একজন তারেক মাসুদ কথন ও আল্লাহর ফায়সালা . . .
লিখেছেন লিখেছেন আবদুস সবুর ১৮ মার্চ, ২০১৪, ০৪:১৯:১৭ বিকাল
মুভি রিভিউ (রানওয়ে)-
ঢাকা আন্তর্জাতিক বিমান বন্দর রানওয়ের পাশে একটি পরিবারের বসবাস । দিনে আনে দিনে খায় সংসার রুহুলদের । সংসারের মধ্যে অকেঁজো দাদা, সংসারের ঘানি টানতে ব্যস্ত মা, ভিটি বাড়ি বিক্রি করে বাবা মালেশিয়ায় যায় কর্মের উদ্দেশ্যে, একমাত্র বোন ফাতেমা গার্মেন্টস কর্মী এবং রুহুল আলিয়া মাদ্রাসায় পড়ুয়া ছাত্র অল্পের জন্য দাখিল পাস করতে পারেন নাই, যিনি অভিনয় করছেন কেন্দ্রীয় চরিত্রে । রুহুলের মামার (জয়ন্ত চট্টোপাধ্যায়) দোকানে (সাইবার ক্যাফে) কাজ শিখার সুবাদে পরিচয় হয় আরিফ নামে এক যুবকের সাথে যে কিনা ইসলামের লেবাসধারী (সুন্নতী দাড়ি, এমব্রয়ডারী কাজ করা পাঞ্জাবী, ফুলপ্যান্ট পড়া) ইসলামী চেতনায় উজ্জীবিত যুবক ।
কাজ শিখতে যাওয়া রুহুল টুকিটাকি সমস্যায় মামার সাহায্য চাওয়ায় মামার বিরক্তির ষোলআনা সুযোগ নেয় ইসলামপন্থী আরিফ এবং রুহুলের সাথে গড়ে উঠে সখ্যতা। আরিফের ইউটিউভে ইসলামিক নাশিদ দেখা নিয়ে রুহুলের কৌতুহুল আরও বেড়ে যায় এই ভেবে যে, “আমি তো জানতাম ইন্টারনেটে শুধু লেংটা মাইগোর ছবি থাকে” আরিফ এর গাম্ভীর্যপূর্ণ উত্তর “ভালো খারাপ সব জায়গাতেই আছে, যে যেটা গ্রহন করবে”। আরিফ এর প্রতি প্রভাবিত হতে থাকে রুহুল। রুহুল ইসলাম সম্পর্কে জানতে চায়, ইসলামের অনুশাসন মানতে চায়। আরিফ তাকে নিয়ে যায় ঢাকার অদূরে এক মসজিদের ইমাম সাহেবের (ইমাম সাহেবও মাশাআল্লাহ পরিপূর্ণ সুন্নতের পাবন্দ) কাছে যিনি কিনা ইসলামকে জানেন। যার কাছে ইসলাম মানে তাগুতী শক্তির বিরুদ্ধে জিহাদেরই নাম। ইসলাম মানে বেঈমানদের বিরুদ্ধে বোমাবাজি করা।
সহজ সরল রুহুল ইমাম সাহেবের কথায় ঘাড় নাড়িয়ে একাত্নতা ঘোষণা করে। আরিফ নিয়ে যায় আরেক বুজুর্গের কাছে যিনি কিনা আফগান ফেরত হট মেজাজী মুজাহিদ, কথায় কথায় উর্দু বলে। “ভয় পেয়ো না, উনার দিল অনেক নরম”। উনার হাত অনেক লম্বা । এয়ারপোর্টের দারোয়ান পদে তোমাকে একটি কাজের ব্যবস্থা করে দিতে পারবেন উনি। রুহুলের মনে খুশির ঝিলিক দেখা যায়। আফগান ফেরত মুজাহিদও ইমাম সাহেবের কথাই রিপিট করলেন আরও তেজদীপ্ত ভাষায় তবে উর্দুর ব্যবহার ছিলো চোখে পড়ার মত। রুহুলের মানসিকতা ক্রমেই জিহাদী চেতনায় রুপ নিলো, ঘরের টেলিভিশেনে বোরকা পড়ানো হল (ফাতেমার উক্তি- সারাদিন আমি গার্মেন্টস এ কাজ করি সন্ধ্যায় একটু টিভি দেখতে পারুম না আমার কি কোন স্বাদ আহ্লাদ নাই ? টিভিডারে বোরকা পড়াইছে কে?)
এনজিও থেকে ঋণ নিয়ে গরু কেনার পর দুধ বিক্রি করে সংসার চালানোর একমাত্র অবলম্বন গরুগুলোর দিকেও শনির দৃষ্টি পড়ে রুহুলের। প্রত্যেক সপ্তাহে কিস্তি না চালিয়ে গরু বিক্রি করে কিস্তির সমুদয় টাকা পরিশোধ করে দাও, কারণ- সুদ দেওয়া ও নেওয়া দুইটাই হারাম।
মা বলে উঠলেন- “এক পয়সার মুরোদ নেই উনি শিখাতে এসেছেন হালাল-হারাম”। ধর্ম এবং বাস্তবতার মধ্যে কেমন ঘুরপাক খেতে লাগলো রুহুল। ফলে ভরসার স্থল আরিফের সাথে আফগান ফেরত উর্দু ভাইয়ের কাছে গমন- এটা আল্লাহর রাস্তা।
উর্দু ভাইয়ের ততদিনে একটি চরের মধ্যে নিজের এলাকা যেখানে শরীয়ত মোতাবেক আইন চলবে, এনজিও চলবে না, গনতন্ত্র নামক কুফরী চলবে না ইত্যাদি বিষয় নিয়ে একটি এলাকা গড়ার স্বপ্ন পাকাপোক্ত হতে চলল গুটিকয়েক যুবকের সহয়তায়। সেই চরেই চলছে আরিফ, রুহুলদের জঙ্গি প্রশিক্ষন। প্রশিক্ষনের ফলপ্রসুতা আনলেন আরিফ সিনেমা হলে বম্ব ব্লাষ্টিংয়ের মাধ্যমে ।সারাদেশ উত্তপ্ত জঙ্গিদের এখন কি করা উচিত ?
সাময়িকভাবে সবাইকে আসন্ন ইজতেমা উপলক্ষে তাবলীগ জামাতে যাওয়ার পরামর্শ দিলেন আফগান ফেরত উর্দু ভাই এবং সবাইকে জামাতবন্দী হওয়ারও পরামর্শ দিলেন । ( খুব খিয়াল কৈরা !!!)
তারপর আফগান ভাইয়ের পরবর্তী টার্গেট বিচারকরা যারা আল্লাহর দেয়া আইন বাদ দিয়ে মনুষ্য দেয়া বিধান মোতাবেক বিচার চালায়। কে কে আল্লাহর জন্য তৈরী আছে হাত উঠাও। জেহাদের ফাযায়েল শুনিয়ে আরিফ ও তার সাথে দুজনকে রাজি করায় আফগান ফেরত উর্দু ভাই।
মধ্যরাতে রুহুল ঘুম থেকে উঠে হাপিয়ে উঠে- অন্তদ্বর্ন্ধে জড়িয়ে পড়ে রুহুল, উপার্জনক্ষম ব্যক্তি হিসেব একদিকে সংসারের দায়িত্ব পালন করা, অন্যদিকে মুসলিম ভাইয়েরা মার খাচ্ছে সেজন্য তাগুতের বিরুদ্ধে লড়াই করে জান বিলিয়ে দেওয়ার ধর্মীয় জজবা। সবমিলে দেদুল্যমান অবস্থায় উপনীত হয় রুহুল।
এর মাঝে উর্দূ ভাই এক জাতীয়তাবাদ নেতার কাছে যায় তার সাথে আলাপ আলোচনা করেন। জাতীয়তাবাদী নেতা তাকে শাসায় এই বলে যে, যদি কোন আইনজীবির ক্ষতি করেছেন তাহলে আপনাদের আর শেল্টার দেওয়া যাবে না। আপনাদের স্বার্থে কওমী মাদরাসা আইন নাকি করেছি। তারপরেও আপনারা খুশি নন। আপনাদের দেখে নেবো। বাকবিতন্ডায় জড়িয়ে পরেন উর্দূ ভাই।
আস্তানায় ফিরে উর্দূ ভাই আগামী পরবর্তী টার্গেট কোর্টের অপারেশনের জন্য আরিফকে দায়িত্ব দেয়। আরিফ দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে নিজেই শিকার হন বোমার আগাতে । টেলিভিশনে খবর দেখে উর্দূ ভাই, রুহুল সহ সকল কর্মীরা ভীত সন্ত্রস্ত হয়ে পড়ে এবং উর্দূ ভাই সবাইকে আরিফের ব্যাপারে আশ্বস্ত নয় সে যে কোন সময় পুলিশের কাছে সবার কথা জানিয়ে দিবে এই সন্দেহে সবাইকে যার যার নিরাপদ যায়গায় চলে যেতে বলে। সবাই রাতেই বিদায় নেয় শুধুমাত্র রুহুল ছাড়া।
ফজর এর সময় রুহুল আজান শুনে মসজিদের দিকে পা বাড়ায় এবং নামাজ পরে বাড়িতে ফিরে যায়।
মা তাকে বরণ করে নেয়, এনজিওর টাকায় কেনা গরুর দুধ দিয়ে তার মুখমন্ডল ধুয়ে দেয় মা।
কাহিনী মোটামুটি এই রকম ।।
কাহিনীর উদ্দেশ্য কি তা সহজেই অনুমেয় . . .
পুরষ্কার-
১) Bengal Film Journalists' Association Awards
২) FIPRESCI Prize
৩) Best Screenplay Award from International Film Festival of
Marrakech in 2002
৪) Best Film Award from Bengal Film Journalists' Association Awards,
Kara Film Festival
৫) Meril Prothom Alo Awards পদক ২০১০
৬) একুশে পদক-২০১২।
পরকথন-
৮ বছর মাদ্রাসায় পড়ুয়া তারেক ভুলে গিয়েছিলেন তার শেঁকড় ।
ভুলে গিয়েছিলেন প্রাচ্যের অক্সফোর্ড খ্যাত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ইতিহাস বিভাগ অধ্যয়ন করে নাস্তিক্যবাদী-আহমদ ছফা, এসএম সুলতানের সাহচর্যে থেকে তার রবের কথা।
তারেক ভুলে গিয়েছিলেন---
তার রব তাকে দেখছেন।।
তার রব তার চিন্তা চেতনার উপর দখল রাখেন।।
তার রব তার রানওয়ে দেখছেন।
তার রব রানওয়ের মর্মকথা বুঝছেন।
তার রব রানওয়ের পিছনের কথা বুজছেন।
তার রব সীমালঙ্গন করা পছন্দ করেন না।
তার রব বলেন-
يُرِيدُونَ لِيُطْفِئُوا نُورَ اللَّهِ بِأَفْوَاهِهِمْ وَاللَّهُ مُتِمُّ نُورِهِ وَلَوْ كَرِهَ الْكَافِرُونَ তারা তাদের মুখের ফুৎকারে আল্লাহর নূরকে নিভিয়ে দিতে চায়, কিন্তু আল্লাহ তাঁর নূরকে পূর্ণতাদানকারী । যদিও তারা (কাফিররা) তা অপছন্দ করে। (সূরা আন-নূর : ০৮)
পরবর্তী ঘটনা কাজের মেয়ের মুখ থেকেই শুনা যাক ।
স্থান- ঘিউর উপজেলার নিকটবর্তী কোন জায়গা। গাড়িতে আছে, ক্যাথেরিন, তারেক, মিশুক মুনীর ও ড্রাইভার ।
সময়- রোজার দিনের দুপুর।
ফোনটা হাতে নিয়ে কাজের বুয়ার সেলে কল দিলেন তারেক ।
আজ দুপুরে কি কি মেন্যু করলে ?
বুয়া : ভাইজান , টাকি মাছের ভর্তা, শিং মাছ দিয়ে শিমের বিচি রান্না করেছি
(স্মৃতির হঠকারিতার কারণে বাকিগুলো মনে করতে পারছি না।)
ফোন রাখার পরই ঘটনা ঘটে গেলো।
যা ক্যাথেরিন কোন সময়ই মনে করতে চান না।
ক্যাথেরিনের ভাষায় খুবই “অলৌকিক” ছিলো বিষয়টি ।
হাসপাতালে নেওয়ার সময়টুকুও পাওয়া গেলো না।
(দুর্ঘটনার পর গাড়ির ছবি )
জীবনাবসান হয়ে গেলো প্রথিতযশা এক চিত্রনির্মাতার।
আল্লাহ তায়ালা তার আমল অনুযায়ী ফায়সালা করেন। আমীন।।
যার মাধ্যমে আমরা পেয়েছিলাম মাদ্রাসা শিক্ষার কুফল নিয়ে নির্মিত শর্টফিল্ম-মাটির ময়না। রানওয়ের রিভিউ তো সবাই পড়লেন।
শেষকথন -
তারেক নেই আছে থার্ড পারসন সিঙ্গুলার নাম্বারের লিভ টুগেদার সমর্থক আমাদের আরেক মাদ্রাসা পড়ুয়া হযরতসহ আরও নাম না জানা কত নির্মাতা । টেলিভিশন নিয়ে হুজুরদের চুলকানিতে যিনি কিনা আবার মলম লাগাতে পারেন ভালো । রাজাকারের চরিত্র / ঘটকদের চরিত্র / লোভী মোড়ল / গ্রাম্য সালিশে মাতব্বরের চরিত্র/ হুজুরের লেবাসে অত্যাচারী সুদখোর এর অভিনয় তো কত আগে থেকেই চলে আসছে।
সময় থাকতে হুঁশ হবে কি আমাদের ???????
নাকি আল্লাহর উপর ছেড়ে দিবো সব যেমনটা আগেও ঘটেছিলো.............
{রিভিউর কারণে পোষ্ট বড় হয়ে গেলো- রিভিউ ছাড়া পোষ্ট অনর্থক}
বিরক্তি ক্ষমাসুন্দর দৃষ্টিতে দেখার অনুরোধ।
(ধন্যবাদ ভাই Abdul Hai)
বিষয়: বিবিধ
২৬১৮ বার পঠিত, ১৫ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
বারাকাল্লাহ
শেষ পরিনতি কিন্তু শেষ হয়নি . . .
আর আস্তিকদের কাছে,
শেষ পরিনিতি = হল, একজন ব্যক্তি জান্নাতে গেল নাকি জাহান্নামে . . .
আরেকটি রানওয়ে বানালে তার সঠিক জবাব হতে পারে।
- পুরোপুরি একমত নই। কারন তাদেরকে তাদের স্ট্যাইলেই জবাব দেয়া মানে তো তাদের সাথে মূলত একধরনের একাত্বতা ঘোষনা করা !!!
আমরা যদি ব্যক্তিজীবনে সঠিকভাবে ইসলাম পালন করে দেখিয়ে দিতে পারে আমার মতে তবেই সঠিক জবাব হতে পারে . . .
ব্যক্তি জীবনের এই দাবীতে একমত।
মন্তব্য করতে লগইন করুন