তবু ইসলামের কথাই বলতে হবে... খসড়া-০৪(মজহারপন্থা প্রসঙ্গে)
লিখেছেন লিখেছেন শাহাদাত মাহমুদ সিদ্দিকী ১২ সেপ্টেম্বর, ২০১৬, ০৪:১৭:১০ রাত
‘কমিউনিজম প্রশ্নে’ আমরা যে আলোচনা তুলেছিলাম তার দু’টি প্রধান প্রসঙ্গ ছিল।
একটি হলো, জালিম ও মজলুমের লড়াই নিয়ে।
এ প্রসঙ্গে আমাদের বক্তব্য ছিল- জালিমের প্রতিপক্ষে ইসলামের ইতিহাস মানব ইতিহাসের প্রথম দিনের মতো পুরোনো। জালিমের বিরুদ্ধে ইসলামের অবস্থান কমিউনিজম কিংবা অন্য যেকোনো ধর্ম বা মতাদর্শের চেয়ে অনঢ় এবং অবিসংবাদিত। অনেক বেশী সূক্ষ্ণ, গভীরতর এবং ব্যাপক। সেইসাথে কুন্ঠাহীন প্রকাশ্য, দৃশ্যমান দৃঢ় এবং তীব্রতরও বটে। সেটি স্বয়ং ইসলামের প্রভূ, তাঁর কিতাব কিংবা তাঁর রাসূলের জীবন, যা-ই বলুন না কেন, সবক্ষেত্রে সমান ও সুস্পষ্টভাবে প্রযোজ্য।
কিন্তু,
‘...ইসলাম একাট্টা একরকম নয়। কুরআন নিজের তাফসীর নিজে করে না, করে মানুষেরাই। আর মানুষের মধ্যে যদি জালিম-মজলুম ভেদ থাকে সেই তাফসীরের মধ্যেও জালিম মজলুম ভেদ আছে’
-ফরহাদ মজহার’রা যখন এভাবে বলে ওঠেন, তখন আমরা যারা অল্পসল্প ইসলাম জানা সাধারণ মানুষ, সহসা হয়তো বুঝে উঠতে পারি না, তিনি কী বোঝাতে চাইছেন।
তবে ধীরে ধীরে স্পষ্ট হতে থাকে- যে কিতাব জালিমের জন্য যন্ত্রণা ছাড়া আর কিছুই বৃদ্ধি করে না(১৭:৮২), আর যাই হোক, বোঝা-পড়া যতই যুগের ধুলোয় ধুসরিত হোক, ফিকহগত হাজারো বৈচিত্র ও ভিন্নতা থাকুক- সে কিতাবের তাফসীর জালিম পক্ষের ইন্ধন হতে পারেনা। হলে সেটি আর কুরআনের তাফসীর থাকে না। সেটি ঘৃণা ভরে প্রত্যাখ্যানযোগ্য অন্য কিছু হয়ে উঠে।
০২.
তারপর যে বিষয়টি মাথায় আসে, রাসূলুল্লাহ বলেছেন- কুরআনের একাংশ অন্যাংশের তাফসীর। অর্থাৎ, কুরআনের কোনো একটি আয়াতের এমন কোনো তাফসীর গ্রহণযোগ্য নয়, যা অন্য কোনো আয়াতের সাথে সাংঘর্ষিক।
আগেই বলেছি- এটা সেই ধর্ম নয়- যার ‘গভীরতা আছে, কিন্তু কোনো কাঠামো নেই’। আবার সে ধর্মও নয়, নবীর তিরোধানের পর থেকেই ধর্মগ্রন্থের যেখানে বছর বছর নতুন সংস্করণ বেরোয়। এটাও বলে রাখা প্রাসঙ্গিক যে, এটি সেই মতাদর্শও নয়, যার নিজের বলে কিছু নেই, যা আছে সবই ধার করা এবং যা সমাজতন্ত্রের মতো অন্য কোনো মতাদর্শের প্রতিক্রিয়ায় উদ্ভাবিত, পরিবর্তিত এবং নিয়ন্ত্রিত।
কিন্তু ইসলাম, অন্য সমস্ত ধর্ম ও মতাদর্শ হতে সম্পূর্ণ ব্যতিক্রম। অনন্য। অন্যকিছু না থাকলেও ইসলাম থাকে, তাকে থাকতেই হয়। আবার অন্যকিছু থাকলে তো তাকে থাকতে হয় আরো প্রবলভাবে, থাকেও। এজন্যই কিন্তু ইসলাম কোনো ধর্ম বা মতাদর্শের মূলোৎপাটন চায় না। বরং উল্টোটাই যেনো সত্য! ইসলাম চায় অন্য সমস্ত ধর্ম ও মতাদর্শকে সহাবস্থানে রেখে তার ভ্যালিডিটি প্রমাণ করতে। আল্লাহ তাঁর রাসূলকে কিন্তু সে জন্যই পাঠিয়েছেন! অন্য সমস্ত মতাদর্শের চেয়ে ইসলাম যে শ্রেষ্ঠতম তা তাত্ত্বিক ভাবে(মৌখিক সাক্ষ্য) এবং কায়েম করে(বাস্তব সাক্ষ্য) বিশ্ববাসীকে হাতে কলমে দেখিয়ে দেয়ার জন্য(৬১:০৯)।
এবং তা করতে গিয়ে ইসলাম মোটেই জোর-জবরদস্তির আশ্রয় নেয়না, নিতে পারে না, নিলে যে মানব সৃষ্টির উদ্দেশ্যই ব্যাহত হয়ে যাবে! ইসলাম বলে-
‘দীনের ব্যাপারে কোন জোর-জবরদস্তি নেই ৷ ভ্রান্ত মত ও পথ থেকে সঠিক মত ও পথকে ছাঁটাই করে আলাদা করে দেয়া হয়েছে …(০২:২৫৬)
০৩.
তাহলে ব্যাপারটা কী দাঁড়ালো?
ইসলাম মূলত একটাই। অখন্ড। কোনো বিশেষ বাইনারিতে কূপবদ্ধ নয়, ভারসাম্যপূর্ণ। আবার সমূহ কল্যাণকর বিবিধ-বৈচিত্রসহ কুরআনের তাফসীরও একাধিক নয়। একটাই। অন্তত ‘জালিমের তাফসীর’ ‘মজলুমের তাফসীর’ বলে কিছু নেই এখানে। কুরআন অদ্বিতীয় এক সেলফ-এক্সপ্লেইন্ড কিতাব। অন্য কিছু দরকার হয় না, সময়ে সময়ে সে নিজেই নিজেকে স্পষ্ট করে তোলে। এবং তার তাফসীরের ইতিহাস থেকে জালিমের অপব্যখ্যাসমূহ, জালিমের ইন্ধনদাতা অংশটুকু, এবংকি কারো করা অনিচ্ছাকৃত ভুলটুকু পর্যন্ত ছেটে ফেলে দেয়।
অথচ, ফরহাদ ভাই এটাও আমাদেরকে সেই কমিউনিজমের মাধ্যমেই ‘দেখাতে চান’!
‘আজ আমাদের সেই কমিউনিজমের কথাই বলতে হবে যে কমিউনিজম...দেখাতে চায় কিভাবে ইসলাম যুগে যুগে নিপীড়িতের পক্ষে দাঁড়াতে গিয়ে নিজের সংস্কার নিজে করতে সক্ষম হয়েছে...’
অথচ এটি মোটেই কমিউনিজম কিংবা অন্য কারো দেখানোর বিষয় নয়, বরং ইসলামের একান্ত বিষয়। রাসূলুল্লাহ বলেছেন- ‘নিশ্চয়ই আল্লাহ প্রত্যেক শতাব্দীর শিরোভাগে এ উম্মতের মধ্য এমন ব্যক্তি/ব্যক্তিবর্গের উত্থান ঘটাবেন, যিনি/যারা তাঁর জন্যে তাঁর দীনকে সবল ও সতেজ করবেন’।
এখানে কথিত ‘সংস্কারের’ কোনো ব্যাপার নেই। এবং শুধু এখানে নয়, ইতিহাসের অন্য যেকোনো প্রান্তে যান, দেখবেন- ইসলাম সংস্কৃত হয়ে নয়, বারবার তার আদি বা নির্ভেজাল রুপ নিয়েই ফিরেছে। এটাও এক অদ্ভূদ ব্যাপার। আর সমস্ত কিছুই যুগের পীড়নে যখন বিধ্বস্ত হয়ে যায়, তাকে ফিরতে হলে নানাদিক হতে যুগের তালে সংস্কৃত হয়েই ফিরতে হয়। আর ইসলাম! সংস্কৃত হয়ে নয়, ফিরে যুগের ময়লা ঝেড়ে। এবং সংস্কৃত হতে হতে ভিন্নকিছু হয়ে নয়, সেই অকৃত্রিম ইসলাম হয়েই ফিরে। ফিরে সতেজ ও সবল হয়েই। সুতরাং, কমিউনিজমকে কিছুই ‘দেখাতে’ চাইতে হবে না। সে নিজেকেই নিজে একটু দেখভাল করুক। নিজের চরকায় তেল দিক। তার দিক থেকে সেটাই তো বেশি গুরুত্বপূর্ণ, না?...
সুতরাং, কমিউনিজমের চোখে নয়,
আমাদেরকে বরং দেখতে হবে ইসলামের চোখেই।
এবং যুগের জারিজুরিতে তাড়িত হয়ে নয়, বরং কাঙ্ক্ষিত যুগ বিনির্মাণে-
সেই পরীক্ষিত একক,
অখন্ড,
অকৃত্রিম ইসলামের কথা বলতে হবে...
০৪.
আবার একথাও মাথায় রাখতে হবে যে,
ইসলামের নামে জালিম-মজলুম দ্বন্দ্বের যে বয়ান ফরহাদ মজহার হাজির করেছেন, তার উৎস মোটেই ইসলাম নয়। এটি মূলত কমিউনিজমেরই আরেক রুপ। বুর্জোয়া-প্রলিতারিয়েত শ্রেণিসংগ্রামের অনুবাদ মাত্র।
অর্থাৎ, বুর্জোয়া-সর্বহারার তর্জমা জালিম-মজলুম করে, তিনি তা ইসলামের উপর আরোপ করে দিতে চান। কাকের বাসায় কোকিলের ডিম পাড়ার মতো খানিকটা। এর মাধ্যমে সস্তা কিছু রাজনৈতিক ও অন্যান্য সুবিধা পাওয়া যাচ্ছে, সন্দেহ নেই। কিন্তু পিছিয়ে যাচ্ছে আসল কাজ- পুঁজিবাদী দানবীয় সভ্যতার মোকাবিলায় ইসলামের সক্ষমতা যাছাই করে দেখা, কমপক্ষে তাত্ত্বিক জায়গা থেকে। সে কাজ ইসলামের দিক থেকে ইসলামকে যতদূর সম্ভব ধারণ করেই করতে হবে। কমিউনিজম বা অন্য কারো বিষয়-আশয় ইসলামের উপর আরোপ করে পর্যালোচনার মানে দাঁড়াবে ‘যে লাউ সেই কদু’।
তাছাড়া কমিউনিজম থেকে আমদানি করা বুর্জোয়া-প্রলিতারিয়েত শ্রেণিসংগ্রামকে ফরহাদ মজহার যেভাবে ‘জালিম-মজলুমের লড়াই’ নাম দিয়ে ইসলামীকীকরণ করতে চাইছেন, ইসলামে জালিম-মজলুম লড়াই সবসময় সেরকম কোনো বাইনারিতে চলে না। আগেই বলেছি ইসলামে সে লড়াই অনেক বেশী সূক্ষ্ণ, গভীরতর এবং ব্যাপক। এবংকী নিজের প্রতি নিজের জুলুমকেও ইসলাম নিন্দা করে, হারাম বলে। অনুতাপযোগ্য ও ক্ষমাপ্রার্থনার বিষয় হিসেবে গণ্য করে, প্রত্যাখ্যানের পথ ও পাথেয় যোগায়(০৭:২৩)। শুধু তাই নয়, নিজের/নিজেদের উপর নিজের/নিজেদের জুলুমও ইসলামে শাস্তিযোগ্য অপরাধ(২২:১০)। এটা কিন্তু ছোটখাটো কোনো ব্যাপার নয়, এর সাথে জড়িয়ে আছে আরো অজস্র বিষয়। গোটা কমিউনিজম তন্নতন্ন করে খুঁজেও আপনি কিন্তু এরকম একটা অসাধারণ শক্তিশালী উপাদান পাবেন না, যেটি পুঁজিবাদের প্রতিপক্ষে অত্যন্ত কার্যকর ভূমিকা রাখতে পারে।
আবার ইসলাম তাদেরকেও জালিম বলে যারা আল্লাহর সাথে অংশীবাদে লিপ্ত হয়। এবং সেটাই হলো জুলমুন আজীম, সর্বোচ্চ জুলুম(৩১:১৩)। এবং এই শির্ক এই জুলুমকেই ইসলাম- জলে-স্থলে বিপর্যয়ের মৌলিক কারণ হিসেবেই দেখে(৩০:৪১)। একইভাবে ইসলাম তাদেরকেও জালিম বলে, যারা আল্লাহর সর্বোত্তম ন্যায্য নির্দেশ মতো ফায়সালা করেনা(০৫:৪৫)। ইসলাম বলে- ‘এবং তার চেয়ে বড় জালেম আর কে হতে পারে, যে আল্লাহ সম্পর্কে মিথ্যা রচনা করে কিংবা আল্লাহর আয়াতসমূহকে প্রত্যাখ্যান করে?(০৬:২১,১০:১৭)
কিন্তু মি.মজহারবৃন্দ যখন জালিম ও জুলুমের এই সামগ্রিক/কম্প্রিহেন্সিভ কনসেপ্ট ধারণ করেন না বা করতে চান না, নিদেনপক্ষে এর কোনো ‘রাজনৈতিক’ উপযোগীতা আছে কিনা তাও খতিয়ে দেখার প্রয়োজন মনে করেন না, তখন এটা ভাবা অন্যায্য নয় যে, ডাল মে কুচ কালা হ্যায়। তখন ইসলামের নামে উনি বা অন্য কেউ যতই ‘জালিম মজলুম’ বাতচিৎ করুন সেটা- ঐযে বললাম কমিউনিজমের বুর্জোয়া-প্রলিতায়েতের পুরোনো প্যাঁচালে পর্যবসিত হওয়া ছাড়া নতুন কোনো পথ থাকেনা। অথচ কে না জানে, পুঁজিবাদের সাথে আজকের সংগ্রাম বুর্জোয়া-প্রলিতারিয়েতের খাপে ফেলে মোকাবিলার কোনো পথ নেই।
কমিউনিজমকে টনিক বানিয়ে, পরিমাণমত সেবন করে আজকের পুঁজিবাদ অনেক বেশী সপিস্টিকেটেড হয়ে উঠেছে। আরো জটিল প্রক্রিয়ায় আরো ভয়ংকর দানব হয়ে উঠেছে। সো, যে এন্টিবায়োটিকের সাথে ক্যাপিটালিজমের জীবাণু একবার জিতে গেছে সে এন্টিবায়োটিক আজ অকার্যকর। এখন নতুন সম্ভাবনাকে আমাদের নতুন জায়গা থেকে নতুন ভাবে নতুন প্রক্রিয়ায় দেখতে হবে। নতুন করে লালন করতে হবে নতুন স্বপ্ন। উজ্জীবীত হতে হবে নতুন বিশ্বাসে।
০৫.
তাহলে সারকথা হলো- ইসলাম কমিউনিজমের তরিকায় জালিম মজলুম ভেদ করেনা। এরচেয়ে ঢের শক্তশালী সুন্নাহ তার আছে! আবার ফরহাদ মজহার সমাজতন্ত্রী কায়দায় জালিম-মজলুমের যে ভেদ-বিভেদ টেনেছেন, তর্কের খাতিরে তা মেনে নিলেও বলা যায়, ইসলামের জালিমবিরোধী মৌলিক প্রকৃতিগত কারণেই জালিমের পক্ষে এখানে কোনো তাফসীর থাকতে পারেনা। ইসলাম প্রতিনিয়ত সে সব বর্জ্য সংশ্লিষ্ট জালিমের দিকেই নিক্ষেপ করে।
তবে হ্যাঁ, একথা সত্য যে, ইতিহাসে ‘একটি পক্ষ আছে জালিম রাজা-বাদশা’ জমিদার মুনাফাখোরদের পক্ষে দাঁড়িয়েছে, নানা ছুঁতোয়, নানা মুখোশ পরে। এবং ‘হতে পারে’ নয়, এটাই সত্য। খিলাফাতে রাশেদার পর থেকে তারাই উম্মাহর আর্থ-রাজনৈতিক শক্তি কেন্দ্রসমূহ জবর দখলের ধিকৃত অংশীদার। নিজেদের প্রয়োজনে নানা কূট-কৌশলে তারা ইসলামের সংশ্লিষ্ট উপাদানের বিভিন্ন অপব্যাখ্যা হাজির করেছে। কিন্তু সেরকম নানা অপব্যাখ্যার ইতিহাস নেই কোথায়?... বলা যায়, পৃথিবীর কোনো কল্যাণপ্রয়াসী ধর্ম বা মতাদর্শই এই ‘ভেতরের পুঁজিবাদী’ শয়তানি শক্তিসমূহের অপব্যাখ্যা হতে রেহাই পায়নি। কমিউনিজমও কী পেয়েছে রক্ষা?...
ট্রাজেডী হলো- এই সব ধর্ম বা মতাদর্শ, প্রথমত হাজারও অপব্যাখ্যায় পিষ্ট হয়, শেষে সেই অপব্যাখ্যাই তাদের নতুন করে নির্মাণ করে। এবং দেখা যায়, সেই শয়তানি শক্তিই হয়ে উঠেছে তাদের অস্তিত্বের গন্তব্য। বড়ই নিদারুণ সত্য বটে।
কিন্তু এরচেয়ে সুখোষ্ণ সুসংবাদ হলো- মুয়াবিয়ার(আমরা দু:খিত ইতিহাসের প্রয়োজনে মুয়াবিয়াকে আনতে হলো) মতো কূট-কৌশলী হোক, এজিদের মতো নরপিশাচ হোক, হাজ্জাজ বিন ইউসুফের মতো জালিম হোক কিংবা হারুন আর রশিদের মতো মোলায়েম হোক, কেউই ইসলামের অজেয় দূর্গে তাদের কোনো আঁছড় কাটতে পারেনি। তাদের সবই সর্ববৈ ব্যর্থ হয়েছে। তাদের বিপুল সৈন্য-সামন্ত, প্রভাব প্রতিপত্তি, দববারি আলেম কিংবা বুদ্ধি-বিক্রেতা লাঠিয়ালসহ আরো যা যা... কিছুই তাদের কোনো কাজেই আসেনি। ইসলাম সেই একক, অখন্ড, অবিকৃতই রয়ে গেছে।
শুধু ইসলামই অমন থাকতে পেরেছে, আর কিছুই নয়। শুধু গলি-গুপ্সি পেরিয়ে খোলামনে তাকে ডেকে নিতে হয়, এই যা। আমাদের পূর্বসূরীরা- রাসূলুল্লাহর সত্যপন্থি সাহাবী, আহলে বাইতের সংগ্রামী ইমাম ও সদস্যগণ, তাদের অকুতোভয় সাথীরা, এবং যুগে যুগে মুজতাহিদ মুজাদ্দিদরা তাদের নিরন্তর সাধনা, কলিজার শেষবিন্দু খুন দিয়ে অক্ষত করে রেখেছে ইসলামের পরশ পাথর। সুতরাং তাফসীর যতই মানুষ করুক, যে কিতাব জালিমের ক্রমবর্ধমান যন্ত্রণার উৎস, তার তাফসীর জালিমের পক্ষালম্বন করতে পারেনা। কোনটি কুরআনের তাফসীর, কোনটি জালিমের বরকন্দাজ তা একটু বুঝে নিতে হয় মাত্র।
কিন্তু ফরহাদ মজহার কেন অতো বুঝতে যাবেন? ইসলামকে দু’ভাগ করে ফেললেই বরং তার সুবিধে। এতো সব সত্যোদ্ধারের ঝামেলায় যেতে হয় না। তাফসীরকে ‘জালিমের তাফসীর’ ‘মজলুমের তাফসীর’এ দ্বিখন্ডিত করে ফেললেই আসল তাফসীর ফরখ করার পরিশ্রম বেঁচে যায়! তারপর দুটোর মধ্যে তার কমিউনিজমের জন্য যেটি উপাদেয় সেটির যেটুকুন লাগে কেটে-কুটে নিয়ে নেবেন, নতুন বয়ানের জন্য এর বেশী আর কী লাগে?...
তারপর বলে দেবেন- ‘তবু কমিউনিজমের কথাই বলতে হবে...’
আসুন ফরহাদ মজহারের সমুহ প্রতিভার প্রতি সশ্রদ্ধ সমীহ রেখেই একটু হেসে উঠি...
তার থেকে আরো যা কিছু শেখার আছে সেসবের প্রতি বিরাগ পোষণ না করেই আরো একবার প্রাণ খুলে হেসে উঠলে ক্ষতি নেই...
তারপর প্রশ্ন করুন-
ফরহাদ ভাই, যদি জালিম-আশ্রয়ী তাফসীর ইসলাম প্রত্যাখ্যান করে, যদি মজলুম-পক্ষীয় তাফসীরই কুরআন গ্রহণ করে, তখনও কী আপনি তাফসীরের বিবাদ তুলে ইসলাম থেকে সরে আসবেন...
...সত্য বলতে কী, তখন আপনার যতই অপছন্দ হোক, তবু ইসলামের কথাই বলতে হবে...
বিষয়: রাজনীতি
৯২৭ বার পঠিত, ২ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
এবং একটু লেটে হলেও ঈদ মোবারাক!
ফরহাদ মজহারের লিখাগুলো সম্পর্কে আপনি অবগত এবং সেই সাথে সচেতন আছেন জেনে ভালো লাগলো।
অনেক শুভ কামনা আপনার জন্য...
মন্তব্য করতে লগইন করুন