে তুরস্কের প্রতিটি শহর-নগর থেকে শুরু করে গ্রামে গঞ্জে ছড়িয়ে পড়ে এবং ব্যাপক জনপ্রিয়তার সাথে রাজনৈতিক শক্তি হিসেবে আত্মপ্রকাশ করে। ইসলামী আন্দোলনের উত্তর উত্তর সাফল্য দেখে মাসন ও ইহুদীশক্তি প্রথমে এরবাকানের সাথে সমজোতায় আসার চেষ্টা করে। তাদের প্রস্তাব ছিল তাদের সাথে মিলেমিশে ও তাদের পরামর্শে কাজ করলে তাঁকে প্রধানমন্ত্রীর পদে আসীন করা হবে। কিন্তু তিনি ইসলামের এই চিহ্নিত দুশমনদের ফাঁদে পা দেননি। তিনি কোরআন-সুন্নাহর ভিত্তিতে একটি রাষ্ট্র গঠনের জন্য তাঁর প্রচেষ্টা অব্যাহত রাখেন। তাদের প্রস্তাবে রাজি না হওয়ায় স্বঘোষিত মাসন তৎকালীন রাষ্ট্রপতি সোলাইমান দেমিরালের মাধ্যমে মিল্লি নিজাম পার্টিকে নিষিদ্ধ করা হয়। আদালত পার্টির প্রধান সোলাইমান দেমিরাল জনগণের কাছে গিয়ে বলে এরবাকানকে ভোট দিবেননা কারণ তিনি ক্ষমতায় আসতে পারবেনই না বরং মাঝখান থেকে রিপাবলিকান পার্টি ক্ষমতায় চলে আসবে। এ বলে সে জনগণকে জুজুর ভয় দেখিয়ে ধোঁকা দিতে চেষ্টা করত।
একে পার্টি গঠনঃ
১৯৯৭ সালের ২৮ ফেব্রুয়ারি তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী এরবাকানকে ক্ষমতাচ্যুত করার সাথে সাথে রেফা পার্টিকেও নিষিদ্ধ করে দেয়া হয়। এরপর তিনি গঠন করেন ফযিলাত পার্টি নামের আরেকটি নতুন পার্টি। এরবাকানের আপসহীনতা ও সকল ব্যাপারে ইসলামকে প্রাধান্য দিয়ে কাজ করা এবং বাতিল শক্তিকে কোন রকম ছাড় না দিয়ে চলার কারণে দলের ভিতর থেকে কিছু সংখ্যক ব্যক্তি তাঁকে অদূরদর্শী এবং দলের সকল সিদ্ধান্তে নেয়ার ব্যাপারে একনায়কের পরিচয় দেন বলে প্রপাগান্ডা চালাতে শুরু করে এবং দলের ভিতর একটা বিভদমান পরিস্থিতি সৃষ্টি করে। এসকল পরিস্থিতি চলাকালে কোন রকম রাজনৈতিক কর্মসূচী ছাড়া এরদোয়ান আমেরিকায় যাওয়া আসা শুরু করেন। এরদোয়ান ও এর একটি গ্রুপ নিজেদেরকে তরুণ প্রজন্ম হিসেবে এবং নিজেদের নেতৃত্বকে তরুণদের নেতৃত্ব দাবী করে দলের ভিতর থেকে ইসলামিক কর্মসূচীকে কমিয়ে আনার প্রচেষ্টা চালায় এবং বর্তমান দুনিয়ার প্রেক্ষাপটে দলের কর্মসূচী নির্ধারণের আহবান জানায়। একসময় যাদের ইসলামী কবিতা আবৃত্তি ও ইসলামের পক্ষে জোরালো যুক্তি উপস্থানের মাধ্যমে বক্তব্য রাখাটাও রেফা পার্টিকে নিশিদ্ধ করার একটি কারণ ছিল, সেই তাদের পক্ষ থেকে এমন প্রস্তাব আসায় সংগঠনের অন্যান্য নেতৃবৃন্দ স্তম্ভিত ও সংকিত হয়ে পড়ে। এমনকি তাঁরা এরবাকানের আনুগত্য না করে তাঁরা তাদের নিজেদের মত করে নিজেদের গ্রুপকে পাকাপোক্ত ও শক্তিশালি করার কাজে নিয়োজিত হয়ে পড়ে। ১৪ মে ২০০০ সালে ফযিলাত পার্টির প্রথম কংগ্রেসে নবিন ও প্রবিন মানে ২ টি গ্রুপ এর জন্ম হয়। নবীনদের মধ্য থেকে বর্তমান রাষ্ট্রপতি আব্দুল্লাহ গুল ৫২১ ভোট ও প্রবীণদের মধ্য থেকে রেজাই কুতান ৬৩৩ ভোট পেয়ে ফযিলাত পার্টির প্রধান নির্বাচিত হন। এখানে বলা বাহুল্য ১৯৯৭ সালের ২৮ ফেব্রুয়ারি এরবাকানকে ক্ষমতাচ্যুত করার সাথে সাথে রাজনীতি থেকেও আজিবনের জন্য নিষিদ্ধ করে দেয়া হয়। কিন্তু যে কারণে রেফা পার্টিকে নিষিদ্ধ করা হয় সে একেই কারণে ফযিলাত পার্টিকেও নিষিদ্ধ করা হয়। ফযিলাত পার্টির প্রধান হতে না পারা আব্দুল্লাহ গুল, তাঁর বন্ধু রেজেব তাইয়েফ এরদোগান, বুলেন্ট আরিন্স, আব্দুল্লাহ সেনেরসহ আরও কতিপয় বিচিশট ফযিলাত পার্টি নিষিদ্ধ করার পর খোলা সাদেত পার্টিতে যোগ দেয়নি। ইসলামের লেবাস তথা ইসলামী আন্দোলনের পরিচয় খুলে ফেলে ১৪ আগস্ট ২০০১ সালে গঠন করেন একে পার্টি।
নব গঠিত এ দলটি নিজেদেরকে আধুনিক পার্টি বলে দাবী করে। লিবারেল অর্থনৈতিক সিস্টেমকে গ্রহণ ও ডেমোক্রেটিক স্লোগানকে সামনে রেখে তাদের যাত্রা শুরু করে। অল্প কিছুদিন আগেও মিশরে মুরসি ক্ষমতায় আসার পর শরিয়াত নয় সেক্যুলারিজম এর আদলে একটি সংবিধান করার জন্য মুরসি সরকারের প্রতি আহবান জানান। এখানে প্রনিধানযোগ্য যে এরদোগান দল থেকে বের হয়ে ক্ষমতায় আসীন হওয়ার সময় বলেছিলেন –
১। আমি আওজ থেকে ইসলামি আন্দোলনের পোশাককে খুলে ফেললাম।
২। ইসরাইল হবে আমাদের কৌশলগত বন্ধুরাষ্ট্র।
৩। ইউরুপিয়ান ইউনিয়নের সদস্য হওয়ার জন্য আমাদের সকল প্রচেস্টা অব্যাহত থাকবে।
৪। লিবারেলিজম এর ভিত্তিতে রাষ্ট্র পরিচালিত হবে।
তাদের ক্ষমতায় আসার জন্য যে সকল বিষয় গুলো ফ্যাক্ট হিসেবে কাজ করেছে তাঁর মধ্যে তাঁরা আগে ইসলামী আন্দোলনের লোক ছিল এটা সকলের জানা, রেফা পার্টিকে ক্যু করে নামানোর পর মুসলিমদের উপর জুলুম নেমে আসছিল, তাঁরা প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল জুলুম নির্যাতন থেকে মুক্তি দিবে, মাদরাসা থেকে পাশ করা ছাত্র-ছাত্রীদেরকে বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির সুযোগ করে দিবে, হিজাব পড়ার উপর নিষেধাজ্ঞা তুলে দেওয়া ইত্যাদি কারণে মানুষ আকৃষ্ট হয়ে ভোট দিয়ে ক্ষমতায় আনে। যদি একে পার্টি গঠন না হত তাহলে ৪০-৫০% ভোট পেয়ে আবারও ইসলামী দলের ক্ষমতায় আরোহণ করত বলে ধারণা বিশেষজ্ঞদের। ক্ষমতায় আরোহণের পর ইউরোপীয় ইউনিয়নের সদস্য হওয়ার জন্য ইউরোপের আদলে একের পর এক আইন পরিবর্তন করতে থাকে। এর মধ্য উল্লেখযোগ্য হল বিবাহিত মহিলা যদি যেনা করে এবং তাঁর স্বামী দেখার পরও স্ত্রীর বিরুদ্ধে আদালতে মামলা করতে পারবেনা, শুকরের মাংসকে বাজারজাতের অনুমতি দান, ফাঁসী নিষিদ্ধসহ আরও অনেক বিতর্কিত আইন-কানুন। ২০০৩ সালে আমেরিকা যখন ইরাকে হামলা করে তখন তুরস্ক আমেরিকাকে ন্যাটোর সদস্য হিসেবে বিমান ঘাটি দিতে বাধ্য হয়। যে হামলায় ২ মিলিয়ন মুসলিম নিহত হয় ইরাকে। আমেরিকার তৎকালীন প্রতিরক্ষামন্ত্রী পল Wolfowitz তার তুরস্ক সফরে বলেন, ‘’আমরা ইরাক অপারেশনের ব্যাপারে সিদ্ধান্তহীনতায় ভুগছিলাম, এরদোগান আমাদেরকে অপারেশনে সাহস যুগিয়েছিল।’’ প্রায় ২ মিলিয়ন মানুষকে হত্যাকারী আমেরিকার সেনাবাহিনীকে তাইয়েফ এরদোগান সম্বোধন করেছিলেন এই বলে, ‘’আমরা আশা ও দোয়া করি যে যেসব সাহসী পুরুষ ও নারী ইরাকে অপারেশনে অংশগ্রহণ করেছেন তারা যেন ন্যুনতম ক্ষতির মাধমে যেন দেশে ফিরে যেতে পারেন,এবং ইরাকের সমস্যার যেন খুব দ্রুত সমাধান হয়ে যায়।‘ একটা সময় মধ্যপ্রাচ্যকে নতুন করে সাজানো এবং আমেরিকার কন্ট্রোলে একটা নতুন মধ্যপ্রাচ্য করা এবং গ্রেট
ইসরায়েল প্রকপ্ল বাস্তবায়ন কমিটির প্রেসিডেন্ট করা হয় এরদোগানকে। সে এই সব কাজে ইসরাইল ও আমেরিকাকে সাহায্য করে এবং সাহায্যের নিদর্শন হিসেবে তাকে Ajc (american Jewish Association) "Man of Profile" পুরস্কার প্রদান করে।
-চলবে
বিষয়: বিবিধ
১৪৬২ বার পঠিত, ৮ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন