তবু ইসলামের কথাই বলতে হবে… খসড়া-০৫(শেষাংশ) (মাওলানা ভাসানী প্রসঙ্গ)

লিখেছেন লিখেছেন শাহাদাত মাহমুদ সিদ্দিকী ১৯ সেপ্টেম্বর, ২০১৬, ০৭:৩০:১৬ সকাল



এখানে আমরা মাওলানা ভাসানীর প্রসঙ্গটাও তুলতে পারি। ফরহাদ মজহার নিজেকে মাওলানার অত্যন্ত উঁচু মানের অনুরক্ত হিসেবেই হাজির করেন। অনুরাগ আছেও বটে। সে থেকে যুগের আর্থ-রাজনৈতিক নিপীড়নের প্রতিপক্ষে মাওলানার আন্তরিক ও আপোসহীন সংগ্রাম এবং তাঁর ‘খিলাফাতে রব্বানী’ নিয়ে ফরহাদ ভাই অসাধারণ কিছু আর্টিক্যালও লিখেছেন। কিন্তু ইসলামের মতো মাওলানাকে দেখার ক্ষেত্রেও তিনি একই জুলুমে আসক্ত!

সর্বশেষ ম্যানচেস্টারে কি বললেন-

‘এখনও পর্যন্ত আপনাদের এই লড়াইয়ের মধ্যে আমি, যারা মজলুমের পক্ষে রাজনীতি করে তাদেরকে এখনও দেখছি না। কারণ তাদেরকে আপনারা নাস্তিক বলে গালিগালাজ করেন।… কিন্তু মাওলানা ভাসানী তো মজলুমের পক্ষে লড়াই করেছিলেন। উনিও তো ঐ পন্থি ছিলেন।’

ঐ পন্থি ছিলেন মানে?...

সে প্রসঙ্গে যাওয়ার আগে আমাদের আরো একবার ভালো করে বুঝে নিতে হবে যে, ধর্ম-বর্ণ-লিঙ্গ নির্বিশেষে ইসলাম যেমন মজলুমের পক্ষে দাঁড়ায়, একই ভাবে জালিমের প্রতিপক্ষেও ইসলাম সংশ্লিষ্ট সবাইকে সম্ভব সর্বোচ্চ প্রচেষ্টায় একত্রিত এবং ঐক্যবদ্ধ করতে চায়। সেখানেও ধর্ম-বর্ণ আস্তিক-নাস্তিক ভেদাভেদ করেনা। নিপীড়ক সাম্রাজ্যবাদী পারস্যের সাথে যুদ্ধে খলিফা উমর যেমন- আরব জাতীয়তাবাদী খ্রিস্টানদের অন্তর্ভূক্ত করেছিলেন। তারচেয়ে বড় উদাহরণ হলো- মদীনার রাষ্ট্র! এতো একদৃষ্টিতে কুরাইশদের জুলুমের প্রতিপক্ষে মদীনার ঐক্য বলা চলে। দল-মত-ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে জালিমের প্রতিপক্ষে মদীনার/ইনসাফের সুরক্ষা!

কিন্তু ফরহাদ ভাই কি করলেন! ঐক্যের প্রশ্নটি তুললেন ভাসানীকে টেনে এনে। ‘মাওলানা ভাসানী তো মজলুমের পক্ষে লড়াই করেছিলেন’, ঠিক। কিন্তু কমিউনিজমের পরিচয় নাস্তিকতা শব্দে প্রকাশ করে- ‘উনিও তো ঐ পন্থি ছিলেন’ বলা, প্রকারান্তরে ভাসানীকেও নাস্তিক বানিয়ে ফেলা! ভাবখানা এরকম- যারা মজলুমের পক্ষে রাজনীতি করেন= তাদেরকে আপনারা নাস্তিক বলে গালিগালাজ করেন। ভাসানীও মজলুমের পক্ষে রাজনীতি করতেন= তিনিও নাস্তিক ছিলেন(ঐ পন্থি ছিলেন)। যা’ই হোক, এটা হয়তো অবচেতনে হয়ে গেছে…

কিন্তু ভাসানী আসলে কী ছিলেন?...

ইসলামের দিক থেকে আমাদের প্রশ্ন করতে হবে- মাওলানা ভাসানীর সাথে কমিউনিজমের সম্পর্ক কি ছিলো?... একী ‘মনে নেয়া’ দৃষ্টিভঙ্গী ছিল, নাকি ‘মেনে নেয়া’?... বাস্তবতার কারণে আমরা অনেক কিছুই মেনে নেই, নিতে হয়; তার অনুমোদনও ইসলামে আছে, (সে অনুমোদন কার জন্য, কখন, কতটুকু সে ফয়সালা যুগের ফকীহ দেবেন)। কিন্তু অনুমোদন নেই ‘মনে নেয়া’র।

আবার যারা সত্যিকারের ঈমানদার নয়, তাদের জন্য ঘটনা উলটো! ইসলাম ‘মেনে নেয়া’ও তাদের জন্য ভ্যালুলেস হয়ে যায়। যেমন কুরআন বলছে-

এ বেদুইনরা বলে, ‘আমরা ঈমান এনেছি’(মনে নিয়েছি), তাদের বলে দাও তোমরা ঈমান আন নাই৷ বরং বল, আমরা অনুগত হয়েছি(মেনে নিয়েছি)(৪৯:১৪)৷

এই ‘মেনে নেয়া’ নানা কারণে হতে পারে। অর্থনৈতিক কারণে হতে পারে, রাজনৈতিক, সামাজিক, বুদ্ধিবৃত্তিক কিংবা অন্যান্য কারণেও হতে পারে।

তাহলে দেখুন, ঈমানদারের জন্য ইসলামের বাইরের কিছুও ক্ষেত্রবিশেষে অনুমোদিত। কিন্তু মেকি-ঈমানদারের জন্য ইসলাম মেনে নেয়াও সুরক্ষা নয়…

এটুকু মাথায় রেখে আসুন আমরা পূর্বোল্লেখিত সূরা বাকারার সেই আয়াতে(০২:১৩) আরেকটু দৃষ্টি দেই…

০২.

আর যখন তাদের বলা হয়েছে , অন্য লোকেরা যেভাবে ঈমান এনেছে তোমরাও সেভাবে ঈমান আনো, তখন তারা এ জবাবই দিয়েছে- আমরা কি ঈমান আনবো নির্বোধদের মতো? -সাবধান! আসলে এরাই নির্বোধ, কিন্তু এরা জানে না(০২:১৩)।

আমরা কি পাচ্ছি এখানে?... ইসলামের প্রতি দু’টো ক্লিয়ার এপ্রোচ...।

একটা হলো সর্বান্তকরণে ইসলাম গ্রহণ।

আল্লাহ যাদেরকে দৃষ্টান্ত হিসেবে পেশ করছেন, বলছেন ‘তাদের’ মতো ঈমান আনতে। এটাকে বলা যায় সেই শ্রেণির দৃষ্টিভঙ্গী, যাদের অন্তকরণ ঈমানে পরিপূর্ণ এবং চিন্তা চেতনা স্বপ্নে ও বাস্তবে যতদূর সম্ভব তারা ইসলামের ভেতরেই আছেন।

দ্বিতীয় এপ্রোচ হলো,

কপটচারী, ডুব-সাতারি এপ্রোচ।

এদের প্রতি কুরআনের আহ্বান হলো- তোমরা এসব ‘ধরি মাছ না ছুঁই পানি’র প্যাঁচাল বাদ দিয়ে ‘অন্যরা যেভাবে’ বিশুদ্ধচিত্তে নিষ্কলুষ সরল অন্তকরণে ঈমান এনেছে, তোমরাও তা-ই করো। আর হ্যাঁ, এই আহ্বান এবং এই দৃষ্টান্ত কিন্তু প্রকাশ্য বেঈমানদের জন্য নয়, বরং যারা ঈমান এনেছেন বলে বিশেষ বিশেষ স্থানে বলে বেড়ান, তাদের জন্যই। এবং পরের আয়াতেই সেটি স্পষ্ট...

'যখন এরা মু’মিনদের সাথে মিলিত হয়, বলে- 'আমরা তো ঈমান এনেছি'…(০২:১৪) ।

এরা বাহ্যত ইসলামের ভেতরে আছেন দেখান, কিন্তু তাদের ভেতরে ইসলাম নেই, ঈমান নেই। তাহলে উনারা যে ইসলামের কথা বলেন, প্রসঙ্গ আনেন, প্রশংসা করেন?... হ্যাঁ, এটা একটা প্রশ্ন বটে। কিন্তু উত্তর সহজ। এটা বোঝার জন্য আমাদের একটি শব্দ মনে রাখাই আপাতত যথেষ্ট! প্রতিচ্ছবি।

০৩.

এই যে আমরা বললাম- তাদের ভেতরে ইসলাম নেই, ঈমান নেই; কী আছে?... কিছু না কিছু তো আছে। যা’ই থাকুক... ‘সেই ভেতরের’ প্রতিচ্ছবি যখন অন্য কোথাও তারা দেখেন তখন স্বভাবতই চমকে ওঠেন, হয়তো আনন্দিতও হন। প্রয়োজন মনে করলে আবার প্রশংসাও করেন! মজার ব্যাপার হলো, প্রায়ইশ আমরা বুঝি না যে- সে প্রশংসা মূলত তাদের ‘ভেতরকার’ ছবির, যা’র প্রশংসা করছে বলে আপাত দৃষ্টিতে মনে হয়, তা’র নয়। ইসলামের ক্ষত্রে আমরা একে ‘প্রতিচ্ছবি ইসলাম’ বলতে পারি। ‘এ ইসলামের’ প্রশংসা করমচাঁদ গান্ধীও করেছেন, বিবেকানন্দও করেছেন, করেছেন ইন্দিরা গান্ধীও!...

সুতরাং, ফরহাদ মজহারের যে ‘ইসলাম-প্রশংসা’ যে ‘ইসলাম-গ্রহণ’ আমরা দেখি, তা যদি অখন্ড ইসলামের প্রশংসা না হয়, যদি তা অখন্ড ইসলাম-গ্রহণ না হয়, তাহলে কী সেটা?... তাও ‘প্রতিচ্ছবি ইসলামে’র প্রশংসা নয় কি?... অর্থাৎ, কমিউনিজমের যতটুকু প্রতিচ্ছবি তিনি ইসলামে দেখেছেন তার প্রশংসা ওটুকুই। অতোটুকুই তার ইসলাম গ্রহণ। এবং আলোচনাও সেটুকুই… ওটা আর তাওহীদ রিসালাত আখিরাতের টোটাল ইসলাম পর্যন্ত যায় না, যেতে পারেনা, ভেক ধরে কখনও গেলেও তাকে নিষ্প্রয়োজন করে তুলতে চায়!... এক কথায়, তাদের দৌঁড় ‘প্রতিচ্ছবি ইসলাম’ পর্যন্ত…

ওটাও খারাপ কিছু না। ওগুলো বড় বড় মানুষদের পারষ্পরিক মতাদর্শিক বুঝ ও ভাব বিনিময়ের মধুর ব্যাপার! কমিউনিজমের যৌবনে তার প্রশংসাই-বা করেনি কে?... নজরুল করেছেন, ফররুখ করেছেন... প্রভাবিতও হয়েছেন আরো অনেক বড় বড় আলেম-উলামা-আল্লামা-আয়াতুল্লাহ...! কিন্তু কেউই তারা অখন্ড(as a whole) কমিউনিজমে প্রভাবিত হননি। প্রশংসাও করেনি সেভাবে। তারাও সেই ‘প্রতিচ্ছবি কমিনিজমে’র প্রশংসা করেছেন। অর্থাৎ, ইসলামের যতটুকু প্রতিচ্ছবি তারা নিজ নিজ জায়গা থেকে কমিউনিজমে দেখেছেন... এবং এটা তাঁদের জন্য খুবই স্বাভাবিক ছিলো- কারণ মানুষের প্রতি নিরন্তর ভালোবাসা, জুলুমের প্রতিপক্ষে অবস্থান, সাম্য-সৌহার্দ ভ্রাতৃত্ব ইত্যাদিসহ বৈষম্য-নিরসনের নানা উপাদান ইসলামের পরতে পরতে, পৃষ্ঠায় পৃষ্ঠায়...

মাওলানা ভাসানীর অবস্থানও ঠিক এ জায়গায় ছিলো। তিনি বাস্তবতার প্রেক্ষিতে ইসলাম অনুমোদিত ‘মেনে নেয়া’ এপ্রোচে কমিউনিজমকে গ্রহণ করেছিলেন। কিন্তু সর্বান্তকরণে ছিলেন ঈমানদার! অনেকের মন খুতখুত করতে পারে, এ ক্যামোন ‘মেনে নেয়া’?... এ ক্যামোন ‘ঈমান’?... এটা উপলব্ধি করতে হলে আমাদেরকে সেই সময়ের দিকে গভীর দৃষ্টিপাত করতে হবে… অন্তত এটুকু চিন্তা করুন- কিভাবে অত্যন্ত সুবিদিত ধর্মীয় ঐতিহ্য-সমৃদ্ধ মীর পরিবারের সন্তান আল মাহমুদ ভেসে গিয়েছেলেন?... ফেনীর মতো ধর্মপ্রাণ জনপদের মাওলানা হাবীবুর রহমানের সন্তান জহির রায়হান, শহীদুল্লাহ কায়সারের কি অবস্থা হয়েছে?... কুরআন না জানা বিদ্বানকে মূর্খপন্ডিত বলতে পারা মহাপুরুষ ড.মুহাম্মদ শহীদুল্লাহর সন্তানদের দিকেই তাকান…

সে ভয়ংকর সময়ে নিপীড়িত মজলুম বাংলার কৃষক-শ্রমিকের সপক্ষে দাঁড়ানোর প্রয়োজনে তিনি কমিউনিস্টদের সাথে ছিলেন বটে। ছিলেন ঈমানের গৌরব নিয়ে। কমিউনিজম তার সম্মুখে লাল কাপড় নিয়ে আসলে তিনি সেটা দিয়ে টুপি সেলাই করে নিতেন। মাথায় পরার পর সেই ‘লাল টুপি’ আর কমিউনিজমের লাল কাপড় থাকতো না, সেটি শহীদ তীতুমীরের খুনের প্রতীক হয়ে যেতো। কমিউনিজমের হাতুড়িকে তিনি সিস্টেম করে দীর্ঘ করে নিতেন, এবং তার নাম দিতেন ‘সুন্নতি লাঠি’। অন্য কমিউনিস্টরা যখন বিপ্লবের শ্লোগান দিতো, তিনি একই সাথে আয়ত্ত করে নিতেন জালিমের সম্মুখে ‘খামোশ’ বলার হিম্মত। ওটা ছিলো তাঁর ‘আফজালুজ জিহাদ’। এবং মিছিল থেকে ফিরে আর সব বাম-এক্টিভিস্টরা যখন নাক ডেকে ঘুমাতো, অসহায়ের আরোগ্যে তখনও তাঁকে দিতে হতো পানি-পড়া, তখনও আপ্লুত হতে হতো মুসল্লিদের কান্নায়...। তাঁর চেয়ে আর কে বেশী জানতো- এসব মজলুম মুসল্লির যে আর কোথাও যাওয়ার জায়গা নেই!...

(ব্যক্তিগতভাবে আমি মনে করি- সেই দুঃসময়ে ঈমানের ঐশ্বর্য নিয়ে কমিউনিজমে মাওলানার অবস্থান, আর কিছু নয়, শুধু অবস্থানই আল্লাহর অজস্র গোলামকে ঈমান-হারা হওয়া থেকে রক্ষা করেছে। বহু বান্দাকে সাহায্য করেছে ঈমানের দিকে ফিরে আসতে। অসংখ্য নাস্তিক-কমিউনিস্টকে বাধ্য করেছে ইসলামকে ধর্মের ডাস্টবিনে ফেলার আগে নিজের ভেতরের ডাস্টবিনটা দেখে নিতে। এবং বিশ্বাসগত আত্মরক্ষার দিক থেকে এটি আমার কাছে রাম মোহনের ব্রহ্মধর্ম প্রতিষ্ঠার চেয়েও তাৎপর্যপূর্ণ মনে হয়।)

এতো কথা বললাম- কারণ ইসলাম নিয়ে ফরহাদ মজহারের অবস্থানের অসংগতিই শুধু আমাদের উদ্দেশ্য নয়। বরং বিষয়টাকে ঠিকঠাক বোঝার যথাযথ প্রচেষ্টাতেই আমাদের আসল আগ্রহ!...

০৪.

তাহলে ভাসান চরের এই অভূতপূর্ব মাওলানাকে আমাদের চিনতে হবে। তাঁকে চিনলে আমাদের অনেক ধর্মতাত্ত্বিক প্রশ্নের যেমন ফায়সালা হবে, একই সাথে ক্লিয়ার হবে ফরহাদ মজহার কিংবা অন্যান্যদের বুদ্ধিবৃত্তিক বুজরুকিও।

তাহলে আমরা বলতে পারি- ইসলামের দিক থেকে কমিউনিজমের প্রতি মাওলানার যে অবস্থান, কমিউনিজমের দিক থেকে ইসলামের প্রতি ফরহাদ মজহারের অবস্থানও প্রকৃতিগতভাবে তা’ই!...

অনেকে হয়তো বলবেন- তো আসুবিধা কি?... ভাসানীকে আপনারা সাদরে গ্রহণ করতে পারেন, ফরহাদ মজহারকে গ্রহণ করলে দোষ কোথায়?... না, দোষ-গুণের কোনো ব্যাপার এখানে নেই। শুধু বলা যায়, ইসলামের দিক থেকে ঈমান আর মুনাফেকীর যতটুকু ফারাক, এ দুটোর মধ্যকার ফারাকও তারচেয়ে কম নয়!

এখানে প্রশ্ন হলো ঈমানের। মাওলানাকে আমরা সাদরে গ্রহণ করি, কারণ তিনি ঈমানের জায়গায় ছাড় দেননি। না দিয়ে মজলুমের পক্ষে দাঁড়ানোর প্রয়োজনে কমিউনিজমকে একটা নির্দিষ্ট সীমায় তাঁর যে ‘মেনে নেয়া’, বাস্তবতার নিরিখে ইসলাম তা অনুমোদন দেয়, যা আমরা আগেই বলেছি। কাউকে নিজের করে গ্রহণ করার ক্ষেত্রে কমিউনিজমের নিশ্চয়ই কোনো নিজস্ব নীতি আছে, সীমানা আছে...। সে তা'র আভ্যন্তরীণ ব্যাপার।

কিন্তু ইসলাম কমিউনিজম নয়। ঈমানই এখানে কাউকে গ্রহণ-বর্জনের পহেলা এবং শেষ ক্ষেত্র। ঈমানের জায়গায় ছাড় দিলে ইসলামের আধ্যাত্মিক ভ্যালু যেমন নিশ্চিহ্ন হয়ে যায়, একই সাথে মতাদর্শিক ভ্যালুও আর অবশিষ্ট থাকে না। এজন্য ইসলাম ঈমানের জায়গায় জিরো টলারেন্স নীতি গ্রহণ করে। শুধু ঈমানের জায়গায় নয়, ঈমানের সাথে অন্যকিছু মিশ্রিত হওয়ার জায়গায়ও! অদৃশ্যের প্রতি ঈমান দিয়েই ইসলাম শুরু হয়। ঈমানের সেই পবিত্র বাক্য উচ্চারণে মৃত্যুবরণ, ঈমানদারের জীবন-ব্যাপী সাধনা প্রার্থনা! এবং ঈমানই ইসলামের প্রথম এবং শেষ রক্ষা-কবজ!...

সুতরাং, সর্বান্তকরণে নির্ভেজাল ঈমান ছাড়া ইসলামে আসার এবং অবস্থানের আর কোনো যথার্থ পথ নেই। বিশেষ কোনো কারণ, যেমন রাজনৈতিক বা সামাজিক কিংবা অন্যান্য কোনো কারণে ইসলামকে ‘মেনে নেয়া’, ইসলাম গ্রাহ্য করেনা। বরং অত্যন্ত কঠোরভাবে প্রত্যাখ্যান করে। সংগত কায়দায় ইসলামের বাইরে থাকুন, তাও ভালো। দেখুন, দয়াময় কতটা ক্ষোভের সাথে উচ্চারণ করছেন-

'এ বেদুইনরা বলে, ‘আমরা ঈমান এনেছি’(মনে নিয়েছি)।

তাদের বলে দাও- তোমরা ঈমান আনো নাই৷ বরং বল, আমরা অনুগত হয়েছি(মেনে নিয়েছি)'(৪৯:১৪)৷

শুধু তা’ই নয়, ঈমানকে আল্লাহ যাদের দৃষ্টান্তে গ্রহণ করতে বলেছেন- গ্রহণ করতে হবে ঠিক সেভাবেই। আর কেউ যদি- হে মুমিনগণ, ঈমানের মুকাবিলায় অন্যকিছু(কুফুরী)কে শ্রেয় জ্ঞান করে, তবে তাদেরকে অন্তরঙ্গরুপে গ্রহণ করো না, তোমাদের বাপ কিংবা ভাই হলেও না। তোমাদের মধ্যে যারাই এরুপ করবে, তারা জালিম ছাড়া আর কিছুই নয়(০৯:২৩)।

০৫.

সুতরাং, আমরা যে যেখানেই থাকি না কেনো, আমাদেরকে ফিরে ফিরে এই ঈমানের কাছেই আসতে হবে। বলতে হবে মানবতার সর্বকালের চূড়ান্ত ত্রাণকর্তা অনন্য ও অখন্ড ইসলামের কথাই। হ্যাঁ, আর যা’ই হোক- তবু ইসলামের কথাই বলতে হবে… বলতেই হবে…

বিষয়: রাজনীতি

১০৪০ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File