একটি নদীর গল্প
লিখেছেন লিখেছেন পূর্বমেঘ ১১ জুন, ২০১৩, ১১:১১:৫৪ রাত
একটি নদীর গল্প বলি। নদীটির নাম- পত্রসিঁথি। গাছের পাতার উপরতলে অসংখ্য শিরার মাঝে যেমন একটি মধ্যশিরা থাকে, তেমনি সান্তালি গ্রামের বুকে অসংখ্য সরু খালের মাঝে পত্রসিঁথি ছিল মধ্যমণি। একটা সময় ছিলো যখন এর প্রমত্ত স্রোতই ছিলো এর অহংকার। স্রোতের প্রবল বেগে গগণস্পর্শী পাহাড়কে অবহেলায় আঘাত করতো সে। ক্ষয় ধরিয়ে দিতো পাহাড়ের গায়ে। আপন শক্তিতে ভাসিয়ে নিয়ে আসতো চিকন বালুকণা। সে বালুই তার কাল হলো। অচল বোঝা বেড়ে বেড়ে একসময় তার জোর কমিয়ে দিলো। কালের পরিক্রমায় নদীটি কখন যে তার নিজের আসনই হারিয়ে ফেলেছে, তা বুঝতে পারলো না। অবহেলা আর অবজ্ঞায় প্রচণ্ড স্রোতের বেগে এতকাল যে ছোট্টছোট্ট বালিকণা সে ছিনিয়ে এনেছে, সেই বালিকণাই আজ জমতে জমতে তার আসনকেই গ্রাস করে নিয়েছে। আসন হারিয়ে সে নদী ধীরে ধীরে পিছনে সরে গেলো। এক সময়ের সেই প্রচণ্ড প্রতাপের স্রোতস্বিনী আজ একরকম নিঃস্ব। আজ সে তারই বয়ে আনা দাসসম সেই বালুকণার অনুচর। তার অহংকারকে পরিহাস করার জন্যই যেনো জোয়ার আসে। ক্ষণিকের জন্য সে ফিরে আসে চেনা রাজ্যে|
তারপরও সময়ে সে জেগে ওঠে। তার বুকের স্বল্প ঘোলা জলে যখন বর্ষা নামে, তখন বালির প্রতাপ লুকিয়ে পড়ে। পূর্বযুগের আক্ষেপ তাকে সর্বনাশা করে তোলে। জলের প্রবল তোড় ছড়িয়ে দেয় দুকূলে। ভাসে তীর, ভাসে নীর। প্রাণের সারি ছিটকে যায় দূরে। গগণজুড়ে মেঘের দাপট আর বজ্রধ্বনি তার বুকেও আলোড়ন তোলে। ঘূর্ণি জাগে তার ঘৃণার জলাধারে। রুদ্র প্রবাহে নাগিনী হার মানে। আবার পালাবদল ঘটে।
চিত্রপটে আশ্বিন আসে শুভ্র তুলি হাতে। চারদিক শুভ্র আলোর স্তব। পত্রসিঁথি শান্ত, ধীর আর নতশীরে পিছিয়ে আসে। তার বুকজুড়ে থাকা চিকচিকে বালিতে শরতের রোদ নামে। আর জোৎস্না রাতে পত্রসিঁথিতে চাঁদ নামে সেখানে, যেখানে পত্রসিঁথির প্রস্থানশেষে একটুখানি জল পড়ে আছে।
[রবিঠাকুরের কবিতা অবলম্বনে]
বিষয়: বিবিধ
১১৭৬ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন