ফরহাদ মজহারকে নিয়ে দিগন্ত ইসলামপন্থিদের করুণ দেউলিয়াপনা

লিখেছেন লিখেছেন শাহাদাত মাহমুদ সিদ্দিকী ২৯ সেপ্টেম্বর, ২০১৬, ১০:২৭:১৯ রাত



কথা যখন হচ্ছেই, আরো কিছু কথা হয়ে যাক।

দুই হাজার বারো সালে দৈনিক আমার দেশে দুই কিস্তিতে ‘তবু কমিউনিজমের কথাই বলতে হবে…’ নিয়ে তো কিছু কথা হলোই। হ্যাঁ, ‘তবু ইসলামের কথাই বলতে হবে…’ শিরোনামে। বিশেষ করে কমিউনিজম প্রশ্ন, মজহারপন্থা প্রসঙ্গে, এপ্রোচের মামলা এবং মাওলানা ভাসানী প্রসঙ্গ উল্লেখযোগ্য…

কিন্তু এর পরের বছর তিনি আরো বড় ঘটনা ঘটালেন। সে সময় ঈজিপ্টে ইসলামপন্থিদের বিপর্জয়ের সুযোগে তিনি তার পুরোনো ধ্যান-ধারণা নতুন করে উদগীরণের প্রয়াস পান। এর আগে জামায়াতে ইসলামীর নাম ধরে যেসব কুৎসা রটনা করতেন, এবার সে বিষোদগার করলেন ‘নির্বাচনবাদী ইসলামপন্থা’ নাম দিয়ে। লিখলেন- ‘নির্বাচনবাদী ইসলামপন্থা এবং মিশরের রাজনীতি’। এটাও দুই কিস্তি, বেশ মোটাতাজা মাশাল্লাহ! এবং ‘ইসলাম-পন্ডিত’ মুখোশ পরে, মোটা দাগে এটি তার দ্বিতীয় আপত্তিকর লিখা। হ্যাঁ, মোটা দাগে গুরুতর আপত্তিকরও বলতে পারেন।

০২.

প্রথম লিখাটি কমিউনিস্টদের মৃদু মধুর বকুনি দিয়ে লিখা। সেই সাথে গভীর শুভাকাঙ্খার সহিত অভিভাবকসুলভ সমূহ নসিহতে ঠাসা। খানিকটা ভর্ৎসনাও আছে কোথাও কোথাও। শুরুটাও ‘বাপের কানমলা’ দেয়ার মতো করে, এদেশীয় কমিউনিজমের ‘সুমহান’ ঐতিহ্য স্মরণ করে- ‘বাংলাদেশের ইতিহাসে ক্ষমতাসীন ফ্যসিস্টদের ছত্রছায়ায় হরতাল পালনের মতো যে কলঙ্কজনক ঘটনা ঘটে গেল’!!... শুধু ‘কলঙ্কজনজ’ নয়, তার কাছে এটা কমিউনিজমের জন্য রীতিমতো বিপর্জয়কর হিসেবেই ঠেকেছে। এ যেনো- ‘ফ্যাসিস্ট সরকারের সঙ্গে হাত মিলিয়ে সরকারি কর্মসূচি সফল করা’র মতো ব্যাপার ছিলো। তিনি আশ্চর্য হয়েছেন, বুদ্ধি-শুদ্ধিতে হিমালয় অতিক্রমী বাংলাদেশী বামরা যেখানে অন্যদের দিয়ে নানা কূটকৌশলে নিজের কর্মসূচী নির্বিঘ্নে করিয়ে নিতে পারে, সেখানে তাদেরকে দিয়ে সরকারী কর্মসূচী সফল করা!! ফরহাদ মজহার মর্মাহত না হওয়ার কোনো কারণ নেই! ‘রাজনীতিতে ধর্মের ব্যবহার নিষিদ্ধ এবং সব যুদ্ধাপরাধীর বিচার ‘দ্রুত শেষ করে’ শাস্তি কার্যকর করা’ – এটাই নাকি কমিউনিস্টদের প্রধান দাবি’!!

তো... ফ্যাসিস্ট সরকারের দাবির সাথে কমিউনিস্টদের দাবি মিলে একাকার হয়ে যাওয়া, এবং সেই প্রধান দাবিতে বিশেষ করে সরকারের প্রযোজনায়, পুলিশের পরিচালনায় বামদের পরিবেশিত হরতালের প্রেক্ষিতে, বাংলাদেশী কমিউনিস্টদের নিজের মুরোদ যেভাবে উদোম হয়ে অশ্লীলতায় পর্যবসিত হয়েছে, তাতে লক্ষহীন অভিমানের প্রাবল্যে খানিকটা বিক্ষুব্ধ হয়ে ওঠাও মোটেই অস্বাভাবিক নয়, তার জন্যে।

০৩.

যা’ই হোক, সে নিবন্ধে তিনি বামদের বলতে চেয়েছেন- দেখো, তোমরা যেমন মনে কর, ধর্ম বিশেষত ইসলাম এত্তো খারাপ কিছু না! এরমধ্যে কমিউনিজমের ‘উত্তেজক’ চাষের যথেষ্ট ক্ষেত্র আছে। জ্বালানি সংগ্রহের উপাদানও কম নেই। আছে পর্যাপ্ত গোলা-বারুদও! এভাবে কমিউনিজমের দিক থেকে ধর্মের(ইসলামের) কমিউনিজম-সংশ্লিষ্ট অংশের হরেক রকমের উপকারিতা তিনি তুলে ধরেছেন। এবং বাংলাদেশের রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটের আ’ল ধরে বিবিধ কায়দায় তাদের বুঝিয়েছেন, কিভাবে কমিউনিজমের জন্য ফলদায়ক পদ্ধতিতে ধর্ম তথা ইসলাম মোকাবিলা করা যায়। বামদের স্বভাবসুলভ হঠকারীতা থেকে বের করতে তিনি মার্ক্সের দোহাইও দিয়েছেন- ‘মার্কস আইন বা রাষ্ট্রকে উপরি কাঠামো বললেও ধর্মকে কোথাও অর্থনৈতিক উপরিকাঠামো বলেন নি, একে সমাজে আর দশটা মতাদর্শের মতোই মতাদর্শ বলেছেন’। সেই সাথে এও বলে রেখেছেন- ‘অর্থনৈতিক সম্পর্কের সঙ্গে মতাদর্শের সম্পর্ক বিচার এখনও গুরুত্বপূর্ণ বিবেচনার ক্ষেত্র যার মীমাংসা হয়েছে বলে মার্কসের সনিষ্ঠ পাঠকেরা মনে করেন না’।

সো, ‘মার্ক্সের সনিষ্ঠ পাঠক’ হিসেবে কমিউনিস্টদের বোঝালেন- ধর্ম বা ধর্মভিত্তিক দল নিষিদ্ধ নয়, তোমরা বরং তাদের রাজনৈতিকভাবে বুদ্ধিবৃত্তিকভাবে মোকাবিলা কর।

আচ্ছা।

কিন্তু মিশরের রাজনৈতিক বিপর্জয়ের প্রেক্ষিতে লিখাটিতে তিনি পুরো ঘুরে গেলেন। একেবারে হান্ড্রেড এইটি ডিগ্রি এঙ্গেলে। এবার তিনি বললেন, বললেন একেবারে মূলধারার মধ্যপন্থি ইসলামিস্টদের নিয়ে-

‘নির্বাচনবাদী ইসলামপন্থিদের বিরুদ্ধে গুরুতর অভিযোগ হচ্ছে, এই ধারা আসলে গণতন্ত্রেই বিশ্বাস করে না। কিন্তু গণতন্ত্রের সুযোগ নিয়ে গণতন্ত্র নস্যাৎ করবার চেষ্টা চালায়। রাষ্ট্র গণতান্ত্রিক হোক বা না হোক নির্বাচনের মাধ্যমে সরকার গঠন করবার ব্যবস্থায় ইসলামপন্থি রাজনীতি নিষিদ্ধ করবার যে দাবি তোলা হয় তাকে সে কারণে শুধু ইসলাম বা ধর্মের বিরোধিতা বলে গণ্য করা ভুল হবে। সেটা এই কপটতারও বিরোধিতা বটে’।

কী ভয়ংকর! কয়দিন আগে কমিউনিস্টদের বললেন- ধর্মভিত্তিক রাজনীতি নিষিদ্ধের দাবি তাদের উচিত হচ্ছে না, তার উপর ফ্যাসিস্ট সরকার ব্যবস্থার কাছে তো নয়ই! সেই তিনি এখানে কি বলছেন এসব?... ফ্যাসিস্ট ব্যবস্থা হলেও ক্ষতি নেই(রাষ্ট্র গণতান্ত্রিক হোক বা না হোক) ‘ইসলামপন্থি রাজনীতি নিষিদ্ধ করবার যে দাবি তোলা হয়’ তা সিদ্ধ! এবং শুধু সিদ্ধই নয়, বরং সেটা ‘কপটতার বিরোধিতা’ করার মতোই সিদ্ধ!!

০৪.

আরো বেশ কিছু নষ্ট কথা-বার্তা সে লেখায় আছে। সেটা ভিন্ন আলোচনার দাবি রাখে। মজার ব্যাপার হলো, প্রথম লিখাটি ‘তবু কমিউনিজমের কথাই বলতে হবে…’ তিনি খাইয়েছেন দৈনিক আমার দেশের মাধ্যমে! ঠিক সে সময়, যখন ইসলামপন্থিরা নয়া দিগন্তের চেয়েও বেশী ভালোবাসতো আমার দেশকে! সেই তুমুল জনপ্রিয় সময়! সেই মাহমুদুর রহমানের মাধ্যমে, যাকে ইসলামপন্থিরা অবচেতনে তাদের দীর্ঘদিনের প্রিয় নেতাদের চেয়েও আপন ভাবতে শুরু করেছিল, (কেউ কেউ এখনো করে)! এটা কারো বিরুদ্ধে আমাদের অভিযোগ নয়। আমি শুধু সিচুয়েশনটা যৎসামান্য সম্মুখে নিয়ে আসতে চাইছি, এটুকুই! আচ্ছা, তা না হয় গেলো। …গেলো কী? সেই একই লিখা, কাট-ছাট করে নাম বদলিয়ে এ বছর আবার খাইয়েছেন নয়া দিগন্তের পাঠকদেরও! তিনি বটে! আর ‘ইসলামপন্থি’ নয়া দিগন্ত!!

তারপর কি হলো, ঈজিপ্টে বিপর্জয়ের সময়! সবাই যখন যথার্থ খবর, মনের মতো খবর কিংবা বেশী খবরের প্রত্যাশায় নয়া দিগন্তের উপর হামলে পড়েছিল, ঠিক সেই সময় তিনি লিখলেন- ‘নির্বাচনবাদী ইসলামপন্থা এবং মিশরের রাজনীতি’। নতুন বোতলে পরিবেশন করলেন, সেই পুরোনো ভোদকা! আমার পড়া ফরহাদ মজহারের সমস্ত লিখার মধ্যে ওটা ছিল- সবচেয়ে বেশী অপুষ্ট এবং বিক্ষিপ্ত চিন্তায় বিধ্বস্ত! আর আদর্শিক দিক থেকে নগ্ন বুদ্ধিবৃত্তিক মাস্তানি ছাড়া কিছুই নয়!

কিন্তু নয়া দিগন্ত মনে হলো সোৎসাহে, পড়িমরি হয়ে, অত্যন্ত যত্ন সহকারে 'আমার দেশে'র মতো পরপর দু'দিনে তা ছাপিয়ে দিলেন!!...

০৫.

যা বলছিলাম। নয়া দিগন্ত ছাপিয়ে দিল গুরুতর মতাদর্শিক বিতর্কে ভরা ফরহাদ মজহারের লিখাটি! অন্য দশটি কলামের মতোই! তারা ভাবলো, আমরা দিগন্ত ইসলামপন্থিরা তো ফরহাদ মজহারের সাথেই আছি! এদিকে সংগঠন জামায়াতে ইসলামী ভাবলো- আরে এখানে তো আর আমাদের নাম ধরে কিছু বলেনি! আমরা কেনো শুধু শুধু বাধাতে যাবো। ব্রাদারহুড সরকারের সাথে হাসিনা সরকারের সংবিধান কাটা-ছেড়াকে একাকার করে তিনি যে লেজে-গুবরে বক্তব্য দিয়েছেন, সেখানে দুচামচ সরকার বিরোধিতার আমেজ পেয়ে সম্ভবত আর কিছু ভাবা নিষ্প্রয়োজন মনে করেছিল তারা। আবার হতে পারে মনে বল পায়নি! এ যে ফরহাদ মজহার! তাই হয়তো এদিকে না দেখার ভান করে জামায়াতের সাংগাঠনিক বুদ্ধিজীবীরা টুপি ধৌতকরণে ব্যস্ত হয়ে পড়েছিল!

নইলে তো অন্তত এটুকু তো মানুষের সম্মুখে মিডিয়ায়(নয়া দিগন্তে/অন্যদিগন্তে) আসতে পারতো যে, এদেশের ইসলামপন্থিদের নির্বাচন-মানা রাজনীতি কোনো ‘কপটতা’ নয়। এ নিয়ে কথা থাকতে পারে, কিন্তু তা ভন্ডামি নয়। তারা এদেশের মানুষের উপর জোর করে কোনো মতাদর্শ চাপিয়ে দিতে চায় না। চায় বরং এদেশের তাওহীদী গণমানুষের ইসলামী নৈতিকতার পুনরুজ্জীবনের ভেতর দিয়ে জনমত গঠনের মাধ্যমে অত্যন্ত স্বাভাবিক এবং ম্যাচিউরড কায়দায় সরকার গঠন করতে। আর যেহেতু মানুষের কল্যাণের জন্যই এ উম্মতের উত্থান(০৩:১১০), সুতরাং, সে সরকার/রাষ্ট্র কোনো বিশেষ ধর্ম-বর্ণ-লিঙ্গ বা গোত্রের প্রতি পক্ষপাতদুষ্ট হতে পারেনা। হলে সেখান থেকে মুক্তির জন্য নতুন সংগ্রাম তাৎক্ষণিকভাবে শুরু করাই ঈমানদারের কর্তব্য হয়ে দাঁড়াবে। মানবিক সরকার/রাষ্ট্রের বিপর্জয়ের মুহূর্ত থেকেই যে সংগ্রাম ইমাম হাসান শুরু করেছিলেন। রাষ্ট্র/সরকার সবই মুসলমানদের থাকার পরও মানবিক রাষ্ট্রের স্বপ্নে বিভোর ছিলেন ইমাম হোসাইন! জীবন দিয়ে হলেও রুখে দিয়েছিলেন সেই মানবিক সংগঠনের চূড়ান্ত বিপর্জয়। সমুন্নত করে তুলে ধরেছিলেন সেই অনন্য আলোক বর্তিকা…

আরো অনেক কথাই আসতে পারতো। আসতে পারতো ফরহাদ মজহারের সাথে পারষ্পরিক কৌশলগত ঐক্যে কোনো আঁছড় না কেটেই…। আসেনি। কারণ একটাই, বুদ্ধিবৃত্তিক সেই দেউলিয়াত্ব! আর কিছুই নয়…

০৬.

সংগঠন জামায়াতে ইসলামীর কিংবা নয়া দিগন্তের এই বুদ্ধিবৃত্তিক দেউলিয়াপনার কথা বললে কেউ কেউ মনে কষ্ট পেতে পারেন। কিন্তু কি করা, কোন কথায় কার কোথায় কোন বুজুর্গের মানহানি হচ্ছে, মনে কষ্ট যাচ্ছে কোন নেতাজীর, সাইয়েদ আবুল আ’লা লিখতে বসলে এসব অন্তত একশ মাইল দূরে রাখতেন! তাঁকে পড়তে পড়তে যারা পড়তে শিখেছে, তাঁকে বুঝতে বুঝতে যারা বুঝতে শিখেছে, তাদের দোষ দিয়ে আর কি বলবেন! তবু বলি যদি কিছু ‘বেয়াদবি’ ভেবে নেন, দয়া করে নিজ দায়িত্বে ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন!

তো বলতে পারেন, নয়া দিগন্ত হয়তো ঠিক ধরতে পারেনি ফরহাদ মজহারকে! পারলেও হতে পারে তার সাথে বুদ্ধিবৃত্তিক গ্যাটাকলে পড়ে পেরে ওঠেনি। কৌশলগত কারণে কাছে টানতে গিয়ে হয়তো কৌশলে পড়ে গেছে!

আবার কেউ কেউ কৌঁতুক করতে পারেন- নয়া দিগন্ত সচেতনভাবেই ফরহাদ মজহারের স্ববিরোধিতা উজ্জ্বল করে তুলতেই সেই লিখা ছাপিয়েছে!

তর্কে না গিয়ে যদি তা ধরেও নেই, তাহলেও সাপ বেরিয়ে আসবে! ফরহাদ মজহার আসলে এখানে স্ববিরোধী নন। তার দুটো কলাম এক ও অভিন্ন উদ্দেশ্যে লিখা, এবং এ সমস্ত চিন্তা গাঁথা সেই একই সূত্রে!

দৈনিক আমার দেশের লিখাটা ছিলো কমিউনিস্টদের প্রতি। তাদেরকে তেজোদীপ্ত করে তুলতে ‘মায়ের গলায়’ বলেছেন- ধর্ম ভিত্তিক রাজনীতি নিষিদ্ধ নয়, তারে তোমরা রাজনৈতিকভাবে মোকাবিলা কর। মোকাবিলা করো বুদ্ধিবৃত্তিকভাবে। এটা ধর্মভিত্তিক রাজনীতির জন্য তার বিশেষ কোনো মমতা বা মহব্বত নয়, করুণাও নয়। এ হলো কমিউনিজমের জিয়ন-কাঠির মতো। সত্যিই যদি তারা ইসলামপন্থিদের রাজনৈতিক ও বুদ্ধিবৃত্তিকভাবে মোকাবিলা করত সমর্থ হয়, তাদের আর পায় কে?... সে যোগ্যতা অবশ্য বহু আগেই তারা হারিয়ে ফেলেছে। তবু বলা যায়, এখনো এদেশের রাজনীতিতে তাদের যেটুকু শক্তি তা ইসলামপন্থিদের বুদ্ধিবৃত্তির ময়দানে দাবিয়ে রাখারই ফসল।

তো সেই ফরহাদ মজহার এবার নয়া দিগন্তে এসে কি করছেন?... ইসলামপন্থিদের ধামকি দিচ্ছেন, তাদের উপর ইন্টেলেকচুয়াল প্রেসার তৈরী করছেন- তোমরা কী সব বল, হ্যাঁ! তোমরা তো গণতন্ত্র বিশ্বাসই করো না, তোমরা চাও শরীয়া রাষ্ট্র! তোমরা ধোঁকাবাজ! গণতন্ত্রের কথা বলে গণতন্ত্রকে হত্যা করার চেষ্টা চালাচ্ছো… ঠিক না?? মানুষ যে তোমাদের রাজনীতি নিষিদ্ধ করতে কয়, এতো আসলে এমনি এমনি কয়না, সেটারে তোমরা ধর্মের বিরোধিতা করে চালাই দাও। এটা কিন্তু তোমাদের এই চালবাজিরও বিরোধিতা। বিরোধিতা তোমাদের কপটতারও!

নয়া দিগন্তের ‘ইসলামপন্থি’রা তো পুরোই হা। তাই তো! এই ‘তাই তো’ বলার পর তাদের মুখে আর কথা সরে না। এতোদিন ধরে উঠাবসা করে ফরহাদ ভাইয়ের যে জ্ঞান, সর্ববিষয়ে দার্শনিকতা ফলানোর মতো পারদর্শিতা তারা দেখে এসেছেন, কিছু না বলতে পারাটা অস্বাভাবিক নয়! সেই সাথে এটাও নিশ্চিতভাবে বলা যায়, সাইয়েদ আবুল আ’লা হতে পাওয়া সঞ্চয়টুকুতেও তাদের দখলের, আত্মবিশ্বাসের ঘাটতি ছিলো! নইলে এতোটা রুদ্ধবাক হয়ে বেকায়দায় পড়ে থাকতো না। টু শব্দটি হলেও করতো...

০৭.

যাই হোক, ‘তবু ইসলামের কথাই বলতে হবে…(কমিউনিজম প্রশ্ন)’ লিখার পর Prof. Mohammad Mozammel Hoque স্যারের নোট এরপরও কিভাবে আধুনিক শিক্ষিত ইসলামপন্থীদের একটা উল্লেখযোগ্য অংশ মজহারবাদী হয়? ভাবতে অবাক লাগে ...! এর মাধ্যমে এমন কিছু ভাইয়ের সাথে পরিচয় ঘটলো যারা ফরহাদ মজহারের এসব ব্যাপার নিয়ে নানা দিক থেকে ওয়াকিবহাল! তো সেখানকার একটি লিঙ্কে একজন ভাই Adnan Yusuf Hasan; হতে পারে রাগে অভিমানে শংকায় তার এক পোস্টের শেষের দিকে লিখলেন- …‘তো এই গ্র্যান্ড প্রজেক্টের(কমিউনিজম প্রতিষ্ঠার) প্রথম ধাপ সফল করতে ইসলামিস্টদের ব্যবহার করতে চাইছেন তিনি(ফ.ম.)। আমাদের হীনমণ্য ও বুদ্ধিবৃত্তিকভাবে দেওলিয়া বেকুব ইসলামিস্টরা দলে দলে ফরহাদ মজহারের পতাকা তলে ঝাঁপিয়ে পড়তে প্রস্তুতি নিচ্ছেন, আফসোস’।

সেখানে দেখলাম- শিবিরের প্রাক্তন একজন প্রভাবশালী কেন্দ্রীয় সভাপতি লুকোনো উষ্মার সাথে মন্তব্য করেছেন- ‘ফরহাদ মজহার লন্ডনে যে বক্তব্য রেখেছেন তা নিয়ে বিভ্রান্তি ও বিতর্কের অবকাশ আছে, আছে অনেকগুলো স্ববিরোধী প্রসঙ্গ-ও। তিনি আগাগোড়া মার্কসবাদী এটা তার নিজস্ব স্বীকারোক্তি। ইসলাম পন্থীদের সাথে মিশে বা তাদের মাধ্যমে তার গ্রান্ড প্রজেক্ট বাস্তবায়নের ঘোষনা তিনি নিজেই দিয়েছেন। এটা অন্য কারও প্রচেষ্টায় উদঘাটিত কোন বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ তথ্য নয়’।

তার প্রসঙ্গ টানছি- তিনি সংস্কৃতি ও বুদ্ধিবৃত্তিক লাইনে কাজ করেন, এবং যতদূর জানি দিগন্ত মিডিয়া কর্পোরেশনের সাথে তার গুরুত্বপূর্ণ যোগ আছে। তো তিনি যদি এতো কিছু এতোটা পষ্ট করে জানেনই, তিনি কি তার জানাটা ব্যক্ত করেছেন- গণমাধ্যম কিংবা সামাজিক যোগাযোগের কোনো মাধ্যমে! তিনি যদি এর প্রয়োজন বোধ না করেন- তবে কি তিনি তার চারপাশ সম্পর্কে এতোই বেখবর! তিনি কি জানেন না যে- তার হাজারও সাথী, বহু প্রাণের ইসলামপন্থি ফরহাদ মজহারকে কলিজার ভেতর গেঁথে মিছিল করতে যায়, নামাজের অজু করে, একটি নতুন স্বদেশ বিনির্মাণের স্বপ্নে বিভোর হয়ে ঘুমোতে পারে না!…

সো, যদিও তার সেই কমেন্টে কেউ রিপ্লাই দেয়নি, যদিও অর্থহীন ভক্তিতে সেই কমেন্টে সতেরটি লাইকও পড়েছে, তবু ফরহাদ মজহার সম্পর্কে তার এই ফকফকা জানাজানির চেয়ে গোবেচারা আদনান ইউসুফ হাসানের আশংকার মূল্য অনেক অনেক বেশী!...

সেই সাবেক ছাত্রনেতা যতই বলুক, ‘ইসলাম পন্থীরা যদি এতই বে-অকুফ হয় বা তাদের এত বে-অকুফ ভাবা হয় যে তারা একজন কমিউনিস্টের কাটা-ছেড়ায় (!) বিভ্রান্ত হয়ে ইদুরের মত নদীতে ঝাপিয়ে পড়বেন তাহলে শংকা প্রকাশকারী কে অনেক বেশী অসহিষ্ণু মনে করার কারন ঘটতে পারে’। -ঘটুক; হ্যাঁ, ঘটুক, তাতে কারো বিশেষ সমস্যা হওয়ার কথা নয়।

সমস্যা তাদের নিয়ে, যারা এতোই ‘ধীমান’ যে- চোখের সম্মুখে ইসলামপন্থিদের একশ বছরের তিলে তিলে গড়া চিন্তার জগতকে কেউ ‘কপটতা’ বলে ছুড়ে ফেলে দিতে দেখলেও- করতে পারেনা নূন্যতম আর্তনাদটুকু পর্যন্ত!

‘ফরহাদ মজহারের বক্তব্য নিয়ে বিশ্লেষণাত্মক আলোচনা-সমলোচনা হতে পারে’- একথা জনসম্মুখে মুখ দিয়ে বের করতে যার ‘অবজ্ঞা’ ভূমিকা রেখেছে, তাঁকে স্যালূট!

মোটেই না, ‘তার(ফরহাদ মজহার) সাথে কাউকে দেখলেই হতাশা প্রকাশ করা কিংবা হীনমন্য বেকুব ইসলামিস্ট বলে অবজ্ঞা করা’র প্রশ্নই উঠেনা। হতাশা তাদের জন্য যারা ফরহাদ মজহারের সাথে উঠা-বসা করতে অভ্যস্ত, তার শেখানো বুলি আওড়াতেও হয়তো কুন্ঠাহীন- কিন্তু হাসিচ্ছলেও এটুকু বলতে পারেন না- ফরহাদ ভাই, আপনার কল্পিত গণতন্ত্রের দিক থেকে তাদেরকে কপট বানিয়ে ছাড়লেন, কিন্তু গণতন্ত্র নিয়ে তো তাদের দীর্ঘদিনের নিজস্ব বোঝা-পড়া আছে, আপনাকে তো সেটা বুঝতে হবে। আপনার গণতন্ত্রের বিবেচনায় অ-কপট হওয়ার জন্য তো তাদের জন্ম হয়নি!...

০৮.

আফসোস নয়া দিগন্তের জন্য, একজন কমিউনিস্টের বিষোদগার মালাইয়ের ফ্লেভারে এদেশের ইসলামপন্থিদের গিলিয়েছেন ঠিকই, কিন্তু সেই ইসলামিস্টদের অস্তিত্বের নিজস্ব যুক্তি পর্যন্ত প্রকাশ করার প্রয়োজন বোধ করেনি!!

ফরহাদ মজহারের সাথে আছেন, থাকুন, ভালো। কিন্তু এতো দেউলিয়া হয়ে নয়। লেনদেনের এতো ঘাটতি নিয়ে নয়। তাতে কল্যাণের সামান্য সম্ভাবনা সমূহ-অকল্যাণে পর্যবসিত হওয়া বিচিত্র নয়। সেই সাথে মনে রাখা উচিত, এমন করুণ দেউলিয়াপনা নিয়ে অহেতুক ঠাট দেখানো সর্বনাশের গুরুত্বপূর্ণ লক্ষণসমূহেরই একটি!

এবং তা, কোনো সাবেক ছাত্রনেতা তো কোন ছাই, সাথে আরো অনেক ছাত্রনেতা, জননেতা মিলেও দফারফা করতে পারে না…

বিষয়: রাজনীতি

১০৯০ বার পঠিত, ৫ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

378101
৩০ সেপ্টেম্বর ২০১৬ রাত ১২:০৬
রিদওয়ান কবির সবুজ লিখেছেন : আপনার এই লিখাই আমার অনেকটা দেউলিয়া পনা বলে মনে হচ্ছে।একজন কলামিষ্ট এর মতামত তার নিজস্ব। সেটা প্রকাশ করা পত্রিকার দোষ নয়।
৩০ সেপ্টেম্বর ২০১৬ সকাল ১০:৩১
313386
শাহাদাত মাহমুদ সিদ্দিকী লিখেছেন : অনেকটা কেন, ভাই… ‘কোনো লিখা প্রকাশ করার দায় যদি পত্রিকার না থাকে’ এবং মিডিয়া রাজনীতি সম্পর্কে আপনার ধারণা যদি এ হয়; তাহলে তো আমার লিখার পুরোটাই আপনার দেউলিয়াপনা মনে হওয়া উচিত, নয় কি…
ধন্যবাদ, নিজের অক্ষম ক্ষোভটুকু প্রকাশ করার জন্য…
378129
৩০ সেপ্টেম্বর ২০১৬ বিকাল ০৫:৪২
গাজী সালাউদ্দিন লিখেছেন : ভাই, আপনার কথাগুলো বাস্তবতা বিবর্জিত নয়। কিন্তু পত্রিকা তো কারও লেখা ছাপতেই পারে , তার মানে তো এই নয়, নয়াদিগন্ত বিষয়গুলো সম্পর্কে একেবারেই অজ্ঞ অথবা দেওলিয়াপনার পরিচয় দিচ্ছে। এমন অসংখ্য কলামিস্ট আছেন, যাদের লেখা কোনো পত্রিকা ছাপেনা বিশেষ বিশেষ
378130
৩০ সেপ্টেম্বর ২০১৬ বিকাল ০৫:৪৩
গাজী সালাউদ্দিন লিখেছেন : পরিচয়ের বলে, তাদের জন্য নয়াদিগন্ত একটা ভরসা এই যা।
৩০ সেপ্টেম্বর ২০১৬ রাত ০৮:১৭
313407
শাহাদাত মাহমুদ সিদ্দিকী লিখেছেন : সালাম ভাই, প্রথমেই বলে রাখি, নয়া দিগন্তের প্রতি আমার ভালো লাগা ভালোবাসা ইসলামপন্থি আর দু-দশজন মানুষের চেয়ে মোটেই কম নয়। এবং ঠিকই বলেছেন- ‘পত্রিকা তো কারও লেখা ছাপতেই পারে’। কিন্তু আপনাকে তো বুঝতে হবে, এদেশে অজস্র ইসলামপ্রিয় সরল মানুষ আছেন, যারা মনে করেন নয়া দিগন্ত যা লিখে তাই সত্য! সরলপ্রাণ সেকুলার’রা যেমন প্রথম আলোকে মনে করে…
তাহলে আপনাকে অবশ্যই এদের ব্যাপারে সচেতন থাকতে হবে। নইলে অন্য কাউকে এগিয়ে আসতে হবে একথা বলার জন্য যে, নয়া দিগন্ত মানেই নির্বিচারে গ্রহণ করা নয়!

এদেশে ইসলাম নিয়ে কাজ করা এমনিতেই বিপজ্জনক। ব্রাদারহুড, আন নাহদার মতো এদেশের মধ্যপন্থি ইসলামপন্থিরা চাচ্ছেন গণতান্ত্রিক পরিবেশ থাকুক, তারা যেনো নির্বিঘ্নে দাওয়াতি কাজটা অন্তত করতে পারে। তাছাড়া গণতান্ত্রিক শাসনপদ্ধতিটা ইসলামের অনেকটা কাছাকাছি…
যাই হোক, এখন কেউ যদি বলেন-

‘নির্বাচনবাদী ইসলামপন্থিদের বিরুদ্ধে গুরুতর অভিযোগ হচ্ছে, এই ধারা আসলে গণতন্ত্রেই বিশ্বাস করে না। কিন্তু গণতন্ত্রের সুযোগ নিয়ে গণতন্ত্র নস্যাৎ করবার চেষ্টা চালায়। রাষ্ট্র গণতান্ত্রিক হোক বা না হোক নির্বাচনের মাধ্যমে সরকার গঠন করবার ব্যবস্থায় ইসলামপন্থি রাজনীতি নিষিদ্ধ করবার যে দাবি তোলা হয় তাকে সে কারণে শুধু ইসলাম বা ধর্মের বিরোধিতা বলে গণ্য করা ভুল হবে। সেটা এই কপটতারও বিরোধিতা বটে’।

আরো অনেক কথা আছে। সেটা নিয়ে লিখবো ইনশাআল্লাহ! এখন আপনি বলুন- কি বলবেন- ইসলামপন্থিরা গণতন্ত্র বলে ধোকাবাজির জন্য? তারা কি স্বৈরাচারী রাষ্ট্রব্যবস্থা কায়েমের আন্দোলন করছেন??... এটা তো আপনাকে বলতে হবে… কিন্তু তিনবছর ধরে কেউ বলেনি যে, এটা আসলে উনি যা বলছেন- সেরকম কপটতা কিছু নয়…
অর্থাৎ, লিখা যা খুশি ছাপিয়েছেন, ভালো; কিন্তু অভিযুক্ত পক্ষের কথাও তো আপনাকে ছাপতে হবে, সেটা কে নিষেধ করলো আপনাকে!??...

লক্ষ করুন শেষের লাইনগুলো- ‘আফসোস নয়া দিগন্তের জন্য, একজন কমিউনিস্টের বিষোদগার মালাইয়ের ফ্লেভারে এদেশের ইসলামপন্থিদের গিলিয়েছেন ঠিকই, কিন্তু সেই ইসলামিস্টদের অস্তিত্বের নিজস্ব যুক্তি পর্যন্ত প্রকাশ করার প্রয়োজন বোধ করেনি!!...’
‘ফরহাদ মজহারের সাথে আছেন, থাকুন, ভালো। কিন্তু এতো দেউলিয়া হয়ে নয়। লেনদেনের এতো ঘাটতি নিয়ে নয়।‘
আবারও ধন্যবাদ আপনাকে…

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File