তবু ইসলামের কথাই বলতে হবে... খসড়া-০১
লিখেছেন লিখেছেন শাহাদাত মাহমুদ সিদ্দিকী ১০ সেপ্টেম্বর, ২০১৬, ০৮:২৬:০২ রাত
বিশ্বজুড়ে ইসলাম আজ সব পক্ষের ভয়ংকর বিদ্বেষ ও আক্রোশের শিকার। কী ভেতরে আর কী বাইরে।
ভেতরের পক্ষগুলো চায় ইসলাম হয় ক্ষমতার আশ্রয়ে থাকুক অথবা ক্ষমতা নিরপেক্ষ থাকুক। তাদের কাছে ইসলাম মানে ‘শান্তি’। শান্তি মানে শান্তিতে জীবন-যাপন। লেখাপড়া, চাকুরি-বাকুরি পারলে কিছু আল্লাহ-রসূল, এই-ই তো ইসলাম। এই ইসলাম ইবলিসী ক্ষমতা-তলে থেকেও করা যায়। আর ক্ষমতা খারাপ মনে হলে তা থেকে সংশ্রব মুক্ত থেকেই আল্লাহ-বিল্লাহ করতে পারেন। এটাই শান্তি, এটাই ইসলাম।
আবার বাইরের পক্ষ থেকেও সেম কথা। আল্লাহ-রসূল করতে তো আর তোমাদের মানা করা হচ্ছে না। আর জিহাদ-টিহাদ করতে হয়, মনের কুকামনা-বাসনার সাথেই করো। ওটাই তো বড় জিহাদ, না? এবং এভাবে আত্মা শুদ্ধ করো এবং শান্তিতে থাকো। আর শান্তি মানেই তো ইসলাম।
জর্জ ডব্লিও বুশ থেকে শুরু করে বিশ্বব্যাপী এবংকি ইসলামের জঘন্য সব স্বৈরাচারী দুশমনেরাও এই ইসলামের একনিষ্ঠ দা’য়ী। তাদের সবার এক রা- ‘ইসলাম শান্তির ধর্ম’।
এই ইসলাম শেষ পর্যন্ত মানবতার পক্ষে কোনো ভূমিকা রাখতে পারবে কিনা, সে প্রশ্ন না তুলে- আপনি যদি নিশ্চিন্তে তা মেনে নেন, তা হলে দু’পক্ষের সাথেই আপাতত আপনার বিরোধ-বিসম্বাদের অবসান ঘটবে। কিন্তু যদি কেউ তাদের অর্থাৎ, উপরোক্ত কপটচারী ও আধিপত্যবাদী পক্ষদ্বয়ের ‘শান্তি’ ও ‘ইসলাম’ সংজ্ঞার বাইরে যেতে চান, এবং সে চাওয়া যদি কোন না কোন ভাবে তাদের ক্ষমতার প্রতিপক্ষ হয়ে ওঠে কিংবা ক্ষমতার আশ্রয়মুক্ত হয়ে স্বাধীন হতেও চায়, সেটাকে তারা কোনো ভাবেই সহ্য করতে রাজি নন। সেই সব ‘জঙ্গী’, ‘সন্ত্রাসী’দের তারা যেকোনো মূল্যে প্রতিহত করবেন। প্রয়োজনে মুয়াবিয়া-চাণক্য-ম্যাকিয়াভেলী সবাইকে একত্র করে হলেও।
০২.
ইসলামের নামে সন্ত্রাসী কার্যক্রম হচ্ছে না, তা নয়, হচ্ছে। কারা সেসব করছে, কেনো করছে, তা অবশ্যই গ্রহণযোগ্য আইনের আওতায় নিয়ে আসতে হবে। এবং সেটা স্বাভাবিক ফৌজদারী বিচারিক প্রক্রিয়া। কিন্তু উপরে ‘জঙ্গী’ ও ‘সন্ত্রাসী’ বলতে আমরা তাদের বুঝিয়েছি- যারা আসলে কোনো সন্ত্রাসী কার্যক্রমে জড়িত নয়, এবংকী সশস্ত্র কার্যক্রমেও নয়(সশস্ত্র হলেও সেটা সন্ত্রাসী নাও হতে পারে)। তাহলে দেখুন, একটা পক্ষ কোনো ধরণের বেআইনী(যে আইন তাদেরই সরকার বা আন্তর্জাতিক কোনো সংস্থা করেছে) কর্মকান্ডে জড়িত নয়, সশস্ত্র কার্যক্রমেও তো নয়ই- তাকে কেন সন্ত্রাসী বলা হচ্ছে? তাকে কেন জঙ্গী বলা হচ্ছে?
কারণ একটাই, তারা কপটচারী ও সাম্রাজ্যবাদী শক্তিদ্বয়ের ‘শান্তি’ ও ‘ইসলাম’ সংজ্ঞা মেনে নেয়নি। কি গ্রহণ করবে কি করবে না- সে ক্ষেত্রে তাদের অনুমোদন প্রয়োজন মনে করেনি। এটাই তাদের অপরাধ- তারা তাদের সপ্রসংশিত অপরাজেয় স্রষ্টার উপর একচ্ছত্র ঈমান এনেছেন(৮৫:০৮)। ফেরাউনও একই কারণে আক্রোশে ফেটে পড়েছিল- ‘তোমারা ঈমান আনলে?- আমি অনুমতি দেবার আগেই?...(২০:৭১) যাদুকরদের শুলে ছড়ানোর জন্য এর বেশী কারণ সে প্রয়োজন মনে করেনি।
০৩.
তার মানে হচ্ছে- এই যে দমন-নিপীড়ন, জেল-জুলুম, হত্যা-গুমই শেষ কথা নয়। এগুলো ইতিহাসের প্রত্যেকটি অধ্যায়ের নৈমিত্তিক উপাদান। এগুলো আল্লাহদ্রোহী ফেরাউনী শক্তি যেমন করেছে, একইভাবে করেছে মুসলিম নামধারী যুগের এজিদরা। এবং সবার প্রতিপক্ষে বারবার ইসলামই দাঁড়িয়েছে। ইসলামই বারবার ফিরে এসেছে ইতিহাসের রক্তশূন্যতায়, বারবার বিশুদ্ধ রক্তের সরবরাহ নিয়ে…
যারা ঐতিহাসিক বস্তুবাদের আড়ালে মানব জাতির হাজার হাজার বছরের ইতিহাসকে প্রিমিটিভ কমিউনিজম তথা আদিম সাম্যবাদ নামে অন্ধকার করে রেখেছে, যারা মধ্যযুগ ধর্মযুগ সামন্তযুগ ইত্যাকার প্রোপাগান্ডায় মানবজাতির উজ্জলতম পৃষ্ঠাগুলো না বোঝার মতো হতভাগা… তারা কাকের মতো বালির বাঁধে যতই মাথা গুজুক... ইতিহাসের প্রত্যেকটি পৃষ্ঠা সাক্ষ্য দিচ্ছে- শুধু ইসলামই ফিরে আসে...
এবং ইসলামই ফিরে আসবে... ফিরে আসবে ইসলাম নামেই...
সো, ভেতরের কিংবা বাইরের যত জালিম যত নামে যত তামাশাই করুক, ‘গোয়েবলসের’ হাজারো কারখানা খুলুক, বিভ্রান্তির ঘূর্ণপাকে পৃথিবী উলট-পালট করে দিক,
তবু ইসলামের কথাই বলতে হবে!...
বিষয়: বিবিধ
৭১৮ বার পঠিত, ২ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
'এই ইসলাম ইবলিসী ক্ষমতা-তলে থেকেও করা যায়'।
'কিন্তু যদি কেউ তাদের অর্থাৎ, উপরোক্ত কপটচারী ও আধিপত্যবাদী পক্ষদ্বয়ের ‘শান্তি’ ও ‘ইসলাম’ সংজ্ঞার বাইরে যেতে চান, এবং সে চাওয়া যদি কোন না কোন ভাবে তাদের ক্ষমতার প্রতিপক্ষ হয়ে ওঠে কিংবা ক্ষমতার আশ্রয়মুক্ত হয়ে স্বাধীন হতেও চায়, সেটাকে তারা কোনো ভাবেই সহ্য করতে রাজি নন। সেই সব ‘জঙ্গী’, ‘সন্ত্রাসী’দের তারা যেকোনো মূল্যে প্রতিহত করবেন।'
ধন্যবাদ মন্তব্যের জন্য।
মন্তব্য করতে লগইন করুন