কি ভূমিকা ছিল কওমী উলামাদের ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধে?
লিখেছেন লিখেছেন জাহিদ সারওযার সুমন ১৬ ডিসেম্বর, ২০১৫, ০২:৫৫:১৩ দুপুর
১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধের সময় কওমি মাদ্রাসার কয়েক জন ছাত্র হাকীমুল উম্মত মাওলানা আশরাফ আলী
থানভীর সর্বশেষ জীবিত খলিফা হাফেজ্জি হুজুর রহমাতুল্লাহ আলাইহি কে জিজ্ঞাসা করেছিল, এই যে মুক্তিযুদ্ধ শুরু হয়েছে এই
যুদ্ধটা সম্পর্কে আপনার অভিমত কি ?
তখন হাফেজ্জি হুজুর রহমাতুল্লাহ আলাই উত্তর দিয়েছিলেন- এটা হচ্ছে জালেমের বিরুদ্ধে মজলুমের যুদ্ধ। পাকিস্তানিরা
হচ্ছে জালেম আর আমরা বাঙ্গালীরা হচ্ছি মজলুম। হাফেজ্জি হুজুরের এই কথা শুনে অনেক আলেম মুক্তিযুদ্ধে দেশের স্বাধীনতা সংগ্রামে ঝাঁপিয়ে পড়েছিল। সাংবাদিক শাকের হোসাইন শিবলির একটি বই আছে “আলেম মুক্তিযুদ্ধাদের খোঁজে”এই বইটিতে আপনারা অনেক বড় বড় আলেম যারা দেশের বিভিন্ন ক্বওমী মাদ্রাসা থেকে পাস করেছিলেন মুক্তিযুদ্ধের সময় তাঁদের বীরত্বের কাহিনী পাবেন। কিন্তু ঐ আলেমরা কিন্তু ওলামা লীগ করতো না। তাঁরা শুধু দেশ মাতৃকার টানে ও নির্যাতীত নারীদের কে পাকিস্তানী হানাদার বাহিনীর লালসার হাত থেকে বাঁচানোর জন্যই মুক্তিযুদ্ধ করেছিল। ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের প্রধান মুহাদ্দিস ছিলেন শায়খুল ইসলাম আমীমুল এহসান (রহঃ)। আমীমুল এহসান(রর্হঃ) তিনিও কিন্তু পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর বিরুদ্ধে ফতোয়া দিয়েছিলেন হত্যা ও
নারীধর্ষনের। পরবর্তীতে ইয়াহয়া সরকার তাঁকে জোর করে সৌদি- আরব পাঠিয়ে দেয়। দেশ স্বাধীন হবার পর তিনি বাংলাদেশে ফিরে আসেন ও বঙ্গবন্ধু তাঁকে ঢাকার বায়তুল মোকাররম মসজিদের প্রধান খতীব হিসাবে নিযুক্ত করেন। উপমহাদেশে শিয়া মতবাদের বিলুপ্তিসাধনে শায়খুল ইসলাম আমীমুল
এহসান (রহঃ)এর অনেক অবদান ছিল।
[ তথ্যসূত্রঃ শায়খুল ইসলাম আমীমুল এহসান রহমাতুল্লাহ আলাইহি এর জীবন ও কর্ম, ইসলামিক ফাউন্ডেশন বাংলাদেশ]
ব্রাক্ষণবাড়িয়া সদরের যে সবচেয়ে বড় ক্বওমী মাদ্রাসা জামিয়া ইউনিসিয়া সেই মাদ্রাসার প্রধান মুহতামিম ফখরে বাঙ্গাল আল্লামা তাজুল ইসলাম (রহঃ) তিনিও কিন্তু মুক্তিযুদ্ধের সময় পাকিস্তানী হানাদার বাহিনীর বিরুদ্ধে ফতোয়া দিয়েছিলেন। ব্রাক্ষণবাড়িয়া জেলায় অনেক বড় বড় আলেম তাঁর ফতোয়া শুনে মুক্তিযুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়েছিল।অনেক মুক্তিযুদ্ধাকে ফখরে বাঙ্গাল আল্লামা তাজুল ইসলাম রহঃ নিজের বাসায় আশ্রয় দিয়েছিলেন। দেশ স্বাধীন হবার পর বঙ্গবন্ধু তাঁকে ধন্যবাদ জানিয়ে একটি চিঠিও দিয়েছিলেন
[ তথ্যসুত্রঃ ফখরে বাঙাল আল্লামা তাজুল ইসলাম রহঃ ও তাঁর সাথীবর্গ, লেখকঃ হাফিয মুহাম্মদ নুরুজ্জামান ইসলামিক ফাউন্ডেশন,বাংলা দেশ]
পাবনার রাজাকার বাহিনীর প্রধান ছিলেন জামায়াতের তথাকথিত মাওলানা সোবহান, আবার মুক্তিযোদ্ধাদের প্রধান ছিলেন দেওবন্দ মাদ্রাসা থেকে দাওরা হাদিস পাস করা মাওলানা কাসিমুদ্দিন, যিনি
রাজাকার বাহিনীর হাতে নির্মম ভাবে শহীদ হয়েছিলেন। ভারতের দেওবন্দ মাদ্রাসা কেন্দ্রিক যে আলেমদের সংগঠন আছে “জমিয়তে উলামায়ে হিন্দ”
তাঁরাও কিন্তু ১৯৭১ সালে
বাংলাদেশের মুক্তিযোদ্ধাদের পক্ষে অনেক ফতোয়া দিয়েছিলেন। “জমিয়তেউলামায়ে¬
হিন্দ” ১৯৭১ সালে স্পষ্ট ভাবে পাকিস্তানী হানাদার বাহিনী যে নির্মম ভাবে পূর্ব পাকিস্তানি জনগণদেরকে হত্যা করছে এই ব্যাপারে অনেকগুলি বিবৃতি দিয়েছিল। এই ফতোয়া
গুলি ইসলামিক ফাউন্ডেশন
বাংলাদেশ থেকে প্রকাশিত শায়খুল ইসলাম হযরত হোসাইন আহমদ মাদানী রহঃ এর যে জীবনী বের হয়েছে, সেই বইটির শেষে পরিশিষ্ট আঁকারে দেয়া হয়েছে। বিশিষ্ট গবেষক আলেম ডঃ মুশতাক আহমেদ “শায়খুল ইসলাম হযরত হোসাইন আহমদ মাদানী রহঃ জীবন ও কর্ম” শিরোনামে তথ্য ও তত্ত্ববহুল অভিসন্দর্ভ
প্রনয়ন করেছেন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের
ইসলামের ইতিহাস বিভাগ থেকে এই অভিসন্দর্ভ উপলক্ষ্যে মুশতাক আহমেদ
কে পি.এইচ.ডি. ডিগ্রী প্রদান করা হয়েছে। আর ইসলামিক ফাউন্ডেশন বাংলাদেশ ডঃ মুশতাক আহমেদের এই অভিসন্দর্ভটিই শায়খুল ইসলাম হযরত হোসাইন আহমদ মাদানী রহঃ এর
জীবনী বই আকারে বের করেছে। বর্তমানে বাংলাদেশে একটা ফ্যাশনে পরিনত হয়েছে যে, ইসলাম নিয়ে যারা রাজনীতি করে ইসলাম নিয়ে যারা লেখালেখি করে তাদেরকে রাজাকার হিসাবে আখ্যায়িত করা হয়।
১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধের সময় পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী যে এত অত্যাচার করেছে,সুন্দর সুন্দর মেয়েদের কে ধর্ষন করে তাদের স্তন কেটে দিত, কিন্তু সেই সময় অধ্যাপক গোলাম আযম, মওদুদী, নিজামী, মুজাহিদ পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর নির্যাতনের বিরুদ্ধে একটা বিবৃতি দেয়ারও সাহস পায় নি। এই কথাটা যেমন সত্য ঠিক তেমনি এই কথাটাও সত্য যে, আমাদের
ক্বওমী মাদ্রাসার আলেমরা স্পষ্ট ভাবে সেই সময় পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর নির্যাতনের বিরুদ্ধে ফতোয়া দিয়েছিলেন। তাঁরা শুধু ফতোয়াই দেননি অনেক কওমি মাদ্রাসার ছাত্রদের কে মুক্তিযুদ্ধেও পাঠিয়ে ছিলেন। তাই আপনাদের প্রতি অনুরোধ থাকবে, দয়া করে হক্কানী আলেমদের কে রাজাকার
আল বদর বলে গালি দিবেন না। যত বড় মুক্তিযোদ্ধাই আসুক দেওবন্দ ভিত্তিক
কোন কওমি মাদ্রাসার আলেমকে রাজাকার হিসাবে প্রমান করতে পারবে না ।
বিষয়: বিবিধ
১৮৭৯ বার পঠিত, ৪ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মুক্তিযুদ্ধ ও এর প্রেক্ষাপট নিয়ে কথা আছে অনেক!
ইন্ডিয়ার বিরোধীও ব্যাপক ভূমিকা রেখেছে!
'ক্বাওমী ওলামাদের সবাই একনিষ্ট মুক্তিযোদ্ধা' আপনার লেখায় এমনই দাবী ফুটে উঠেছে!
কয়েক দিন ক্বাওমী আংগিনা মাড়িয়েছি আমিও! কাজী মুতাসিম বিল্লাহ রহ:,শাইখুল হাদীস আজিজুল হক রহ:স হ অনেক মুহতারাম উস্তাদের দরসে বসেছি!
লালমাটিয়া জামেয়া ইসলামিয়ায় দু'জন শ্রদ্ধেয় হুজুর ছাড়া সরাসরী মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহনকারী আলেম কম দেখেছি!!
মন্তব্য করতে লগইন করুন