্‌ তাবলিগের গুরুত্ব ় তাবলিগের বিরুদ্ধবাদীরা একটু দেখুন।

লিখেছেন লিখেছেন জাহিদ সারওযার সুমন ০৫ আগস্ট, ২০১৩, ০৬:৪৩:৪২ সকাল

ইসলামে তাবলিগের গুরুত্ব

অপরিসীম। যুগে যুগে,

কালে কালে তাবলিগের দায়িত্ব

পালন করেন আগেকার সব নবী-

রাসুল। সর্বশ্রেষ্ঠ ও সর্বশেষ

নবী হজরত মুহাম্মদ (সা.)ও এ দায়িত্ব পালন করেন গোটা ২৩

বছর। তাবলিগের তাত্পর্য

বিশ্লেষণ করে বিদায় হজের

ভাষণে তিনি বলেন, ‘হে জনগণ!

তোমরা যারা উপস্থিত আছ, তাদের

দায়িত্ব হচ্ছে অনুপস্থিতদের কাছে আমার

বাণীগুলো পৌঁছে দেয়া।’

নবুওয়তির ধারাবাহিকতায়

সর্বশেষ মিশন হজরত মুহাম্মদ

(সা.)-এর হাতে পূর্ণতা লাভ করে।

মহানবী (সা.)-এর শিক্ষা ও আদর্শের অনুসারীরা বিশেষত

খোলাফায়ে রাশেদিন,

সাহাবায়ে কেরাম, তাবেঈন ও

পরবর্তীকালে বিভিন্ন সুফি-

দরবেশ ও মুবাল্লিগরা ধর্ম

প্রচারের যে নজির স্থাপন করেন তা সত্যিকার অর্থে অসাধারণ।

তাদের অব্যাহত মেহনতের

ফলে মরক্কো থেকে চীনের

প্রাচীর পর্যন্ত পৃথিবীর বিভিন্ন

জনপদ ইসলামের আলোকে উদ্ভাসিত

হয়। সাম্য, ন্যায়পরায়ণতা ও ভ্রাতৃত্বের ভিত্তিতে আদর্শ সমাজ

গড়ে ওঠে। নতুন সংস্কৃতি-সভ্যতা

- র উন্মেষ ঘটে এবং একটি নতুন

বিশ্ব অস্তিত্ব লাভ করে।

মুবাল্লিগদের মানবীয় মূল্যবোধ,

চারিত্রিক দৃঢ়তা ও সহমর্মিতাসুলভ গুণাবলী বিভিন্ন

জাতিগোষ্ঠীর

মানুষকে একে অপরের

কাছে নিয়ে আসে। প্রকৃত

দাওয়াতের শিক্ষা হচ্ছে সত্য,

ন্যায় ও সুন্দরের প্রচার ও প্রসার করা। মায়া-মমতা, দান- অনুগ্রহ,

ভালোবাসা, সাহায্য-সহানুভূ - তি, জ্ঞান- বিজ্ঞান

চর্চা এগুলো বাক্সবন্দি করে রাখা

নয়, ইসলামও নয়। মৃত্যুর

পরবর্তী জীবনেও তা ব্যবহার

করার বিষয় নয়। ইহকালেই

দুনিয়াবাসীর প্রতি এসব গুণ ব্যবহার করে মানুষকে আল্লাহর

অনুগ্রহ লাভে ধন্য হতে হবে।

তাবলিগ তথা দ্বীন প্রচারের

দায়িত্ব

প্রতিটি যুগে প্রতিটি আদর্শবান

মুসলমানের ওপর অর্পিত। আদর্শ যতটা উন্নত ও কল্যাণধর্মী হোক

তা আপনাআপনি প্রসার লাভ

করে না। অপরদিকে প্রচারিত ও

প্রসারিত আদর্শকে ধরে রাখার

উদ্যোগ না নিলে সত্য

বিকৃতি ঘটারও সমূহ আশঙ্কা থেকে যায়। আদর্শের

ধারণ ও পুনরুজ্জীবনের জন্য

তাবলিগি ও দাওয়াতি কাজ

অপরিহার্য। ইসলাম

প্রচারধর্মী দ্বীন। দাওয়াত ও

তাবলিগ ইসলামের রক্ষাকবচ। বিশ্ববরেণ্য ইসলামী চিন্তাবিদ

আল্লামা সায়্যিদ আবুল হাসান

আলী নদভী (রহ.) বলেন, ‘দাওয়াত

ও তাবলিগ ইসলামের প্রাণশক্তি।

এ চেতনাব্যঞ্জক

কর্মতত্পরতা যদি মুসলিম সমাজে লোপ পায় তাহলে মানুষ

পশুত্বের

পর্যায়ে নেমে আসতে বাধ্য হবে।’

ভারতবর্ষে তাবলিগ আগে থেকেই

ভারতবর্ষে আরব বণিক ও পীর-

দরবেশদের আনাগোনা থাকলেও মুহাম্মদ ইব্ন কাসিম কর্তৃক সিন্ধু

বিজয়ের ফলে আলিম, ধর্মপ্রচারক,

পীর, আউলিয়া ও দরবেশদের

ভারতবর্ষে আগমন

বহুলাংশে বৃদ্ধি পায়। বিভিন্ন

স্থানে মসজিদ, খানকাহ ও মাদরাসা গড়ে ওঠে। ইসলামের

দাওয়াত নিয়ে তাঁরা ভারতবর্ষের

বিভিন্ন অঞ্চলে ছড়িয়ে পড়েন।

তাঁদের মধ্যে লাহোরের

দাতা গঞ্জবখ্শ, পাঞ্জাবের

সায়্যিদ জালালুদ্দীন সুরখেপাশ বুখারী, রাজস্থানের শায়খ

হামীদুদ্দীন নাগূরী, মুলতানের

শায়খ বাহাউদ্দীন যাকারিয়া,

পশ্চিম পাঞ্জাবের শায়খ

ফরীদুদ্দীন গঞ্জশকর, দিল্লির

হজরত নিযামুদ্দীন আউলিয়া, আজমীরের খাজা মঈনুদ্দীন

চিশতী, দাক্ষিণাত্যের শায়খ

কামালুদ্দীন চিশতী, পানিপথের

বু’আলী শাহ কলন্দর, গুজরাটের

শায়খ আবদুল ওয়াহাব শাযলী,

কাশ্মীরের সায়্যিদ আলী হামাদানী, বিহারের শায়খ

শারফুদ্দীন ইয়াহিয়া মানীরী,

চট্টগ্রামের হজরত শাহ আমানত,

সোনারগাঁয়ের শায়খ শারফুদ্দীন

আবু তোয়ামা, বগুড়ার সাইয়্যেদ

মাহমুদ মাহি সওয়ার, রংপুরের মাওলানা কারামাত

আলী জৌনপুরীর নাম সবিশেষ

উল্লেখযোগ্য। এসব পীর-

মাশায়েখদের অব্যাহত

দাওয়াতি তত্পরতার

ফলে ইসলামের সাম্য, ভ্রাতৃত্ব, উদারতা ও পরমত সহিষ্ণুতার

বাণী বর্ণপ্রথা ও সামাজিক

বৈষম্যের শিকার হিন্দু

সমপ্রদায়ের মধ্যে ব্যাপক

চাঞ্চল্যের সৃষ্টি করে।

দলে দলে নির্যাতিত হিন্দুরা ইসলাম ধর্মে দীক্ষিত

হতে থাকেন। ভারতের বিভিন্ন

রাজ্যের বহু রাজা-

মহারাজা বিশেষত পাঞ্জাবের

বেশ কয়েকটি রাজপুত পরিবার,

মালবের রাজগড় রাজ্যের রাজা শ্রী মূতি সিংহ, পানিপথের

অমর সিংহ রাজপুত এসব সুফিদের

দাওয়াতি তত্পরতার ফলে ইসলাম

কবুল করে ধন্য হন।

কালক্রমে সিন্ধু এ উপমহাদেশের

অন্যতম প্রধান মুসলিম এলাকায় পরিণত হয়। মুহাম্মদ ইব্ন

কাসিমের পর ১০০

হিজরি সালে উমর ইব্ন আবদুল

আযীয (রহ.) সিন্ধু অঞ্চলের সব

রাজা ও ঠাকুরদের কাছে ইসলাম

কবুল করার জন্য তাবলিগি পত্র প্রেরণ করেন। পত্র প্রাপ্তির পর

রাজা দাহিরের দু’ছেলে জয় সিংহ

ও চাচসহ অধিকাংশ

রাজা এবং ঠাকুর ইসলাম ধর্ম

গ্রহণ করেন। উমর ইব্ন আবদুল

আযীয (রহ.) জয় সিংহকে ব্রাহ্মণ্যবাদের - প্রশাসক নিযুক্ত করেন। আব্বাসীয়

খলীফা মাহদী ক্ষমতায় আরোহণের

পর সিন্ধুর গণ্যমান্য ব্যক্তিসহ

আঞ্চলিক প্রশাসকদের

কাছে ইসলাম গ্রহণের

উদ্দেশে দাওয়াতি পত্র প্রেরণ করেন। শ্রী রায় ও

মহারাজা নামে পরিচিত দু’জন

শাসকসহ বহু মানুষ

ইসলামে দীক্ষা লাভ করেন।

সিন্ধু অঞ্চলে রাজা, ঠাকুর ও

সরকারি কর্মকর্তাদের মধ্যে ইসলাম প্রচারের

ক্ষেত্রে আরব বংশোদ্ভুত

তাবেয়ী মুহাম্মদ আলাফী ও তাঁর

সহকর্মী বিশেষত হামিম ইব্ন

সামা শামীর বিশেষ অবদান

রয়েছে। রাজা দাহিরের ছেলে জয় সিংহকে ইসলামের

আদর্শে উদ্বুদ্ধ করার

ক্ষেত্রে এসব

ধর্মপ্রচারকরা (মুবাল্লিগীন)

ব্যাপক প্রয়াস চালান (আবূ যফর

নাদভী, তারীখে সিন্দ, পৃ. ৮৭, ১২৫, ১২৬, ১৬১; হামিদ আল কুফী,

চাচনামা, পৃ. ৮৬; মুফতি মুহাম্মদ

মুশতাক তিজারভী, বারের সাগীর

মে ইশা‘আতে ইসলাম কী তারীখ,

পৃ. ২৯-৬০)।

পরবর্তীকালে দাওয়াত ও তাবলিগের ধারাবাহিকতায়

১৯১০ সালে হজরত

মাওলানা ইলিয়াছ (রহ.) ভারতের

মেওয়াট

থেকে তাবলিগি কার্যক্রম শুরু

করেন। দুর্ধর্ষ তস্করদের জন্য মেওয়াটের কুখ্যাতি ছিল

পুরো ভারতে। লুণ্ঠন ও উত্পীড়নের

মাধ্যমে গোটা এলাকায়

তারা কায়েম করে ত্রাসের

রাজত্ব।

এমনকি মাঝে মধ্যে দিল্লিতে পর্য তারা হামলা চালিয়ে হত্যালীলা ও

ধ্বংসযজ্ঞ চালাতে দ্বিধা করত

না। সম্রাট গিয়াস উদ্দীন বলবন

(১২৬৬-৮৭ খ্রি.) রক্তপাত ও

রাষ্ট্রীয় ক্ষমতা প্রয়োগ করেও

(ইষড়ড়ফ ধহফ ওত্ড়হ চড়ষরপু) সন্ত্রাসী ও ডাকাতদের

অপতত্পরতা বন্ধ করতে পারেননি।

তাবলিগি কার্যক্রমের

ফলে মেওয়াটের বৃহত্তর

জনগোষ্ঠী এখন সত্ ও

আল্লাহওয়ালা। পুরো অঞ্চলে বিরাজ

করছে নিরবচ্ছিন্ন শান্তি।

উপমহাদেশের বুযুর্গ, ওলামা ও

পীর-মাশায়েখদের সহযোগিতায়

ক্রমান্বয়ে তাবলিগি জামায়াতে

পাকিস্তান ও বাংলাদেশের গণ্ডি ছাড়িয়ে ইউরোপ, আমেরিকা,

অস্ট্রেলিয়া, আফ্রিকাসহ

প্রসারিত হয়েছে গোটা দুনিয়ায়।

১৯৪৪ সালে মাওলানা আবদুল

আযীয (রহ.)-এর প্রচেষ্টায়

তাবলিগ জামায়াতের উদ্যোগে টঙ্গীর তুরাগ নদীর

তীরে চালু হয় ‘বিশ্ব ইজতেমা’।

১৬০ একর জমির ওপর প্রতিষ্ঠিত এ

ইজতিমা মুসলমানদের দ্বিতীয়

বৃহত্তম মিলনমেলা। পৃথিবীর

বিভিন্ন দেশের প্রায় ৩০ লাখ মুসলমান এ ইজতিমায় যোগ দেন

এবং ইজতেমা শেষে নিঃস্বার্থ

মুবাল্লিগদের ছোট ছোট গ্রুপ এক

বছর, ছ’মাস, তিন মাস ও ৪০

দিনের দাওয়াতি কার্যক্রম

নিয়ে বিশ্বময় ছড়িয়ে পড়েন। অন্যান্য দেশের ন্যায় মার্কিন

যুক্তরাষ্ট্র ও কানাডায়

প্রতি বছর বড় আকারের তিন

দিনব্যাপী তাবলিগি ইজতিমা অনু

হয়ে থাকে। বিভিন্ন

জাতিগোষ্ঠীর (ঊঃযহরপ মত্ড়ঁঢ়ং রহ ফরাবত্ংব ংড়পরবঃু)

দেশে তাবলিগি কাজ ব্যাপক

ইতিবাচক প্রভাব বিস্তার

করছে ক্রমেই। ইউরোপের বিভিন্ন

দেশে গড়ে উঠছে নতুন মসজিদ ও

তাবলিগি মারকাজ। এভাবে চলতে থাকবে তাবলিগি কা

তাই যাদের তাবলিগ জামাতের

ব্যয়াপারে এলার্জী আছে তারা মল

লাগান।

বিষয়: বিবিধ

২৫৩৯ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File