ফিল্ড মাশাল আইয়ূব খানের ধোকাবাজীর জবাবে সিংহ পুরুষ শামছুল হক ফরিদপুরী রহ. এর তেজোদীপ্ত জবাব . . .

লিখেছেন লিখেছেন আবদুস সবুর ২০ মার্চ, ২০১৫, ১১:৫৭:২৪ সকাল

১৯৬৫ সালে নির্বাচনের আগে আইয়ূব খান পূর্ব পাকিস্তানে এলেন। উদ্দেশ্য উলামায়ে কেরামের সমর্থন আদায় করা। প্রেসিডেন্ট হাউজে পূর্ব পাকিস্তানের আলেমদের ডাকলেন। হক্কানী উলামায়ে কেরাম তাতে না যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিলেন। কিন্তু শামছুল হক ফরিদপুরী রহ. সবার কথাকে উপেক্ষা করে তাতে যোগ দিলেন। সবাইকে বলে দিলেন, "আমি বোবা বুঝদিল নই। দেখি কেমন করে ওরা আমাকে ধোঁকা দেয়।"

শামছূল হক ফরীদপুরী রহ. প্রেসিডেন্ট হাউজের সভায় যোগদান করলেন। উদ্বোধনী ভাষনে আইয়ূব খান বললেন,

"মাওলানা ছাহেবান, পীর ছাহেবান, হযরত উলামায়ে কেরাম, আমি বিগত পাচ বৎসরে ইসলামের অনেক খেদমত করেছি। আগামী নির্বাচনে যদি আপনারা আমাদের সমর্থন করেন তাহলে ইনশাআল্লাহ আমি ইসলামের জন্য আরো অনেক অনেক কাজ করব। দেখুন বিগত সময়ে আমি ইসলামিয়াতকে অষ্টম শ্রেনী পর্যন্ত বাধ্যতামূলক করেছি। আমি কেন্দ্রীয় ইসলামী একাডেমী প্রতিষ্ঠা করেছি। আরো অনেক কিছু করেছি। আপনারা আমাকে ভোট দিলে আরো অনেক অনেক কিছু করব।"

ঠিক তখনই সিংহ পুরুষ শামছুল হক ফরিদপুরী রহ. দাড়িয়ে গেলেন। কন্ঠ তার বলিষ্ঠ। কন্ঠ তার তেজোদীপ্ত। যেন অগ্নি উদগিরণ করলেন। বললেন,

"আপনি ইসলামের জন্য কিছুই করেন নি। করেছেন শুধু ইসলামের সাথে এক নম্বরের ধোকাবাজী।"

ফিল্ড মাশাল আইয়ূব খান চোখ লাল করে ফেললেন। বলেলেন,

"আপনি কার সাথে কথা বলছেন, খবর আছে ? আমি পাকিস্তানের প্রেসিডেন্ড। পাঠানের বাচ্চা পাঠান।"

শামছুল হক ফরিদপুরী রহ. এর কন্ঠ আরো তেজোদীপ্ত। আরো বলিষ্ঠ। আরো বলিয়ান। বললেন,

"আপনার খবর আছে কি ? আমি মুসলমানের বাচ্চা মুসলমান। আমাকে একা মনে করলে ভুল করবেন। দশ কোটি মুসলমান আমার পশ্চাতে দন্ডায়মান। সাবধানে কথা বলুন।"

আইয়ূব খান থমকে গেলেন। একেবারে ভরকে গেলেন। বললেন,

"কিভাবে ধোকাঁবাজী করেছি ?"

শামছূল হক ফরিদপূরী রহ. তখন বললেন,

"আপনি ইসলামী রিচার্স ইনিস্টিটিউট প্রতিষ্ঠা করেছেন, তা সত্য। কিন্তু তার ডাইরেক্টর বানিয়েছেন নাস্তিক ড. ফজলুর রহমানকে। পূর্ব পাকিস্তানে ইসলামী একাডেমী প্রতিষ্ঠা করেছেন সত্য। কিন্তু তার ডাইরেক্টর বানিয়েছেন আরেক বিতর্কিত ব্যক্তিকে। আপনি অষ্টম শ্রেণী পর্যন্ত ইসলামিয়াতকে বাধ্যতামূলক করেছেন তবে তা পড়ানোর জন্য কোন শিক্ষক নিয়োগ করেননি।"

এভাবে একাধারে কিছু উদাহরন পেশা করার পর বললেন, "কাজেই ধোকাবাজী ছাড়া আর কী করেছেন ?"

[৭১- এর মুক্তিযুদ্ধ ও কিছু কথা, নসীম আরাফাত]

হাদীসে এসেছে,

"অত্যাচারী শাসকের সামনে দাড়িয়ে সত্য ও ন্যায়ের কথা বলা হলো সর্বোত্তম জিহাদ।"

(আবূ দাঊদ, তিরমিযী, ইবনু মাজাহ, মুছনাদে ইমাম আহমাদ)

বিষয়: বিবিধ

১২৮১ বার পঠিত, ৪ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

310021
২০ মার্চ ২০১৫ দুপুর ১২:২৪
প্রেসিডেন্ট লিখেছেন : এমন আলেম আজ বিরল।
বর্তমানের কওমীরা তাঁদের পূর্বসুরীদের আদর্শ হতে অনেকটাই বিচ্যূত। নিজেদের তারা মসজিদ, মাদ্রাসা আর খানকায় সীমাবদ্ধ করে রেখেছেন।
310107
২০ মার্চ ২০১৫ রাত ১০:২৯
দ্য স্লেভ লিখেছেন : "অত্যাচারী শাসকের সামনে দাড়িয়ে সত্য ও ন্যায়ের কথা বলা হলো সর্বোত্তম জিহাদ।"
310150
২১ মার্চ ২০১৫ রাত ১২:৩১
গাজী সালাউদ্দিন লিখেছেন : বাহ, এতো বছর পর আপনার মাধ্যমে উনার কথা যেন শুনতে পাচ্ছি, রক্ত গরম হয়ে যাচ্ছে। সত্যি এমন আলেম আজ খুব দরকার।
310309
২১ মার্চ ২০১৫ রাত ১০:৪৯
আবু জান্নাত লিখেছেন : সত্যিই তারা সর্বোত্তম জিহাদটি করে গেছেন। আল্লাহ তায়ালা তাদের জান্নাত নসীব করুন। আমীন।

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File