শহীদ আসমা বেলতাগীকে লিখা বাবা বেলতাগীর চিঠি এবং আবেগাপ্লুত তুরস্কের প্রধানমন্ত্রী (ভিডিও সহ )
লিখেছেন লিখেছেন মুহামমাদ সামি ২৫ আগস্ট, ২০১৩, ০৮:২৮:১৫ রাত
শহীদ আসমা’কে লেখা বাবার চিঠি
''আমার অতি প্রিয় মেয়ে আসমা! আমি তোমাকে বিদায় জানাচ্ছি না; বরং বলছি শ্রীঘ্রই আবার আমাদের দেখা হবে।
তুমি তোমার মাথা উঁচু করে জালিম সৈরাচার আর বন্দীত্বকে ভেঙ্গে স্বাধীনতাকে ভালবাসলে। সভ্যতার বুকে তার নিজস্ব স্থান দেয়ার জন্য এ জাতিকে নতুন করে গড়ার সেই অনাগত নীরব বিপ্লবের স্বপ্নদ্রষ্টা হয়ে তুমি বেচে থাকবে
তোমার বয়সী গতানুগতিক ছেলেমেয়েদের মত তুমি ছিলে না। যদিও তুমি প্রত্যেক পরীক্ষায় প্রথম হতে, তবুও প্রচলিত গতানুগতিক শিক্ষা ব্যাবস্থা তোমার কৌতুহল ও জ্ঞানের তৃষ্ণাকে মেটাতে পারত না।
এই ছোট্ট জীবনে আমি যথেষ্ট পরিমানে তোমার মূল্যবান সংস্পর্শ পাই নি, বিশেষভাবে বলতে গেলে তোমার সঙ্গ উপভোগ করার এতটুক ফুসরত আমি পাইনি। আমার মনে আছে সর্বশেষ যখন আমাদের দেখা হয়েছিল সেই ‘রাবেয়া স্কায়ারের’ কথা। আমরা ভীড়ের মাঝে একসাথে বসেছিলাম এবং তুমি আমায় বলেছিলে ‘বাবা, আমাদের সাথে একটু সময় দিচ্ছ, সেখানেও তুমি ব্যস্ততা দেখাচ্ছ!’। আমি উত্তরে বলেছিলাম, ‘আমার মনে হচ্ছে এই জীবনটা নিজেদের নিয়ে সময় কাটানোর মত এত বড় না! তাই দোয়া করছি আল্লাহ যেন আমাদের ভাগ্যে একই সাথে জান্নাত বরাদ্দ করেন’।
তুমি যেদিন শহীদ হলে তার দুই রাত আগে জেলখানায় আমি তোমাকে স্বপ্নে দেখলাম। সাদা রঙের বিয়ের পোশাকে তোমাকে মনে হচ্ছিল পৃথিবীর অপূর্ব সুন্দরী কোন মেয়ে। যখন তুমি নিরবে এসে আমার মাথার পাশে বসলে, আমি তোমাকে প্রশ্ন করলাম, ‘এটা তোমার বিয়ের রাত বুঝি?’ তুমি উত্তর দিলে, ‘না বাবা, আমার বিয়ে রাতে হবে না, আমার বিয়ে হবে দুপুর ’। আর যখন বুধবার দুপুরের কিছুটা পরে ভাইয়েরা আমাকে তোমার শাহাদাতের সংবাদ দিল তখনই আমি বুঝলাম, আমার স্বপ্নে তুমি কি বুঝিয়েছিলে। আর আমি জানতাম আল্লাহ তোমার আত্মাকে শহীদের মর্যদা দিয়েছেন। মাগো! তুমি আমার বিশ্বাসকে আরো শক্ত করেছো যে, আমরাই সত্য ও ন্যায়ের পথে আছি এবং আমাদের শত্রুরা আছে ‘অন্ধকারের’ পথে।
আমার মনে প্রচন্ড যন্ত্রনা এজন্য নয় যে আমি তোমার জানাযায় যেতে পারি নি এবং তোমাকে শেষবারের মত দেখতেও পারি নি; আমার হৃৎপিণ্ডে এজন্য রক্তক্ষরণ হচ্ছে না যে আমি তোমার কপালে শেষবারের মত চুমু খেতে পারি নি; এজন্যও নয় যে, তোমার জানাযা’র নামাজে নেতৃত্ব দেয়ার সৌভাগ্য আমার হয় নি। প্রিয় মা! আমি আল্লাহর কাছে প্রতিজ্ঞা করছি আমি আমার জীবনের জন্য ভীত নই, আমাকে জেলখানায় বন্দী করে রেখেছে এজন্যও আমি ভীত নই; বরং সেই বার্তা আমি পৌছে দিতে চাই যে, বিপ্লবকে বাস্তাবায়ন করতে, বিজয় ছিনিয়ে আনতে, আর বিপ্লবের উদ্দেশ্য পরিপূর্ণ করতে কেন তুমি তোমার জীবন উৎসর্গ করলে।
দানবের প্রতিরোধে তোমার আত্মা মাথা উঁচু করে দাড়িয়ে আছে। বিস্বাসঘাতক বুলেট তোমার বুক ভেদ করে দিয়েছে। কি অসাধারণ সুউজ্জ্বল ও অসম্ভব দৃঢ় মানসিকতা আর শুদ্ধ আত্মা তুমি। আমি দৃঢ় বিশ্বাসী যে তুমি আল্লাহর কাছে সৎ ছিলে আর এজন্যই শাহাদাতের সৌভাগ্যবান করে আমাদের থেকে আল্লাহ তোমাকেই মনোনিত করেছেন।
পরিশেষে, আমার অতি প্রিয় মেয়ে ও সম্মানিত শিক্ষক, আমি তোমাকে বিদায় জানাচ্ছি না; বরং আমি তোমাকে অভিবাদন জানাচ্ছি। রাসূল(স) ও তাঁর সাথীদের সাথে ‘হাউজে কাউসারে’ আমরা নিশ্চিতভাবেই শীঘ্র আবার মিলিত হচ্ছি। যেখানে আমরা একে অপরের সাথে সময় কাটাবো এবং আমরা পাব আমাদের সেই কাঙ্খীত সময়। ''
তুরস্কের প্রধানমন্ত্রী এরদোগানের সাক্ষাৎকার ঃ
http://www.youtube.com/watch?v=U0uOhLcCGtk
(তুরস্কের প্রধানমন্ত্রী এবং সাংবাদিকের মধ্যকার কথোপকথনের হুবহু বাংলা অনুবাদ )
সাংবাদিকঃ আপনার মেয়ে শেয়ার করেছিল মিডিয়ায় যে,আমার বাবাকে (এরদোগান)এভাবে কখনো কাঁদতে দেখিনি। -- কেন আপনি এত গভীরভাবে আবেগাপ্লুত হয়েছেন ?কোন বিষয়টি আপনাকে সবচেয়ে বেশী আপ্লুত করেছে ?
এরদোগানঃ কারণ এ রকম ঘটনা আমার জিবনেও ঘটেছিল।রাতে সব সময় দেরীতে বাসায় ফিরতাম। এক রাতে আমার মেয়েও আমার রুমের দরজায় নক করেছিল। আমি কোন এক কাজের জন্য মেয়ের কাছ থেকে পৃথক হওয়ার দরকার পড়েছিল।আমাদের বিদায় নেয়ার মত পর্যাপ্ত সময় ছিলনা। সংগঠনের কাজে সময় দেয়ার কারণে বাসায় ফিরতে রাত ১-২ টা হয়ে যেত। ফিরতে ফিরতে আমার সন্তানরা ঘুমাত।তাই তাঁদেরকে সময় দিতে পারতাম না। আর আসমাকে লিখা তাঁর বাবার লিখা চিঠি পড়ে আমার সেসব দিনের কথা মনে পড়ে গেল। তাঁর বাবাও সংগঠনের কাজের কারণে তাকে সময় দিতে পারতেননা।তিনি চিঠিটা লিখাী র সময় এ কথাগুলো লিখেছিলেন এবং আমি নিজের চোখের সামনে আমার ছেলে মেয়ে গুলোকে কল্পনা করতেছিলাম ।এমনকি তাঁর বাবা তার জানাজা নামাজ পড়তে পারেনি।এবং আসমার মৃত্যুর আগে রাবেয়া ময়দানে করা বাবা-মেয়ের কথোপকথন আমাকে সবচেয়ে বেশআবেগাপ্লুত করেছে ।অবশ্যই শাহাদাত খুব পৃথক এবং অনেক বড় এবং সৌভাগ্যের বিষয়।আসমা তাঁর দুনিয়ার জীবন পরিপূর্ণভাবে উপভোগ না করে শাহাদাতের তামান্নায় শহীদ হওয়ার জন্য সংগ্রাম করে গেছে।আমি দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করি আসমা এবং তাঁর বাবার মধ্যকার কথোপকথন ইসলাম এবং মুসলমান বিশ্বের দেশ সমুহের তরুণ-যুবকদের জন্য একটা শিক্ষণীয় বিষয় এবং উদাহরণ হয়ে থাকবে এবং বাবা-সন্তানের সম্পর্কে আমাদের জন্য উদাহরণ হয়ে থাকবে।আমি এখন প্রধানমন্ত্রী না সাধারণ নাগরিক তায়েফ এরদোগান হিসেবে এ কথা গলো বলছি।আমি সবাইকে অনুরোধ করব আমরা একে অপরকে একমাত্র আল্লাহর জন্য ভালবাসি এবং আমাদের দেশ এবং জাতির মধ্যে যারা ফেতনা ফ্যাসাদ সৃষ্টি করতে চায় তাদেরকে ফ্যাসাদ সৃষ্টির সুযোগ না দিই।
-- আল্লাহ আমাদের সবাইকে শহীদ হওয়ার তাওফিক দান করুক ,আমীন-- ।
বিষয়: বিবিধ
১৪১৫ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন