তারিক রমাদানের জীবন পাল্টে দিলেন দস্তয়ভস্কি

লিখেছেন লিখেছেন দার্শনিক ১৩ জুন, ২০১৩, ০২:৩১:৩৬ দুপুর

লেখাটি লিখেছেন ওয়াহেদ সুজন



[ছবি : প্রফেসর ড তারিক রমাদান]

‘নিঃসংশয়ে বলা যায় দস্তয়ভস্কির ব্রাদার্স কারামজভ আমার জীবন বদলে দেয়া বই।’ বলেছেন মিশরীয় বংশোদ্ভুত লেখক তারিক রামাদান। হে ফ্যাস্টিভাল-এর একটি অনুষ্ঠানে তার নতুন বই আরবের জাগরণ: ইসলাম ও নয়া মধ্যপ্রাচ্য (The Arab Awakening: Islam and the New Middle East) গ্রন্থ সম্পর্কে বলতে গিয়ে তারিক এ কথা বলেন। সূত্র: দ্য টেলিগ্রাফ।

ব্রাদার্স কারামজভ সম্পর্কে তারিক রামাদান আরো বলেন, এই উপন্যাস শুরু করা কিছুটা কঠিন। কিন্তু লেখকের তৈরি গ্রন্থিভূত গল্প ও নানামুখী চরিত্রের জগতে প্রবেশ করলে উপন্যাসটি আপনার জন্য সহজ হয়ে আসবে। আপনি অনুভব করতে শুরু করবেন যা ঘটছে এবং যে পথে গল্পটা এগুচ্ছে তা আয়নার মতো। মনে হবে এটা আপনার নিজেরই জীবন।

বইটি তিনি অনেকবার পড়েছেন। অনুষ্ঠানের দর্শক-শ্রোতাদের তিনি জানান, তরুণ বয়সে বইটি প্রথম পড়ি। মূল গল্পকাঠামো ও চরিত্রগুলো নিয়ে যে পথে তিনি (ঔপন্যাসিক) এগুচ্ছেন তাতে আমি হতবাক হয়ে গেলাম। দস্তয়ভস্কি তার চরিত্র ও তাদের বৈশিষ্ট্য গল্পের পরতে পরতে যোগ করেছেন। এটা আমাদের জীবনের ক্ষেত্রেও সত্য : গল্পের মাধ্যমে পাওয়া অভিজ্ঞতার দ্বারা আপনি কোন একটা চরিত্রকে খুব শিগগিরই বুঝতে পারেন না। এমন যে প্রথমে ভ্রাতৃত্ব, পরে বন্ধুত্ব, তারপর কোন নির্দিষ্ট পরিণতি ও ভালোবাসা, একাকিত্ব ও মৃত্যুর মতো মানুষের পারস্পরিক সংযোগ ও সম্পর্কের জটিলতাকে বুঝতে পারা দরকার।

তারিক ঔপন্যাসটির প্রধান তিন চরিত্র সম্পর্কে বলেন, দিমিত্রি, ইভান ও আ্যালেক্সাই (আলিয়োশা) হলো এই উপন্যাসের প্রধান তিনটি চরিত্র। তারা সবাই আমাদের মানবিক অসংগতি, সংগ্রাম ও আশাবাদের মর্মশাঁসকে প্রতীকীভাবে উপস্থাপন করে। দিমিত্রির লালসা, যা কিছু কামনা-বাসনা, আবেগ ও উচ্ছাস মানুষের শরীরসর্বস্বতাকে উপস্থাপন করে। তার মতে সুখের চাবিকাঠি আছে কামনার সন্তুষ্টির মধ্যে। দ্বিতীয় ভাই ইভানের চরিত্র কিছুটা ভিন্ন, যে কিনা দার্শনিক প্রশ্নগুলোর বুদ্ধিবৃত্তিক সমাধান খুঁজে বেড়ায়। এটাই এমন এক চরিত্র, সেসব মানুষের যাতনাকে উপস্থাপন করে যারা অনেক প্রশ্নের কম সন্তোষজনক জবাব পেয়েছে। কেন আমরা এখানে? এখানে এত অবিচার কেন? এবং যদি একজন ঈশ্বর থাকেন তবে কেন জগতের এত যাতনা অনুমোদন দেন? ফলশ্রুতিকে এই দুই চরিত্র উদ্বিগ্নতায় ভরপুর।



[ছবি : দস্তয়ভস্কি]

তারপর আসি তৃতীয় ভাই আ্যালেক্সাই, আলিয়োশার কথায়। মূলত আলিয়োশা নামটি দেয়া হয় দস্তয়ভস্কির তরুণ ছেলে মারা যাওয়ার পর। এটা আদর্শায়িত চরিত্র। সে বুদ্ধিবুত্তিক প্রশ্ন ও শারীরিক চাহিদা অতিক্রম করে গেছে, যে কিনা ধীর স্থির। তার কাছে আধ্যাত্মিক উত্তর আছে। শুধুমাত্র হৃদয়ের কাছাকাছি থাকার চেষ্টা করে বলে সে শারীরিক চাহিদার বাইরে। সে যিশুর মতন; শারিরীক কামনা ও সন্তুষ্টির বাইরে সে অর্জন করেছে আধ্যাত্মিকতায় অন্তস্থিত স্থিরতা ও প্রজ্ঞার সুউচ্চ ধাপ।

তিনটি চরিত্রই আকর্ষণীয়। যে মানব অনুভূতিগুলোর অসংগতি আমরা বিশেষত বেড়ে ওঠার কালে অভিজ্ঞতায় পাই— এবং আমাদের অনুসন্ধান, প্রত্যাশা ও জীবনের আশাবাদ এই তিনটি চরিত্রের মাধ্যমে হাজির ও অনূদিত হয়েছে। আমি ভাবি এটা এমনই বই আপনার বারবার পড়া উচিত। প্রতিটি পঠনে আপনি জীবনের কোন সময়ের ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতার উপর ভর দিয়ে বুঝতে পারবেন।

তিন ভাইয়ের দ্বারা উপস্থাপিত তিনটি প্রতীকী আদর্শ মূলত ফরাসী দার্শনিক ব্লেইস পাসকেলের লেখা ধারণার অনুবাদ। তার মতে মানব সত্তার স্বভাবগতভাবেই তিনটি মাত্রা। শরীরি আকর্ষণ, বুদ্ধিবুত্তিক অনুসন্ধান ও আধ্যাত্মিক আশাবাদিতা। যেখানে মানব সত্তা সমাধান খুঁজে। এটি যাতনা, অস্থিরতা, অসংগতি ও ক্ষমাপরায়ণতা এবং কিভাবে বিচারশীলতা অতিক্রম করতে হয় তার প্রকৃত বই। এটা ভালোবাসারও, যা আলিয়াশো তার চারদিকে ছড়িয়ে দেন— কম যাতনা, কম সমালোচনার, অধিক ভালোবাসার। দস্তয়ভস্কির বই অনেক বেশি মানব স্বাধীনতা নিয়ে, স্বাধীনতার প্রকৃত অর্থ বুঝতে ও শান্তির প্রকৃত অর্থ বুঝতে আপনাকে আমন্ত্রণ জানায়।

বিষয়: বিবিধ

২৪২৬ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File