২৮ ফেব্রুয়ারীঃ মুসলমানদের জন্য এক কালো অধ্যায়!!
লিখেছেন লিখেছেন মুহামমাদ সামি ২৮ ফেব্রুয়ারি, ২০১৪, ১০:০৬:২১ রাত
২৮ ফেব্রুয়ারী ১৯৯৭, মুসলিম বিশ্বের জন্য এক কালো অধ্যায় হয়ে থাকবে আজীবন। কি হয়েছিল সে দিন? আমাদের অনেকেরই হয়ত অজানা। ২৮ ফেব্রুয়ারি আসলে কি ঘটেছিল? ওসমানী খেলাফাতের পতনের পর মোস্তফা কামালের মাধ্যমে তুরস্ক এক ধর্ম নিরপেক্ষ রাষ্ট্রে পরিণত হল। মসজিদকে করা হল ঘোড়ার আস্তাবল। ইসলামী পোশাক-আশাককে নিষিদ্ধ করা হল। ইমামদেরকে ফাঁসিতে ঝুলিয়ে হত্যা করা হল। আজানকে আরবীর পরিবর্তে টার্কিশে দিতে বাধ্য করা হল। হরফ বিপ্লবের মাধ্যমে আরবী হরফের পরিবর্তে ল্যাটিন হরফকে গ্রহণ করা হল। এক রাতের ব্যবধানে সবাই হয়ে গেলো নিরক্ষর। মাদরাসা সার্টিফিকেটধারীদের চাকরী থেকে বঞ্চিত করা হল। এহেন কোন কর্ম ছিলনা ইসলামের বিরুদ্ধে যা করা হয়নি। যেসব কর্মকাণ্ডের কারণে এককালের মুসলমানদের সিফাহসালার সাহসী সেনাপতি মোস্তফা কামাল পরিণত হল ধর্মনিরপেক্ষদের আদর্শ হিসেবে। তখনকার সময়ে নিজেকে মুসলমান দাবী করতেও ভয় পেত জনগণ। মোস্তফা কামালের অনেক পরে ক্ষমতায় আসেন আদনান মেন্দেরেস। যাকে সেনাবাহিনী শূলীতে চড়িয়ে হত্যা করে আজানকে আরবী ভাষায় দেয়ার অনুমতি দানের কারণে ১৯৬১ সালে । তুরস্কে তখন চলছিল সেক্যুলারদের জয়জয়কার অবস্থা। এহেন অবস্থায় দেশ ও জাতিকে ধ্বসের হাত থেকে রক্ষা করার জন্য জাতির ত্রাণ কর্তারূপে আবির্ভূত হন প্রফেসর ডক্টর নেজমেদ্দিন এরবাকান নামের এক ম্যেকানিক্যাল ইঞ্জিয়ার।
১৯৬৯ সালে তিনি ''মিল্লি গুরুশ'' তথা 'জনগণের(জাতীয়) দৃষ্টিভঙ্গি'কে মুল ভিত্তি করে ইসলামী ধারার এক আন্দোলন শুরু করেন। যা খুব কম সময়ের মধ্যেই জনপ্রিয়তা পায়। National salvation Party নামের এক রাজনৈতিক দলও গঠন করেন যারা Republican people's party'র সাথে কোয়ালিশনের ভিত্তিতে ক্ষমতায় আসে ১৯৭৪ সালে। প্রফেসর এরবাকান হন উপঃপ্রধানমন্ত্রী। তুরস্কের সেনাবাহিনী বরাবরই মোস্তফা কামালের আদর্শের পদাঙ্ক অনুসরণ করেছে। তারা কোন ইসলামী সরকার বা নেতাকে সহ্য করেনি। তেমনিভাবে তারা ১৯৮০ সালে একটা ক্যু করে। এবং এরবাকানের দলকে কর হয় নিষিদ্ধ। ১৯৮৭ সালে তাঁর দলের উপর থেকে নিষেধাজ্ঞা তুলে নিলে আবার গঠন করেন welfare party.। এই দলটি ১৯৯6 সালের নির্বাচনে Right Path party'র সাথে কোয়ালিশন করে ক্ষমতা গ্রহণ করে। তিনি হন প্রধানমন্ত্রী। প্রধানমন্ত্রী হওয়ার পর তিনি আরব দেশ এবং মুসলিম দেশ সমুহের সাথে সম্পর্ক উন্নয়নে নজর দিলেন। তাঁর ১১ মাস ২৮ দিন ক্ষমতার এ স্বল্প সময়ের মধ্যে ৮ টা উন্নয়নশীল মুসলিম দেশের প্রধানদের সাথে যোগাযোগ করে গঠন করেন D-8।
তিনি ছিলেন তুরস্কের শিল্প বিপ্লবের কারিগর। তিনি স্বপ্ন দেখেছিলেন মুসলিমরা এক হয়ে সারা বিশ্ব শাসন করবে। তিনি এমন কিছু প্রজেক্ট করেছিলেন যা তাঁর বিরুধীদের হতবাক করে দিত। একবার তিনি সংসদে বিরুধিদের উদ্দেশ্যে বলেছিলেন ''আমরা যেসব প্রজেক্ট ইতিমধ্যেই বাস্তবায়ন করে ফেলেছি, সেই রকম প্রজেক্ট করার স্বপ্নও তোমরা দেখতে ভয় পাও।'' সমাজ ও রাষ্ট্রকে ইসলামের আলোকে সাজাতে চেয়েছিলেন তিনি। হিজাবকে আবার চালু করেছিলেন। কিন্তু না, এমন নেতাকে তাঁরা বেশীদিন ক্ষমতায় থাকতে দেয়নি, তাঁর একেকটা যুগান্তকারী পদক্ষেপ আর ভাষণে বীতশ্রদ্ধ হয়ে ক্ষমতায় আরোহণের মাত্র ১১মাস ২৮ দিন পর ১৯৯৭ সালের ২৮ ফেব্রুয়ারি তাঁকে ক্ষমতাচ্যুত করা হয়। তিনি বন্ধী হন। নিষিদ্ধ করা হয় তাঁর দল রেফা তথা ওয়েলফেয়ার পার্টি। রাজনীতিতে নিষিদ্ধ হন তিনি। মেয়েদের উপর চলে আসে আবার ঘোর অন্ধকার। হিজাব পরা সব মেয়ে হারালো উচ্চ শিক্ষা গ্রহণের অধিকার। পথে-ঘাটে হিজাব পরার অপরাধে মা- বোনদের উপর শুরু হল লাঞ্ছনা আর নির্যাতন। মুসলিম দেশসমুহের অর্থনৈতিক ও সামাজিক উন্নয়নের জন্য গঠিত D-8 হয়ে যায় নিষ্ক্রিয়। মুসলমানদের সার্বিক উন্নয়নে কাজ করে যাওয়ার জন্য বাংলাদেশের তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাও প্রতিশ্রুতিবদ্ধ হয়েছিলেন। আর একটা ২৮ ফেব্রুয়ারিই সব এলোমেলো করে দিল।। ঐদিন ক্যু না হলে হয়তো মুসলমানদের ইতিহাস অন্যভাবে লিখা হত।। হয়তো সবুজ এ ভূমি মজলুম মুসলমানদের রক্তে রঞ্জিত হতনা,,,।।।
শুধু একটা ২৮ ফেব্রুয়ারি ধ্বংস করে দিল সব।। আর চাইনা এমন ভয়াল ২৮!!
বিষয়: বিবিধ
১১৪৩ বার পঠিত, ৮ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
কষ্ট করে পড়ার জন্য ধন্যবাদ।
মন্তব্য করতে লগইন করুন