ইসলামে স্বামী-স্ত্রীর সম্পর্ক: একজন তরুণ চিন্তকের সাথে কথোপকথন (দ্বিতীয় এবং শেষ পর্ব)

লিখেছেন লিখেছেন শাহাদাত মাহমুদ সিদ্দিকী ০১ অক্টোবর, ২০১৬, ০৫:১১:৫২ বিকাল



Nure Alam Masud:

ভাই, আপনি যখন লিখলেন : "‘পুরুষেরা নারীদের উপর কৃর্তত্বশীল'... আর কুরআনের নির্দেশ হলো- আনুগত্য করো আল্লাহর তাঁর রাসূলের এবং তোমাদের কতৃত্বশীলের", তখন আমি সেন্স করেছি যে, ইসলামী বিষয়াদিতে সিদ্ধান্তে আসা/ মন্তব্য করা/ চিন্তা করার আপনার যে মেথডোলজি, সেই পদ্ধতিতে বেশকিছু ভুল আছে। গোড়ায় (মেথডোলজিতে) মতপার্থক্য থাকায় আর অগ্রসর হইনি। কেননা আপনি উলিল আমর ও ক্বাওয়ামুন -- এই দুটি যে ভিন্ন, তা দেখেননি, আপনি আর্গুমেন্ট ডেভেলপ করেছেন অনুবাদের উপর ভিত্তি করে, যা গ্রহণযোগ্য নয়। অতএব, এখানে পদ্ধতিগত পার্থক্য রয়েছে। সেই বিষয়ে একমত না হয়ে আর্গুমেন্ট করা সঙ্গত নয়।

রিপ্লাই-১১.

আমি নিজে কোনো সিদ্ধান্তে আসিনি... যা বলেছি জানাশোনা থেকেই বলেছি... এবং এখনও বোঝার চেষ্টা করছি... বিষয় হলো, যেকোনো বৈধ/অনুমোদিত কর্তৃত্ব'ই তো ইসলামে আনুগত্যের যোগ্য... আনুগত্যের সীমা এবং মাত্রাগত তফাৎ থাকতে পারে, কিন্তু আনুগত্য বাদ দেবেন কিভাবে?...

Nure Alam Masud:

ক্বাওয়ামুন শব্দের অর্থ নিয়ে আগে আলোচনা হতে হবে।

কর্তৃত্বশীল, নাকি দেখাশোনাকারী?

কর্তৃত্বশীল হলে, সেক্ষেত্রে এটা কি আল্লাহর পক্ষ থেকে পরিস্থিতির বর্ণনা, নাকি আল্লাহর পক্ষ থেকে অনুমোদন?

অনুমোদন হলে তার মাত্রা ও সীমা কী?

দেখাশোনাকারী হলে তার মাত্রা ও সীমা কী?

এগুলি স্টেপ বাই স্টেপ উত্তর করতে হবে।

রিপ্লাই-১২.

এজন্যই তো আমি প্রথমেই(রিপ্লাই-০২) আপনাকে উপমহাদেশের বাইরে গিয়ে চারটি প্রসিদ্ধ তাফসীর গ্রন্থ হতে আয়াতটির(০৪:৩৪)সংশ্লিষ্ট অংশের অনুবাদ দিয়েছিলাম। ওটা নিয়ে তো কই প্রশ্ন তুললেন না। আবার রিপ্লাই-০৯’এ সেগুলো থেকে ক্বাওয়ামের মিনিং’ও দিয়েছি- who takes full care of/ protectors and maintainers/ in charge of. তার মানে ক্বাওয়ামকে তাঁরা দুটো অর্থেই নিয়েছে… কর্তৃত্বশীল এবং দেখাশোনাকারী…

তবে আয়াতটি ক্লিয়ার সেলফ-এক্সপ্লেইন্ড; দেখা যাচ্ছে, পুরুষ কর্তৃত্বশীল( in charge of) এ কারণে যে, তারা দেখাশোনাকারী( protectors and maintainers).

এবং সেটি মোটেই পরিস্থিতি বর্ণনা নয়, বরং ন্যাচারাল(natural) এবং র‌্যাশনাল(rational) অনুমোদন।

ন্যাচারাল এজন্য যে আয়াত বলছে- ‘আল্লাহ নিজেই একের উপর অন্যের(বরের) বৈশিষ্ট্য দান করেছেন’ এবং র‌্যাশনাল এ জন্য যে, ‘তারা(বর) তাদের অর্থ ব্যয় করে(স্ত্রীদের জন্য)’।

অনুমোদনের সীমা নিয়েও কথা সরল- শরীয়ার সীমা, অর্থাৎ, আল্লাহ ও তার রাসূলের আনুগত্যের সীমায়...

আর মাত্রা হলো- কর্তৃত্বকে যত মিনিমাইজ করা যায়, সম্প্রীতি দয়া ও সহানুভূতির আচ্ছাদনে যতটা আড়াল করা যায়... এ ব্যাপারে হাদীসে স্বামী-স্ত্রী উভয়ের জন্য যথেষ্ট নির্দেশ ও নির্দেশনা আছে...

Nure Alam Masud:

"আর মাত্রা হলো- কর্তৃত্বকে যত মিনিমাইজ করা যায়, সম্প্রীতি দয়া ও সহানুভূতির আচ্ছাদনে যতটা আড়াল করা যায়" -- যেন আল্লাহ ভুল ব্যক্তিকে কর্তৃত্ব দান করতে তারপর আবার রাসূলের মাধ্যমে (হাদীসে) তার কর্তৃত্ব মিনিমাইজ করার চেষ্টা করছেন?

অনুবাদনির্ভর আলোচনা গ্রহণ করব কিভাবে, যেখানে অনুবাদ-ই আলোচনাসাপেক্ষ বিষয়? Dr. Ghali-র অনুবাদ দেখুন:

"Men are the ever upright (managers) (of the affairs) of women for what Allah has graced some of them over (some) others and for what they have expended of their riches. "

ইউসুফ আলীর অনুবাদ দেখুন:

"Men are the protectors and maintainers of women, because Allah has given the one more (strength) than the other, and because they support them from their means."

ক্বাওয়ামুন শব্দের কোন অর্থ / অর্থগুলি গ্রহণ করতে হবে, এবং সেগুলির উপর বিস্তারিত ফোকাস হলে লেখা / আলোচনার ভিত্তি দৃঢ় হবে। নতুবা হাদীস, এবং নানান আর্থ-সামাজিক-মানসকি বিষয়ের আলোচনা গুরুত্বহীন হয়ে পড়বে। অন্যান্য আলোচনা তখনই অর্থবহ হয়, যখন তার ভিত্তি হিসেবে অত্যন্ত দৃঢ় কিছু থাকে। সেই দৃঢ়তা পাওয়া যাবে কুরআনের আয়াত থেকে, কিন্তু আপনি সেটা করছেন অনুবাদ নির্ভর, সেজন্য নির্ভর করছেন "প্রসিদ্ধ তাফসিরকারকদের" তাফসির / অনুবাদের উপর, সরাসরি কুরআনের উপর নয়, এবং সংশ্লিষ্ট আয়াতের ব্যাকরণিক ও ভাষাগত ব্যাখ্যা আনছেন না। এর ফলে আপনার বক্তব্য দৃঢ় হচ্ছে না।

"কারণ আল্লাহ তাদের কাউকে কাউকে অন্যদের উপরে দান করেছেন" -- কাউকে মানে কাকে? দান করেছেন মানে কী দান করেছেন?

ইউসুফ আলী মনে করেছেন পুরুষকে শক্তি দিয়েছেন আল্লাহ, সেটা বলা হয়েছে। তাই অনুবাদে তিনি ব্র্যাকেটে strength লিখেছেন।

ক্বাওয়ামুন অর্থ তিনি মনে করেছেন নিরাপত্তা প্রদানকারী, মেইনটেইনার হিসেবে।

Dr. Ghali মনে করেছেন ক্বাওয়ামুন অর্থ managers of affairs -- এমন। বাংলা অনুবাদক মনে করছেন কর্তৃত্বশীল। ইত্যাদি।

যেমন সূরা বাক্বারার ১৮৭ নং আয়াতে লাইল (রাত) এর মত সুস্পষ্ট শব্দকেও সৌদি আরবের "সহীহ ইন্টারন্যাশনালের অনুবাদক" মনে করেছেন সূর্যাস্ত, তাই তিনি sunset লিখে দিয়েছেন। অতএব, প্রসিদ্ধ অনুবাদক, তাফসিরকারক, ইন ফ্যাক্ট, যেকোনো অনুবাদই বাদ দিয়ে সরাসরি শব্দ / বাক্যটি নিয়ে যদি আলোচনা করেন, তবে তা শোনা যেতে পারে। আর তা না করে যদি আপনি একজন অনুবাদককে গ্রহণ করেন, আমি আরেকজনের অনুবাদ গ্রহণ করি -- তবে সেটা হবে নিছক অনুসরণ। সেক্ষেত্রে সেই অনুবাদক দুইজনের মধ্যে আলোচনা হওয়া উচিত, আমাদের মধ্যে নয়।

Nure Alam Masud:

আয়াতটির এমন সেন্সও আসতে পারে (কোনো কোনো অনুবাদ এমন সেন্স নিয়েছেন) যে, পুরুষরা নারীদের নিরাপত্তা প্রদানকারী ও তাদের কাজকর্মের ম্যানেজার এই কারণে যে আল্লাহ পুরুষকে শক্তি দিয়েছেন এবং পুরুষ তার অর্থ থেকে ব্যয় করে। এর মানে এই নয় যে স্ত্রীরা স্বামীদের "আনুগত্য" করতে বাধ্য, বা আল্লাহ তা বলছেন। বরং আল্লাহ পুরুষদের অবস্থান পরিষ্কার করছেন যে, তারা ম্যানেজার মাত্র, boss নয়। এবং তারপর বলছেন যে সালেহ নারী হয় অনুগতা (মানে আল্লাহর অনুগত), ইত্যাদি ইত্যাদি...

এবং তারপর বলছেন যে যদি অবাধ্যতার আশঙ্কা করো, মানে আল্লাহর অবাধ্যতার আশঙ্কা করো, অর্থাৎ পুরুষ যদি আশঙ্কা করে যে বা দেখে যে স্ত্রী আল্লাহর প্রকাশ্য অবাধ্যতা করছে, সেক্ষেত্রে তাকে সাবধান / সতর্ক করা / ফিরিয়ে আনার জন্য কিছু measure আল্লাহ বলে দিয়েছেন ম্যানেজারকে (স্বামীকে)।

এমন সেন্স নিতেই বা বাধা কোথায়? কেননা আনুগত্যের জায়গায় স্বামীর কথা সুস্পষ্ট বলা হয়নি। আল্লাহর একের উপর অন্যকে দান করেছেন -- নারীর উপর পুরুষকে, নাকি বিপরীত - তাও সুস্পষ্ট বলা হয়নি। এগুলি আরো অন্যান্য অনেক ফ্যাক্টর বিবেচনা করে বের করে নিতে হবে। সেই আলোচনা উপস্থাপন করুন।

এখানে স্ত্রীকে স্বামীর আনুগত্যে ঢুকিয়ে তারপর স্বামীর আদেশমত শ্বাশুড়ির সেবা করিয়ে নেয়াটা চিরন্তন বাঙালি চিন্তাধারা থেকে আগত, এই চিন্তাধারা দ্বারা ইসলামকে ব্যাখ্যা করে নিজেদের সমাজের সাথে খাপ খাওয়ানোর প্রচেষ্টা। এটি অনেকে অবচেতনভাবে আর অনেকে সচেতনভাবে করে থাকেন।

রিপ্লাই-১৩.

আরে ভাই শুধু অক্ষর দেখলে তো হবে না; অক্ষরের ভেতরে যে প্রাণ আছে, অক্ষরের যে স্বর আছে তাকেও তো পাঠ করতে হবে। আল্লাহ ভুল ব্যক্তিকে কর্তৃত্ব দেবেন কেনো, তিনি যথাযথ ব্যক্তিকে যথাযথ পরিমাণ কর্তৃত্বই দিয়েছেন। কিন্তু ইসলাম কর্তৃত্ব দিয়ে, স্রেফ আইনের ধারা দিয়ে কিছু প্রতিষ্ঠা করতে চায় না। সমাজে রাষ্ট্রে কোথাও না। পরিবারে তো নয়ই। আমাদের কথা ছিলো- কর্তৃত্ব আছে, ঠিকাছে। কিন্তু কর্তৃত্বটা যে উদ্দেশ্যে দেয়া, সেটা যদি দয়া-মায়া-সম্প্রীতি ভালোবাসা দিয়ে হাসিল হয়ে যায়; তাহলে কর্তৃত্বের রুঢ়তা নিষ্প্রয়োজন। রাসূলুল্লাহর সারা জীবনের এপ্রোচটা এমনই ছিলো…

অনুবাদ নির্ভর আলোচনা গ্রহণ করবেন না, ভালো। কিন্তু আপনি আমি এখানে ঠিক আরবি থেকে যা বলবো সেটাও তো সেই অনুবাদই হবে! সো আরবি তো টেক্সট হিসেবে আছেই, বেটার আন্ডারস্ট্যান্ডিং’এর প্রয়োজনে অনারবদের জন্য অনুবাদের উপর নির্ভরশীল হওয়া ছাড়া উপায় কি?? তবে একাধিক অনুবাদ পর্যালোচনা করে বোঝার কথা আপনি বলতে পারেন। সেটা আমরা করছিও...

কেনো, ক্বাওয়াম অর্থ বা অর্থগুলো গ্রহণের ক্ষেত্রে হাদীস এবং প্রাসঙ্গিক অন্যান্য আর্থ-সামাজিক বিষয় আপনাকে সাহায্য করতে পারে না?? আপনি খুব ভালো আরবি শব্দতত্ত্ব বোঝেন, অর্থতত্ত্ব বোঝেন, সো আগে শব্দের অর্থ ঠিক করবেন, তারপর আপনার গৃহীত কুরআনের শব্দানুবাদ দিয়ে আর সব এবংকি হাদীসও ব্যাখ্যা করবেন!! এটা বড্ড বেশী হয়ে গেলো না?!?

রিপ্লাই-১৪.

দেখুন সৌদি আরব কিংবা ইরান কিংবা মিশরের কোনো ‘সহীহ ইন্টারন্যাশনালের অনুবাদক’কে অগ্রিম সত্য বলে ধরে নিয়ে আমরা কিছুই পাঠ করি না। এবং কোনো বিশেষ তাফসীর নিয়েও আমাদের বিতর্ক হচ্ছে না। আপনার Dr. Ghali’র অনুবাদ গ্রহণেও আমার মোটেই আপত্তি নেই। ক্বাওয়াম মানে manager of affairs, চমৎকার বলেছেন তিনি। আমাদের কথা হলো- ক্বাওয়ামের অনুবাদ আপনি আরো যা’ই করুন না কেনো, কোনো-না-কোনো মাত্রার কর্তৃত্ব এবং সমানুপাতে আনুগত্যের ব্যাপার থেকে তাকে বিচ্যূত করতে পারবেন বলে মনে হয় না।

এই যে বললেন, ‘তারা ম্যানেজার মাত্র, boss নয়’। আমরা কোথাও কি boss উচ্চারণ করেছি, এক বারও? ধরুন ম্যানেজার, তো আপনি কি আপনার ম্যানেজার, আল্লাহর নিয়োগ করা ম্যানেজারকে মান্য করবেন না!? যে ম্যানেজার তার আল্লাহর প্রদত্ত স্ট্রেংথ দিয়ে আপনাকে প্রোটেক্ট করছে, আপনার জন্য তার কষ্টার্জিত সম্পদ খরচ করছে, তাকে মানতে চাইবেন না? বুঝতে চাইবেন না? তার সুবিধা-অসুবিধা দেখবেন না??...

রিপ্লাই-১৫.

হ্যাঁ, পারে। অবশ্যই পারে- ‘আয়াতটির এমন সেন্সও আসতে পারে যে, পুরুষরা নারীদের নিরাপত্তা প্রদানকারী ও তাদের কাজকর্মের ম্যানেজার এই কারণে যে আল্লাহ পুরুষকে শক্তি দিয়েছেন এবং পুরুষ তার অর্থ থেকে ব্যয় করে’। সেই একই কথা দাঁড়ালো- ‘নিরাপত্তা প্রদানকারী’র কথা মেনে চলুন, যাতে আপনার নিরাপত্তা বঘ্নিত না হয়। ম্যানেজারকে মান্য করুন, যাতে প্রতিষ্ঠান-পরিবার যথাযথভাবে রা’ন করতে পারে। আল্লাহ কাউকে আপনার ‘নিরাপত্তা প্রদানকারী’ বানালেন, আপনার ‘ম্যানেজার’ বানালেন, আর আপনি ভ্রুক্ষেপও করলেন না… ওয়াট ইজ দীজ!?

এর ভেতর দিয়ে অন্তত চলনসই আনুগত্য তো আবশ্যক হয়ে ওঠে, যেটুকু না হলে ফ্যামিলি ঠিকঠাক রা’ন(run) করতে পারবে না। পারিবারিক নিরাপত্তা এবং তার আফটার ম্যাথ হিসেবে সামাজিক নিরাপত্তা ব্যবস্থা বিপর্যস্ত হবে…

কিন্তু এটা মানতে পারছি না যে, ‘সালেহ নারী হয় অনুগতা (মানে আল্লাহর অনুগত)’। আয়াতের বাক্যাংশ সমূহের ধারাবাহিকতা সেটা সাপোর্ট করে না। তাছাড়া শুধু সালেহা নারী তথা ‘righteous women’ বলে এখানে স্পেসিফাই করবেন কেনো? সালেহ পুরুষও তো আল্লাহর অনুগত, না?... সামষ্টিক ব্যাপারে কুরআন কোথাও কোথাও নারী এবং পুরুষকে সাইড-বাই-সাইড উল্লেখ করেছে, যেমন এভাবে বলেছে- তারা পুরুষ হোক কিংবা নারী হোক,…ইত্যাদি। কিন্তু সামষ্টিক ব্যাপার, যেমন- আল্লাহর আনুগত্য… এ ধরণের ব্যাপারে শুধু নারীকে স্পেসিফিক উল্লেখ করা কি আর কোথাও আছে?

তারপর আল্লাহর অবাধ্য হলে(এখানে শব্দটা হলো ‘নুশুজ’, আল্লাহর অবাধ্যতার জন্য কি এ শব্দ ইউজ হয়েছে/হয়?) তাকে বোঝাবেন, সদুপদেশ দেবেন, ঠিকাছে। কিন্তু আল্লাহর অবাধ্য হলে স্ত্রীর শয্যা ত্যাগ করবেন!? তাকে অক্ষতিকর মৃদু প্রহার(দারাবা) করবেন?... এতেও কাজ না হলে, পরের আয়াত(০৪:৩৫) যা বলছে- ‘যদি তাদের মধ্যে সম্পর্কচ্ছেদ হওয়ার মত পরিস্থিতিরই আশঙ্কা কর, তবে স্বামীর পরিবার থেকে একজন এবং স্ত্রীর পরিবার থেকে একজন সালিস নিযুক্ত করবে। তারা উভয়ের মীমাংসা চাইলে আল্লাহ সর্বজ্ঞ, সবকিছু অবহিত’- প্রযোজ্য হবে!?!

এবার ভেবে দেখুন- ‘এমন সেন্স নিতে বাধা কোথায়’?

রিপ্লাই-১৬.

বি.দ্র. …‘ স্ত্রীকে স্বামীর আনুগত্যে ঢুকিয়ে তারপর স্বামীর আদেশমত শ্বাশুড়ির সেবা করিয়ে নেয়াটা চিরন্তন বাঙালি চিন্তাধারা থেকে আগত, এই চিন্তাধারা দ্বারা ইসলামকে ব্যাখ্যা করে নিজেদের সমাজের সাথে খাপ খাওয়ানোর প্রচেষ্টা’- এটা নিতান্তই অসার সরলীকরণ করে বলা। এ ব্যাপারে নোটে আমরা বিস্তারিত বলেছি, সো পুনরাবৃত্তি নিষ্প্রয়োজন।

আমরা তো আপনাকে বলছি না যে, পাশ্চাত্যের নারীবাদকে স্ট্যান্ডার্ড ধরে তার কাছাকাছি যেতে চেষ্টিত নিরীহ স্কলারদের দ্বারা প্রভাবিত হয়ে আপনি কথা বলছেন! কিন্তু এটা তো অস্বীকার করা যাবে না যে, পূর্ণাঙ্গ প্রতিষ্ঠার পূর্ব পর্যন্ত বিধিবদ্ধ আইন নয়, বরং সমাজের ভেতর থেকে সমাজকে ইসলাম-অভিমুখে নিয়ে যাওয়ার দিক-নির্দেশক হিসেবেই ইসলামের ভূমিকা প্রধান থাকে। অনেক সময় বিধিবদ্ধ আইন আড়ালেই থেকে যায়, এবং বাংলাদেশ এখনও সেই প্যাসেজেই আছে… অতিক্রম করছে…

Nure Alam Masud:

জ্বী। এগুলো আলোচনাসাপেক্ষ, ব্যাখ্যাসাপেক্ষ। বাড়ির নিরাপত্তারক্ষী কি বাড়ির মালিকের উপর খবরদারী করার অধিকার রাখে? সে কেবল নিরাপত্তা প্রদান করে মাত্র।

এইরূপে বাহাস চলতে পারে।

কিন্তু আমি আপনার সাথে বাহাস করতে চাইছি না এই কারণে যে, মৌলিক ভিত্তিমূলক বিষয়ে আপনার সাথে আমার মিলছে না। যেমন আপনি বাংলা অনুবাদে দুই জায়গার "কর্তৃত্বশীল" মিলিয়ে একটা সিদ্ধান্ত তৈরী করে ফেললেন।

ক্বাওয়াম এর সাথে "কর্তৃত্ব-আনুগত্য" ঠিক কোনরূপ, এবং তার "কোনো না কোনো মাত্রা" কীরূপ,তা সু্স্পষ্ট বর্ডার করে বলতে হবে। আর manager of affairs বলতে আপনি কেবল তার অধীনস্ত ভাবছেন কেন? একজন মন্ত্রী প্রতিদিন ঘন্টায় ঘন্টায় তার p.s. এর কাছে শোনেন কোথায় কী করতে হবে, এই p.s. তার ম্যানেজার অব অ্যাফেয়ার্স, কিন্তু তার উপরে "কর্তৃত্বশীল" নয়। ম্যানেজার অব অ্যাফেয়ার্স হলেই "কর্তৃত্ব-আনুগত্য" আসে কিভাবে?

এমনও তো আর্গুমেন্ট হতে পারে !

মোদ্দা কথা, আপনার যুক্তিকে দৃঢ় হতে হবে। আমি ব্যক্তিগতভাবে এখানে ৪:৩৪ আয়াতের কোনো ব্যাখ্যা হাজির করিনি। উপস্থাপন করেছেন আপনি। অতএব বার্ডেন অব প্রুফ আপনার। আমি কোনো বিশেষ চিন্তাধারা হাজির করলে সেক্ষেত্রে আপনিও বলতে পারতেন -- পাশ্চাত্যের নারীবাদী চিন্তার সাথে খাপ খাওয়ানোর চেষ্টা। আমিতো কোনো চিন্তাধারা উপস্থাপনই করিনি। আমি কেবল আপনার পদ্ধতি / উপস্থাপিত বক্তব্যের সাথে কিছু জায়গায় দ্বিমত করেছি।

Nure Alam Masud:

"কিন্তু এটা তো অস্বীকার করা যাবে না যে, পূর্ণাঙ্গ প্রতিষ্ঠার পূর্ব পর্যন্ত বিধিবদ্ধ আইন নয়, বরং সমাজের ভেতর থেকে সমাজকে ইসলাম-অভিমুখে নিয়ে যাওয়ার দিক-নির্দেশক হিসেবেই ইসলামের ভূমিকা প্রধান থাকে।" স্বামী-স্ত্রীর বদ্ধ দুয়ারের ভিতরে ঘরের মাঝে কেবল তারা দুজনই থাকেন। এক্ষেত্রে "অনিসলামী রাষ্ট্র / সমাজ" গ্রহণযোগ্য ফ্যাক্টর নয়, যেখানে স্বামীর আনুগত্য প্রসঙ্গে আলোচনা হচ্ছে। অনিসলামী রাষ্ট্র স্বামীর আনুগত্যে বাধা দেয় না।

রিপ্লাই-১৭.

এগুলো ভাই ফালতু যুক্তি, ভোগাস বিতর্ক! বাড়ীর নিরাপত্তা-প্রহরী, আর মন্ত্রীর পিএস যথাক্রমে বাড়ির মালিকের এবং মন্ত্রীর বেতনভূক্ত; আর যাই হোক, বেতনভূক্তদের ওপর বেতনদাতা কর্তৃত্ববান থাকে… আপনার উদাহরণ থেকে তো শেষ পর্যন্ত এ-ই বেরিয়ে আসে!

এখন একজন মানুষ যদি আপনাকে বেতনও দেয়, আবার নিরাপত্তাও দেয়, তারে আপনার নিরাপত্তা প্রহরী মনে করবেন?!? আপনার কাছ অন্তত এসব চোখ-কান-নাক’হীন লজিক আশা করিনি।

‘প্রটেকটর’ বলতে এখানে স্বামীকে স্ত্রীর বেতনভূক্ত নিরাপত্তা-প্রহরীর মতো ট্রীট করা; একইভাবে ‘ম্যানেজার অব অ্যাফেয়ার্স’ বলতে মন্ত্রীর পিএস'এর কথা মনে পড়া মানে, আপনার মন এখানে নেই...

রিপ্লাই-১৮.

‘ক্বাওয়াম এর সাথে "কর্তৃত্ব-আনুগত্য" ঠিক কোনরূপ, এবং তার "কোনো না কোনো মাত্রা" কীরূপ,তা সু্স্পষ্ট বর্ডার করে বলতে হবে’। বর্ডার তো বলেছি-

‘অন্তত চলনসই আনুগত্য’,

‘যেটুকু না হলে ফ্যামিলি ঠিকঠাক রা’ন করতে পারবে না। পারিবারিক নিরাপত্তা এবং তার আফটার ম্যাথ হিসেবে সামাজিক নিরাপত্তা ব্যবস্থা বিপর্যস্ত হবে…’

তাছাড়া আপনি তো প্রথম থেকেই কোনো মাত্রার কর্তৃত্বই স্বীকার করতে চাচ্ছেন না…

আর " কিন্তু এটা তো অস্বীকার করা যাবে না যে, পূর্ণাঙ্গ প্রতিষ্ঠার পূর্ব পর্যন্ত বিধিবদ্ধ আইন নয়, বরং সমাজের ভেতর থেকে সমাজকে ইসলাম-অভিমুখে নিয়ে যাওয়ার দিক-নির্দেশক হিসেবেই ইসলামের ভূমিকা প্রধান থাকে।" এটা কোন প্রসঙ্গে বলেছি, তা রিপ্লাই-১৬’তে দেখে নিতে পারেন।

ধন্যবাদ। এবং অনেক ধন্যবাদ দীর্ঘ সময় দেয়ার জন্য!

Nure Alam Masud:

ফালতু যুক্তি, বোগাস বিতর্ক। (:D) ভাই, "ইসলামপন্থীদের" এই চিত্র আমার বহু আগের দেখা। যাকগে। টাইম নষ্ট করলাম অনেক। খোদা হাফেজ।

রিপ্লাই-১৯.

আমারও দেখার সুযোগ হলো ভাই। যাই হোক, আবারও দেখা হবে, ইনশাআল্লাহ!...

রিপ্লাই-২০.

আর হ্যাঁ, অনেক অনেক ভালো থাকবেন... আল্লাহ হাফিজ।..

বিষয়: বিবিধ

১২৭৪ বার পঠিত, ১ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

378167
০১ অক্টোবর ২০১৬ রাত ০৯:২৩
আকবার১ লিখেছেন :

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File