তবু ইসলামের কথাই বলতে হবে... খসড়া-০২
লিখেছেন লিখেছেন শাহাদাত মাহমুদ সিদ্দিকী ১০ সেপ্টেম্বর, ২০১৬, ১১:৪০:৫১ রাত
এখানে ওখানে পৃথিবীর যেখানেই বলুন মানবিক স্বাধীনতা সর্বত্রই আজ বিধ্বস্ত।
গোটা মানবজাতি যেনো পৈশাচিক কোনো নজরদারিতে আতংকিত। হ্যাঁ, সাম্রাজ্যবাদ! একটু লক্ষ করলেই উপলব্ধি করবেন, সাম্রাজ্যবাদের নজরদারি এবং খবরদারি অতীতের সমস্ত সীমানা লংঘন করেছে। এ ছাড়া মানুষের পৃথিবীকে কল্যাণকর কিছু যোগান দেয়ার আর কোনো সামর্থ এর যে নেই সেটাও দিবালোকের মতো স্পষ্ট। তবু জবরদস্তিতে টিকে থাকার দানবীয় বাসনায় উন্মাদ সে। সমগ্র বিশ্বকে আজ গ্রাস করতে উদ্যত হয়ে উঠেছে। তার নজরদারির এবং অনুমোদনের বাইরে কাউকে কিছু করতে দেয়া তো দূরে থাক ভাবতে দিতেও নারাজ। এ যেনো দাজ্জাল আবির্ভূত হওয়ার পূর্বক্ষণ। কি বলবেন একে আপনি? শুধু ফ্যাসিবাদ-ট্যাসিবাদ দিয়ে একে বোঝা যাবে না। ওসব এতোটা সর্বগ্রাসী ভয়ংকর কিংবা অমন বিশ্ববিস্তৃত কোনো ব্যাপার ছিলো না।
আপাতত এটাকে দাজ্জালিক ডমিনেশন বলতে পারেন। উপনিবেশ স্থাপনের মধ্য দিয়েই মূলত এই ডমিনেশনের প্রবল ও প্রকাশ্য সূত্রপাত। তারপর পুঁজির সঞ্চয়ন বিবর্তন ও ভাঙা-গড়ার ভেতর দিয়ে সেটি আজ দাজ্জালিক একনায়কতন্ত্রের রুপ পরিগ্রহ করেছে। তারা এখন গোটা মানবজাতির চিন্তা এবংকি বিশ্বাস পর্যন্ত গ্রাস করতে চায়…
দাজ্জাল আবির্ভূত হয়েই-বা কি করবে, এটাই তো করবে। সমগ্র মানবজাতিকে ভ্রান্তিতে-ছলে-বলে বাধ্য করতে চাইবে তাকে একচ্ছত্র প্রভূ মানতে। সমস্ত চিন্তা ও বিশ্বাসের কেন্দ্রে রেখে তার সার্বভৌমত্ব মেনে নিতে। আর তাকে মেনে নেয়া মানেই পৃথিবীর আর কোনো ইতিহাস থাকবে না, ভবিষ্যতও না। কোনো আল্লাহ থাকবে না, ঈশ্বর থাকবে না, গড থাকবে না, নাস্তিকতা থাকবে না, কমিউনিজম থাকবে না…কিচ্ছু থাকবে না। মানবজাতির সমস্ত অর্জন ইতিহাস দর্শন বিজ্ঞান সমাজবিজ্ঞান সব ছুড়ে ফেলা নাকের পানির মতো নিষ্প্রয়োজন হয়ে যাবে। কারণ স্বয়ং ‘প্রভূ’ উপস্থিত!
আবার উলটো করেও বলতে পারেন- যে ইতিহাস দাজ্জালের আগমণ নিশ্চিত করতে রচিত হয়েছে, দাজ্জাল এসে গেলে তার আর কি দরকার? একজন দাজ্জাল প্রস্বব করতেই যেহেতু সাম্রাজ্যবাদের সমস্ত জ্ঞান-দর্শন বিজ্ঞান-প্রযুক্তি কবিতা-সাহিত্য সুতরাং, দাজ্জালের আবির্ভাব হয়ে গেলে এসবের অকার্যকর হয়ে ওঠা নিতান্তই স্বাভাবিক। এজন্যই তো নূন্যতম ন্যায়বিচারটুকু নিশ্চিত না করেও গ্লোবালাইজেশন চলছে, না? শিল্পে, বাণিজ্যে, বীজে, চিন্তা-সংস্কৃতি-শিক্ষায়, এবং কিসে নয়?... একে ঠেকানোর কোনো রাস্তা আছে?
কোনো ধর্ম?... কিন্তু ধর্ম কোথায়? কোথাও তা শোষণের তোয়ালে আর কোথাও আচ্ছাদন মাত্র। তাও যেনো সাম্রাজ্যবাদের কুন্ঠিত অনুমোদন নিয়েই ‘সগৌরবে’ টিকে আছে! অথবা মজলুমের দিক থেকে বলতে পারেন- নিজে কিছু করা নয়, সমস্ত ধর্মই মূমুর্ষূ হয়ে পড়ে আছে ধর্মান্তরিত হওয়ার জন্যই। কারণ আধিপত্যবাদের জুলুম-নিপীড়নের বৈধতা দিতে দিতে তারা যারপরনাই ক্লান্ত! কিন্তু ধর্মকে আবার ধর্মান্তরিত করবে কে?...
আছে। বার্নাড শ’কে মনে পড়ছে, তিনিও বলেছিলেন, আছে। বলেছিলেন- ধর্মের যুগ শেষ তবু একটা ধর্ম আছে। তার নাম ইসলাম।
হ্যাঁ ইসলাম! জগতের সমস্ত ধর্মের ধর্ম হওয়ার যোগ্যতায় দিপ্তিমান। সবাইকে আহ্বান করার মতো শক্তিশালী-
‘… হে আহলি কিতাব! এসো সেই কথার দিকে, যা তোমাদের এবং আমাদের মধ্যে এক ও অনন্য- আমরা আল্লাহ ছাড়া কারোরই গোলামী করবো না, তাঁর সাথে শরীক করবো না কাউকে- এবং আমাদের কেউই আল্লাহ ছাড়া আর কাউকেও গ্রহন করবে না নিজের রব হিসেবে …০৩:৬৪)
ইসলাম। এই একটা আদর্শই আছে, সমস্ত আদর্শের আদর্শ হওয়ার মতো। শতভাগ প্রত্যয় নিয়ে অমন চূড়ান্ত করে বলার মতো জীবনবিধান-
‘এখন কি এরা আল্লাহর দীন, আদর্শ ও জীবনবিধান, ত্যাগ করে অন্য কোন পথের সন্ধান করছে ? অথচ আকাশ ও পৃথিবীর সবকিছুই স্বেচ্ছায় বা অনিচ্ছায় আল্লাহর হুকুমের অনুগত এবং তাঁরই দিকে ফিরে যেতে হবে সবাইকে’(০৩:৮৩)।
সুতরাং,
যে ইসলাম এই সমস্ত দানবীয় নজরদারি ও আধিপত্য উচ্ছেদে আস্তিক-নাস্তিক ধার্মিক অধার্মিক নির্বিশেষ মানবজাতির শেষ গন্তব্য-
যে ইসলাম দুনিয়াজুড়ে এই ভয়ংকর দাজ্জালিক ডমিনেশন থেকে মানুষকে তার দয়াময় স্রষ্টার অনুগ্রহে আচ্ছাদিত করার শেষ অবলম্বন-
এবং সমস্ত অমানবিক ব্যবস্থাপনার অবসান ঘটিয়ে মানুষের কামালিয়াতের পথ উন্মুক্ত করতে একমাত্র দিশা,
সে ইসলাম এই শয়তানি সাম্রাজ্যবাদ কিংবা অন্যকারো অনুমোদিত 'ইসলাম' কিংবা 'শান্তি'র সংজ্ঞায় তাকলিদ বা অন্ধবিশ্বাস করতে পারে না-
করতে পারে না ফেরাউন এজিদ দাজ্জাল কিংবা দাজ্জাল ভ্রাতাদের সাথে আপোস-রফা...
সো, যা'ই হয়েছে, আর যা'ই হচ্ছে কিংবা হোক,
মানবজাতিকে, আজ হোক কাল হোক,
সেই ইসলামের কথাই বলতে হবে...
বিষয়: বিবিধ
৭১৮ বার পঠিত, ২ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন