ঈদের দিনের আমল , ঈদের নামায ও প্রাসঙ্গিক কথা।দলিল সাহ পড়ুন।

লিখেছেন লিখেছেন জাহিদ সারওযার সুমন ০৭ আগস্ট, ২০১৩, ০৩:২৪:২৩ দুপুর

ঈদ শব্দের আভিধানিক

অর্থঃ ঈদ শব্দটি মূলত ছিল

‘আউদ’ (আইন-ওয়াও-দাল)। ওয়াও

হরফটি ইয়া দ্বারা পরিবর্তিত

হয়ে ‘ঈদ’ (আইন-ইয়া-দাল)

হয়েছে। আরবি ক্রিয়াবাচক বিশেষ্য এই শব্দটির অর্থ হল

ঘুরে আসা, ফিরে আসা।

প্রতি বছর এই দিন মহান

আল্লাহর কতক নিয়ামত তাঁর

বান্দার

প্রতি ঘুরে ফিরে আসে। যেমন ঈদুল ফিতরে সিয়াম পালন

অবস্থায় দিনের

বেলা পানাহার

ইত্যাদি থেকে বিরত থাকার পর

পুনরায় ঈদের দিন থেকে দিনের

বেলা পানাহার শুরু করতে পারার নিয়ামত, গরিব-

মিসকিনদেরকে সাদাকাতুল

ফিতর প্রদান করতে পারার

নিয়ামত এবং ইদুল আযহার দিন

হাজি সাহেব কর্তৃক এই

দিনে তাওয়াফে যিয়ারত-এর মাধ্যমে হজ্বের কতক

গুরুত্বপূর্ন কাজ সমাপ্ত

করতে পারার নিয়ামত,

কুরবানির গোশত ধনি-গরিব

মুসলিম-অমুসলিম সকলের জন্য

মুসলমানদের পক্ষ থেকে মেহমানদারি করতে পারার

নিয়ামত ইত্যাদি। উল্লেখিত

কারণে স্বভাবগত

ভাবে মুসলমানদের

মাঝে সৃষ্টি হয় আনন্দ, খুশি,

ফূর্তি। তাই ঈদের দিন খুশির দিন, আনন্দের দিন,

সৌভাগ্যের দিন। ঈদের দিনের সুন্নাত ও

মুস্তাহাবসমুহঃ (এক) অন্য

দিনের তুলনায় সকাল সকাল ঘুম

থেকে জাগ্রত হওয়া (দুই)

ঈদের দিন সকালে আহার

করা (তিন) আহার্য বস্তুটি খেজুর হওয়া (চার)

বেজোর সংখ্যক খেজুর খাওয়া।

হযরত আনাস (রাযি,) বলেন,

রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু

আ’লাইহি ওয়া সাল্লাম ঈদুল

ফিতরের দিন সকালে কিছু খেজুর না খেয়ে বের হতেন না,

অন্য সনদে হযরত আনাস

থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ

সাল্লাল্লাহি আ’লাইহি ওয়া সাল্লাম

বেজোড় সংখ্যক খেজুর খেতেন।

(বুখারি শরিফঃ ঈদুল ফিতরের দিন ঈদগাহে যাওয়ার

পূর্বে খাওয়া সংক্রান্ত

অধ্যায়, হাদিস নং-৯৫৩)

খেজুরের

ব্যবস্থা না থাকলে মিষ্টি জাতীয়

কিছু খাওয়া উচিৎ, মিষ্টি জাতীয় জিনিসও

না থাকলে কিছু না কিছু ঈদুল

ফিতরের দিন ঈদ্গাহে যাওয়ার

পূর্বে খাওয়া সুন্নাত। এই

কিছু না কিছু খাওয়ার

সুন্নাত ঈদের নামাযের সুন্নাত নয়, বরং ঈদের দিনের

সুন্নাত। কেননা এক মাস

সিয়াম পালনের পর দিনের

বেলা মহান আল্লাহর পক্ষ

থেকে দাওয়াত কবুল করার বিষয়

এখানে নিহিত। খাওয়ার ব্যাপারে সুন্নাত

তিনটিঃ খেজুর খাওয়া (খেজুর

না থাকলে মিষ্টি জাতীয় কিছু

খাওয়া) বেজোর সংখ্যক খাওয়া,

ঈদগাহে যাওয়ার

পূর্বে খাওয়া। অপরদিকে ঈদুল আযহার

নামাযের পূর্বে কিছু

না খেয়ে নামাযের পর নিজের

কুরবানির গোশত

খাওয়া মুস্তাহাব। তবে ঈদুল

আযহার নামাযের পূর্বে কিছু খাওয়া মাকরুহ নয়। (পাঁচ)

মিসওয়াক করা। অযুর জন্য,

নামাযের জন্য এবং বড় কোন

সমাবেশে যোগদানের

উদ্দেশ্যে মিসওয়াক

করা সুন্নাত। সেক্ষেত্রে ঈদের দিন

মিসওয়াকের গুরুত্ব অধিক।

মিসওয়াক এক বিগ পরিমান

লম্বা, এক আঙ্গুল পরিমান

মোটা এবং গাছের ডাল বা শিকড়

জাতীয় হওয়া উচিৎ, যাতে চাবানো সম্ভব হয়।

মিসওয়াক চার আঙ্গুলের

চাইতে ছোট হয়ে গেলে বাতিল

করে দেয়া উচিৎ। উপর-নীচ

ভাবে মিসওয়াক

না করে আড়াআড়ি ভাবে মিসওয়াক করা মুস্তাহাব। (ছয়)

সুন্নাত তরিকায় গোসল করা।

(সাত) রঙ বিহীন

সুগন্ধি ব্যবহার করা,

শরীরে যেন কোন রঙ না লাগে।

পুরুষের জন্য মাথা ও দাড়ি ছাড়া মেহেদি ব্যবহার

বৈধ নয়। এলকোহলযুক্ত সেন্ট

ব্যবহার করা উচিৎ নয়।

আঙ্গুর, খেজুর ও কিসমিস

থেকে তৈরি এলকোহলযুক্ত

সেন্ট ব্যবহার করা হারাম এবং তা নাপাক। (আট) নিজের

সুন্দরতম উত্তম কাপড়

পরিধান করা।

সুন্নতি পোষাকই হল উত্তম

পোষাক। নতুন কাপড়

হলে আরো ভাল। সাদা না হয়ে লাল রঙ (অধিকাংশ

লাল) ব্যতিত অন্য রং-এর কাপড়

হলেও অসুবিধা নেই।

তবে সাদা রঙ রাসূলুল্লাহ

আল্লাল্লাহু

আ’লাইহি ওয়া সাল্লামের নিকট অধিক পছন্দনীয়। (নয়)

শরিয়তের সীমার

মধ্যে থেকে যথাসাধ্য

সুসজ্জিত হওয়া (দশ) ফজরের

নামায নিজ মহল্লার

মসজিদে আদায় করা (এগার) সাদাকাতুল ফিতর (ওয়াজিব)

ঈদগাহে যাওয়ার পূর্বেই

আদায় শেষ করা। (বার)

প্রভাতে অর্থাৎ

তাড়াতাড়ি ঈদগাহে গমন

করা (তের) ঈদগাহে পায়ে হেঁটে যাওয়া (চৌদ্দ)

এক

রাস্তা দিয়ে যাওয়া এবং অন্য

রাস্তা দিয়ে আসা।

যাতে করে বিভিন্ন

পথে মানুষের সঙ্গে দেখা সাক্ষাতের

সুযোগ হয় এবং তাদের খোঁজ

খবর নেয়া যায়। হযরত জাবের

(রাযি,) বলেন, রাসূলুল্লাহ

সাল্লাল্লাহু

আ’লাইহি ওয়া সাল্লাম ঈদগাহ থেকে রাস্তা পরিবর্তন

করে ফিরতেন।

(বুখারি শরিফঃ ঈদুল ফিতরের

দিন ঈদগাহ থেকে ফেরার

পথে রাস্তা পরিবর্তন

সংক্রান্ত অধ্যায়, হাদিস নং-৯৮৬) (পনের) ঈদের নামায

ঈদ্গাহে গিয়ে পড়া, অর্থাৎ

বিনা কারণে মসজিদে না পড়া (ষোল)

খুশি ও আনন্দ প্রকাশ করা।

(সতের) সাধ্যমত

বেশি বেশি দান-খয়রাত করা। (আঠার) তাক্বাব্বালাল্লাহু

মিন্না ওয়া মিনকুম ( আল্লাহ

আমাকে ও আপনাকে কবুল করুক)

এই জাতীয় বাক্য দ্বারা অপর

মুসলমানকে অভ্যর্থনা জানানো।

(উনিশ) ঈদগাহে যেতে তাকবীরে তাশরীক

পাঠ করা। (ঈদুল

ফিতরে আস্তে আস্তে, ঈদুল

আযহায় উচ্চস্বরে) ঘরে-

বাইরে সব সময় এই তাকবীর পাঠ

করতে কোন অসুবিধা নেই। ঈদ্গাহে পৌঁছে ইমাম সাহেব

কর্তৃক ওয়াজ-নসিহত শুরু

করার আগ পর্যন্ত তাকবির

পড়তে থাকা (বিশ) ঈদুল আযহার

নামায ঈদুল ফিতরের তুলনায়

তাড়াতাড়ি পড়া। কেননা, ঈদুল আযহার পর কুরবানি করতে হয়,

আর ঈদুল ফিতরের পূর্বেই

ফিতরা আদায় করে শেষ

করতে হয়। ঈদের দিন সকালে নফল পড়ার

বিধানঃ ঈদের দিন ঈদের

নামাযের পূর্বে ঈদগাহে,

মসজিদে, বাড়িতে বা অন্য

কোথাও নফল নামায

পড়া মাকরুহ। তবে ঈদের নামাযের পর ঈদগাহ ব্যতিত

বাড়িতে বা মসজিদে নফল

পড়া মাকরুহ নয়।

মহিলা বা অন্য যারা কোন

কারনবশত ঈদের নামায

পড়ে নাই, তাদের জন্যও ঈদের নামায অনুষ্ঠিত হওয়ার

পুর্বে নফল পড়া মাকরুহ। ঈদের নামাযের হুকুমঃ ঈদের

দিন সকালে দুই রাকাত নামায

পড়া ওয়াজিব। সূর্য উঁচু

হয়ে যখন (দৃষ্টি করলে) চোখ

ঝলসে আসে তখন হতে সূর্য

হেলে যাওয়ার পূর্ব পর্যন্ত ঈদের নামাযের ওয়াক্ত থাকে।

হিজরি প্রথম বর্ষে এই নামায

প্রবর্তিত হয়। জুমার

নামাযের সাথে এই নামাযের

একটি সম্পৃক্ততা আছে। এই

দুই নামাযই বড় জামাতের সাথে আদায় করা হয়।

উচ্চস্বরে ক্বিরাত পড়া হয়।

খুতবা ছাড়া জুমার নামাযের

জন্য যে শর্তাবলি ঈদের

নামাযের জন্যও একই

শর্তাবলি। জুমার নামায যার উপর ওয়াজিব ঈদের নামাযও তার

উপর ওয়াজিব। জুমার দিন ঈদ

হলে উভয় নামাযই আদায়

করা ওয়াজিব। জানাযার নামায

ও ঈদের নামায একত্রিত

হলে ঈদের নামায আগে পড়তে হবে। কেননা ঈদের

নামায আইনি ওয়াজিব, আর

জানাযার নামায

কেফায়া ওয়াজিব। উভয় ঈদের

নামাযে আযান ও ইকামাত নেই।

কোন কারনবশত যদি ইমাম ও মুসল্লিদের ঈদের নামায

কাযা হয়ে যায়,

তাহলে দ্বিতীয় দিন

কাযা আদায় করবে। এর পরে নয়।

তবে ঈদুল আযহার নামায ১২

যিলহজ্ব পর্যন্ত আদায় করা জায়েয।

বিনা কারণে ১লা শাওয়াল ঈদুল

ফিতরের নামায আদায়

না করে ২রা শাওয়াল

পড়লে নামায আদৌ হবে না।

বিনা কারণে ১০ই জিলহজ্ব ঈদুল আযহার নামায

না পড়া মাকরুহ। তবুও

যদি কেহ ২য় দিন বা ৩য় দিন

পড়ে, নামায হয়ে যাবে। জামাত

ছাড়া ঈদের নামায

একা একা পড়া জায়েয নেই। তাই, ঈদের নামাযের কাযাও নেই।

যদি একদল লোকের নামায

ছুটে যায় বা নামায নষ্ট

হয়ে যায়,

তাহলে পূর্ববর্তি ইমাম ও

মুকতাদি ছাড়া অন্য কাউকে ইমাম বানিয়ে জামাতের

সাথে ঈদের নামায

পড়ে নিতে হবে। ঈদের নামায পড়ার

নিয়মঃ প্রথমতঃ এভাবে নিয়ত

করবে যে, আমি ঈদুল ফিতর

বা ঈদুল আযহার দু’রাকাত

ওয়াজিব নামায অতিরিক্ত ছয়

তাকবিরের সাথে এই ইমামের পিছনে কিবলামুখি হয়ে আদায়

করছি। তারপর

তাকবিরে তাহরিমা বলে হাত

বেঁধে (ছেড়ে না দিয়ে)

ছানা পড়বে। এরপর দু’হাত কান

পর্যন্ত তুলে ‘আল্লাহু আকবার’ বলে হাত ছেড়ে দেবে।

তারপর আবার দু’হাত কান

পর্যন্ত তুলে ‘আল্লাহু

আকবার’ বলে হাত ছেড়ে দেবে।

তারপর তৃতীয়বার দু’হাত কান

পর্যন্ত তুলে ‘আল্লাহু আকবার’ বলে হাত বেঁধে নেবে।

অতিরিক্ত এই

তিনটি তাকবিরের মাঝে তিন

তাসবিহ তথা তিনবার

‘সুবহানাল্লাহ’ বলা যায় এই

পরিমান সময় অপেক্ষা করা মুস্তাহাব।

জামাত অধিক বড় হলে আরো অধিক

সময় বিলম্ব করা যেতে পারে।

তারপর ইমাম সাহেব

‘আউযুবিল্লাহ’ ‘বিসমিল্লাহ’

‘সূরা ফাতিহা’ ও অন্য একটি সূরা পড়ে রুকু করবেন।

তারপর দ্বিতীয় রাকাতের

জন্য দাঁড়িয়ে বিসমিল্লাহসহ

ইমাম সাহেব কিরাত পড়বেন।

কিরাত শেষ করে দু’হাত কান

পর্যন্ত উঠিয়ে ‘আল্লাহু আকবার’ বলে হাত ছেড়ে দেবেন।

তারপর দ্বিতীয়বার দু’হাত

কান পর্যন্ত উঠিয়ে ‘আল্লাহু

আকবার’ বলে হাত ছেড়ে দেবেন।

তারপর তৃতীয়বার দু’হাত কান

পর্যন্ত উঠিয়ে ‘আল্লাহু আকবার’ বলে হাত ছেড়ে দেবেন।

তারপর হাত না উঠিয়ে চতুর্থ

তাকবির বলে রুকুতে যাবেন

(ঈদের নামাযে রুকুর এই

তাকবির ওয়াজিব)

এবং নিয়মানুযায়ী নামায শেষ করবেন। তারপর ইমাম সাহেব

সরাসরি মিম্বারে না বসে দাঁড়িয়ে খুতবা পাঠ

শুরু করবেন। পরপর দুই

খুতবা পাঠ করবেন

এবং মাঝখানে তিন আয়াত

পড়া যায় এতটুকু সময় পরিমান বসবেন, এই বসা সুন্নাত। ঈদের নামাযের তাকবির

সংখ্যাঃ ঈদের নামাযের

তাকবির বিষয়ে বিভিন্ন

রকমের হাদিস বর্ণিত

হয়েছে এবং সাহাবায়ে কেরামের

আমলও বিভিন্ন রকমের ছিল। ঈদের নামায রাসুলুল্লাহ

সাল্লাল্লাহু

আ’লাইহি ওয়া সাল্লাম

বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন

তাকবির দিয়ে আদায় করেছেন।

তাই ইমামগনের মাঝে ঈদের নামাযের তাকবিরের বিষয়েও

মতভেদ পরিলক্ষিত হয়। আর

তা হলো ১২ তাকবির, যা ইমাম

শাফিয়ী ও অন্যান্য কতিপয়

ফকীহ গ্রহণ করেছেন। ১১

তাকবির, যা ইমাম আহমদ ইবনে হাম্বল ও ইমাম মালিকসহ

কতিপয় ফকীহ গ্রহণ করেছেন। ৬

তাকবির, যা ইমাম আবু হানিফা,

ইবনে আব্বাস (রাযিWinking সহ অনেক

সাহাবায়ে কেরাম ও কতিপয়

ফকীহ গ্রহণ করেছেন। ছয় তাকবিরের হাদীসঃ হযরত

আবু হুরায়রাহ (রাযি,)-এর

সাথী আবু

আয়েশা থেকে বর্ণিত,

তিনি বলেনঃ সাইদ ইবনুল আ’স

হযরত আবু মুসা আশয়ারী ও হুযাইফাকে জিজ্ঞাসা করলেন,

রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু

আ’লাইহি ওয়া সাল্লাম ঈদুল

ফিতর ও ঈদুল আযহার

নামাযে কিভাবে তাকবির

পড়তেন ? তখন আবু মুসা আশয়ারী (রাযি,) বললেন,

রাসুলুল্লাহ

সাল্লাল্লাহি আ’লাইহি ওয়া সাল্লাম

প্রতি রাকাতে চার তাকবির

বলতেন। জানাযার নামাযের

তাকবিরের মত। তখন হযরত হুযাইফা বললেন আবু

মুসা আশয়ারী ঠিকই বলেছেন।

অতঃপর আবু

মুসা আশয়ারী বলেন, আমি যখন

বসরা শহরের আমির (গভর্ণর)

ছিলাম, তখন এভাবে চার তাকবিরের সাথে ঈদের নামায

পড়াতাম। আবু আয়েশা বলেন এ

সময় আমি সাঈদ ইবনুল আ’সের

নিকট বসা ছিলাম। (আবু দাউদ

শরীফ, খন্ড নং-১, পৃষ্ঠা নং-

১৬৩, হিন্দুস্তানি ছাপা) অনুরূপ আরো অনেক হাদীস

বর্ণিত হয়েছে। উল্লেখ্য যে,

উক্ত হাদীসে প্রথম

রাকাতে তাকবিরে তাহরিমাসহ

চার রাকাত এবং দ্বিতীয়

রাকাতে রুকুর তাকবিরসহ চার রাকাত। ঈদের খুতবাঃ ঈদের

খুতবা সুন্নত

(তবে শোনা ওয়াজিব) আর জুমার

খুতবা ওয়াজিব, শোনাও

ওয়াজিব। ঈদের

নামাযে খুতবা না দিলেও নামায হবে, কিন্তু সুন্নাত

ছেড়ে দেয়ার কারণে গুনাহগার

হবে। আর যদি ইমাম সাহেব

ঈদের নামাযের পূর্বেই

খুতবা দেয়, তাহলে নামায

শুদ্ধ হবে। পুণরায় নামায পড়তে হবে না। তবে গুনাহগার

হবে। সমস্ত মুকতাদি নিরব

হয়ে খুতবা শ্রবণ

করতে থাকবে। চলাফেরা করা,

কথাবার্তা বলা, দুয়া করা,

যিকির করা, তাকবির পাঠ করা সবই নিষিদ্ধ হারাম।

মুকতাদি দূরে থাকার

কারণে খুতবা শুনতে না পেলে চুপ

করে কান

খাড়া করে থাকা ওয়াজিব। ঈদুল

ফিতরের খুতবায় সাদাকাতুল ফিতরের আলোচনা এবং ঈদুল

আযহার খুতবায় কুরবানির

আলোচনা করা সুন্নাত। ঈদের

দুই খুতবার

মাঝখানে বসা সুন্নাত। তিন

আয়াত পরিমান সময় বসা মুস্তাহাব। দুই ঈদের

খুতবা দাঁড়িয়ে তাকবির

বলে আরম্ভ করা সুন্নাত। অযু

অবস্থায় খুতবা দেয়া জরুরি,

কেননা খুতবা নামাযের

পরিপূরক অংগ। প্রথম খুতবার শুরুতে ৯ বার একাধারে,

দ্বিতীয় খুতবার শুরুতে ৭

বার একাধারে এবং মিম্বার

থেকে অবতরণের সময়

একাধারে ১৪ বার তাকবির

বলা মুস্তাহাব। ঈদের নামাযে যে সূরা পাঠ

করা মুস্তাহাবঃ ঈদের নামায

ও জুমার নামাযের প্রথম

রাকাতে সূরা আ’লা এবং দ্বিতীয়

রাকাতে সূরা গাশিয়া পড়া মুস্তাহাব।

নুমান বিন বশির (রাযি,) থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ

সাল্লাল্লাহু

আ’লাইহি ওয়া সাল্লাম দুই ঈদ

ও জুমার

নামাযে ‘সাব্বিহিসমা রব্বিকা’

ও ‘হাল আতাকা হাদীসুল গাশিয়া’ সূরা দুটি পড়তেন।

বর্ণনাকারি বলেন, একই

দিনে ঈদ ও জুমা হলে উভয়

নামাযেই ঐ দুটি সূরাই

পড়তেন। (মুসলিম শরিফ,

অধ্যায়-জুমার নামাযে কি কেরাত পড়বে,

হাদীস নং-২০৬৫) তবে সব সময়ের

জন্য ঐ

দুটি সূরা পড়া নির্দিষ্ট

করে নেয়া মাকরুহ। ঈদের নামাযের অতিরিক্ত

তাকবির ছাড়া পড়লেঃ ইমাম

সাহেব কর্তৃক প্রথম

রাকাতে ঈদের এক/দুই তাকবির

বলা শেষ হওয়ার পর

মুক্তাদি শরিক হলে, অতিরিক্ত ৩ তাকবির আদায়

করে নিয়ে ইমাম সাহেবের

সঙ্গে শরিক হবে। ইমাম সাহেব

কর্তৃক প্রথম রাকাতে কিরাত

পড়া অবস্থায়

মুক্তাদি ইমামের পিছনে শরিক হলে নিয়ত

বেঁধে একা একা তাকবির

বলে নিবে। আর

যদি ইমামকে রুকু্র

মধ্যে পায় এবং মনে দৃঢ়

বিশ্বাস হয় যে, তাকবির বলে নিলেও ইমামকে রুকুর

মধ্যে পাওয়া যাবে,

তাহলে দাঁড়ানো অবস্থায়

নিয়ত করে তাকবির বলে তারপর

রুকুতে যাবে। আর যদি তাকবির

বললে রুকু না পাওয়ার আশংকা থাকে, তাহলে নিয়ত

বেঁধেই রুকুতে চলে যাবে।

তখন রুকুর তাসবিহ

না পড়ে আগে তাকবির বলে নিবে,

তারপর সময় পেলে রুকুর

তাসবিহ আদায় করবে। কিন্তু রুকুতে তাকবির বলতে হাত

উঠাবে না। যদি তাকবির শেষ

করার পূর্বেই ইমাম রুকু

থেকে মাথা উঠিয়ে ফেলে,

তাহলে মুকতাদিও

দাঁড়িয়ে যাবে, যে পরিমান তাকবির বাকি থাকে তা মাফ।

আর দ্বিতীয় রাকাতে ইমাম

সাহেবের কিরাত পড়া অবস্থায়

শরিক হলে, প্রথম রাকাতের

ছুটে যাওয়া ৩টি তাকবির ইমাম

সাহেব সালাম ফিরানোর পর ছুটে যাওয়া প্রথম রাকাতের

সূরা-কিরাত পড়ার পর

রুকুতে যাওয়ার পূর্বে আদায়

করে নিবে। আর দ্বিতীয়

রাকাতে রুকুর মধ্যে শরিক

হলে দ্বিতীয় রাকাতের ৩টি তাকবির রুকুর মধ্যে হাত

না উঠিয়ে আদায় করে নিবে।

তারপর সময় থাকলে রুকুর

তাসবিহ পড়বে, সময়

না থাকলে রুকুর তাসবিহ

পড়তে হবে না। ইমাম সাহেব যদি দাঁড়ানো অবস্থায়

তাকবির বলা ভুলে যায়

এবং রুকু অবস্থায় মনে আসে,

তাহলে রুকুর মধ্যেই তাকবির

বলবে। রুকু

ছেড়ে দাঁড়াবে না। যদি রুকু ছেড়ে দাঁড়িয়ে তাকবির

বলে আবার রুকু করে, তাহলেও

নামায হয়ে যাবে। নামায

ফাসেদ হবে না । অতিরিক্ত

লোকসংখ্যার

কারণে সিজদায়ে সাহুও দিতে হবে না। ঈদুল আযহার বিশেষ কিছু

আহকামঃ ঈদুল আযহায়

উচ্চস্বরে তাকবিরে তাশরিক

বলতে হয়। ঈদুল আযহার নামায

ঈদুল ফিতরের তুলনায়

তাড়াতাড়ি পড়তে হয়। ঈদুল আযহার নামাযের পর

কুরবানি করতে হয়। ঈদুল

আযহার নামাযের পূর্বে কিছু

না খেয়ে নামাযের পর নিজের

কুরবানির গোশত

খাওয়া মুস্তাহাব। যিলহজ্ব মাসের ৯ তারিখ (আ’রাফার দিন),

১০ তারিখ (ঈদুল আযহার দিন/

ইয়াউমুন নহর/কুরবানির দিন),

১১, ১২ ও ১৩ তারিখ (আইয়ামুত

তাশরিক) আরবরা এই তিন দিন

কুরবানির গোশত রৌদ্রে শুকাতো, তাই এই তিন

দিনের নামকরণ

হয়েছে ‘আইয়ামুত তাশরিক’, এর

অর্থ রৌদ্রে গোশত শুকানো।

সর্বমোট এই পাঁচ দিন, ৯

তারিখ ফজর নামায থেকে নিয়ে ১৩ তারিখ আসর

নামায পর্যন্ত সর্বমোট ২৩

ওয়াক্ত

নামাযে তাকবিরে তাশরিক পাঠ

করা মুনফারিদ, মাসবুক,

লাহেক, মুকিম, মুসাফির, মহিলা সকলের উপর একবার

পড়া ওয়াজিব।

তবে মহিলারা আস্তে বলবে।

মাসবুক যদি ইমামের

সাথে তাকবির পড়ে নেয়

এবং পরে দাঁড়িয়ে অবশিষ্ট নামায আদায় করে নেয়,

এতে নামায ফাসেদ হবে না।

নামযের পর বিলম্ব

না করে তৎক্ষণাৎ এই তাকবির

বলতে হবে। ইমাম সাহেব

না পড়লেও মুক্তাদিদের পড়তে হবে। ঈদুল আযহার

নামাযের পরও তাকবির

বলা মতান্তরে ওয়াজিব। সূত্রসমূহঃ

(এক) তা’লিমুল ইসলাম।

(দুই) বেহেশতি যেওর।

(তিন) মা-লাবুদ্দা মিনহু।

(চার) নূরুল ইযাহ।

(পাঁচ) আল-ফিক্বহুল মুইয়াসসার।

(ছয়) কুদুরি।

(সাত) কানযুদ্দাকাইক।

(আট) শরহে বেকায়া।

(নয়) হেদায়া।

(দশ) হাশিয়াতু রদ্দিল মুহতার আ’লাদ দুররিল মুখতার

শরহি তানবীরিল আবসার।

বিষয়: বিবিধ

১৪৫২ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File