মহীয়সী নারী : মারিয়াম জামিলাহ
লিখেছেন লিখেছেন দার্শনিক ১২ জুন, ২০১৩, ১১:৪১:৪৩ সকাল
একজন মহীয়সী নারীর নাম মারিয়াম জামিলাহ। তিনি মারিয়াম জামিলাহ নিউ ইয়র্ক সিটিতে জার্মান বংশোদ্ভূত ইহুদি পরিবারে জন্মগ্রহণ করেছিলেন ১৯৩৪ সালের ২৩ মার্চ। তার নাম রাখা হয়েছিল মার্গরেট মারকাস। তিনি কৈশোরেই জুদাইজম এবং অন্যান্ ধর্মবিশ্বাস নিয়ে আগ্রহী ছিলেন এবং পড়াশোনা করেন। সত্যের প্রতি ও জ্ঞানের প্রতি আগ্রহ থেকেই তিনি ১৯৬১ সালে ইসলাম ধর্মগ্রহণ করেন। তিনি তিরিশটির বেশি বই লিখেছেন। আল্লাহর দ্বীনের জন্য আজীবন ত্যাগ স্বীকার করা জ্ঞানী, গুণী এই মানুষটি ২০১২ সালের ৩১ অক্টোবর আল্লাহর সুবহানাহু ওয়া তা'আলার ডাকে পাড়ি জমান পৃথিবী ছেড়ে।
মারিয়াম জামিলাহ বেড়ে ওঠেন সেকুলার পরিবেশে। তিনি নিউ ইয়র্ক ইউনিভার্সিটিতে পড়ার সময় ধর্মের প্রতি আগ্রহবোধ করেন। তার নিজস্ব পরিবেশে ধর্মশিক্ষার কোন নির্দেশনা না পেয়ে তিনি অন্যান্য ধর্মের প্রতি জানতে আকৃষ্ট হন। তার এই আগ্রহ ও আকর্ষণ তাকে অনেকগুলো ধর্মের বিষয় জানতে, বিভিন্ন ধর্মের গভীরের তাৎপর্য জানতে সাহায্য করে। হাই স্কুলে পড়ার সময়ই তিনি এশিয়ান এবং বিশেষ করে আরব কালচারের প্রতি আগ্রহী ছিলেন। আরব এবং ফিলিস্তিনিদের প্রতি ইসরাইলের অত্যাচার ও অন্যায় আচরণের প্রতিবাদ করতেন তার পরিচিতজনদের কাছে তখন থেকেই। একটি সূত্র থেকে জানা যায়, তিনি হলোকাস্টের ছবি থেকে ফিলিস্তিনিদের দুঃখ-কষ্টের প্রতি আগ্রহী হন, পরবর্তীতে একটি ইহুদীবাদী তরুণ গ্রুপে যান এবং অবশেষে ইসলামের মৌলিক ধারার প্রতি আকৃষ্ট হন। ১৯৫৪ সালে তিনি ইসলাম-এর সাথে পরিচিত হন।
মারিয়াম জামিলাহ মারমাদুক পিস্কথালের কুরআনুল কারীমের অনুবাদ পড়ে মুগ্ধ হন। পরবর্তীতে তিনি মুহাম্মাদ আসাদের 'রোড টু মক্কা' পড়ে অনুপ্রাণিত হন। মুহাম্মাদ আসাদও ইসলামে ফিরে আসা একজন ইহুদি পরিবারে জন্ম নেয়া মানুষ ছিলেন। উস্তাদা মারিয়াম জামিলাহ পরবর্তীতে মুহাম্মাদ আসাদের এই বইটিকে তার ইসলামে ফিরে আসার পেছনে প্রভাব রেখেছিল বলে উল্লেখ করেন।
ইসলাম নিয়ে তার এই পড়াশোনার ফলে তিনি বন্ধনে জড়িয়ে পড়েন আর তার বিশ্বাসের একজন মুখপাত্র হয়ে পড়েন। তিনি ইসলাম গ্রহণের আগেই ফিলিস্তিনের প্রতি পাশ্চাত্যের মানসিকতার বিরুদ্ধে কথা বলেন, মুসলিম বিশ্বাস নিয়ে পাশ্চাত্যের ভ্রান্ত সমালোচনার বিরুদ্ধে কথা বলতে থাকেন -- যা তার ব্যক্তিগত জীবনকে অশান্ত করে তোলে। তবু তিনি সমস্ত বাধা-বিপত্তিকে সাথে নিয়েই তার প্রতিবাদ অক্ষুণ্ণ রাখেন।
১৯৬১ সালের ২৪ মে তিনি নিউ ইয়র্ক শহরে ইসলাম গ্রহণ করেন। ইসলাম গ্রহণের পর দক্ষিন আফ্রিকার ডারবান থেকে প্রকাশিত পত্রিকা মুসলিম ডাইজেস্টে তিনি লেখালেখি শুরু করেন। এই জার্নালে লেখালেখির সময় উস্তাদা মারিয়াম জামিলা সাইয়েদ আবুল আলা মওদূদীর চিন্তাধারার সাথে পরিচিত হন, যিনিও একই পত্রিকায় লিখতেন। তিনি আবুল আলা মওদূদীর চিন্তায় অনুপ্রাণিত হন এবং তার পাশ্চাত্য এবং ইসলাম নিয়ে গভীর চিন্তাভাবনা মাওলানার সাথে শেয়ার করেন। সেই চিঠিগুলো পরবর্তীতে বই আকারে প্রকাশিত হয়।
উস্তাদা মারিয়াম জামিলাহ ১৯৬২ সালে পাকিস্তানে পাড়ি জমান ইসলামের প্রতি ভালোবাসায়। পেছনে তার পরিবার-পরিজনসহ সবকিছুকে ত্যাগ করে আসেন দ্বীনকে আঁকড়ে ধরতে এবং তার সাধ্যমতন কাজ করে যেতে। তিনি পাকিস্তান জামায়াত-ই-ইসলামির একজন নেতা, মুহাম্মাদ ইউসুফ খানের সাথে বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হন। পাকিস্তানে আসার পর থেকে অনেক লেখালেখি করতে থাকেন। তার চিন্তাধারার বৈশিষ্ট্যই হলো আধুনিক বিশ্বের এই প্রেক্ষাপটে পাশ্চাত্য এবং মুসলিম সভ্যতার দ্বন্দ্বগুলো নিয়ে এবং তার গভীরতম বিষয়গুলো নিয়ে। তিনি নিজে পাশ্চাত্য এবং ইহুদি বিশ্বাস ও চেতনার পরিবেশে বেড়ে ওঠা বলে তার এই উপলব্ধি অত্যন্ত গভীর আর সূক্ষ্ম।
মারিয়াম জামিলাহ তার জীবনে দু'হাত ভরে লিখে গেছেন। ইসলামিক মূল্যবোধ এবং সংস্কৃতি নিয়ে তিনি অজস্র বই লিখেছেন যা অত্যন্ত শক্তিশালী এবং বৈপ্লবিক। এই মহীয়সী নারীর মৃত্যু আমাদের স্মরণ করিয়ে দেয় -- বিগত কয়েক দশক ধরে আমরা ক্রমাগত ইসলামের আলোয় আলোকিত মুক্তার মতন ঝলমলে প্রাণগুলোকে হারাচ্ছি এই পৃথিবী থেকে। মহান আল্লাহ রব্বুল আলামীন তাদের জীবনকে কবুল করে নিন। উস্তাদা মারিয়াম জামিলাহর বর্ণাঢ্য ও ত্যাগে ভরা জীবনকে কবুল করে তাকে যেন আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তা'আলা জান্নাতুল ফিরদাউসের উচ্চ মর্যাদা দান করেন।
তাঁর লেখা প্রায় তিরিশটি বইয়ের কয়েকটি হলো -
1. ISLAM VERSUS THE WEST
2. ISLAM AND MODERNISM
3. ISLAM IN THEORY AND PRACTICE
4. ISLAM VERSUS AHL AL KITAB PAST AND PRESENT
সূত্রঃ
১) উইকিপিডিয়া : মারিয়াম জামিলাহ
২) বই - ইসলাম ভার্সাস দি ওয়েস্ট / বায়োগ্রাফি অংশ
৩) মারিয়াম জামিলাহর সাহিত্যকর্মের উপরে তৈরি ব্লগ
বিষয়: বিবিধ
২৫৫৯ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন