মুসলিম রাষ্ট্রের মৌলিক নীতিমালা

লিখেছেন লিখেছেন আবদুস সবুর ০১ জুন, ২০১৪, ০৫:৩১:৪৫ বিকাল

২২টি ধারা, যার উপর স্বীকৃত সকল ইসলামী দল একমত

ইসলামী রাষ্ট্রের সংবিধানে নিম্নবর্ণিত বিধানাবলির সুস্পষ্ট উল্লেখ থাকা আবশ্যক।

১. একমাত্র আল্লাহ রাববুল আলামীনই বিধানদাতা। প্রকৃতির বিধান তো তাঁরই, মানবজাতির জীবনযাপনের বিধানও একমাত্র তিনিই দান করতে পারেন।

২. রাষ্ট্রের সকল বিধি-বিধানের ভিত্তি হবে কুরআন-সুন্নাহ। কুরআন-সুন্নাহবিরোধী কোনো আইন প্রণয়ন করা যাবে না এবং কোনো ব্যবস্থাপনাগত বিধানও কুরআন-সুন্নাহর পরিপন্থী হতে পারবে না।

৩. রাষ্ট্র কোনো শ্রেণী, ভাষা, ভূ-খন্ড বা এ জাতীয় কোনো চেতনার ভিত্তিতে গঠিত হবে না। রাষ্ট্রের মূল ভিত্তি হবে সেই সব বিধান ও লক্ষ্য, যার বুনিয়াদ ইসলামপ্রদত্ত জীবন ব্যবস্থা।

৪. ইসলামী রাষ্ট্রের অবশ্য কর্তব্য হবে কুরআন-সুন্নাহয় নির্দেশিত ন্যায় ও সত্যের প্রতিষ্ঠা এবং অন্যায় ও অসত্যের মূলোৎপাটন। ইসলামের শিআর ও নিদর্শনসমূহের স্বমহিমায় পুনরুজ্জীবন এবং স্বীকৃত ইসলামী দলগুলোর জন্য তাদের নিজস্ব মতাদর্শ অনুযায়ী প্রয়োজনীয় ইসলামী শিক্ষা-দীক্ষার ব্যবস্থা।

৫. ইসলামী রাষ্ট্রের অপরিহার্য কর্তব্য হবে, বিশ্ব মুসলিমের সাথে ঐক্য ও একাত্মতাকে সুদৃঢ় করা এবং রাষ্ট্রের মুসলিম অধিবাসীদের মাঝে জাহহেলিয়াতের বিভেদ-বিভাজনের প্রেরণা যথা-বংশ, ভাষা, অঞ্চল ও অন্যান্য পার্থিব বৈশিষ্ট্যভিত্তিক বিভেদ-চেতনার পথ রুদ্ধ করে মুসলিম উম্মাহর ঐক্য ও সংহতি রক্ষার শক্তিশালী ব্যবস্থা গ্রহণ করা।

৬. রাষ্ট্র জাতি-ধর্ম নির্বিশেষে এমন সকল নাগরিকের অপরিহার্য প্রয়োজন পূরণের অর্থাৎ খাদ্য, বস্ত্র, বাসস্থান, চিকিৎসা ও শিক্ষার দায়িত্বশীল হবে, যারা উপার্জনে সক্ষম নয়, কিংবা কর্মহীনতা বা অন্য কোনো কারণে বর্তমানে আয়-উপার্জনে অক্ষম।

৭. রাষ্ট্রের নাগরিকগণ ইসলাম প্রদত্ত সকল অধিকার লাভ করবেন। অর্থাৎ আইনী সীমারেখার মধ্যে জানমাল, ইজ্জত-আব্রুর নিরাপত্তা, স্বাধীনতা, ইবাদত ও উপাসনার অধিকার, ব্যক্তি-স্বাধীনতা, মত প্রকাশের অধিকার, নিরাপদে চলাচলের অধিকার, সভা-সমাবেশের অধিকার, আয়-উপার্জনের অধিকার, উন্নতির ক্ষেত্রগুলোতে সমতা এবং সেবামূলক প্রতিষ্ঠানের সেবা গ্রহণের অধিকার।

৮. উপরোক্ত কোনো নাগরিক অধিকার ইসলামী আইনের বৈধ সনদ ছাড়া কোনোভাবেই হরণ করা যাবে না। কোনো অপরাধের অভিযোগে আত্মপক্ষ সমর্থনের সুযোগ ও আদালতের রায় ছাড়া কোনো প্রকারের শাস্তি দেওয়া যাবে না।

৯. স্বীকৃত ইসলামী দলগুলো আইনের ভেতর থেকে সম্পূর্ণ ধর্মীয় স্বাধীনতা ভোগ করবে। অনুসারীদেরকে ধর্মীয় শিক্ষা প্রদানের অধিকার তাদের থাকবে। তারা তাদের মতামত স্বাধীনভাবে প্রচার করতে পারবে। তাদের ব্যক্তিগত সমস্যার সমাধান তাদের ফিকহী মাযহাব অনুযায়ী হবে এবং এ রকম ব্যবস্থাও উপযোগী হবে যে, তাদের বিচারকই এই ফয়সালা করবেন।

১০. রাষ্ট্রের অমুসলিম নাগরিকদেরও আইনের মধ্যে থেকে তাদের ধর্মীয় আচার-অনুষ্ঠান, শিক্ষা-সংস্কৃতি ও ধর্মীয় শিক্ষা-দীক্ষার পূর্ণ স্বাধীনতা থাকবে। তাদের নিজস্ব সমস্যার সমাধান তাদের ধর্মীয় বিধান ও প্রথা অনুযায়ী করার অধিকার থাকবে।

১১. রাষ্ট্রের অমুসলিম নাগরিকদের সাথে শরীয়তের গন্ডির মধ্যে যে সব চুক্তি করা হয়েছে তা মেনে চলা অপরিহার্য। ৭ নং ধারায় যে সব নাগরিক অধিকারের কথা বলা হয়েছে, দেশের অমুসলিম নাগরিকরাও তা সমানভাবে লাভ করবেন।

১২. রাষ্ট্রপ্রধানকে অবশ্যই মুসলিম পুরুষ হতে হবে, যার সততা, যোগ্যতা ও সঠিক সিদ্ধান্ত গ্রহণের ক্ষমতা সম্পর্কে নাগরিকদের নির্বাচিত প্রতিনিধিরা (আহলুল হাল্লি ওয়াল আকদি) আস্থাশীল থাকবেন।

১৩. রাষ্ট্রপ্রধানই হবেন রাষ্ট্রের শান্তি-শৃঙ্খলার মূল দায়িত্বশীল। তবে তিনি তার দায়িত্ব ও ক্ষমতার কিছু অংশ কোনো ব্যক্তি বা দলের নিকট অর্পণ করতে পারবেন।

১৪. রাষ্ট্রপ্রধানের রাষ্ট্র পরিচালনা একনায়কসূলভ হবে না। বরং তা হবে শূরা ভিত্তিক অর্থাৎ তিনি শূরার সদস্য ও মনোনীত প্রতিনিধিদের সাথে পরামর্শ করে তাঁর দায়িত্ব পালন করবেন।

১৫. রাষ্ট্রপ্রধান সম্পূর্ণ সংবিধান বা তার অংশবিশেষ বাতিল করে শূরাবিহীন রাষ্ট্র পরিচালনার অধিকারী হবেন না।

১৬. যারা রাষ্ট্রপ্রধান নির্বাচনের ক্ষমতাপ্রাপ্ত হবেন তারা অধিকাংশের মতের ভিত্তিতে তাকে অপসারণের ক্ষমতাও সংরক্ষণ করবেন।

১৭. নাগরিক অধিকার ও সুযোগ-সুবিধার ক্ষেত্রে রাষ্ট্রপ্রধান সাধারণ মুসলমানদের সমপর্যায়ের হবেন এবং আইনের জবাবদিহিতার উর্ধ্বে হবেন না।

১৮. সরকারি কর্মকর্তা ও কর্মচারী এবং সাধারণ নাগরিক সবার জন্য অভিন্ন আইন ও নীতি প্রযোজ্য হবে এবং উভয় শ্রেণীর উপর সাধারণ আদালতই তা কার্যকর করবে।

১৯. বিচার বিভাগ প্রশাসন থেকে সম্পূর্ণ আলাদা ও স্বাধীন থাকবে, যাতে বিচারিক দায়িত্ব পালনের ক্ষেত্রে প্রশাসনের দ্বারা প্রভাবিত না হয়।

২০. এমন কোনো মতবাদ ও

চিন্তাধারা প্রচার নিষিদ্ধ থাকবে, যা ইসলামী রাষ্ট্রের মৌলিক নীতি ও আদর্শ ধ্বংসের কারণ হয়।

২১. রাষ্ট্রের বিভিন্ন প্রদেশ ও বিভাগ একই রাষ্ট্রের প্রশাসনিক অংশ হিসেবে বিবেচিত হবে। গোষ্ঠি, ভাষা বা বংশভিত্তিক আলাদা আলাদা অংশ নয়। শুধু ব্যবস্থাপনা ও প্রশাসনিক কর্মকান্ডের সুবিধার্থে কেন্দ্রীয় সরকারের অধীনে কার্যনির্বাহী প্রতিষ্ঠান হিসেবে তাদের উপর দায়িত্ব অর্পণ করা বৈধ হবে। তারা কখনো কেন্দ্র থেকে বিচ্ছিন্ন হওয়ার অধিকার লাভ করবে না।

২২. সংবিধানের এমন কোনো ব্যাখ্যা গ্রহণযোগ্য হবে না, যা কুরআন-সুন্নাহর বিরোধী।

[হযরত মাওলানা মুহাম্মাদ তাকী উসমানী দামাত বারাকাতুহুম রচিত ‘ইসলাম আওর সিয়াসী নযরিয়াত’ থেকে গৃহীত ও অনূদিত। অনুবাদ : মাওলানা আনসারুল্লাহ হাসান]

(সংগ্রহ- মাসিক আল কাওসার)

বিষয়: রাজনীতি

১১৩৬ বার পঠিত, ১ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

229137
০১ জুন ২০১৪ সন্ধ্যা ০৬:৩২
পুস্পিতা লিখেছেন : এসবের ভিত্তিতে আমাদের দেশের ইসলামী দলগুলো এক হতে পারে না?

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File