গাইরে মুকাল্লিদ আলেমদের পারষ্পরিক মতবিরোধী (পর্ব - ১)

লিখেছেন লিখেছেন আবদুস সবুর ০৪ জানুয়ারি, ২০১৬, ০৩:৪১:৪৮ দুপুর

কৈফিয়ত :

এই বিষয়ে কলম ধরতে বাধ্য হয়েছি আমাদের দেশের কিছু গাইরে মুকাল্লিদ আলেমদের কারনে। তাদের অনবরত সালাফদের প্রতি অপবাদ সাধারন মানুষের মনে কিছুদিন পর ইসলামের প্রতি মানুষের সন্দেহ ঢুকিয়ে দেবে। ওনারা দাবি করছেন সালাফদের মধ্যে যে মতবিরোধগুলো অর্থাৎ মাযহাবসংক্রান্ত মতোবিরোধগুলো সহীহ হাদীস না মানার কারনে সৃষ্টি হয়েছে।

যেমন উদাহরন হিসেবে বলা যেতে পারে, গাইরে মুকাল্লিদদের অন্যতম একজন শায়খ আকরামুজ্জামান বিন আবদুস সালাম সাহেব “পর্যালোচনা ও চ্যালেঞ্জ” বইয়ে উল্লেখিত কথাগুলো। তিনি বলেন, “মাযহাবী ভিন্নতা প্রতিষ্ঠিত হয়েছে দূর্বল অথবা জাল হাদীসের উপর ভিত্তি করে। এ ক্ষেত্রে সহীহ হাদীস মেনে নিলেই ভিন্নতা দূর হয়ে যায়।”

দেখুন :



আমাদের দেশের গাইরে মুকাল্লিদ ভাইদের দাবি হল সহীহ হাদীস মানলে নাকি আর মতভিন্নতা থাকবে না। বেশ। আমাদের দেশের গাইরে মুকাল্লিদ ভাইরা তো সহীহ হাদীস মানার দাবি করে থাকেন (যদিও বাস্তবতা ভিন্ন। এই বিষয়ে পরে আলোচনাে আসবে)। আসুন আমরা দেখি তাদের দাবি অনুযায়ী তারা মতভিন্নতা পরিহার করতে পেরেছেন কি না . . .

মতভিন্নতা ১. রুকু পেলে রাকাত হবে কি না ?

আমাদের দেশের গাইরে মুকাল্লিদ ভাইদের পরিচিত ও প্রসিদ্ধ এই প্রকাশনীর নাম হল “তাওহীদ পাবলিকেশান্স”। এই পাবলিকেশান্স থেকেই আমাদের গাইরে মুকাল্লিদ ভাইদের অনেক বই বের হয়েছে এবং হচ্ছে। আসুন আমরা এই পাবলিকেশান্সের বই লিস্টের অবস্থাটা একটু দেখি।

এই পাবলিকেশান্সের বইয়ের লিস্টের ১৪ নং পৃষ্ঠায় ২৯৯ নং বইয়ের নাম হল, “রুকু পেলে রাকাত” হবে, লেখক “ইবনু আহিলাহ”। অর্থাৎ কেহ যদি ইমামকে রুকু অবস্থায় পায় তবে তার রাকাত হবে।



এবার এই লিস্টের ১৪ নং পাতার ৩১২ নং বইটির নাম দেখুন, “রুকু পেলে রাকাত হবে না” লেখক আব্দুস সাত্তার কালাবগী। অর্থাৎ রুকু পেলে রাকাত হবে না।

বইয়ের লিস্টের ভিতরেই একই পাতায় নামায নিয়ে মতোবিরোধ লাগিয়ে দিয়েছে উনারা। অথচ ওনাদের দাবি হল সহীহ হাদীস মানালে নাকি আর মাযহাবী মতভিন্নতা থাকবে না। আমরা তাদের সবিনয়ে জিজ্ঞাসা করব তো ভাই আপনাদের এই অবস্থা কেন ?

মতভিন্নতা ২. বিসমিল্লাহ জোড়ে পড়া যাবে কি যাবে না ?

বিসমিল্লাহ জোড়ে পড়া যাবে কি যাবে না এই বিষয় নিয়ে গাইরে মুকাল্লিদ আলেমদের মধ্যে এখতেলাফ শুরু হয়ে গেছে।

যেমন শায়খ আকরামুজ্জামান বিন আবদুস সালাম সাহেবের গবেষনা ও সম্পাদনায় প্রকাশিত বই “ছলাত আদায়ের পদ্ধতি”-তে উল্লেখ করা হয়েছে, “ছলাতে উচ্চস্বরে ও নিম্মস্বরে উভয় নিয়মে বিসমিল্লাহ পড়ার হাদীস সহীহ সনদে বর্ণিত হয়েছে। সুতরাং উভয় নিয়মের উপর আমল করা যাবে।”

অথাৎ শায়খ আকরামুজ্জামান বিন আবদুস সালাম সাহেবের মতে সলাতে মাঝে মধ্যে উচ্চস্বরেও বিসমিল্লাহ বলা উচিত। যেহেতু তা সহীহ হাদীসে আছে।



আবার আমাদের আরেক গাইরে মুকাল্লিদ আলেম আলেম মুরাদ বিন আমজাদ সাহেব বলছেন যে, “আমাদের সমাজে কিছু তথাকথিত নামধারী আহলে হাদীসকে “বিসমিল্লাহকে ......। ... স্বশব্দে পড়া সলাতে “বিসমিল্লাহ” উচ্চস্বরেও পড়েন এবং এর পক্ষে কিছু দূর্বল হাদীস দ্বারা দলীল পেশ করেন; অথচ এর নির্ভরযোগ্য কোন ভিত্তি নেই।”

অথাৎ গাইরে মুকাল্লিদ আলেম আলেম মুরাদ বিন আমজাদ সাহেবের মতে, “যারা বিসমিল্লাহকে সলাতে উচ্চস্বরে পড়েন তারা তথাকথিত নামধারী আহলে হাদীস আলেম। তারা ” ! তো এই তথাকথিত নামধারী আহলে হাদীস আলেম কে হলেন ? শায়খ আকরামুজ্জামান বিন আবদুস সালাম ই তো। তাই না ?!

আবার যে হাদীসগুলো শায়খ আকরামুজ্জামান বিন আবদুস সালামের কাছে সহীহ তা মুরাদ বিন আমজাদের কাছে “দূর্বল, এর কোন নির্ভরযোগ্য ভিত্তি নেই”।




আবার তারা একই টেবিলে বসে আহলে হাদীসের পক্ষে বাহাসও করেন ! বাহ বাহ . . .



বাহাসটি দেখতে ক্লিক করুন- https://www.youtube.com/watch?v=d-PH4YhJBCA

মতভিন্নতা ৩. তাসবিহ দ্বারা কি জিকির করা যাবে ?

মুকাল্লিদ আলেম মুরাদ বিন আমজাদ সাহেব একটি বই লিখেছেন, নাম হল “সহীহ আক্বীদার মানদন্ডে তাবলীগী নেসাব”। সেখানে তিনি একটি শিরোনামই দিয়েছেন, “তাসবিহ দ্বারা যিকির করা বিদায়াত”। অর্থাৎ কেহ যদি তাসবিহ দিয়ে যিকির করল তবে সে বিদায়াত করল।



এবার দেখি আরেকটি বই “ফাতাওয়া আরকানুল ইসলাম”। যেটি লিখেছেন শায়খ মুহাম্মদ বিন সালিহ আল উসাইমীন রহ.। অনুবাদ ও সম্পাদনা যারা করেছেন তারা হলে, শায়খ আবদুল্লাহ শাহেদ, শায়খ আবদুল্লাহ আল কাফি এবং শায়খ আকরামুজ্জামান বিন আবদুস সালাম। এই বইয়ের ৩৯০ নং পৃষ্ঠায় “তাসবিহ দানা দ্বারা জিকির পড়ার বিধান কি” প্রশ্নের জবাব বলা হয়েছে, “তাসবিহ দানা ব্যবহার করা জায়েজ। ...”



সম্মানিত পাঠক এবার আপনারাই বলুন আমাদের গাইরে মুকাল্লিদ আলেম মুরাদ বিন আমজাদ সাহেবের ফতওয়া অনুযায়ী বিদায়াতী কে হলেন ?

শায়খ মুহাম্মদ বিন সালিহ আল উসাইমীন রহ., শায়খ আবদুল্লাহ শাহেদ, শায়খ আবদুল্লাহ আল কাফি এবং শায়খ আকরামুজ্জামান বিন আবদুস সালাম কি বিদায়াতী হলেন না ?


এতদিন ধরে সালাফদের দেখানো পথ থেকে সরে এসে ভিন্নমতের আলেমদের মতামতকে সন্মান না দেখিয়ে উল্টো বিদায়াতী ফতওয়া দিতে দিতে এখন নিজেদেরকে নিজেরাই বিদায়াতী ফতওয়া দেয়া শুরু হয়েছে এবং এই লিস্ট খুব একটা ছোট নয়।

আজ এ পর্যন্তই . . .

(চলবে)

বিষয়: বিবিধ

২১২১ বার পঠিত, ৮ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

356093
০৪ জানুয়ারি ২০১৬ বিকাল ০৫:৩৬
সঠিক ইসলাম লিখেছেন : আমার চৌদ্দ পুরুষ সব গোড়া হানাফি আলেম, তাই আমি আমার রক্ত-মাংস-অস্থি-মজ্জা সব হানাফি, আর কেয়ামত পর্যন্ত হানাফি মাজহাব মতেই আমল করে যাব ইনশাআল্লাহ। কিন্তু হানাফি ভাইদের কাছে নীচের পোষ্ট গুলোর কোন জবাব আছে কি ?

1. https://www.facebook.com/permalink.php?story_fbid=1637314893201330&id=100007685058871&pnref=story

2. https://www.facebook.com/56abdullah/posts/924210254282186

3. https://www.facebook.com/56abdullah/posts/925106684192543

4. https://www.facebook.com/56abdullah/posts/929063140463564

৫। http://www.bd-first.net/blog/blogdetail/detail/4803/TrueIslam/72342#.VopZFVLLfVY
০৪ জানুয়ারি ২০১৬ সন্ধ্যা ০৭:৪৩
295696
আবু জান্নাত লিখেছেন : ভাই এখানে পোষ্ট হলো আহলে হাদিসদের নিয়ে। আর আপনি প্রশ্ন ছুড়লেন হানাফিদের কাছে। মতলবটা বুঝলাম না।
০৪ জানুয়ারি ২০১৬ রাত ১০:৪০
295708
সঠিক ইসলাম লিখেছেন : কারন পোষ্ট দাতা হানাফি আর উনি সব সময় অন্যের দোষ খুজে বেড়ায়।
০৭ জানুয়ারি ২০১৬ রাত ০৯:১২
295921
আবদুস সবুর লিখেছেন : আবু জান্নাত, উনাদের উদ্দেশ্য কোনদিনই বুঝবেন না। এতটুকু সাহস নেই নিজের আসল নাম নিয়ে ব্লগিং করবে। আসলে এরা হিন্দু না খৃষ্টান না নাস্তিক তা আল্লাহই জানেন।

আর আমার পোষ্টের জবাব তো এ জীবনেও পাবেন না ওনাদের থেকে। আর ওনাদের দেয়া তথ্য সম্পর্কে জানতে চান। দেখুন-

https://www.youtube.com/watch?v=StRsOTi9iZ0

https://www.youtube.com/watch?v=DNsradcQAPA
১০ জানুয়ারি ২০১৬ সকাল ১০:২৪
295992
সঠিক ইসলাম লিখেছেন : আমার মন্তব্যের দলীলগুলোর সাথে মুজাফ্ফর বিন মহসিন বা তাওহীদ প্রকাশনীর সম্পর্ক কি ?
356126
০৪ জানুয়ারি ২০১৬ রাত ১০:২৫
আবু জান্নাত লিখেছেন : আসসালামু আলাইকুম ওয়া রাহমাতুল্লাহ
আমার ক্ষুদ্র জ্ঞানে মনে হয়ঃ উনার আহলে হাদীস শব্দটিকে লেভেল হিসেবে ব্যবহার করে। মূলত ওরা প্রত্যেকে নিজে নিজে একেক জন মুজতাহিদ। নিজেদের মদের পক্ষে একই হাদীসকে সহীহ, আবার কেউ জয়ীফ বলে চালিয়ে দিচ্ছে। আসলে আমরা সাধারণরাই বোকা। সহীহ হাদীস বললেই তাতে হুমড়ি খেয়ে পড়ি। নিজেদের তো ইলম কালাম নেই। তাই কেউ সহীহ হাদীস বললেই শব্দটি বললেই হল।

একই চাদ দেখা রোঝা ও ঈদ নিয়ে আহলে হাদিসদের মধ্যে বিশাল মতানৈক্য রয়েছে। স্ত্রী সহবাস ও পায়খানা করা অবস্থায় সালাম দেওয়া নিয়ে তাদের মতানৈক্য রয়েছে। সরব ক্বেরাতের নামাযে মুক্তদীর সূরা ফাতেহা পড়ার বিষয়ে তাদের মতানৈক্য রয়েছে। এমনকি আল্লাহ তায়ালার অবস্থান আরশ হওয়ার ব্যপারেও তাদের মতনৈক্য। রুকু থেকে উঠে তাহ বাঁধবে কিনা, তা নিয়েও তাদের মতানৈক্য।

আচ্ছা ভাই তাদের ঐক্যটা কোথায়া????????????
০৭ জানুয়ারি ২০১৬ রাত ০৯:১৪
295922
আবদুস সবুর লিখেছেন : সুন্দর বলেছেন। একই চাদ দেখা রোঝা ও ঈদ নিয়ে অলরেডি ভোলাতেই তাদের ভিতরে বাহাস হয়ে গেছে।

তারা কখনও আহলে সুন্নাহ ওয়াল জামায়াতের ওলামাদের সাথে বসতে আগ্রহী নয়। আমাদের কথা হল কেন ? যদি আসলেই সত্যের অনুসারী হন তবে ওনা সাথে বসে মিমাংসা করতে, ওনাদের ভুলগুলো ধরিয়ে দিতে এত ভয় কেন ? নাকি শর্ষের মধ্যে ভুত ?
356488
০৮ জানুয়ারি ২০১৬ রাত ০৯:১৫
আওণ রাহ'বার লিখেছেন : একসূচিতে এক বিষয় দুভাবে রুকুর মাসঅালা বাবারে বাবা।
বুদ্ধি দুরস্ত হোক।

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File