আজ ২৮শে অক্টোবর!
লিখেছেন লিখেছেন শাহাদাত মাহমুদ সিদ্দিকী ২৮ অক্টোবর, ২০১৬, ১২:৪৪:৫৭ দুপুর
আজ ২৮শে অক্টোবর!
এদেশের ইসলামপন্থিদের একান্তই শোকের দিন। অনেক পরিবারে আজ আবার পুরোনো কান্না উথলে উঠবে। অনেক মা সন্তানের রেখে যাওয়া স্মৃতিতে ব্যাকুল ভারাক্রান্ত হবেন। একই ভাবে তাদের ভাই বোন বন্ধু পরিজন…।
কিন্তু তাদের আদর্শের সাথীরা? তাদের কি হবে? কেবলই শোক! কুরআনখানি, ইত্যাদি? কিংবা প্রতিশোধস্পৃহা?... না এটুকুই যথেষ্ট নয় মোটেই! ২৮শে অক্টোবর এরচেয়ে অনেক বেশী দাবী করে! এর আদর্শিক তাৎপর্য তো বটেই, রাজনৈতিক সামাজিক এবংকি আন্তর্জাতিক দিক থেকেও এটি ভয়ংকর তাৎপর্যপূর্ণ বার্তা বহন করছে।
কি সেই ভয়ংকর তাৎপর্য? এবং সেই তাৎপর্যের প্রেক্ষিতে ২৮শে অক্টোবরকে আমরা কিভাবে গ্রহণ করবো, লালন করবো এবং পালন করবো কিভাবে তার দিকনির্দেশনা পেতে হলে আমাদেরকে বাংলাদেশের ইতিহাস মন্থন করে আসতে হবে…।
তার আগে আসুন আমরা এর উলটো পিঠে তাকাই। ২৮শে অক্টোবর এদেশের ইসলামবিদ্বেষী সেক্যুলার মুখোশধারী বাঙালি জাতীয়তাবাদীদের নিতান্তই সুখের দিন। ক্ষমতারোহণে মঞ্চ তৈরীর সফল আয়োজন! জামাত-শিবির নিধন প্রকল্পের ‘শুভ’-সূচনা। এদিক থেকে নিঃসন্দেহে এদেশের মুখাস্ত প্রগতিবাদীরাও খুশি। একটি ‘প্রগতিশীল’ সমাজ বিনির্মানে এইসব প্রতিক্রিয়াশীল, পশ্চাদপদ, বর্বর, অসভ্য ধর্মতাত্ত্বিকদের শায়েস্তা করা প্রথমশ্রেণীর গুরুত্বপূর্ণ কর্তব্যকর্ম।
একসময় এই মুখোশধারী বাঙালি এবং মুখাস্ত প্রগতিবাদীদের ইসলামবিদ্বেষের প্রকৃতি ছিলো আলাদা। এবং অধিকাংশ সময় তারাও পরষ্পরকে পতিপক্ষই গণ্য করতো! কিন্তু এদেশীয় কমিউনিস্টরা মার্ক্সিজমের নামে এতোদূর প্রবৃত্তি পুজায় নিমজ্জিত যে, মজলুমের সপক্ষে সাংঘাতিক সংবেদনশীল এদেশের গণমানুষের পরম বিশ্বাসটুকু মেনে নেয়ার পরিবর্তে তাদের বিপ্লবের বাসনা চরিতার্থ হচ্ছে সাম্রাজ্যবাদী সুশীল কিংবা ব্রাহ্মণ্যবাদী বাঙালী জাতীয়তাবাদের পদলেহনে ! ক্রমাগত অধঃপতনে তাদের বাড়াবাড়ি আজ শয়তানের স্তরে পর্যবসিত হয়েছে! ফলে সাম্রাজ্যবাদ বিরোধী আন্দোলনে মজলুমের পক্ষে ইসলামপন্থিদের সাথে কৌশলগত মৈত্রী হওয়ার সম্ভাবনাও ক্রমাগত নিঃশেষ হয়ে যাচ্ছে!
০২.
তারমানে ২৮শে অক্টোবরের যে নিধন যজ্ঞতা, এর প্রতিপক্ষে মানবাধিকার, গণতন্ত্র ও মতপ্রকাশের স্বাধীনতার জায়গা থেকে যে ঝড় ওঠার কথা ছিলো তার কিয়দংশও পরিলক্ষিত হয়নি।
কেনো?
লাশগুলো ইসলামপন্থিদের হওয়ায়!?...
অবভিয়াসলি তাই!
শুধু তা’ই নয়! এবারই প্রথম ইসলামবিদ্বেষের তাত্ত্বিক ও রাজনৈতিক ধারা এতোটা মিশে একাকার! বোঝা যায় না- কে বাম, কে রাম আর কে আওয়াম!
তাই, ২৮শে অক্টোবর এদেশের ইসলামপন্থিদের এই বার্তাই দেয়, যাদের প্রতিপক্ষ ভেবে ইসলামী আন্দোলন তাদের সক্ষমতা নিয়ে যে শ্লাঘা বোধ করে, তার অনেকটাই অসার! তার দুশমনরা ইসলামের প্রতিকূলে কতভাবে ঐক্যবদ্ধ হতে পারে, সে মৈত্রী জাতীয় ও আন্তর্জাতিকভাবে কতোটা পৈশাচিক হতে পারে! ২৮শে অক্টোবর এবং তৎপরবর্তী ঘটনাপ্রবাহ তারই একটি নমুনা মঞ্চস্থ করেছে মাত্র!
দ্বিতীয়ত, যে বিষয়টি ২৮শে অক্টোবর চোখে আঙ্গুল দিয়ে দেখিয়ে দেয়- এদেশের রাজনৈতিক সংস্কৃতির আমূল রুপান্তর! মাস্তানি এদেশের রাজনীতির অনুসঙ্গ ছিল জানি। কিন্তু ২৮শে অক্টোবরে মাস্তানিই এদেশের ভাগ্য-নির্ধারক হয়ে উঠেছে! অর্থাৎ, ইসলামপন্থিদের মোকাবিলায় আগামীদিনের রাজনীতিতে বুদ্ধিবৃত্তিক ও রাজনৈতিক মাস্তানী, মিডিয়া সন্ত্রাস, পরাশক্তির পদলেহন আরো প্রকাশ্যে সীমাতিক্রম করবে!
সুতরাং, ২৮শে অক্টোবর একদিকে এদেশের রাজনৈতিক সংকটগুলোকে বের করে এনেছে এবং বুঝিয়ে দিচ্ছে- যুদ্ধ আরো গভীর, কঠিন তো বটেই। বহুমাত্রিকও।
তবে আশার কথা হচ্ছে- ২৮শে অক্টোবর এদেশের মানুষের ভাগ্যকে ইসলামপন্থিদের সাথে অতীতের যে কোনো সময়ের তুলনায় অধিকতর সম্পৃক্ত করে গেছে। এখন দেখা যাক, ইসলামপন্থিরা কিভাবে কতদূর গণমানুষকে সম্পৃক্ত করতে পারে। এর উপরই নির্ভর করছে এরপর বাংলাদেশ কোথায় গিয়ে ঠেকবে…
বিষয়: রাজনীতি
১১৪৪ বার পঠিত, ৫ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
যথার্থ বলেছেন, সহমত
আপনাকে অনেক ধন্যবাদ, জাযাকাল্লাহ
অনেক ধন্যবাদ...
যাজাকাল্লাহ!...
ভালো লাগলো / অনেক ধন্যবাদ / পিলাচ
মন্তব্য করতে লগইন করুন