ইসলামে স্বাধীনতার ধারণা বনাম ‘ফারজানা মাহবুবা’দের মনস্তত্ব(পর্ব-০২)
লিখেছেন লিখেছেন শাহাদাত মাহমুদ সিদ্দিকী ১১ অক্টোবর, ২০১৬, ১১:৩৭:৫৩ রাত
এক্সাইটমেন্ট!
হ্যাঁ, উত্তেজনা ছড়ানো, কারণ যত তুচ্ছই হোক, উনাদের লিখার একটি উল্লেখযোগ্য বৈশিষ্ট্য! সম্ভবত এই এক্সাইমেন্টের কারণেই তারা কোনো বিষয়ের দু’পাশ দেখার মতো সুস্থিতি হারিয়ে ফেলেন। আদায়-কাচকলায় বিবিধ অপ্রাসঙ্গিক প্রসঙ্গের অবতারণা ঘটান একই লিখায়। এবং কোনো প্রসঙ্গই ঠিকঠাক শেষ করতে পারে না। ফলে পুরো লিখাটিই হয়ে ওঠে প্রসঙ্গ থেকে প্রসঙ্গে লম্পঝম্প দেয়ার মতো ‘কিছু একটা’!
সে কাজটা কিভাবে মনোমুগ্ধকর নাটকীয়তায় উনারা করে থাকেন, তা নিয়ে অন্য সময় লিখা যেতে পারে! আমরা এখানে বুঝতে চাচ্ছি তাদের সাইকোলজিটা ক্যামোন। …মাথায় রাখুন ‘এক্সাইটমেন্ট’…
এই এক্সাইটমেন্টের কারণেই তাদের বুদ্ধিবৃত্তি কখনও কখনও যথাযথ ফাংশন করে না, করতে পারে না। ফলে একজন পিএইচডি হোল্ডারও কিশোরকিশোরী-সুলভ নানা চিন্তার জালে আঁছাড় খান। বিষয়গুলো নানা সামাজিক বাস্তবতাকে টেনেটুনে উপস্থাপন করায় ফার্স্ট সাইটে ধরা পড়ে না ফাঁকিটা কোথায়। কিন্তু ঠান্ডা মাথায় একটু ভাবলেই বোঝা যায়। বোঝা যায় উনাদের মনস্তত্বের অরেকটি দিক হলো- গায়ের জোরে ইসলাম দেখার প্রবণতা। এবং দীর্ঘ দিনের স্বভাব দোষে সেই প্রবণতায় বুঁদ হয়ে থাকা। কোথায়, কিভাবে?... আসুন, কিছু নমুনা পেশ করা যাক-
‘আমি সেই ক্লাস ফাইভে মাদ্রাসায় পড়া শুরু করা থেকে শুরু করে রিলিজন (ইসলাম), কালচার এন্ড জেন্ডার এর উপর পিএইচডি করা পর্যন্ত যতদূর ইসলামকে নিয়ে একাডেমিক্যালি পড়েছি, বুঝতে চেষ্টা করেছি- আমি শুরুতেই একটা জিনিষ বুঝে নিয়েছি। তা হলো, ইসলাম আমাকে একজন ‘স্বাধীন’ ‘নাগরিক’ হিসেবে দেখে। এরপর আমি বাকী সবকিছুকে- সবকিছু বলতে সবকিছুকে- আমার স্বাধীন নাগরিকত্ব দিয়ে মেপেছি’।
শুধু কি তা’ই নয়, আরো বলেছেন-
...‘যখনই কনফিউজড হয়েছি, সবার আগে ঐ সিচুয়েশনাকে প্রশ্ন করেছি- আমার স্বাধীন নাগরিকত্ব কী এখানে কোনোভাবে কমপ্রোমাইজড হচ্ছে? যদি হয়, তাহলে এখানে দুই নাম্বারী আছে! সামথিং ইজ ফিশি ফিশি হেয়ার’।
লক্ষ করুন, ইসলাম উনাকে ‘একজন স্বাধীন নাগরিক হিসেবে দেখে’। শুরুতেই এই একটা জিনিষ বুঝে নিয়ে, ক্লাস ফাইভ থেকে পিএইচডি পর্যন্ত উনি ‘সবকিছুকে’ উনার ‘স্বাধীন নাগরিকত্ব’ দিয়ে মেপেছেন। এবংকি শেষ পর্যন্ত ইসলামকেও তিনি সেই সিস্টেমে ফেলে দিয়েছেন! এখন ‘দুনিয়ার তাবৎ মুসলিম স্কলার’দেরও আর বিশ্বাস করতে পারছেন না তিনি। তাই নতুন ফর্মূলা আবিষ্কার করেছেন- ‘স্বাধীন’ আর ‘নাগরিক’। তার মতে- ‘এ দু’টো শব্দ- বিশেষ করে মেয়েদের জন্য- ধর্মকে বুঝতে চাইলে খুবই খুবই খুবই গুরুত্বপূর্ণ’।
বুঝুন এবার, প্রথমে ইসলাম উনাকে ‘স্বাধীন নাগরিক’ হিসেবে দেখেছে। পরে সেই তিনিই এবার ‘স্বাধীন নাগরিক’ হিসেবে ইসলামকে দেখতে শুরু করলেন! এ যেনো যার অস্ত্রে তারে ঘায়েল করার মতো। শুধু তা’ই নয়, এবং বলছেন- ‘এ দু’টো শব্দ’ নাকি ‘বিশেষ করে মেয়েদের জন্য- ধর্মকে বুঝতে চাইলে খুবই খুবই খুবই গুরুত্বপূর্ণ’।
ইসলামের দৃষ্টিতে নিজেকে দেখা এক বিষয়, আর নিজের দৃষ্টি দিয়ে ইসলামকে দেখা সম্পূর্ণ ভিন্ন বিষয়। দু’টোর মধ্যে আসমান-জমিন তফাত। ফেরেশতা ও শয়তানের মতো পার্থক্য। ইসলামের দৃষ্টি দিয়ে নিজেকে দেখার মানে হলো, ইসলামের ফান্ডামেন্টালস মূল্যবোধ শিক্ষা ও সামগ্রিক চেতনার আলোকে বা আয়নায় নিজেকে দেখা। কিন্তু যখন আমার ‘স্বাধীন নাগরিকত্বে’র দৃষ্টি দিয়ে ইসলাম দেখার কথা বলি, তখন প্রশ্ন ওঠে- এই দৃষ্টিটা আমি পেলাম কোথায়? কোন ফান্ডামেন্টাস, কোন ভ্যালূজ বা কোন চেতনায় সমন্বয়ে আমার ‘স্বাধীন নাগরিকত্বের দৃষ্টি’ প্রোগ্রামড হলো?... এই প্রশ্নের উত্তর না দিয়ে আপনি আর এক কদমও অগ্রসর হতে পারেন না। নো ম্যাডাম, এখানে এক্সাইটমেন্টের কিছুই নেই। আপনাকে যথেষ্ট নাতিশীতোষ্ণ মস্তিষ্কে এগুতে হবে…
০২.
একটা মজার ব্যাপার বলি- প্রথম পড়ে কিন্তু উনার ‘স্বাধীন’ বুঝলেও ‘নাগরিক’টা বুঝে উঠতে পারিনি। ভাবলাম ইসলামে আবার ‘নাগরিক’ আসলো কোত্থকে! নাগরিক তো, যতদূর জানি- নগর বা রাষ্ট্রের সাথে সম্পৃক্ত ধারণা। সত্যি বলতে কি, অনেক আগে লিখা একটি গল্পে এই নামে একটি কাল্পনিক ক্যারেক্টার ছিল, কিন্তু এই নামে যে জীবীত কোনো মানুষ আছেন, কয়দিন আগে মাত্র জানলাম, সেই লিখাটি পড়ার মাধ্যমে। সো, উনার লিখার স্টাইল সাথে সাথেই ধরতে পারিনি।
যা’ই হোক, পরে ধরে নিলাম যে, তিনি ইসলামকে একটি রাষ্ট্র কল্পনা করেই উনার চিন্তা প্রকাশের প্রয়াস পেয়েছেন। ভালো।… তো, কমেন্টে দেখলাম তার এই সব কথা-বার্তায় বিশ্ববিদ্যালয়ের অনেক সম্মানিতা অধ্যাপিকাও আনন্দে উচ্ছসিত। উনাদের ‘কথাগুলো এমন করে’ ফারজানা লিখবে ‘এ আশা তিনি অ-নে-ক দিন ধরেই’ করে আসছিলেন বললেন। কেউ কেউ খুশিতে কোলাকুলিও করতে চেয়েছেন! একজন বোন তো উনাকে ‘কোলে নিয়ে নাচা’র ইচ্ছে পর্যন্ত গোপন রাখতে পারেননি! এতো সুন্দর লিখা উনি লিখেছেন!
কেউ কেউ দোয়া চেয়েছেন, কিছুটা হলেও যেনো উনার মতো সাহসী হতে পারেন! বুঝতেই পারছেন একটা শিবিরে আনন্দের হিল্লোল তুলে দিয়েছেন মিসেস মাহবুবা!... অথচ পুরাই একটা ফেইক কল্পরাজ্য!
আমাকে মাফ করবেন, এই যে গায়ের জোরে ইসলাম দেখা, বোকাদের জন্য স্বর্গ তৈরী করা, আমরা কি এটাকে কোনো শয়তানি চিন্তা বলবো?... থাক, তার আগে আসুন দেখা যাক, ইসলামে স্বাধীনতার ধারণাটা ক্যামোন?...
০৩.
‘হে মানব জাতি ৷ ইবাদাত করো তোমাদের রবের , যিনি তোমাদের ও তোমাদের পূর্বে যারা অতিক্রান্ত হয়েছে তাদের সবার সৃষ্টিকর্তা, এভাবেই তোমরা নিষ্কৃতি লাভের আশা করতে পারো’ (০২:২১)৷
এভাবে আল্লাহ মানুষকে কতভাবেই-না হিদায়েতের দিকে ডেকেছেন। কতোভাবেই-না করাঘাত করেছেন তাদের চিন্তায়। কুরআন শরীফের পৃষ্ঠায় পৃষ্ঠায় আয়াতে আয়াতে কতোভঙ্গীতে আল্লাহর আহ্বান… কিন্তু আবার এও বলে দিয়েছেন-
‘দীনের ব্যাপারে কোন জবরদস্তি নেই৷ ভ্রান্ত মত ও পথ থেকে সঠিক মত ও পথকে ছাঁটাই করে আলাদা করে দেয়া হয়েছে৷ এখন যে কেউ তাগুতকে অস্বীকার করে আল্লাহর ওপর ঈমান আনে, সে এমন একটি মজবুত অবলম্বন আঁকড়ে ধরে, যা কখনো ছিন্ন হয় না৷ আর আল্লাহ সবকিছু শোনেন ও জানেন’(০২:২৫৬)৷
এই হলো- স্বাধীনতা। কোনো জোর-জবরদস্তি নেই। আপনি একেবারে নাস্তিক হয়েও স্বয়ং রাসূল শাসিত রাষ্ট্রেই নিশ্চিন্তে নির্বিঘ্নে ‘বুক ফুলিয়ে’ শান্তিতে জীবন যাপন করতে পারেন! কারো বাপের ক্ষমতা নেই আপনাকে নিজ থেকে কিছু করার! এই হলো ইসলামে স্বাধীনতার, নাগরিকতার একটি দিক!
এই হলো- পৃথিবীতে মানুষের জীবন। পরীক্ষার খাতায় ছাত্রের যা খুশি লিখার স্বাধীনতা। শস্যক্ষেত্রে কৃষকের যা কিছু ইচ্ছা ফলানোর ফ্রিডম! এই স্বাধীন চিন্তা ও ইচ্ছাশক্তি সম্পন্ন মানুষের জীবন(মৃত্যুসহ) আল্লাহ এ জন্যই সৃষ্টি করেছেন যে, তিনি দেখতে চান, আমলের দিক থেকে কে উত্তম(৬৭:০২)। স্বাধীনতা না থাকলে আল্লাহর উদ্দেশ্য এখানে হাসিল হয়না। স্বাধীনতা অপরিহার্য!
কিন্তু যখন বলি যে, আল্লাহ আমি চিনেছি তোমাকে, তুমিই আমার স্রষ্টা- আমি স্বেচ্ছায়, স্বজ্ঞানে সাক্ষ্য দিচ্ছি- তুমি ছাড়া আর কোনো ইলাহ বা সার্বভৌম শক্তি নেই। সে দাবি যারা করে আমি সেই সমস্ত তাগুত দাজ্জালিক শক্তিকে প্রত্যাখ্যান করছি। এবং মেনে নিচ্ছি তোমার রিসালাতের অনুপম ধারা, তাদের মধ্যে কোনো পার্থক্য না করেই(০২:২৮৫) গ্রহণ করছি আখেরি রাসূলের সর্বোত্তম আদর্শ(৩৩:২১)। আর আখিরাতের ব্যাপারে আমার মনে কোনো সন্দেহ-সংশয় নেই। আপনি গোটা মানবজাতিকে একদিন একত্রিত করবেন। পর্যালোচনা করবেন তাদের বিশ্বাস, চিন্তা-চেতনা, সমস্ত কর্মকান্ড এবং অন্তরের গতিবিধি পর্যন্ত! নির্ধারণ করবেন তাদের শেষ গন্তব্য। ‘আপনি বি জাতিছ ছুদুর’, হিসেব নিতে আপনার মোটেই সময় লাগেনা। এবং আপনি সর্বোত্তম ইনসাফপূর্ণ চূড়ান্ত ফয়সালাকারী।
এটুকু বলার পর আপনি আর ‘স্রেফ প্রাণী মানুষ’ থাকবেন না। আপনি আল্লাহর পাঠশালার ছাত্র হয়ে উঠবেন। আল্লাহ নিজের ট্রেইন-আপ করা শিক্ষক(রাসূল)ই এখন আপনার তত্তাবধায়ক। ...এটুকু বলার পর আপনি আল্লাহর সেনাদল(হিযবুল্লাহ)’র সৈনিক হয়ে উঠবেন। যেখানে আছেন স্বয়ং আল্লাহর নিযুক্ত সেনাপতি সাইয়েদুল মুরসালিন, লিডার অব দ্য লিডারস! ...এটুকু বলার পর আপনি আল্লাহর নিরংকুশ প্রভূত্বের গোলাম। সেখানে অন্য কারো শরীকানার কোনো প্রোটন পরিমাণ সুযোগ নেই। আপনাকে প্রতিনিয়ত সাক্ষ্য দিতে হবে- ওয়ামা আনা মিনাল মুশরিকীন(০৬:৭৯)।
সার কথা হলো- আপনি আসলে আর সেই ‘স্বাধীন ম্যাংগো-মানুষ’ থাকবেন না, স্পেশাল এবং ইম্পোর্টেন্ট একজন হয়ে উঠবেন। আপনি সেই উম্মত বা গ্রুপের সদস্য হয়ে যাবেন- যাদের আবির্ভাবই হয়েছে মানবজাতির কল্যাণের জন্য(০৩:১১০)। আপনি হয়ে উঠবেন রাসূল ও মানবজাতির মধ্যকার সংযোগস্থাপনকারী মধ্যমপন্থী উম্মতেরই সভ্য(০২:১৪৩)।
এবার কিন্তু আপনি যা খুশি তা করতে পারবেন না। এখন আপনার জীবন ‘জীবসত্তার স্বাধীনতা’ থেকে, এবংকি ‘স্রেফ মানবসত্তার’ স্বাধীনতা থেকেও অধিকতর অর্থপূর্ণতায় উন্নীত হয়েছে! এবার আপনি আপনার স্বাধীনতাকে স্বাধীনভাবেই সমর্পণ করেছেন। সমর্পন করেছেন সেই সত্তার কাছে, জোরপূর্বক নয়, জোরপুর্বক কোনো কিছুই তিনি গ্রহণ করেন না; যিনি চাইলে সবাইকে একই উম্মত করতে পারতেন(০৫:৪৮)!
সেই সত্তাকে আপনি নিবেদন করছেন- আপনার সালাত, মানে অবনত মস্তক। আপনার কুরবানি, অর্থাৎ তাঁকে মানতে গিয়ে আপনার যা কিছু স্যাকরিফাইস করতে হয়, কম্প্রোমাইজ করতে হয় সব। এবং শেষে আপনি নিবেদন করছেন আপনার জীবন পর্যন্ত!(০৬:১৬২)… হোয়াই?... কারণ আপনি জানেন- এই হলো সেই সত্তা, যার জন্য সব করা যায়। এই হলো সেই সুন্দর যার জন্য মরার চাইতে মহিমান্বিত আর কিছু নেই। যিনি যত বেশী বুঝেছেন তাঁকে, তাঁর জন্য ততবেশী কুরবানি করতে অষ্টপ্রহর জাগ্রত ছিলেন তিনি।
সেই সত্তা বলছেন- আমাকে ভালোবাসতে চাও?... আমার রাসূলকে অনুসরণ করো, আমিও তোমাদের ভালোবাসবো(০৩:৩১)। আর রাসূল বলছেন- আমি ছাড়া আর কাউকে যদি তোমরা অনুসরণ করো তাহলে নিশ্চিত গোমরাহীতে নিমজ্জিত হবে। তিনি যদি তাওরাতের জবরদস্ত পয়গম্বর মূসাও হন এবং যদি স্বশরীরে জীবন্তও আবির্ভূত হন, তাহলেও কোনো হ্রাস-বৃদ্ধি ঘটবে না।
তারপর আল্লাহ বলছেন, দেখো এমন অনেক বিষয় আছে তোমাদের অপছন্দনীয়, কিন্তু ‘ট্রাস্ট মী’ এগুলো তোমাদের জন্য কল্যাণকর; আবার কিছু বিষয় ধরো এমন আছে, যা তোমাদের খুব মনে ধরে, কিন্তু তা ক্ষতি ছাড়া কিছুই বাড়ায় না, ‘ট্রাস্ট মী’ আমি জানি, তোমরা জাননা(০২:২১৬)। আবার রাসূল বলছেন- আমার প্রিয় অনুসারিরা মনে কিছু নিও না, দুনিয়াটা মুমিনের জন্য কারাগার, আর কাফেরের জন্য বেহেশত(মুসলিম)। তোমরা যা খুশি তা করতে পারবা না, তোমরা তো তোমাদের স্বাধীনতা বিশেষ বিনিময়ে আল্লাহর কাছে সমর্পন করেছো, শুধু স্বাধীনতা নয়, বরং জীবন সম্পদ সব(০৯:১১১)। তোমরা আল্লাহর সাথে বিনিময়ে সন্তুষ্ট থাকো। তিনি তোমাদের জন্য এমন বিনিময় প্রস্তুত করে রেখেছেন, যা দুনিয়ার কোন চোখ দেখেনি, কোনো কান শুনেনি এবং কোনো অন্তকরণ পারেনি কল্পনা করতে পর্যন্ত(কুদসী, বুখারি, মুসলিম)!
শুরুতে যে বলতে লাগছিলাম- এটা একটা শয়তানি চিন্তা। ইসলামকে গায়ের জোরে দেখার একটা প্রবণতা, এবার আপনিই একটু মিলিয়ে নিন। আমি হাতের কাছে চেনাজানা কয়েকটা আয়াত, কয়েকটা হাদীস মাত্র উপস্থাপন করলাম। এখানে এমন অনেকে আছেন- চাইলে সমপ্রকৃতির আরো অসংখ্য আয়াত ও হাদীস স্মরণ করতে পারবেন। এবং স্ব্য়ং মিসেস ফারজানাও যে এসব জানেন না, সে কথা বিশ্বাস করার কোনো কারণ নেই। একটা কমেন্টে দেখলাম তিনি অত্যন্ত কানফিডেন্টলি সূরা আহযাবের একটি আয়াতের(৩৩:৩৫) উল্লেখ করছেন, চমৎকার একটা আয়াত! ঠিক পরের আয়াতেই কুরআন বলছে-
‘যখন আল্লাহ ও তাঁর রসূল কোনো বিষয়ের ফায়সালা দিয়ে দেন তখ কোনো মুমিন পুরুষ ও মুমিন নারীর সেই ব্যাপারে নিজে ফায়সালা করার কোনো অধিকার নেই৷ আর যে কেউ আল্লাহ ও তাঁর রসূলের নাফরমানী করে সে সুস্পষ্ট গোমরাহীতে লিপ্ত হয়(৩৩:৩৬)৷
০৪.
তবে ইসলামে স্বাধীনতার আভ্যন্তরীন একটি দিকও আছে। সেই দিকে যাওয়ার আগে বলে নেয়া দরকার, এই যে কথাগুলো- একজন নারীর প্রতিপক্ষে কোনো একজন পুরুষের প্রতিবাদ নয়। আমি ব্যক্তিগতভাবে মনে করি, নিজেকে স্রেফ নারী বা পুরুষ ভেবে নিয়ে ইসলাম-সংশ্লিষ্ট কোনো আলোচনায় প্রবেশের অনুমতি ইসলামে নেই। আরো জানতে চাইলে পড়ুন- নারীমুক্তি না মানবমুক্তি: ইসলামের বৈপ্লবিক ফয়সালা। তো আগামীকাল যদি কোনো পুরুষও বলে ওঠেন- প্লে ক্লাস থেকে প্রফেসর ক্লাস পর্যন্ত ‘যতদূর ইসলামকে নিয়ে একাডেমিক্যালি পড়েছি, বুঝতে চেষ্টা করেছি- আমি শুরুতেই একটা জিনিষ বুঝে নিয়েছি। তা হলো, ইসলাম আমাকে একজন “স্বাধীন” “নাগরিক” হিসেবে দেখে। এরপর আমি বাকী সবকিছুকে- সবকিছু বলতে সবকিছুকে- আমার স্বাধীন নাগরিকত্ব দিয়ে মেপেছি’। তখন সেটাকেও স্বাভাবিকভাবে দেখার কোনো সুযোগ নেই। মনে রাখতে হবে-‘সামথিং ইজ ‘অলসো’ ফিশি ফিশি হেয়ার’!
মানবজাতির সামগ্রিক বিকাশে ইসলাম নির্দেশিত সুনির্দিষ্ট দায়িত্বপালনে অস্বীকৃতি জ্ঞাপনকারী এই জাতীয় স্বাধীনতার ধ্বজাধারীদের কাছ থেকে সুদৃঢ় নৈতিকগুণসম্পন্ন সুগঠিত শক্তিশালী কোনো পরিবার আশা করা যায় না, যেমনটা ইসলাম চায়। এবং ‘র্যাশনাল ক্যাপিটালিজম’ বা যুক্তিবাদী পুঁজিবাদের নিয়মে তা সংগত কারণেই লিভ টুগেদারে পর্যবসিত হতে বাধ্য! সো, সেই পুরুষকেও মোকাবিলা করতে হবে আমাদের। আমাদের মানে ঈমানদার নারী, পুরুষ উভয়কেই। এবং এখানেই মুমিন নারী পুরুষ একে অন্যের সহযোগী, যেমনটা আল্লাহ বলেছেন-
‘মুমিন পুরুষ ও মুমিন নারী, এরা সবাই পরষ্পরের বন্ধু ও সহযোগী৷ তারা সৎকাজের আদেশ দেয় এবং অন্যায় ও অসৎকাজ থেকে বিরত রাখে, নামায কায়েম করে, যাকাত দেয় এবং আল্লাহ ও তাঁর রসূলের আনুগত্য করে৷ এদের ওপরই আল্লাহর অনুগ্রহ বর্ষিত হয়। নিশ্চয়ই আল্লাহ পরম পরাক্রমশালী এবং প্রজ্ঞাময়’(০৯:৭১)।
০৫.
হ্যাঁ, ইসলামে স্বাধীনতার আরেকটি দিকের কথা বলছিলাম। ইসলামের ভেতরেই সেই স্বাধীনতা চর্চা করতে হয়। সেখানেই ইসলাম সমস্ত মুমিন(এক অর্থে মানুষকেও)কে ‘স্বাধীন নাগরিকে’র চোখে দেখে। এই দেখা ইসলামের ভেতর থেকে ইসলামের চোখে দেখা। এবং তা হলো- স্বাধীনভাবে আল্লাহর আনুগত্য করার স্বাধীনতা। আল্লাহর বিধান হাতে নিয়ে আর যে কারো আদেশ-নিষেধকে চ্যালেঞ্জ করার স্বাধীনতা। বিশেষ কোনো ব্যক্তি(তা হাজবেন্ড/ওয়াইফ বা অন্য যেই হোক)বা গোষ্ঠীর রেফারেন্সে(০৯:৩১) ঈমানদারের এই অধিকার ক্ষুণ্ন হতে পারে না। ঈমানদারের এই স্বাধীনতা প্রতি মুহূর্তের জন্যই অবারিত। শুধু তা’ই নয়, প্রতি মূহূর্তে যতটুকু সম্ভব সেই স্বাধীনতা চর্চা ঈমানদারের জন্য আবশ্যক।
এই অধিকার লংঘন করতে পারে না খিলাফাত কিংবা স্বয়ং খলিফা উমরও! বরং সংগঠন, পার্টি, ইসলামী রাষ্ট্র, খিলাফাত যা’ই বলুন না কেনো, এই স্বাধীনতা না থাকলে তার অন্য সবই বাগাড়ম্বরে পরণত হয়। আরো ইন্টারেস্টিং হলো- মুমিন নারী বা পুরুষ নিজেকে মুমিন দাবী করতে পারেনা, যতক্ষণ না সে নিজের উপর অন্যের ইসলামসম্মত অধিকারের স্বীকৃতি না দিচ্ছে। ইসলামী রাষ্ট্র বা খিলাফাত এই অধিকার বন্টনেরই একটা প্রকল্প বলা যায়। সেই অধিকারের তালিকায় প্রাণ প্রকৃতি, জীব-অণুজীব, নারী-পুরুষ, সবল-দূর্বল সবাই বিদ্যমাণ। খলিফা হিসেবে আবু বকরের শপথ পরবর্তী বক্তিতা তার দেদীপ্যমান দৃষ্টান্ত।
সেই অধিকার নিয়ে ড.ফারজানা মাহবুবা কেনো, জনৈক জরিনা আক্তারও যদি দাঁড়ায়, সশ্রদ্ধ সম্মানে তাঁর পাশে দাঁড়ানো ঈমানেরই দাবি। দাবি ইসলামের, ইসলামী সমাজ বিনির্মাণ আন্দোলনের। চার বছর আগে জানি না কি বুঝে লিখেছিলাম- Without reforming existing abnormal men-women relations, in the name of Modernity or Islam, no revolution or reconstruction can be initiated effectively. সে কথা আজও প্রযোজ্য। সে কাজ শুধু নারীর নয়, প্রতিটি ঈমানদারের! পাশ্চাত্যের নারী আন্দোলনের একাংশ যখন ‘হি ফর শি’তে চলে গেছে, হায়! আমাদের ফারজানারা এখনও হঠকারী বিচ্ছিন্নতার আগুনে ছটপট করে মজা পেতে চাইছেন!…
০৬.
তো, ভেবে দেখুন তো, আমরা বলতে পারি কিনা- মিসেস মাহবুবা ‘স্বাধীন নাগরিক’ বলতে মূলত স্বাধীনভাবে আল্লাহর আনুগত্য করার স্বাধীনতাই বোঝাতে চেয়েছেন?... হ্যাঁ, বলতে পারি। যদি তিনি নিজের স্বকপোলকল্পিত ‘স্বাধীন নাগরিক’ ধারণা নিয়ে ইসলামকে দেখার ভ্রান্তি ও ভ্রষ্টতা থেকে সরে আসেন। যে ‘দু’টো শব্দ’কে তিনি ‘বিশেষ করে মেয়েদের জন্য- ধর্মকে বুঝতে চাইলে খুবই খুবই খুবই গুরুত্বপূর্ণ’ বলেছেন। তাকে বুঝতে হবে, ইসলামকে বোঝার জন্য ইসলাম নারী-পুরুষের জন্য আলাদা আলাদা মানদন্ড নির্ধারণ করেনি। এবং আগেই বলেছি- নিজেকে স্রেফ নারী বা পুরুষ ধরে নিয়ে ইসলামকে দেখা, ইসলাম-সংশ্লিষ্ট কোনো আলোচনায় প্রবৃত্ত হওয়া- ইসলাম অনুমোদন করে না।
কিন্তু সেই যে এক্সাইটমেন্টের কথা বললাম, সেই প্রবণতা কমেন্টে গিয়ে আরো বেড়েছে উনার। স্বামীর উপস্থিতিতে নফল রোজা রাখার ক্ষেত্রে তার অনুমতি নেয়া প্রসঙ্গে বুখারি(৫১৯১), মুসলিম(১০২৬), আবু দাউদ(১৬৮৭), আহমদ(২৭৪০৫), তিরিমিজি(৭৮২)তে সহীহ সূত্রে হাদীস বর্ণিত হলেও, বিষয়টাকে তিনি যেভাবে তুড়ি মেরে উড়িয়ে দিয়েছেন-
‘আমি… এই একটু আগে পড়ে এলাম এক ভদ্রলোক কত কোরান হাদীস দিয়ে প্রমান করে ছেড়েছেন (!!) যে আমার হাজবেন্ডের অনুমতি ছাড়া আমি নফল নামায রোযাও পড়তে পারবো না, কারন আমার হাজবেন্ড যে কোনো সময় আমার সাথে শারিরীক এহহেম সম্পর্ক করতে চাইতে পারে, এবং আমি তাকে সবসময় আমার শরীর দিতে বাধ্য!!!!!!’
আর একটু গিয়ে দেখলাম, এ নিয়ে তিনি ‘ম্যারিটাল রেইপ’ পর্যন্ত চলে গেছেন! অথচ কোথায় রোজার ব্যাপারে হাজবেন্ডকে সামান্য জিজ্ঞেস করে নেয়া(খানিকটা মজা নেয়াও হতে পারে), আর কোথায় ‘ম্যারিটাল রেইপ’!! আমার তো রীতিমতো মাথা ঘুরে উঠছিল। ভাগ্যিস! পরের লাইনে- গালি গালাস খেয়ে বেঁচে গেলাম! ‘শালা ফাজিলের ফাজিল শয়তান পুরুষতান্ত্রিক মন মানসিকতার চামচা বেয়াদ্দব কুলাংগার কোথাকার!’
০৭.
ঐ যে বললাম না, এ হলো গায়ের জোরে ইসলাম দেখার দীর্ঘদিনের বদ স্বভাব! ফারজানা মাহবুবাদের মনস্তত্বের আরো একটা প্রণিধানযোগ্য দিক বটে!!...
বিষয়: বিবিধ
২২৩৯ বার পঠিত, ৬ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
এটাও পড়লাম, দোয়া করি, জাযাকাল্লাহ..
আরো আছে কি??
সবটা একসাথে কপি করতে চাই- আগেই বলে রাখলাম!!
অনেক ধন্যবাদ! জাযাকাল্লাহ..
আরো দুয়েকটা পর্ব হতে পারে...
দোয়া করবেন!...
মন্তব্য করতে লগইন করুন