প্রায় ৬০০ পৃষ্ঠার কুরআন ও সুন্নাহর দলীলসমৃদ্ধ নামাযের বই। ডাউনলোড করুন...
লিখেছেন লিখেছেন আবদুস সবুর ২০ ডিসেম্বর, ২০১৫, ০৯:৩৩:৪৫ সকাল
প্রায় ৬০০ পৃষ্ঠার কুরআন ও সুন্নাহর দলীলসমৃদ্ধ নামাযের বই মাত্র ৬ মেগাবাইট !!!
বইয়ের নাম : দলীলসহ নামাযের মাসায়েল (বর্ধিত সংস্করণ)
লেখক : মাওলানা আবদুল মতিন
ডাউনলোড লিঙ্ক-
দলীলসহ নামাযের মাসায়েল
অনলাইনে কিনতে হলে ক্লিক করুন-
http://www.kitabghor.com/books/dalil-saho-namajer-masayel-bardhito-sangskaran.html
বিষয়: বিবিধ
৪৭৬৬ বার পঠিত, ১৯ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
ইনশাআল্লাহ আগামী মাসে কিনবো।
জাজাকাল্লাহ
-
হানাফী আলেম আব্দুল মতিন সাহেব লিখিত ‘দলিলসহ নামাযের মাসায়েল’ (প্রকাশক : মাকতাবাতুল আযহার, ঢাকা–এপ্রিল’২০১১) এর জবাব নিচে দেয়া হল। তাঁর উপস্থাপিত দলিল ও আলোচনা ‘লেখক’ শিরোনামে এবং আমাদের জবাব ‘বিশ্লেষণ’ শিরোনামে উল্লেখ করা হল। ‘সালাতে হাত বাঁধার পদ্ধতি’ নিয়ে লেখকের উপস্থাপনা ও তার বিশ্লেষণ উল্লেখ করব, ইনঁশাআল্লাহ। দ্বিতীয় অধ্যায় : সালাতে হাত বাঁধার পদ্ধতি (পৃ: ১৩–২০) লেখক –২১ (পৃ: ২১) : নামাযে কব্জির উপর হাত বেঁধে নাভির নীচে রাখা সুন্নত :-
নামাযে বাম কব্জির উপর ডান হাত রেখে দু’আঙ্গুল দ্বারা চেপে ধরা সুন্নাত। একাধিক সহীহ হাদীস দ্বারা এ আমল প্রমাণিত।
বিশ্লেষণ – ২১ : প্রকৃতপক্ষে হানাফী মাযহাবে ডান হাতের তালু বাম হাতের তালুর পিঠের উপর রাখে ও দুই আঙ্গুল দ্বারা কব্জি চেপে ধরে। কখনই বাম হাতের কব্জির উপর তারা ডান হাতটি রাখে না। লেখক যে শব্দে হাত বাঁধা সুন্নাত বলেছেন ঐ শব্দে বা বাক্যে একটি হাদীসও তিনি উপস্থাপন্ করতে পারেন নি। লেখক –২২ (পৃ: ২১) : চার মাযহাবের সকল ইমাম ও আলিম এটাকেই সুন্নত পদ্ধতি ব্যাখ্যা দিয়েছেন।
বিশ্লেষণ – ২২ : এটি সুস্পষ্ট মিথ্যাচার। আসুন হানাফী আলেম তাক্বী উসমানী (রহ) থেকে জেনে নিই চার ইমামের কে কি বলেন :
دوسرا مسئلہ یہ ہی کہ ہاتھوں کو کس جگہ باندھا جائے؟ حنفیہ اور سفیان ثوری [رح] اسحاق ابن راہویہ اور شافعیہ میں سے ابو اسحاق مروزی کے نزدیک ہاتھوں کو ناف کے نیچے باندھنا مسنون ہے ؛ امام شافعی [رح] کے نزدیک ایک روایت میں تحت الصدر اور دوسری روایت میں علی الصدر ہاتھ باندھنا مسنون ہے ؛ امام احمد [رح] سے تین روایتیں منقول ہیں ؛ ایک امام ابو حنیفہ [رح] کے مطابق؛ ایک امام شافعی [رح] کے مطابق؛ اور ایک یہ کہ دونوں طریقوں میں اختیار ہے ؛
“দ্বিতীয় মাসআলা হল, এই হাত কোথায় বাঁধতে হবে? ইমাম আবূ হানিফা ও সুফিয়ান সওরী (রহ), ইসহাক্ব ইবনে রাহওয়াইহ ও শাফেঈদের মধ্যে থেকে আবূ ইসহাক্ব মারুযীর (রহ) কাছে হাত নাভির নীচে বাঁধাটা সুন্নাত। ইমাম শাফেঈর একটি বর্ণনানুযায়ী বুকের নিচে এবং অপর বর্ণনানুযায়ী বুকের উপর হাত বাঁধাটা সুন্নাত। ইমাম আহমাদ (রহ) থেকে তিনটি উক্তি বর্ণিত হয়েছে। এর একটি ইমাম আবূ হানিফার মত, একটি ইমাম শাফেঈর মত এবং অপর একটি মতে উভয়টিকেই গ্রহণ করেছেন।” (দারসে তিরমিযী ২/১৯) বুঝা গেল ইমাম শাফেঈর মূল মতামত হল, বুকের উপর বা কাছে রাখা সুন্নাত। তাকী উসমানী (হাফি) বুকের ‘নীচে’ বলেছেন। অবশ্য হাদীসে ‘বুকের উপরে’ শব্দটির সাথে সাথে বুকের কাছে (عند الصدر) শব্দটি রয়েছে । ইমাম হাম্বলের (রহ) একাধিক মত রয়েছে। কিন্তু তাঁর পক্ষ থেকে আবূ দাউদে বর্ণিত নাভীর নিচে হাত বাঁধার হাদীসটি যঈফ হিসাবে উল্লিখিত হয়েছে। তাছাড়া ইমামদের ঐ কথাই গ্রহনযোগ্য যা সহীহ হাদীস মোতাবেক। সুতরাং বিভিন্ন মতামত থাকলে আমরা সবচাইতে সহীহ সনদের হাদীসটিকেই (বুকের উপর হাত বাঁধা) তাঁর অনুসরণীয় মতামত হিসাবে গণ্য করব। এ পর্যায়ে সত্য গোপন করার কারণে লেখকের নিজের বক্তব্যটি যঈফ, সহীহ নয় – এটাই প্রমাণিত হল। লেখক –২৩ (পৃ: ২১) : পক্ষান্তরে কনুই পর্যন্ত হাত রাখার পক্ষে কোন হাদীস নেই। বুখারী শরীফের যে হাদীসকে এর প্রমাণ স্বরূপ পেশ করা হয় সেটির সঠিক অর্থ ও ব্যাখ্যা একটু পরে উল্লেখ করছি।
বিশ্লেষণ – ২৩ : আমরাও একটু পরে জানতে পারব স্বয়ং লেখক কিভাবে সহীহ হাদীসের শব্দ ও অর্থ বিকৃত করে হাতকে তালু ও কব্জি শব্দের মধ্যে সীমাবদ্ধ করার অপচেষ্টা করেছেন। অথচ তালু ও কব্জি হাতের অংশবিশেষ। সালাত সম্পর্কিত হাদীসগুলোতে হাতকে যেভাবে সূক্ষ্মাতিসূক্ষ্ম ভাগ করা হয়েছে, একত্রিতভাবে হাতের এত ব্যাখ্যা সম্পর্কিত ভাগ সালাতের বাইরের ক্ষেত্রে দেখা যায় না বললে – বেশী বলা হয় না। যেমন –
ক) আবূ হুমায়েদ সাঈদী (রা) বর্ণনা করেন :
ثم سجد فأمكن أنفه وجبهته الأرض ونحى يديه عن جنبيه ووضع كفيه حذو منكبيه
“রসূলুল্লাহ (স) যখন সাজদা করতেন তখন তার নাক ও কপাল দৃঢ়ভাবে মাটিতে রাখতেন এবং তিনি তাঁর দুই হাতকে দুই পার্শ্ব থেকে দূরে রাখতেন। আর তিনি (হাতের) দুই পাতাকে দুই কাঁধ বরাবর রাখতেন।” [আবূ দাউদ, দারেমী, তিরমিযী, ইবনে মাজাহ, মিশকাত ২/৭৪৫, হাদীসটিকে ইমাম তিরমিযী সহীহ বলেছেন]
হাদীসটিতে দেখা যাচ্ছে হাতের পাতাকে হাত থেকে পৃথক ও সুনির্দিষ্টভাবে বর্ণনা করা হয়েছে। সিজদাবস্থায় হাতের যে অংশটি শরীরের থেকে দূরে রাখার কথা বলা হয়েছে তা কব্জির পরবর্তী অংশ থেকে হাতের কনুই পর্যন্ত অংশ।
পূর্বোক্ত হাদীসটির পরবর্তী অংশে তাশাহহুদের সময় রানের উপর হাতের কোন অংশটি থাকবে সে সম্পর্কে বর্ণনা এসেছে। নবী (স) বলেছেন :
وَوَضَعَ كَفَّهُ الْيُمْنَى عَلَى رُكْبَتِهِ الْيُمْنَى وَكَفَّهُ الْيُسْرَى عَلَى رُكْبَتِهِ الْيُسْرَى وَأَشَارَ بِأُصْبُعِهِ
“ডান তালুকে বাম জানুর উপর এবং বাম তালুকে বাম জানুর উপরে রাখলেন এবং শাহাদাত আঙ্গুল দ্বারা ইশারা করলেন।”
এখানে বুঝা যাচ্ছে সম্পূর্ণ হাত নয় বরং হাতের তালু রানের উপর থাকবে।
খ) সাহাবী আব্দুল্লাহ ইবনে মালেক বলেছেন :
إذا سجد فرج بين يديه حتى يبدو بياض إبطيه
“যখন নবী (স) সাজদা করতেন তখন হাতকে (পেট থেকে) পৃথক রাখতেন। এমনকি তার বগলের শুভ্রতা প্রকাশ পেত।”[সহীহ বুখারী, সহীহ মুসলিম, মিশকাত ২/৮৩১]
এই হাদীসটিতেও হাত বলতে কব্জির পরবর্তী অংশ থেকে কনুই পর্যন্ত অংশকে বুঝান হয়েছে। বুঝা গেল হাত বলতে কনুই পর্যন্ত অংশকে গণ্য করা হয়।
আবার কখনো তালু থেকে শুরু করে কনুই পর্যন্ত সম্পূর্ণ অংশকেও হাত বলা হয়েছে। যেমন রুকু‘ করা সম্পর্কিত বর্ণনাতে এসেছে :
গ) আবূ হুমায়েদ সাঈদী (রা) বলেন :
ثم ركع فوضع يديه على ركبتيه كأنه قابض عليهما ووتر يديه فنحاهما عن جنبيه
“নবী (স) রুকু‘ করলেন এবং দুই হাত দুই জানুর উপর রাখলেন যেন দু’টিকে আঁকড়ে ধরলেন, তিনি দুই হাতকে কিছুটা বাঁকা করে পার্শ্বদেশ থেকে পৃথক রাখলেন।” (আবূ দাউদ, মিশকাত ২/৭৪৫ নং)
হাটুর উপর হাতের তালু ছিল, আর হাতের যে অংশটিকে বাঁকা করা হয়েছে সেখানে তালু ছিল না। কিন্তু কনুই ও বাহুর অন্যান্য অংশ ছিল। উপরের আলোচনাতে বুঝা গেল, হাতের তালু ও কব্জিকে হাত থেকে ক্ষেত্রবিশেষে পৃথকভাবে বর্ণনা করা হয়েছে। আবার হাতের অংশ হিসাবেও বর্ণনা করা হয়েছে। কিন্তু কেবল হাতের তালু বা কব্জির নির্দিষ্ট ব্যবহার থাকলে সেখানে ব্যাপক অর্থে হাত শব্দটি অর্থ করার সুযোগ নেই। কেননা সেখানে كف (তালু) শব্দ ব্যবহার করে সুনির্দিষ্ট করা হয়েছে। তাই সেটা يد বা হাত নয় বরং তার অংশবিশেষ। উল্লেখ্য হাত বলতে ‘চোরের হাত কাটা’, ‘মুসাফাহ করার সময় হাত ধরা’ প্রভৃতি শব্দের ব্যাখ্যাগুলো সালাতের বাইরের অবস্থার সাথে সম্পর্কিত । অথচ পূর্বোক্ত হাদীসগুলো সালাতের সাথে সম্পৃক্ত। যা সালাতের মধ্যে হাত ও তালু’র বিভিন্ন অবস্থার খাস বা সুনির্দিষ্ট বর্ণনা। সালাতের সুনির্দিষ্ট বর্ণনার উদাহরণ থাকা সত্ত্বেও অন্যান্য ক্ষেত্রে ‘আম বা সাধারণভাবে ব্যবহৃত হাতের ব্যাখ্যা এখানে প্রযোজ্য নয়। কেননা খাস দলিল মজুদ থাকতে ‘আম দলিল উপস্থাপন অর্থহীন। লেখক –২৪ (পৃ: ২১) : এমনিভাবে নাভির নীচে হাত রাখা সুন্নাত। ইমাম আবূ হানীফা র. ও ইমাম আহমদ ইবনে হাম্বল র. দুজনেই এটাকে সুন্নাত বলেছেন। প্রসঙ্গত উল্লেখ্য যে. ইমাম আহমদ ছিলেন ইমাম শাফেয়ীর র. এর ভক্ত ছাত্র। ইমাম শাফেয়ী বুকের নীচে হাত বাঁধাকে উত্তম বলেছেন। কিন্তু এতদসত্ত্বেও ইমাম আহমদ সেই মতকে পরিহার করে নাভির নীচে হাত বাঁধাকে উত্তম আখ্যা দিয়েছেন। তিনি কি হাদীস ছাড়া এটা করেছেন? তিনি তো হাদীসের হাফেজ ছিলেন।
বিশ্লেষণ – ২৪ : একটু পরে আমরা লেখকের উপস্থাপিত নাভীর নিচে হাত বাঁধার হাদীস সম্পর্কে ইমাম আহমাদের (রহ) মন্তব্য জানতে পারব। তিনি উক্ত হাদীসের বর্ণনাকারীকে মুনকার (প্রত্যাখ্যাত) বলেছেন। তাছাড়া তাক্বী উসমানী হানাফী (হাফি.) থেকে আমরা জেনেছি বুকের উপর হাত বাঁধার পক্ষেও ইমাম আহমাদের রায় আছে। যা লেখক অস্বীকার করে নিজের বক্তব্য অসত্য হওয়াটা নিশ্চিত করেছেন। ইমাম শাফেঈ (রহ) বুকের উপর ও নিকট হাত বাঁধার মতামত পেশ করেছেন। যার মূল দাবী একই। ইমাম নববী (রহ) থেকে বুকের নীচে নাভীর উপরে বলে যে বক্তব্য এসেছে তা ইমাম শাফেঈ বা সমগ্র শাফেঈ মাযহাবের নয়। এটা ইমাম নববী (রহ)এর ব্যক্তিগত ইজতিহাদ। তাছাড়া পরবর্তীতে আমরা জানব ইমাম নববী (রহ) তাঁর উক্ত ইজতিহাদের সমর্থনে বুকের উপর হাত বাঁধার দলিলটি পেশ করেছেন (দ্র: ‘বিশ্লেষণ-৩৭’) । অর্থাৎ মূল ভাবের দিক থেকে ইমাম নববী (রহ)এর কাছেও বুকের উপর হাত বাঁধার হাদীসটিও তাঁর ইজতিহাদী মতটির সমার্থক। লেখক –২৫ (পৃ: ২১) : যাাহোক বুকের উপর হাত বাঁধাকে চার ইমামের কেউই সুন্নাত বলেননি। এ সম্পর্কে যে হাদীসটি পেশ করা হয় সেটিও সহীহ নয়। এখানে প্রথমত হাত বাঁধার পদ্ধতি সম্পর্কিত সহীহ হাদীসগুরো পেশ করবো। পরে নাভির নীচের রাখা সম্পর্কে সহীহ হাদীসসমূহ উল্লেখ করবো্
বিশ্লেষণ – ২৫ : লেখক যে চার ইমামের মধ্যে দুই ইমাম তথা ইমাম শাফেঈ ও ইমাম আহমাদ (রহ) সম্পর্কে মিথ্যা বলেছেন – তা সুস্পষ্ট করেছি। পরবর্তীতে লেখকের উপস্থাপিত দলিল ও ব্যাখ্যার ক্ষেত্রেও আমরা একই বৈশিষ্ট্য লক্ষ্য করব। আমরা দেখব তিনি কিভাবে সহীহ হাদীসকে যঈফ বলেছেন এবং তার বিকৃত অর্থ করেছেন। আবার কিভাবে যঈফ হাদীসকে সহীহ আখ্যা দিয়েছেন।
সালাতে হাত বাঁধা সম্পর্কে আসুন উদারপন্থী হানাফী আলেমদের বিশ্লেষণ জেনে নিই। জাতীয় মাসজিদ বায়তুল মুকাররমের সাবেক খতীব ও ঢাকা আলিয়া মাদ্রাসার সাবেক হেড মাওলানা মুফতি আমীমুল ইহসান (রহ) তাঁর ‘ফিক্বহুস সুনানি ওয়াল আসারে’ বলেন :
“আবূ তাইয়িব (রহ) ইমাম তিরমিযীর ব্যাখ্যায় বলেন, যতদূর মনে হয়, আল্লাহই ভাল জানেন, দুই হাত নাভীর নীচে রাখা ও বুকের উপর রাখা সবই সহীহ। অপরদিকে নীমবী বলেন যে, ‘বাম হাতের উপর ডানহাত রাখা’ এতটুকুই হাদীস দ্বারা প্রমাণিত। হাত দুইটি রাখার স্থানের বিষয়ে কিছুই প্রমাণিত নয়। বুকের উপর, নাভির উপর বা নাভির নীচে রাখার সকল বর্ণনা দুর্বল ও অগ্রহণযোগ্য। গ্রন্থকার (আমীমুল ইহসান) বলেন, আমার মতে আবূ তাইয়িবের অভিমতই গ্রহণযোগ্য। অর্থাৎ নাভির নীচে, উপরে বা বুকে হাত রাখা সবই সহীহ। তবে উপরের ব্যাখ্যা অনুসারে পুরুষদের জন্য নীচে ও মহিলাদের জন্য উপরে রাখা উত্তম। আল্লাহই সর্বোত্তম জ্ঞাতা।”
[মুফতী সাইয়েদ মুহাম্মাদ আমীমুল ইহসান, আসারুস সুনানি ওয়াল আসার, অনুবাদ : ড. খোন্দকার আ.ন.ম. আব্দুল্লাহ জাহাঙ্গীর ১ম খণ্ড (ঢাকা : ইসলামিক ফাউন্ডেশন) পৃ: ১৭০] সুস্পষ্ট হল, হানাফী আলেমদের কাছেও বুকের উপর হাত বাঁধার হাদীস সঠিক। হানাফী আলেম তাক্বী উসমানী (হাফি.) নাভির নীচে ও বুকের উপর হাত রাখা সম্পর্কিত উভয় হাদীসের মধ্যে সমন্বয় করতে গিয়ে লিখেছেন :
شیخ ابن ہمام فتح القدیر میں فرماتے ہے کہ روایات کے تعارض کے وقت ہم نے قیاس کی طرف رجوع کیا تو وہ حنفیہ کی تائید کرتا ہے ؛ کینکہ ناف پر ہاتھ باندھنا تعظیم کے زیادہ لائق ہی ؛ البتہ عورتوں کے لئے سینہ پر ہاتھ باندھنے کو اس لئے ترجیح دی گئی کہ اس میں ستر زیادہ ہے ؛ واللہ اعلام؛
“শায়েখ ইবনুল হুমাম ‘ফতহুল ক্বাদীর’-এ বলেছেন : “বর্ণনাগুলো সংঘর্ষের ক্ষেত্রে আমরা ক্বিয়াসের প্রতি মনোনিবেশ করি। যা হানাফীদের পক্ষালম্বন করে। কেননা নাভীর পরে হাত বাঁধা তা’যিম (সম্মান) প্রদর্শনের ক্ষেত্রে বেশী পরিপূরক। অবশ্য মহিলাদের বুকের উপর হাত বাঁধা প্রাধান্য পায়। কেননা এতে বেশী সতর (ঢাকা) হয়। আল্লাহই সর্বজ্ঞ।”[তাক্বী উসমানী, দারসে তিরমিযী (উর্দূ) ২য় খণ্ড পৃ: ২৪]
সুস্পষ্ট হল, হানাফীদের কাছেও বুকে হাত বাঁধার হাদীসের গ্রহণযোগ্যতা আছে। তবে সেটা নিজেদের ক্বিয়াস অনুযায়ী। হাদীসের শব্দ ও দাবী অনুযায়ী তারা আমল করেন না। যা তাঁদের চিরাচরিত বৈশিষ্ট্য। লেখক –২৬ (পৃ: ২১) : হাত বাঁধার নিয়ম সম্পর্কিত হাদীস :-
১. হযরত সাহল ইবনে সা’দ রা. বলেন,
كَانَ النَّاسُ يُؤْمَرُونَ أَنْ يَضَعَ الرَّجُلُ الْيَدَ الْيُمْنَى عَلَى ذِرَاعِهِ الْيُسْرَى فِي الصَّلَاةِ.صحيح البخاري (٧٤٠)
অর্থ : মানুষকে এই আদেশ দেওয়া হতো যে, তারা যেন নামাযে ডান হাত বাম হাতের বাহুর উপর রাখে। বুখারী শরীফ, হাদীস নং ৭৪০।
বিশ্লেষণ – ২৬ : হাদীসটিতে ডান হাত ও বাম (হাতের) যেরা শব্দ দু’টি ব্যবহৃত হয়েছে। উল্লেখ্য যেরা‘ কখনই কব্জি নয়। । অবশ্য কব্জি যেরা‘র অংশ।
الذراع (যেরা‘) : প্রত্যেক প্রাণীর হাত। গরু, ছাগলের যেরা‘ পায়ের গোছা থেকে উপরের অংশ পর্যন্ত। মানুষের যেরা‘ হাতের কুনইয়ের মাথা থেকে মধ্য আঙুলের মাথা পর্যন্ত। [কামুসুল ওয়াহিদ]
সহীহ মুসলিমে সালাতে হাত বাঁধা সম্পর্কিত হাদীসটি নিম্নরূপ। সাহাবী ওয়ায়িল ইবনে হুজর (রা) বলেন
اِنَّه‘ رَأَي النَّبِيُّ r رَفَعَ يَدَيْهِ حِيْنَ دَخَلَ فِي الصَّلاَةِ كَبَّرَ ثُمَّ الْتَحَفَ بِثَوْبِه ثُمَّ وَضَعَ يَدَهُ الْيُمْني عَلَي الْيُسْري ـ
“তিনি নবী (স) কে দেখেছেন, তিনি (স) সালাতের শুরুতে দু’টি হাত উঠালেন। এরপর উভয় হাত কাপড়ে ঢাকলেন। অতঃপর ডান হাতকে বাম হাতের উপর রাখলেন।” [সহীহ মুসলিম- কিতাবুস সালাত]
আরবিতে اليد বা হাত অর্থ : من اعضاء الجسد ، وهى من الْمنكب إلى أطراف الأصابع – “শরীরের একটি অংশ, সেটা হল কাঁধ থেকে আঙ্গুল পর্যন্ত । (মু‘জামুল ওয়াসিত্ব)
কিন্তু এভাবে শাব্দিক তরজমা অনুযায়ী কেউ হাত বাঁধেন না। হাতের অর্থ এভাবে করা হলে, একটি হাতকে অপর একটি হাতের উপর পূর্ণাঙ্গভাবে রাখা যায় না। তবে হাতের ঐ সম্পূর্ণ অংশকে জড়িয়ে রাখা যায়।
প্রকৃতপক্ষে সহীহ মুসলিমের হাদীসটিতে যাকে বাম হাত বলা হয়েছে, সহীহ বুখারীর হাদীসে তাকেই বাম যেরা‘ (কনুই হতে আঙুলের মাথা পর্যন্ত অংশ)-কে বুঝানো হয়েছে। এথেকে সুস্পষ্ট হল, হাত বলতে কেবল যেরা‘কেও বুঝায়। হাত বলতে যখন যেরা‘ বুঝায়, তখন হাতের উপর হাত রাখার অর্থ যেরা‘র উপর যেরা‘র রাখা। নিচের হাদীসগুলোতে হাত শব্দটির ব্যবহার কনুই থেকে হাতের পাতা বা আঙুল পর্যন্ত অংশ।
“(প্রকাশক : মাকতাবাতুল আযহার, ঢাকা–এপ্রিল’২০১১)”
কিনতু এই বর্ধিত সংস্করন প্রকাশকাল হল,
“জুর’২০১৫”
رَأَيْتُ رَسُوْلَ اللهِ صلى الله عليه وسلم اِذَا قَامَ فِي الصَّلاَةِ رَفَعَ يَدَيْهِ حَتّي يَكُوْنَا حَذْوَ مَنْكَبَيْهِ
“আমি রসূলুল্লাহ (স)কে দেখেছি, যখন তিনি সালাতে দাড়াতেন তখন তাঁর হাত দু’টিকে কাঁধ (مَنْكَبَ) পর্যন্ত উঠালেন।” (সহীহ বুখারী- কিতাবুস সালাত)
সাহাবী মালিক ইবনে হুয়াইরিস (রা) বলেন :
كَانَ إِذَا كَبَّرَ رَفَعَ يَدَيْهِ حَتَّى يُحَاذِىَ بِهِمَا أُذُنَيْهِ وَإِذَا رَكَعَ رَفَعَ يَدَيْهِ حَتَّى يُحَاذِىَ بِهِمَا أُذُنَيْهِ … وفى رواية : حَتَّى يُحَاذِىَ بِهِمَا فُرُوعَ أُذُنَيْهِ
“রসূলুল্লাহ (স) যখন তাকবীর দিতেন তখন দুই হাত উঠাতেন – এমনকি উভয়কে হাতকে কান বরাবর করতেন। … অন্য বর্ণনায়, এমনকি দুই দুত দুই কানের লতি বরাবর উঠাতেন।” [সহীহ বুখারী, সহীহ মুসলিম, মিশকাত (এমদা) ২/৭৩৯ নং]
এই হাদীসটিতে رَفَعَ يَدَيْهِ ‘তাঁর দুই হাত তুলতেন’ বলতে হাতের কনুই থেকে আঙুল পর্যন্ত অংশকে বুঝানো হয়েছে। যা পূর্বে বর্ণিত হাত = যেরা‘র দাবী প্রমাণ করে।
অপর একটি যঈফ হাদীসে কাঁধ ও কান পর্যন্ত উভয় বর্ণনা এসেছে। হাদীসটি নিম্নরূপ :
ওয়ায়েল ইবনে হুজর (রা) থেকে বর্ণিত :
أَنَّهُ أَبْصَرَ النَّبِىَّ -صلى الله عليه وسلم- حِينَ قَامَ إِلَى الصَّلاَةِ رَفَعَ يَدَيْهِ حَتَّى كَانَتَا بِحِيَالِ مَنْكِبَيْهِ وَحَاذَى بِإِبْهَامَيْهِ أُذُنَيْهِ ثُمَّ كَبَّرَ
“তিনি নবী (স)কে দেখেছেন যখন তিনি সালাতের জন্য দাঁড়ালেন, দুই হাত উঠালেন যেন উভয় হাত কাঁধ বরাবর হয়ে গেল এবং বৃদ্ধাঙ্গুলীদ্বয় কান বরাবর করলেন, অতঃপর তাকবীর বললেন।” [আবূ দাউদ, মিশকাত ২/৭৪৬; এর সনদে বিচ্ছিন্নতা আছে। কিন্তু মূল মর্মে পূর্বোক্ত সহীহ বুখারী ও সহীহ মুসলিমের দু’টি বর্ণনা রয়েছে]
হাদীসটি থেকে বুঝা যাচ্ছে, হাতের বৃদ্ধাঙ্গুল কান পর্যন্ত ছিল তথা হাতের পাতা ও আঙ্গুল কাঁধের উপরে কান পর্যন্ত থাকত। আবার বলা হয়েছে, হাত কাঁধ বরাবর হত – অর্থাৎ হাতের পাতা ও আঙ্গুল ছাড়া হাতের বাকী অংশ। সুষ্পষ্ট হল, সহীহ মুসলিমে বর্ণিত ডান হাতটি বাম হাতের উপর রাখা বলতে সহীহ বুখারীর ডান হাতটি বাম যেরা‘র উপর রাখা। তথা ডান হাতের যেরা‘ বাম হাতের যেরা‘র উপর রাখার অর্থ সহীহ। লেখক –২৭ (পৃ: ২১–২২) :
২. হযরত ওয়াইল ইবনে হুজর রা. বলেন,
قُلْتُ لأَنْظُرَنَّ إِلَى صَلاَةِ رَسُولِ اللَّهِ -صلى الله عليه وسلم- كَيْفَ يُصَلِّى فنظرت إليه فَقَامَ فَكَبَّرَ وَرَفَعَ يَدَيْهِ حَتَّى حَاذَتَا بأُذُنَيْهِ ثُمَّ وَضَعَ يَدَهُ الْيُمْنَى عَلَى كَفِّهِ الْيُسْرَى وَالرُّسْغِ وَالسَّاعِدِ. أخرجه أبو داود (٧٢٧-٧٢٦) والنسائي (٨٨٩) واللفظ له وأحمد ٤/٣١٨ وابن خزيمة (٤٨٠) بإسناد صحيح. وفي رواية لأبي داود: ثم أخذ شماله بيمينه.
অর্থ: আমি (মনে মনে) বললাম, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কিভাবে নামায পড়েন তা আমি লক্ষ্য করবো। আমি লক্ষ্য করলাম, তিনি দাঁড়িয়ে তাকবীর বললেন এবং উভয় হাত কান বরাবর রাখলেন। অতঃপর তাঁর ডান হাত বাম হাতের পিঠ, কব্জি ও বাহুর উপর রাখলেন।
আবূ দাউদ শরীফ, হাদীস নং ৭২৬,৭২৭; নাসাঈ শরীফ, হাদীস নং ৮৮৯; মুসনাদে আহমদ ৪খ, ৩১৮পৃ; সহীহ ইবনে খুযায়মা, হাদীস নং ৪৮০।
আবূ দাউদ শরীফের আরেক বর্ণনায় আছে, ثم أخذ شماله بيمينه অর্থাৎ অতঃপর তিনি ডান হাত দ্বারা বাম হাত ধরলেন। এ হাদীসটি সহীহ।
ইবনে খুযায়মা র. উক্ত হাদীসের উপর শিরোনাম দিয়েছেন, باب وضع بطن الكف اليمنى على الكف اليسرى অর্থাৎ ডান হাতের তালু বাম হাতের তালুর পিঠ কব্জি ও বাহুর উপর রাখবে।
বিশ্লেষণ – ২৭ : উক্ত হাদীসে সম্পূর্ণ ডান হাতটি বাম হাতের সম্পূর্ণ অংশ তথা তালুর পিঠ, কব্জি ও বাহুর উপর রাখার বর্ণনা এসেছে। যা পূর্ববর্তী সহীহ বুখারী ও সহীহ মুসলিমের বর্ণনার অপর একটি ব্যাখ্যামূলক বর্ণনা। অথচ হানাফীগণ কেবল বাম হাতের পাতার পিঠের উপর ডান হাতের পাতা রাখেন এবং কেবল দু’টি আঙ্গুল দিয়ে কব্জিকে ধরেন। এ কারণে উক্ত হাদীসগুলোর সাথে হানাফীদের আমলের সম্পর্কও নেই।
ইবনে খুযায়মার অনুচ্ছেদে ডান হাতের তালু শব্দটি ব্যবহৃত হয়েছে। কিন্তু আবূ দাউদ-নাসঈ-সহীহ হিব্বানের হাদীসে ঐ স্থানে হাত শব্দটি ব্যবহৃত হয়েছে। যদি সহীহ হাদীস দ্বারা ব্যাখ্যা করা হয়, তাহলে হাতের তালু শব্দটির প্রয়োগ ভুল। আর যদি যঈফ ও মুনকার হাদীস দ্বারা ব্যাখ্যা করা হয়, তাহলে উক্ত অনুচ্ছেদের লিখিত ‘তালু’ শব্দটি ঐ যঈফ দলিলের কারণেই অগ্রহণযোগ্য হয়। লেখকের আরবি উদ্ধৃতিতে ‘তালুর পিঠ, কব্জি ও বাহুর শব্দগুলো বাদ পড়েছে। পূর্ণাঙ্গ অনুচ্ছেদটি লক্ষ্য করুন :
باب وضع بطن الكف اليمنى على كف اليسرى والرسغ والساعد جميعا
“অনুচ্ছেদ : ডান হাতের তালুর পেট বাম হাতের তালু, কব্জি ও বাহুর উপর একত্রিত থাকা।”
উক্ত অনুচ্ছেদটির আলোকে ডান হাতটি সম্পূর্ণ বাম যেরা‘র উপর থাকে। হানাফীদের মত আংশিক বাহু নয়, বরং جميعا শব্দের দ্বারা পূর্ণাঙ্গভাবে হাতের ঐ অংশগুলোকে বুঝায়। সুস্পস্ট হল, অনুচ্ছেদটি হানাফীদের আমলের বিরোধিতা করে। উপরোক্ত বক্তব্যে বাহুর আংশিক ব্যবহারের সুযোগ নেই। তাছাড়া পূর্বোক্ত সহীহ হাদীসে ‘হাত’ শব্দটি থাকায় – সে অনুযায়ী ব্যাখ্যা করলে যেটুকু দ্বন্দ্ব থাকে তা-ও নিরসণ হয়। আর এক্ষেত্রে অনুচ্ছেদের শব্দের চেয়ে হাদীসে ব্যবহৃত শব্দই অগ্রগণ্য ও দলিল। লেখক –২৮ (পৃ: ২২) :
وعند الدارمي ١/٢٨٣ بإسناد صحيح في حديث وَائِلٍ قَالَ رَأَيْتُ رَسُولَ اللَّهِ يَضَعُ يَدَهُ الْيُمْنَى عَلَى الْيُسْرَى قَرِيباً مِنَ الرُّصْغِ .
অর্থাৎ দারিমী র. এক বর্ণনায় সহীহ সনদে ওয়াইল ইবনে হুজর রা. থেকে বর্ণিত আছে, তিনি বলেছেন, আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ডান হাত বাম হাতের কব্জির কাছে রাখতে দেখেছি। সুনানে দারিমী, ১খ, ২৮৩পৃ।
বিশ্লেষণ – ২৮ : উক্ত হাদীসটি থেকে বুঝা যায়, সম্পূর্ণ ডান হাতটি কব্জির উপর ছিল। হাতের তালু নয়। তাছাড়া পূর্বের হাদীসগুলোতে উল্লিখিত যেরা/বাহু শব্দগুলোকে ব্যাখ্যা হিসাবে নিতে হবে। যদি বলা হত, ডান হাতের আঙ্গুলগুলো বাম হাতের কব্জির কাছে ছিল, তাহলে হানাফীদের পক্ষে হাদীসটি দলিল হত। অর্থাৎ এ হাদীসটিতেও হানাফীদের দাবী ‘সালাতে বাম কব্জির উপর ডান হাতের তালু রেখে দু’আঙ্গুল দ্বারা চেপে ধরা সুন্নাত’ – শব্দ ও মর্ম পাওয়া গেল না। কেননা উক্ত শব্দ ও মর্মে কোন সহীহ হাদীস বর্ণিত হয় নি। ওয়ায়েল (রা)এর আলোচ্য হাদীসে কেবল কব্জির বর্ণনা এসেছে। কিন্তু লেখকের পূর্ববর্তী বর্ণিত ২ নং হাদীসে উক্ত ওয়াইল (রা) থেকেই হাতের পাতা, কব্জি ও বাহুর উপর রাখার শব্দ ব্যবহৃত হয়েছে (দ্র: ‘লেখক-২৭’)। যার সমর্থনে সহীহ বুখারী’র যেরা‘র উপর হাত রাখার বর্ণনাও রয়েছে। সুতরাং এ পর্যায়ে দারেমীর আলোচ্য হাদীসটি সংক্ষিপ্ত ও অন্যান্য সহীহ হাদীসের ব্যাখ্যা সাপেক্ষে গ্রহণযোগ্য। লেখক –২৯ (পৃ: ২২) :
৩. হযরত হুলব আততাঈ রা. বলেন,
كان رسول الله صلى الله عليه وسلم يؤمنا فيأخذ شماله بيمينه. أخرجه الترمذي (٢٥٢) وابن ماجه (٨٠٩) وابن أبي شيبة (٣٩٥٥) والدارقطني ١/٢٨٥
অর্থ: রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাদের ইমাম হতেন। তিনি ডান হাত দ্বারা বাম হাত চেপে ধরতেন। তিরমিযী শরীফ,হাদীস নং ২৫২; মুসনাদে আহমদের বর্ণনায় আছে, ডান হাত দ্বারা বাম হাতের ধরার বিবরণ দিতে গিয়ে ইয়াহইয়া র. ডান হাত বাম হাতের কব্জির উপর রেখেছেন।
বিশ্লেষণ – ২৯ : এই হাদীসটিতেও সম্পূর্ণ ডান হাত দ্বারা সম্পূর্ণ বাম হাতকে চেপে ধরার কথা উল্লিখিত হয়েছে। যা বাম যেরা`র উপর ডান যেরা` রাখার পদ্ধতি। এ পদ্ধতিতেও বাম কব্জির উপর সম্পূর্ণ ডান হাতটি রাখা যায়। যা লেখকের ২ নং-এ উল্লিখিত নাসাঈর বর্ণনাটিতে বিস্তারিত বিবরণে এসেছে (দ্র: ‘লেখক-২৭’)। অথচ হানাফীদের ব্যবহৃত শব্দ তথা ‘আঙ্গুল’, ‘হাতের পাতা/তালূ’র ব্যবহার আলোচ্য হাদীসে নেই। তাই এই হাদীসটিও হানাফীদের পক্ষের দলিল নয়। যদি ডান হাত না বলে ডান হাতের তালুটি বাম হাতের কব্জির উপর রাখার কথা বলা হত, তাহলে তা হানাফীদের সমর্থন করত। কিন্তু এমন কোন সহীহ বর্ণনা নবী (স) থেকে নেই।
লেখকের উল্লিখিত মুসনাদে আহমাদের বর্ণনাটি নিম্নরূপ :
عَنْ قَبِيصَةَ بْنِ هُلْبٍ عَنْ أَبِيهِ قَالَ رَأَيْتُ النَّبِيَّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يَنْصَرِفُ عَنْ يَمِينِهِ وَعَنْ يَسَارِهِ وَرَأَيْتُهُ قَالَ يَضَعُ هَذِهِ عَلَى صَدْرِهِ وَصَفَّ يَحْيَى الْيُمْنَى عَلَى الْيُسْرَى فَوْقَ الْمِفْصَلِ
“ক্বাবীযাহ বিন হুলব তাঁর পিতাা (হুলব আততাঈ) থেকে বর্ণনা করেন। তিনি (রা) বলেন : আমি নবী (স)কে (সালামে) ডান ও বাম দিকে ফিরতে দেখেছি। আর আমি দেখেছি. (বর্ণনাকারী) বলেন : আমি নবী (স)-কে এটি বুকের উপর রাখতে দেখেছি। ইয়াহইয়া বিবরণ দেন : ডান (হাত) বামের সংযোগ স্থলের উপর থাকবে।”
وھمچنیں روایت کرد ترمذی از قبیضہ بن ھلب ازپدرش کہ گفت دیدم رسول خدا ﷺ کہ می نھاد دست خود را دابر سینہ خود
“ইমাম তিরমিযী ক্ববীযাহ বিন হুলবের মধ্যস্থতায় সাহাবী হুলব তাঈ (রা) থেকে বর্ণনা করেছেন। তিনি নবী (স)কে দেখেছেন যে, তিনি (স) নিজের হাত বুকের উপর রেখেছিলেন।” (শরহে সফরুস সাআদাত পৃ: ৪৪)
বুঝা গেল, লেখক মুসনাদে আহমাদে বর্ণিত বুকের উপর রাখার কথাটি গোপন করেছেন। আর ডান হাতটি যখন বাম হাতের কব্জি বা সংযোগ স্থলে থাকে তখন তা স্বাভাবিক ভাবে বুকের উপর বা নিকটে থাকে। এটাও বুঝা গেল, মুহাদ্দিসগণ তিরমিযী ও মুসনাদে আহমাদের বর্ণনাটি পরস্পরের ব্যাখ্যা হিসাবে গণ্য করেছেন। আবার এটার সম্ভাবনাও রয়েছে যে, তাঁরা তিরমিযীর কোন কোন সংস্করণে ‘বুকের উপর’ কথাটি দেখেছেন। যেভাবে মুহাদ্দিস আব্দুল হক্ব দেহলভী বলেছেন। আল্লাহই সর্বজ্ঞ।
উল্লেখ্য বর্ণনাকারী কাবীযাহ বিন হুলব কিছু মুহাদ্দিসগণের কাছে অপরিচিত হওয়ায় তাঁরা তাঁকে মাজহুল গণ্য করে হাদীসটিকে যঈফ বলেছেন। অথচ ইমাম ইজলী (রহ) তাঁকে সিক্বাহ বলেছেন। ইমাম হিব্বান তাঁর ‘সিক্বাতে’ উল্লেখ করেছেন। তিনি তাঁর হাদীস সহীহ গণ্য করেছেন। (মীযানুল ই‘তিদাল ৫/৪৬৬ পৃ লেখক –৩০ (পৃ: ২৩) :
৪. হযরত শাদ্দাদ ইবনে শুরাহবীল রা. বলেন,
رأيت رسول الله صلى الله عليه وسلم قائما يده اليمنى على يده اليسرى قابضا عليها يعني في الصلاة . رواه البزار والطبراني .ذكره الهيثمي في مجمع الزوائد ٢/٢٢٥ وقال: وفيه عباس بن يونس ولم أجد من ذكره ،
অর্থ: আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে দন্ডায়মান দেখলাম। তার ডান হাতটি বাম হাতের উপর, তিনি সেটাকে চেপে ধরে আছেন। বাযযার ও তাবারানী এটি উদ্ধৃত করেছেন। (দ্র, মাজমাউয যাওয়াইদ, ২খ, ২২৫ পৃ)
বিশ্লেষণ – ৩০ : এই হাদীসটির দাবী পূর্বের ‘বিশ্লেষণ -২৭, ২৮ ও ২৯’ এর মত। এখানে ডান হাতের আঙ্গুল বা পাতাকে বাম হাতের কব্জির উপর রাখতে বলা হয় নি। তাই এই হাদীসটিও হানাফীদের বিরুদ্ধে যায়। কেননা তারা আমল করছেন খাস ভাবে ‘আঙ্গুল’ ও ‘তালু’ শব্দের প্রতি। অথচ দলিলটিতে আছে ‘আমভাবে ব্যবহৃত ‘হাত’ শব্দটি। আমরা সালাতের এই সুনির্দিষ্ট অবস্থা ক্ষেত্রে ‘হাতে’র প্রকৃত ব্যাখ্যা হাদীস থেকে পূর্বে উল্লেখ করেছি।
লেখকের উল্লিখিত ‘চেপে ধরে’ বাক্যটির মূল আরবি শব্দ قابض (আঁকড়ে ধরা)। যার দাবী হল, হাতের সম্পূর্ণ মুঠো দ্বারা ধরা। যেমন – আরবি অভিধানে আছে- القبضة – অর্থ : মুঠো, মুঠোভরা বস্তু, মজবুতভাবে আঁকড়ে ধরা (কামূসুল ওয়াহিদ)। যার দাবী পাঁচটি আঙ্গুলসহ হাতের তালুর ব্যবহার। পক্ষান্তরে হানাফীগণ উক্ত কব্জা বা আঁকড়ে থাকার আমলটি করে থাকে দু’টি আঙ্গুল দ্বারা কব্জিকে আঁকড়ে ধরার মাধ্যমে। যা কখনই মজবুতভাবে আঁকড়ে থাকার অর্থে প্রয়োগযোগ্য নয়। বরং শব্দটি সম্পূর্ণ পাঁচ আঙ্গুল দ্বারা আঁকড়ে থাকার দাবী করে।
যখন হাতের অর্থ যেরা‘ বা বাহু। তখন ডান হাত বাম হাতের উপর রাখার অর্থ হবে – ডান হাতের বাহুকে বাম হাতের বাহু দ্বারা আকড়ে থাকা। এমতাবস্থায় উক্ত কব্জা করা তথা হাতকে চেপে ধরার দাবী পূরণ হবে। যেমন রুকু’তে হাত দ্বারা হাটু কব্জা তথা আঁকড়ে থাকার কথা বর্ণিত হয়েছে।
ثم ركع فوضع يديه على ركبتيه كأنه قابض عليهما ووتر يديه فنحاهما عن جنبيه
“নবী (স) রুকু‘ করলেন এবং দুই হাত দুই জানুর উপর রাখলেন যেন দু’টিকে কব্জা করলেন (আঁকড়ে ধরলেন), তিনি দুই হাতকে কিছুটা বাঁকা করে পার্শ্বদেশ থেকে পৃথক রাখলেন।” (আবূ দাউদ, মিশকাত ২/৭৪৫ নং)
এখানে হাত বলতে, হাতের তালু থেকে কনুই পর্যন্ত অংশ। বুঝা গেল কব্জা করে হাত ধরার মধ্যে হানাফীদের পক্ষে কোন দলিল নেই। কেননা তাদের আমল হল দুই আঙ্গুল দিয়ে কব্জি ধরা। অথচ আলোচ্য হাদীসে সম্পূর্ণ বাম হাতকে কব্জা বা আঁকড়ে ধরতে বলা হয়েছে। লেখক –৩১ (পৃ: ২৩) :
৫. হযরত জারীর আদ্দাব্বী বলেন,
كان علي إذا قام في الصلاة وضع يمينه على رسغه .أخرجه ابن أبي شيبة (٣٩٦١) موصولا والبخاري قبل حديث رقم ١١٩٨ تعليقا. كتاب العمل في الصلاة ، باب إستعانة اليد في الصلاة الخ
অর্থ: হযরত আলী রা. যখন নামাযে দাঁড়াতেন তখন তার ডান হাত বাম হাতের কব্জির উপর রাখতেন।
মুসান্নাফে ইবনে আবী শায়বা, হাদীস নং ৩৯৬১; বুখারী শরীফ, ১১৯৮নং হাদীসের এর পূর্বে। এ হাদীসটির সনদ সহীহ।
এসব হাদীসের কোন কোনটি থেকে বুঝা যায়, রসূলুল্লাহ (স) বাম হাতের উপর ডান হাত রাখতেন। আর কোন কোনটি থেকে বুঝা যায়, তিনি ডান হাত দ্বারা বাম হাত চেপে ধরতেন। বাম হাতের কোন জায়গা চেপে ধরতেন? অধিকাংশ হাদীসই প্রমাণ করে, বাম হাতের কব্জি চেপে ধরতেন।
বিশ্লেষণ – ৩২ : আমরা জেনেছি সহীহ মুসলিমে বাম হাতের উপর ডান হাত রাখার কথা এসেছে। সহীহ বুখারীতে ডান হাতটি বাম হাতের যেরা‘ তথা কনুই থেকে আঙ্গুল পর্যন্ত অংশের উপর রাখার বর্ণনা এসেছে। তাছাড়া হাদীসে কেবল হাত বলতেও যেরা‘র অংশটিকে গণ্য করা হয়েছে। সহীহ আবূদাউদ-নাসাঈ-সহীহ ইবনে খুযায়মা’র হাদীসটিতে ডান হাতটি বাম হাতের পিঠ, কব্জি ও বাহুর উপর রাখার কথা বর্ণিত হয়েছে। যার প্রতিটিতে হাত রাখার ধরণ সুস্পষ্ট। লেখক ঐ শব্দগুলো বর্ণনা করা সত্ত্বেও তা এখন আলোচনা প্রসঙ্গে উপেক্ষা করলেন।
পক্ষান্তরে কেবল কব্জি’র বর্ণনাগুলো পূর্বোক্ত সহীহ বুখারী, সহীহ মুসলিম, ও আবূদাউদ-নাসাঈ-সহীহ ইবনে খুযায়মা’র বর্ণনাগুলো থেকে সংক্ষিপ্তভাবে বর্ণিত। লেখক কেবল ঐ সংক্ষিপ্ত কব্জি সম্পর্কিত বর্ণনাগুলোর কথা উল্লেখ করলেন। যা মূলত পূর্বোক্ত বর্ণনাগুলোর ব্যাখ্যার মুখাপেক্ষী। লেখক –৩৩ (পৃ: ২৩) :
এসব হাদীসের মধ্যে সমন্বয় করে চার মাযহাবের আলিমগণ সেই পদ্ধতিকেই অবলম্বন করেছেন যেভাবে হানাফী মাযহাবের অনুসারীগণ আমল করে থাকেন।
হালবী র. মুনয়াতুল মুসল্লী এর ভাষাগ্রন্থে লিখেছেন,
السنة أن يجمع بين الوضع والقبض جمعا بين ما ورد فى الأحاديث المذكورة إذ في بعضها ذكر الأخذ وفي بعضها ذكر وضع اليد وفي البعض وضع اليد على الذراع فكيفية الْجمع أن يضع الكف اليمينى على الكف اليسرى ويحلق الإبْهام والخنصر على الرسغ ويبسط الأصابع الثلاث على الذراع فيصدق أنه وضع اليد على اليد وعلى الذراغ وأنه أخذ شماله بيمينه اهـــــــ
অর্থাৎ উল্লিখিত হাদীসগুলোর মধ্যে সমন্বয় সাধনকল্পে সুন্নত হলো হাত রাখা ও বাঁধা দু’টির উপরই একসঙ্গে আমল করা। কারণ কিছু হাদীসে চেপে ধরার কথা এসেছে। কিছু হাদীসে হাতকে হাতের উপর রাখার কথা এসেছে। এগুলোর মধ্যে সমন্বয়ের পদ্ধতি হলো, ডান হাতের তালু বাম হাতের পিঠের উপর রাখবে, বৃদ্ধাঙ্গুলি ও কনিষ্ঠা আঙ্গুলি দ্বারা কব্জি চেপে ধরবে, আর বাকি তিন আঙ্গুল বাহুর উপর বিছিয়ে দিবে। তাহলে হাতের উপর হাত রাখা, বাহুর উপর হাত রাখা এবং ডান হাত দ্বারা বাম হাত চেপে ধরা, সবগুলো হাসিল হবে।
বিশ্লেষণ – ৩৪ : সম্মানিত পাঠক! লক্ষ্য করুন।
ক) হাদীসে হাতের উপর হাত রাখা ও হাত আঁকড়ে থাকার বর্ণনা এসেছে। অর্থাৎ দু’ভাবেই বৈধ। অথচ উক্ত উদ্ধৃতিটিতে সমন্বয়ের নামে নবী (স) ও সাহাবীদের থেকে প্রাপ্ত উন্মুক্ত শব্দগুলোকে নিজস্ব চিন্তাতে সংকীর্ণ ও সীমাবদ্ধ করা হয়েছে।
খ) পূর্বোক্ত হাদীসগুলোতে আঙ্গুল শব্দের কোন ব্যবহার নেই। উক্ত উদ্ধৃতিটিতে আঙ্গুল ব্যবহারের সুনির্দিষ্ট পদ্ধতি নবী (স) ও সাহাবীদের (রা) থেকে আসে নি। সুতরাং তা বিদ‘আত। (দেখুন : শায়েখ আলবানী’র, ‘সিফাতে সালাত’- হাত বাঁধা সম্পর্কিত অনুচ্ছেদ]
গ) দু’টি আঙ্গুল দ্বারা কব্জি চেপে ধরা ও বাকী তিনটি আঙ্গুল হাতের যেরা‘র বা বাহুর উপর রাখার বিষয়টি প্রকারান্তরে খাস বা সুনির্দিষ্ট বিধান। অথচ উসূল হল খাস আমলের জন্য খাস দলিল প্রয়োজন। অথচ লেখকের পূর্বের বা পরের কোন হাদীসেই দু’টি ও তিনটি আঙ্গুলের স্বতন্ত্র কোন ব্যবহার পাওয়া যাবে না। ফলে দলিলহীনতার কারণে উক্ত আমলটি বাতিল।
ঘ) হানাফীদের মূল বিধান সম্বলিত আবূ দাউদের হাদীসটি যঈফ। যার দাবী হল وَضْعُ الْكَفِّ عَلَى الْكَفِّ “তালুর উপরে তালু বিছিয়ে দেয়া।” যদি আপনি সঠিক পন্থায় তালুর উপর তালু রাখেন তাহলে বৃদ্ধা ও কনিষ্ঠা আঙ্গুল দ্বারা কব্জি ধরতে পারবেন না। পক্ষান্তরে দু’টি আঙ্গুল দ্বারা কব্জি ধরতে গেলে আপনার ডান হাতের তালুটি বাম হাতের তালুর পিঠের অংশটির প্রায় অর্ধেক অগ্রসর হবে । সুতরাং তালুর উপর তালু রাখার সঠিক আমলটিও সম্ভব হয় না।
ঙ) আমরা পূর্বে প্রমাণ করেছি, সালাতের বিভিন্ন ক্ষেত্রে ‘যেরা’ ও ‘হাত’ পরিপূরক শব্দ হিসাবে ব্যবহৃত হয়েছে। এ পন্থায় একটি হাত বা হাতের যেরা‘ অপর হাত বা হাতের যেরা‘র উপর রাখলে হাতের পাতা, কব্জি ও যেরা বা বাহুর উপর হাত রাখা এবং পাঁচ আঙ্গুল দিয়ে কব্জা করা বা আঁকড়েও ধরা যায়। হাতকে হাতের উপর রাখার বা ধরার ব্যাপার আঙ্গুল সুনির্দিষ্টভাবে উল্লেখ না থাকাই যে কয়টি আঙ্গুল মানুষের থাকা স্বাভাবিক সেই কয়টি আঙ্গুল অপর হাতের উপর থাকবে বা অপর হাতকে চেপে ধরবে। কব্জা করে ধরা বা আঁকড়ে ধরার উদাহরণ সালাতের ভিতর অপর একটি স্থানের বর্ণনা থেকে সুস্পষ্ট হয়। বর্ণনাটি নিম্নরূপ :
আবূ হুমায়েদ সাঈদী (রা) বলেন :
ثم ركع فوضع يديه على ركبتيه كأنه قابض عليهما ووتر يديه فنحاهما عن جنبيه
“নবী (স) রুকু‘ করলেন এবং দুই হাত দুই জানুর উপর রাখলেন যেন দু’টিকে আঁকড়ে ধরলেন, তিনি দুই হাতকে কিছুটা বাঁকা করে পার্শ্বদেশ থেকে পৃথক রাখলেন।” (আবূ দাউদ, মিশকাত ২/৭৪৫ নং)
এখন লেখকের উল্লিখিত হাত চেপে ধারা ৪ নং হাদীসটি পুণরায় পড়ুন :
رأيت رسول الله صلى الله عليه وسلم قائما يده اليمنى على يده اليسرى قابضاعليها يعني في الصلاة . رواه البزار والطبراني .ذكره الهيثمي في مجمع الزوائد ٢/٢٢٥ وقال: وفيه عباس بن يونس ولم أجد من ذكره ،
অর্থ: আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে দন্ডায়মান দেখলাম। তার ডান হাতটি বাম হাতের উপর, তিনি সেটাকে চেপে ধরে আছেন। বাযযার ও তাবারানী এটি উদ্ধৃত করেছেন। (দ্র, মাজমাউয যাওয়াইদ, ২খ, ২২৫ পৃ)
বুঝা গেল চেপে ধরার বিষয়টি দুই আঙ্গুলে দ্বারা সীমাবদ্ধ করা যায় না। কেননা এখানে চেপে ধরা বা কব্জা করার প্রক্রিয়াটি উন্মুক্ত। অর্থাৎ ডান হাতটি বাম হাতটিকে চেপে ধরতে সম্পূর্ণ আঙ্গুলগুলোর ব্যবহার উন্মুক্ত। যা যেরা‘ আঁকড়ে ধরার চিত্রকে সামনে রাখলে বাস্তব রূপ লাভ করে।
আসলে হানাফী মাযহাবে হাদীস থেকে হাদীস ব্যাখ্যা না নিয়ে নিজেদের ইচ্ছামত সমন্বয় করা হয়েছে। ফলে নিজেদের তালুর উপর তালু রাখার হাদীসের উপর আমল করাও তাদের পক্ষে সম্ভব হয় নি। বরং তালুর পিঠের খানিকটা বাদ দিয়ে তালুর হাদীসের উপর অপসমন্বয় করে আমল করা হয়েছে। কেননা দুই আঙ্গুল দিয়ে কব্জি ধরলে ডান হাতের তালুটি হুবহু বাম হাতের তালুর উপর রাখা হয় না। বরং অনেক খানিক সামনে অগ্রসর হয়। লেখক –৩৫ (পৃ: ২৪) :
লক্ষ্য করুন, হানাফী আলিমগণ কিভাবে হাদীসগুলোর মধ্যে সমন্বয় করে সবগুলো অনুসারে আমল করতে বলেছেন? একেই বলে হাদীসের অনুসরণ! এঁরাই প্রকৃত আহলে হাদীস। যারা একটি হাদীস নিয়ে অন্যগুলো উপেক্ষা করে তারা আহলে হাদীস হতে পারেনা।
ইমাম মালিক র. এর প্রসিদ্ধ মত হলো ফরজ নামাযে হাত বাঁধবেনা, ছেড়ে রাখবে। সুন্নাত ও নফল নামাযে হাত বাঁধবে। হাত বাঁধলে কিভাবে বাঁধবে? আল্লামা উব্বী মালেকী র. মুসলিম শরীফের ভাষ্যগ্রন্থে লিখেছেন,
واختار شيوحنا أن يقبض بكف اليمنى على رُسْغ اليسرى ، واختار بعضهم مع ذلك ان بكون السبابة والوسطى ممتدين على الذراع
অর্থাৎ আমাদের শায়েখগন বলেছেন, ডান হাত দ্বারা বাম হাতের কব্জি চেপে ধরবে। কেউ কেউ একথাও যোগ করেছেন, শাহাদত ও মধ্যমা আঙ্গুলি যেন বাহুর উপর থাকে। (২খ, ২৭৮ পৃ
বিশ্লেষণ – ৩৬ : ইমাম মালেকের ‘মুয়াত্তা’-এ সহীহ বুখারীর যেরা‘ শব্দযুক্ত হাত বাঁধার হাদীসটি বর্ণিত হয়েছে। তাছাড়া অধিকাংশ মালেকীদের মধ্যে গ্রহণযোগ্য আমলটি হল হাত বাঁধা। (আল-ফিক্বহুল ইসলামি ও আদিল্লাতাহু ২/৬৩ পৃ
লেখকের শেষোক্ত উদ্ধৃতিটি মেনে নিলেও এটাই বলতে হয় – উক্ত শব্দে কোন হাদীস বর্ণিত না হওয়ায় উক্ত মন্তব্যটি সঠিক নয়। যার জবাব পূর্বের বিশ্লেষণটির মত। তাছাড়া সহীহ হাদীসগুলো সুস্পষ্টভাবে ডান হাতটি বাম হাতের যেরা‘ তথা তালুর পিঠ, কব্জি ও বাহুর উপর রাখার কথা বলা হয়েছে। এখন ডান হাতটি ‘আম শব্দে ব্যবহৃত হওয়ায় যেভাবে সেটি রাখলে বাম হাতের যেরা‘ তথা তালুর পিঠ, কব্জি ও বাহুর উপর রাখা হবে –সেটিই হল হাদীসের প্রতি আমল। এখানে অন্যকারো সমন্বয়ের মুখাপেক্ষী হওয়ার মত অস্পষ্টতা নেই। আর যে কোন মানুষের থেকে নবী (স) স্পষ্টভাবে আমাদেরকে কাছে পূর্ণাঙ্গ দ্বীন পৌঁছে দিয়েছেন। তাঁর (স) কথার মধ্যে কোন সমস্যা বা জটিলতা নেই। লেখক –৩৭ (পৃ: ২৪–২৫) :
শাফেয়ী মাযহাব সম্পর্কে ইমাম নববী র. তার ‘আররাওজাহ’ গ্রন্থে লিখেছেন,
السنة ووضع اليمنى على اليسرى، فيقبض بكفه اليمنى، كوع اليسرى، وبعض رسغها، وساعدها ۱\۳۳۹
অর্থাৎ সুন্নাত হলো ডান হাত বাম হাতের উপর এভাবে রাখবে যে, ডান হাতের তালু দ্বারা বাম হাতের বৃদ্ধাঙ্গুলির গোড়ার হাড়, কব্জির কিছু অংশ এবং বাহু চেপে ধরবে। (২খ, ৩৩৯ পৃষ্ঠা)
السنة بعد التكبير، حط اليدين، ووضع اليمنى على اليسرى، فيقبض بكفه اليمنى، كوع اليسرى، وبعض رسغها، وساعدها
“তাকবীরের পরে সুন্নাত : দুই হাত নামাতে হবে। আর ডান হাত …..(লেখকের উল্লিখিত অংশ)।”
অতঃপর ইমাম নববী (রহ) অপর একজন ইমামের উদ্ধৃতি দ্বারা উক্ত বক্তব্যটি ব্যাখ্যা করার পরে লিখেছেন :
ثم يضع يديه كما ذكرنا تحت صدره، وفوق سرته، على الصحيح. وعلى الشاذ تحت سرته
“অতঃপর হাত দু’টি সেভাবে রাখতে হবে যেভাবে আমার উল্লেখ করেছি বুকের নিচে ও নাভীর উপরে রাখা সহীহ। আর নাভীর নিচে রাখা শায (সহীহর বিরোধী) ।”
পাঠক লক্ষ্য করুন, ইমাম নববী (রহ) ডান হাতের তালু ব্যবহার করেছেন। অথচ সহীহ একটি হাদীসেও ডান হাতের তালু শব্দটি ব্যবহৃত হয় নি। কিন্তু বাম হাতের যে অংশগুলো তিনি (রহ) উল্লেখ করেছেন – তা হুবহু সহীহ হাদীসে বর্ণিত হয়েছে। কিন্তু এই মর্মে বর্ণিত সহীহ হাদীসটির অপর একটি সাক্ষ্য সহীহ বুখারীর বর্ণনা। যেখারে ডান হাতটি বাম যেরা‘র উপর রাখার কথা বর্ণিত হয়েছে। উভয় হাদীস সামনে রাখলে ইমাম নববী কর্তৃক ডান হাত না বলে ডান হাতের তালু বলাটা হাদীস বহির্ভূত শব্দ বিধায় পরিত্যাজ্য। তাছাড়া নাভীর নিচে হাত বাঁধার হাদীসকে শায বলার মাধ্যমে ইমাম নববী হানাফীদের নিয়মটিকে বাতিল করেছেন।
সুস্পষ্ট হল, ইমাম নববীর বক্তব্যের মধ্যে হানাফীদের পদ্ধতির কোন সমর্থন নেই। তাছাড়া ইমাম নববী (রহ)-এর নিকট বুকের নিচে, নাভীর উপরে এবং বুকের উপরে একই অর্থবোধক। যেমন – তিনি সহীহ মুসলিমের ব্যাখ্যা গ্রন্থে লিখেছেন :
وفي المسألة أحاديث كثيرة ودليل وضعهما فوق السرة حديث وائل بن حجر قال: (صليت مع رسول الله صلى الله عليه وسلم ووضع يده اليمنى على يده اليسرى على صدره”. رواه ابن خزيمة في صحيحه. وأما حديث علي رضي الله عنه أنه قال: (من السنة في الصلاة وضع الأكف على الأكف تحت السرة” ضعيف متفق على تضعيفه، رواه الدارقطني والبيهقي من رواية أبي شيبة عبد الرحمن بن إسحاق الواسطي وهو ضعيف بالاتفاق
“এই মাসআলাটিতে অসংখ্য হাদীস ও দলিল রয়েছে যে, নাভির উপরে (হাত) বাঁধতে হবে। ওয়ায়েল ইবনে হুজর (রা) বলেন : ‘আমি রসূলুল্লাহ (স)এর সাথে সালাত পড়েছি। তিনি ডান হাত বাম হাতের উপর রেখে বুকের উপর রাখলেন।’ হাদীসটি ইবনে খুযায়মাহ তাঁর ‘সহীহ’তে বর্ণনা করেছেন। পক্ষান্তরে আলী (রা) থেকে হাদীস বর্ণিত হয়েছে, তিনি বলেন : ‘সালাতে সুন্নাত হল, তালু রাখবে তালুর উপরে নাভির নিচে।’ হাদীসটি ঐকমত্যে যঈফ হাদীসটির দুর্বলতার কারণে। এটি বর্ণনা করেছেন দারা কুতনী। আর বায়হাক্বী বর্ণনা করেছেন আবী শায়বাহ থেকে (বর্ণনাকারী) আব্দুর রহমান বিন ইসহাক্ব ওয়াসিতী’র মাধ্যমে। আর তিনি ঐকমত্যে যঈফ।” [শরহে মুসলিম নববী –কিতাবুস সালাত باب وضع يده اليمنى على اليسرى بعد تكبيرة الإحرام تحت صدره فوق سرته، ….. (অনুচ্ছেদ : তাকবীরে তাহরীমার পরে ডান হাত বাম হাতের উপর থাকবে বুকের নিচে নাভীর উপরে…..)] সম্মানিত পাঠক! উপরের প্রতিটি বাক্য ভালভাবে পড়ুন। যা থেকে বুঝা যাচ্ছে – ইমাম নববী (রহ)এর কাছে বুকের উপর হাত রাখার দলিলটিই বুকের নিচে ও নাভীর উপরে হাত রাখা। আরো লক্ষ্য করুন! যখন ডান হাতটি বাম হাতের যেরা‘র উপর সমান্তরালভাবে রাখা হয় তখন দু’টি হাতের কনুই বরাবর তা সমান্তরাল হয়। যা সহীহ বুখারীর হাদীসটির মূলদাবী। আর এভাবে হাত বাঁধা হলে ঐ হাত বাঁধাকে বুকের উপর, বুকের নিচে ও নাভীর উপর সবরকম অর্থ ও ব্যাখ্যা করার সুযোগ থাকে। অর্থাৎ ইমাম নববী (রহ)এর দেখানো পদ্ধতিটি হানাফীদেরকে খণ্ডন করে এবং এর সূক্ষ্ম পর্যালোচনা বুকের উপর বা নিকটে হাত বাঁধার অবস্থাকে সমর্থন করে। আল্লাহ সত্য বুঝার তাওফিক্ব দিন। লেখক – ৩৮ (পৃ: – ২৫) :
হাম্বলী মাযহাব সম্পর্কে ইবনে মানসূর আল হাম্বালী র. আররাওযুল মুরবি গ্রন্থে লিখেছেন,
ثم يقبض كوع يسراه ويجعلهما تحت سرته اﻫـــــ ۱\۱٦۵ وكذا في الإنصاف للمرداوى ۲\٤۵ والفروع لابن مفلح ۱\۳۲۱
“অর্থাৎ অতঃপর বাম হাতের কব্জি ডান হাত দ্বারা চেপে ধরবে। এবং নাভির নীচে রাখবে। (১খ, ১৬৫ পৃ; মারদাবী র. আল ইনসাফ গ্রন্থে (২/৪৫) ও ইবনে মুফলিহ র. আল ফুরু’ গ্রন্থে (১/৩৬১) একই কথা বলেছেন।
বিশ্লেষণ – ৩৮ : উক্তিটি কেবল কব্জি ব্যবহার সম্পর্কিত সংক্ষেপে বর্ণিত হাদীসের অনুসরণ। উক্ত উদ্ধৃতির মাধ্যমে যেরা‘র বর্ণনাযুক্ত সহীহ বুখারীর বর্ণনার উপর আমল বাদ পড়ছে। আবূদাউদ-নাসাঈ- ইবনে খুযায়মাহতে ব্যবহৃত বাম হাতের পাতার পিঠ-কব্জি-বাহুর উপর ডান হাতটি স্থাপন করার হাদীসটির উপর আমল করাও সম্ভব হচ্ছে না। আলী (রা) থেকে বর্ণিত হয়েছে : فِى الصَّلاَةِ تَحْتَ السُّرَّةِ وَضْعُ الْكَفِّ عَلَى الْكَفِّ “সালাতে তালুর উপরে তালু বিছিয়ে দেয়া, নাভীর নীচে।” কিছুক্ষণ আগে ইমাম নববী কর্তৃক বর্ণনাটিকে সর্বসম্মতভাবে যঈফ বলা হয়েছে। সুতরাং আলোচ্য উদ্ধৃতির কোন গ্রহণযোগ্যতা নেই। লেখক – ৩৯ (পৃ: – ২৫) :
লক্ষ্য করুন, পৃথিবীর অধিকাংশ আলিম-ওলামার মত কি, আর লা-মাযহাবী ভাইয়েরা কি করেন?
বিশ্লেষণ – ৩৯ : লেখক যেসব উদ্ধৃতি দিয়েছেন তার অধিকাংশই সহীহ হাদীসের বিরোধী। অথচ লেখক তাকে হাদীসের মধ্যে সমন্বয় হিসাবে উপস্থাপন করেছেন। পক্ষান্তরে ইমাম নববী (রহ)এর উদ্ধৃতিটি লেখকের বিপক্ষে যায়। এটাই আমরা লক্ষ্য করলাম।
লা-মাযহাব অর্থ লা-দ্বীন। অর্থাৎ যার কোন দ্বীন নেই। অথচ আমরা কুরআন ও সহীহ হাদীস মানছি – আর এটাই দ্বীনুল ইসলাম। পক্ষান্তরে মাযহাবী হিসাবে পরিচিতরা কুরআন ও সহীহ হাদীসকে বিকৃত করে নিজেদের মনগড়া সমন্বয়কে দ্বীন হিসাবে মেনে থাকে। মূলত এটাই তাদেরকে দ্বীন ইসলাম থেকে দূরে রাখছে। লেখক – ৪০ (পৃ: – ২৫) :
যে হাদীসটির কারণে তারা বাম হাতের কনুই পর্যন্ত ডান হাত বিস্তার করে দেন সেটি বুখারী শরীফে উদ্ধৃত হয়েছে। এখানে ১নং দলিলে সেটি আমরা উল্লেখ করেছি। ঐ হাদীসটি সম্পর্কে বুখারী শরীফের বিখ্যাত ভাষ্যকার হাফেজ ইবনে হাজার আসকালানী র. ফতহুল বারী গ্রন্থে বলেছেন,
أبهم موضعه من الذراع وفي حديث وائل عند أبي داود والنسائي ثم وضع يده اليمنى على ظهر كفه اليسرى والرسغ والساعد وصححه بن خزيمة وغيره وسيأتي أثر على نحوه في أواخر الصلاة
অর্থাৎ বাহুর কোন জায়গায় রাখতেন সেটা এই হাদীসে অস্পষ্ট। আবূ দাউদ ও নাসাঈ বর্ণিত ওয়াইল রা. এর হাদীসে বলা হয়েছে : অতঃপর তিনি তাঁর ডান হাত বাম হাতের তালুর পিঠ, কব্জি ও বাহুর উপর রাখলেন। ইবনে খুযায়মা র. প্রমুখ এটিকে সহীহ বলেছেন। সালাত অধ্যায়ের শেষ দিকে হযরত আলী রা. এর অনুরূপ আছার (হাদীস) এর উল্লেখ আসছে। (২খ, ২৭৫ পৃ
এখন আমরা জানব কনুই পর্যন্ত অর্থটি গ্রহণযোগ্য কি না? যা আমরা হাদীস থেকে হাদীসের ব্যাখ্যা দ্বারা বুঝতে পারব। নিচের হাদীস থেকে প্রমাণিত হবে, যেরা এবং হাত একই অর্থে ব্যবহৃত হয়েছে।
ক) বারা ইবনে আযেব (রা) বলেন, রসূলুল্লাহ (স) বলেছেন :
إِذَا سَجَدْتَ فَضَعْ كَفَّيْكَ وَارْفَعْ مِرْفَقَيْكَ
“যখন তুমি সাজদা করবে তোমার তালু জমিনে রাখবে এবং উভয় কুনই উঠিয়ে রাখবে।” [সহীহ মুসলিম, মিশকাত ২/৮২৯ নং]
খ) আনাস (রা) বলেন : রসূলুল্লাহ (স) বলেছেন :
اعْتَدِلُوا فِي السُّجُودِ وَلَا يَبْسُطْ أَحَدُكُمْ ذِرَاعَيْهِ انْبِسَاطَ الْكَلْبِ
“সাজদা ঠিকভাবে করবে এবং তোমাদের কেউ যেন (সাজদাতে) কুকুরের ন্যায় যেরা‘ (বাহু) বিছিয়ে না দেয়।” [সহীহ বুখারী, সহীহ মুসলিম, মিশকাত ২/৮২৮, অনুরূপ আয়েশা (রাা) থেকে ২/৭৩৫]
বুঝা গেল কনুইয়ের সাথে যেরা‘র সম্পর্ক রয়েছে। এছাড়া পূর্বে প্রমাণ করেছি হাত ও যেরা‘ শব্দটি পরিপূরক হিসাবে সালাতের ক্ষেত্রে ব্যবহৃত হয়েছে। সুতরাং হাতের উপর হাত রাখা বলতে যেরা‘র উপর যেরা রাখা অর্থ সহীহ ও গ্রহণযোগ্য। যার মধ্যে হাতের কনুই, তালুর পিঠ ও কব্জিও অন্তর্ভুক্ত। এখন যেরা‘র উপর হাত রাখার পদ্ধতি কেমন হবে – সেটা যদি কারো বুঝে না আসে বা অস্পষ্ট থাকে। তাহলে সেটা তার নিজস্ব অক্ষমতা ছাড়া অন্য কিছু নয়।
এখন আমরা জানব লেখক ‘ফতহুল বারী’র উদ্ধৃতিটিতে কি কি গোপন করলেন। পূর্ণাঙ্গ উদ্ধৃতিটি নিম্নরূপ :
أبهم موضعه من الذراع وفي حديث وائل عند أبي داود والنسائي ثم وضع يده اليمنى على ظهر كفه اليسرى والرسغ والساعد وصححه بن خزيمة وغيره وأصله في صحيح مسلم بدون الزيادة والرسغ بضم الراء وسكون السين المهملة بعدها معجمة هو المفصل بين الساعد والكف وسيأتي أثر على نحوه في أواخر الصلاة ولم يذكر أيضا محلهما من الجسد وقد روى بن خزيمة من حديث وائل أنه وضعهما على صدره والبزار عند صدره وعند أحمد في حديث هلب الطائي نحوه وهلب بضم إلها وسكون اللام بعدها موحدة وفي زيادات المسند من حديث على أنه وضعهما تحت السرة وإسناده ضعيف
“বাহুর কোন জায়গায় রাখতেন সেটা এই হাদীসে অস্পষ্ট। আবূ দাউদ ও নাসাঈ বর্ণিত ওয়াইল রা. এর হাদীসে বলা হয়েছে : অতঃপর তিনি তাঁর ডান হাত বাম হাতের তালুর পিঠ, কব্জি ও বাহুর উপর রাখলেন। ইবনে খুযায়মা র. প্রমুখ এটিকে সহীহ বলেছেন। এর মূল বর্ণনাটি সহীহ মুসলিমে আছে তবে বাহু কথাটি ছাড়া। الرسغ-এর ‘রা’ এ পেশ, সিনে সাকিন, শেষে হরকতবিহীন। এটা বাহু ও হাতের পাতার সযোগস্থল (তথা কব্জি) । সালাত অধ্যায়ের শেষ দিকে হযরত আলী রা. এর অনুরূপ আছার (হাদীস) এর উল্লেখ আসছে। এখানে এটাও উল্লিখিত হয় নি যে, শরীরের কোথায় হাতটি থাকবে। তবে ইবনে খুযায়মাহ ওয়ায়েল (রা) থেকে বর্ণনা করেছেন বুকের উপর থাকবে। বাযযর বর্ণনা করেছেন বুকের নিকট। আর আহমাদ বর্ণনা করেছেন হুলব তাঈ থেকে, এখানে হুলবের ‘হা’-এ পেশ, ‘লাম’-এ সাকিন ও শেষে তানবীন। মুসনাদে আহমাদে অতিরিক্ত আছে আলী (রা)এর হাদীস। তিনি তাঁর দু’টি হাত নাভীর নিচে রাখতেন। এর সনদ যঈফ।” (ফতহুল বারী)
বুঝা গেল, ইবনে হাজার (রহ) যা সংশয় সৃষ্টি হতে পারে সেটাকে আরো সুস্পষ্ট করতে চেয়েছেন। তিনি বুকের উপর বা বুকের নিকটে হাত রাখার বর্ণনা দ্বারা এবং যেরা’র অধিকতর স্পষ্টতার জন্য এরই বিভিন্ন অংশগুলোকে ভাগ করে দেখানো বর্ণনাগুলোর মাধ্যমে যে কোন সংশয়ের মূলোৎপাটন করেছেন। সাথে সাথে এটাও বলেছেন, নাভীর নিচে হাত বাঁধার হাদীস যঈফ। সুস্পষ্ট হল, ইবনে হাজার (রহ)এর বক্তব্য আমাদেরকে সমর্থন করে এবং লেখকের দাবী ও উদ্দেশ্যকে খণ্ডন করে। অথচ লেখক সংক্ষেপে উদ্ধৃতি দিয়ে পাঠককে বিভ্রান্ত করেছেন। লেখক – ৪১ (পৃ: – ২৬) :
আল্লামা শওকানীও (যিনি কোন মাযহাবের অনুসারী ছিলেননা) নায়লুল আওতার গ্রন্থে বলেছেন,
قوله (على ذراعه اليسرى) ابهم هنا موضعه من الذراع وقد بينته رواية احمد وأبى داود فى الحديث الذى قبل هذا. وقال تحت الحديث الذى قبله : والمراد أنه وضع يده اليمنى على كف يده اليسرى ورسغها وساعدها. ولفظ الطبرانى : (وضع يده اليمنى على ظهر اليسرى في الصلاة قريبا من الرسغ) ۲\۱٨۷
অর্থাৎ হাদীস শরীফে যে বলা হয়েছে “বাম বাহুর উপরে’ বাহুর কোন জায়গায় তা এখানে অস্পষ্ট রাখা হয়েছে। আহমাদ ও আবূ দাউদ শরীফে বর্ণিত পূর্বের হাদীসটিতে তার ব্যাখ্যা দেওয়া হয়েছে। আহমাদ ও আবূ দাউদ বর্ণিত পূর্বের হাদীসটি আলোচনা প্রসঙ্গে আল্লামা শওকানী বলেছেন, এর মর্ম হলো তিনি তাঁর ডান হাত বাম হাতের পিঠ, কব্জি ও বাহুর উপর রেখেছেন। তাবারানী র. এর বর্ণনায় এসেছে: তিনি নামাযে তাঁর ডান হাত বাম হাতের পিঠের উপর কব্জির কাছে রেখেছেন। (২খ, ১৮৭ পৃ)
এসব থেকে স্পষ্ট বুঝা যায়, লা-মাযহাবী ভাইয়েরা হাদীসটির ভুল অর্থ বুঝে কনুই পর্যন্ত হাত বিস্তার করে থাকেন।
(আরো বহু আছে)
http://www.mediafire.com/download/af1oh4qx34s3443/Hanafi_Kellar_Post_Mortem+1.pdf
আইডিয়া প্রকাশনী থেকে প্রকাশিত "সলাতুন নবী সঃ" নামে আরেকটি বই প্রকাশিত হয়েছে। লিখেছেনঃ শ্রদ্ধেয় মুফতি গোলামুর রহমান দাঃবাঃ। প্লে স্টোর থেকে সহযে ডাউনলোড় করতে সলাতুন নবী সঃ লিখে চার্চ ক্লিক করুন।
জাযাকাল্লাহ খাইর
বইটি যখন প্রথম প্রকাশ হয় তখন এগুলো প্রকাশ করে জবাব দেয়ার চেষ্টা করা হয়েছিল। কিনতু পরবর্তীতে এগুলোর জবাব নিয়েই এই বইটির “বর্ধিত সংস্করন” প্রকাশ পেয়েছে। পড়ে দেখতে পারেন...
আর এখানে বলা হয়েছে
“(প্রকাশক : মাকতাবাতুল আযহার, ঢাকা–এপ্রিল’২০১১)”
কিনতু এই বর্ধিত সংস্করন প্রকাশকাল হল,
“জুন’২০১৫”
না পড়েই কপি-পেষ্ট শুরু করেছেন
মন্তব্য করতে লগইন করুন