ইসলামে ‘যৌথপরিবার’ এবং ‘শ্বশুরবাড়িতে বউদের দায়িত্ব’ প্রসঙ্গ: মাকাসিদে শরীয়ার আলোকে

লিখেছেন লিখেছেন শাহাদাত মাহমুদ সিদ্দিকী ২০ জানুয়ারি, ২০১৬, ০১:১২:৫৮ রাত

‘তোমরা সবাই দায়িত্বশীল। প্রত্যেককে তার দায়িত্ব সম্পর্কে জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে’।

০২.

‘বলে রাখা ভালো- উপরের আলোচনায় শুধু মিসেস রাবেয়ার স্ট্যাটাসের লিখিত অংশটুকু বিবেচনা করা হয়েছে’। ইসলামে ‘শ্বশুরবাড়ি’ ও ‘যৌথ পরিবার’ বিতর্ক: বাংলাদেশি এক ইসলামিস্ট বোনের স্ট্যাটাসের প্রেক্ষিতে’(on.fb.me/1WjGk60) লিখিত নোটের শেষ ক’টি লাইনের একটি। এরমধ্যে দেখলাম অনেকে সেটুকুর মধ্যে না থেকে ফিকহী বিতর্কের সূত্রপাত করেছেন।

নোটে অবশ্য আমাদের শেষ লাইনগুলো ছিলো- ‘যদি কেউ বিষয়টিকে ইসলামের ফিকহী অবস্থান থেকে সিদ্ধ করতে চান, তাহলে আলোচনার ধরণ অন্যরকম হবে। পুরো বিষয়টি তখন ফিকহ-শাস্ত্রের সমাজতাত্ত্বিক প্রেক্ষপট-জনিত নমনীয়তার দিকে গড়াবে’।

০৩.

যা ভেবেছিলাম তাই হোল। অনেকেই মূল বক্তব্য না বুঝে, ‘নোট লেখক’কে একটি পক্ষ ধরে নিয়ে, অন্যপক্ষে অনেক তথ্য-প্রমাণসহ মাওলানা সাহেবদেরও ডেকে এনেছেন। মাওলানার লিখা পড়ে দেখলাম, কুরআন-হাদীসের কিছু উদ্ধৃতি, মহিলাদের সাংসারিক কাজের ফিরিস্তি-পূর্বক কিঞ্চিত সহানুভূতি। অথচ এসব নিয়ে আমাদের কোনো দ্বিমত ছিলো না। নোটে আমরা কি বলিনি যে- ‘ইসলাম কারো উপর তার সাধ্যের অতিরিক্ত বোঝা চাপায় না(০২:২৮৬)। হতে পারে, শ্বশুড়-শ্বাশুড়ি কেনো, স্বয়ং স্বামীর প্রতি কোন দায়িত্ব পালনে কখনো কখনো যে কারোই কষ্ট হতে পারে। তিনি চাইলে তা নিরসনের পদক্ষেপও গ্রহণ করতে পারেন’। এও বলেছি- ‘ইসলাম মোটেই পুরুষতান্ত্রিক নয়, আবার নারীতান্ত্রিকও নয়’। আমাদেরকে যারা একটি পক্ষ ভেবে নিয়েছেন, তাদের জেনে রাখা ভালো- একজন মুসলিম পুরুষবাদীও হতে পারে না, নারীবাদীও না। তাদের ঘুরেফিরে মুসলিমই হতে হয়।

আসুন আমরা লেজে-গোবরে বিতর্কে না থেকে পদ্ধতিগতভাবে ‘যৌথপরিবার’ ও ‘শ্বশুড়বাড়ির প্রতি বউদের দায়িত্বে’র বিষয়টিকে পর্যালোচনা করি। তাহলে হয়তো কোন ব্যক্তি-বিশেষের মতামতের উপর মুখাস্ত ইস্তেকামাত থেকে মোটামুটি রেহাই পেয়ে যাবো। পরিভাষাগত সমস্ত জটিলতামুক্ত হয়ে আমরা যদি মোটাদাগে দেখি- যেকোন ব্যাপারে ইসলামের লেটেস্ট ফায়সালা জানতে হলে আমাদের অন্তত তিনটি অবস্থান থেকে বিষয়টিকে ব্যাপক পর্যালোচনা করে দেখতে হবে-

প্রথমত, মাকাসিদ-ই-শরীয়াহ। ইসলামের সামগ্রিক মাকাসিদের প্রেক্ষাপটে আলোচ্য বিষয়ে ইসলামের সম্ভাব্য সর্বোচ্চ সুস্পষ্ট মাকাসিদের(লক্ষ্য/উদ্দেশ্য) রুপকল্প নির্ধারণ।

দ্বিতীয়ত, শরীয়াহ প্রিন্সিপলস। ইসলামের সাধারণ মূলনীতির চৌহদ্দিতে সংশ্লিষ্ট ব্যাপারে মূলনীতিসমূহের নিগুঢ় বিশ্লেষণ।

তৃতীয়ত, শরীয়াহ ফ্ল্যাক্সিবিলটি/ ভ্যারিয়ে্বিলটির প্রয়োগ। অর্থাৎ, স্থান-কাল-পাত্রের সাথে মাকাসিদে শরীয়ার অভিমুখে শরীয়াহ প্রিন্সিপলসকে প্রায়োগিক করে তোলা। যেখানে, স্থান-কাল-পাত্রের বিবেচনায় দেখা যায়, হালাল হারাম হয়ে যাচ্ছে। হালাল হয়ে উঠছে হারাম। ফরজ কাট-ছাট হয়ে যাচ্ছে। আবার নফল হয়ে উঠছে ওয়াজিব। এর মধ্যে আবার ইসতিহসান(আইনগত অগ্রাধিকার) কিংবা মাসলাহা মুরসালাহ(নির্বিশেষ জনকল্যাণ)’র মতো ব্যাপারসমূহও রয়েছে। এই সমস্ত কিছু বিবেচনা ও পর্যালোচনার ব্যাপার আছে।

০৪.

সো, কোনকিছু আক্ষরিক অর্থে আমার উপর ওয়াজিব নয়- মানে এই নয় যে, আমি ‘পাখি হয়ে মেলি ডানা’ করে বেড়াবো। আমাকে ধরে ধরে একটি একটি করে দায়িত্বগুলো বলে দেয়নি বলে, ইসলামের সামগ্রিক মাকাসিদ বিরোধী অবস্থানে দাঁড়িয়েও আমি নিজেকে ইসলামিস্ট রয়ে যাবো, এমন ভাবাটা নিতান্তই হাস্যকর। যদিও সমগ্র সুন্নি-দুনিয়া প্রকটভাবে এই ভয়ংকর আত্মবিদ্রোহে নিমজ্জিত। তা আর্থ-সামাজিক বলুন, সাংস্কৃতিক বলুন সর্বত্র। সবচেয়ে বিপর্যয়কর আত্মবিদ্রোহ রাজনীতিতে। একটাই কারণ- তাকে নাম ধরে বলে দেইনি কেনো? তাই সে বুঝেও বুঝবে না। বিভ্রান্তির ফানুস ওড়াবে। নিজে নিজে অনাহুত পক্ষ-বিপক্ষ তৈরী করে বেহুদা বিতর্কের ঝড় তুলবে। আমরা এসব শয়তানিপনা থেকে আল্লাহর কাছে ফানাহ চাই।

আসুন প্রথমত, বিষয়টিকে মাকাসিদে ইসলামের আলোকে দেখি। ইসলাম বলছে-

সমগ্র সৃষ্টি আল্লাহর পরিবার। গোটা মানবজাতি আল্লাহর নবী আদম-নূহেরই সন্তান। গোটা উম্মাহ একটি দেহের মতোই। তাহলে আল্লাহর বান্দা/খলিফা হিসেবে, সমগ্র সৃষ্টির প্রতিই আমার দায়িত্ব আছে, একি আইন করে বলার দরকার আছে? গোটা মানবজাতির প্রতি কী আমার দায়িত্ব নেই? একই ভাবে আমার দায়িত্ব আছে উম্মাহর প্রতিও। -কতোটুকু দায়িত্ব? –যতটুকু আমার সামর্থ, তার সর্বোচ্চটুকু। এই দায়িত্ব পালনের ব্যাপ্তি ও গভীরতার উপরই আল্লাহর কাছে আমার জবাবদিহিতা। পুরষ্কার ও শাস্তির মাত্রা এবং সীমা। এই দায়িত্ব ভাঙ্গার নয়, গড়ার। বিচ্ছেদ, বিচ্ছিন্নতা, সম্পর্কহীনতা নয়- বরং সমগ্র মানবজাতির আন্তঃর্জাতিক, জাতীয়, আঞ্চলিকসহ সকল পর্যায়ে সম্পর্ক, সহযোগিতা, সহাবস্থান ও সংহতির।

এবং ঐক্য ও একত্বের ভিত্তির উপর প্রতিষ্ঠিত এই রুপকল্পই- ইসলামী জীবন ব্যবস্থার সামগ্রিক মাকাসিদ(লক্ষ্য)।

পরিবার হলো সেই মানবজাতির, সেই উম্মাহর ক্ষুদ্রতম মৌলিক একক। সবচেয়ে কার্যকর মৌলিক এককও বটে। উম্মাহর জায়গা থেকে দেখলে, এটি আরো সাংঘাতিক গুরুত্বপূর্ণ হয়ে ওঠে। অন্যসব জৈবিক, মানবিক, আবেগিক দিক তো আছেই; একই সাথে পরিবার, উম্মাহর আর্থ-সামাজিক-রাজনৈতিক এককও। সমস্ত অধঃপতনের লাভায় নিমজ্জিত বিধ্বস্ততার পরও উম্মাহর ঘুরে দাঁড়ানোর সম্ভাবনাকে কে আগলে রেখেছে? –পরিবার। পরিবার থেকেই একটি জাতির একটি সভ্যতার অধঃপতন শুরু হয়, এবং সেই পরিবারকে উচ্ছেদ করার ভেতর দিয়েই সম্পন্ন হতে থাকে তার দাফন-কাফন।

০৫.

বলা যেতে পারে, যৌগিক পদার্থের যেমন অণু(molecule) তেমনি পরিবার হচ্ছে বিচিত্র সম্পর্কে জড়িত নানা বয়সী নারী-পুরুষ, সামগ্রিক অর্থে মানবজাতির/উম্মাহর ক্ষুদ্রতম গাঠনিক একক। দুটি হাইড্রোজেন পরমাণু ও একটি অক্সিজেন পরমাণু মিলে যেমন এক অণু পানি। ঠিক একই ভাবে ভিন্নভিন্ন অবস্থান হতে আগত, ভিন্ন ভিন্ন বয়স ও সম্পর্কের সম্মিলনেই একটি পরিবার। একটি অণুকে অক্ষত রাখার প্রয়োজনে প্রতিটি পরমাণু নূন্যতম যতটুকু দায়িত্ব/ভূমিকা পালন করতে হয়, পরিবাবের প্রতিটি সদস্যকেও তাই করতে হয়। পরিবার ভূক্ত কেউ যদি বলে- আমার কোন দায়িত্ব নেই, এর অর্থ হলো- সে পরিবারের মূলেই কুঠার মারতে উদ্যত হচ্ছে! পরিবারের বিরুদ্ধে দাঁড়ানোর মানে প্রকারান্তরে গোটা মানবজাতি/উম্মাহর প্রতিপক্ষেই দাঁড়ানো।

কার দায়িত্ব কি হবে, কতটুকু হবে, দায়িত্ব পালনের ধরণ কী হবে তা ভিন্ন আলোচনা কিন্তু দায়িত্ব আছে। মিসেস রাবেয়ার সাথে আমাদের মত পার্থক্য এখানে। আমরা বউয়ের পক্ষ নিচ্ছি না, শ্বাশুড়িরও না। আমরা বউয়েরও প্রতিপক্ষ নই, শ্বাশুড়িরও বিরুদ্ধে নই। কোনো একটা পক্ষ নিয়ে নিলেই আমরা ইসলামের কালজয়ী ভারসাম্য থেকে ছিটকে পড়বো। তাতে সমস্যা বাড়বে। ক্ষতও বাড়বে। এবং বিপর্যয়কেই ত্বরান্বিত করবে সেটি, ভারসাম্য নয়।

মিসেস রাবেয়া বলছেন- “‘শ্বশুরবাড়ীর প্রতি দায়িত্ব পালন’ - এই টার্ম টার উৎপত্তি ইসলাম থেকে আসে নি”। তারপর মস্করাও করেছেন- “কোরানে বা হাদীসে কোথাও বলা হয়নি, "হে নারী জাতি। শ্বশুরবাড়ীর মানুষদের প্রতি তোমাদের এই এই দায়িত্ব। সবসময় তাদের অনুগত হয়ে থাকবে”।” এই টার্মটি কোত্থেকে এলো? –উনি বলছেন হিন্দুধর্মের ‘কন্যাদান’ প্রথা থেকে। সেখানে নাকি- ‘ধর্মমতে, শ্বশুরবাড়ীর সেবায় মেয়েটাকে দান করে দেয়া হয়”। তার মতে- ‘যৌথ পরিবারের উৎপত্তিও এখান থেকেই এসেছে’। (যদিও তার বাক্যগঠনে কিছুটা সমস্যা আছে, তবু উদ্ধৃতির স্বার্থে আমরা পরিবর্তন করছি না।) তার অনুসিদ্ধান্ত হলো- যেহেতু হিন্দুধর্মের কন্যাদান রীতি থেকে শ্বশুড়বাড়ির প্রতি দায়িত্ব পালনের উদ্ভব এবং সেই সূত্রে যৌথপরিবারের উৎপত্তি, সুতরাং, যৌথপরিবারই ইসলাম সম্মত নয়।

কিন্তু আমরা দেখছি, উনি যেটিকে যৌথপরিবার বলছেন, সেটি আসলে যৌথপরিবার নয়, পরিবার। পরিবারে মা-বাবা থাকবেন, হতেপারে টেম্পরারিলি ছোট ভাই-বোনও থাকবেন। মা-বাবা এবং অস্বাবলম্বী ছোট-ভাই-বোনদের প্রতি আমাদের দায়িত্ব- ইসলাম নানা অবস্থান থেকে বৈচিত্রপূর্ণ কায়দায় পালনযোগ্য করে নির্দেশনা দিয়েছে। একজন পুরুষের জন্য বেসিক্যালি তার মা-বাবা, স্ত্রী, সন্তানাদি এবং টেম্পরারিলি ছোট ভাই-বোন(যদি থাকে) হলো ক্লোজড গ্রুপ/পরিবার। একজন নারীর জন্য তার স্বামী-সন্তানাদি-শ্বশুড়-শ্বাশুড়ি এবং টেম্পরারিলি দেবর-ননদ(যদি থাকে) মিলেই পরিবার। এর বাইরে প্রাইওরিটি বেসিসে দুই একান্ত আত্মীয় পরিবারের পারষ্পরিক দায়িত্ব তো আছেই।

০৬.

তাহলে, পরিবার নিয়ে ইসলামের মাকাসিদের জায়গায় দাঁড়িয়ে আমরা দেখতে পাচ্ছি- রাবেয়া বসরী অহীর বক্তব্যের বিপরীতটাই সত্য। ‘শ্বশুরবাড়ীর প্রতি দায়িত্ব পালন’ টার্মটি আসলে ইসলাম থেকেই এসেছে। ধর্মমতে ‘কন্যাদান’ রীতিতে যে কন্যা দান হয়ে যায়- সে কন্যা শ্বশুরবাড়িতে যা করে তা দায়িত্ব পালনের প্রয়োজনে নয়, হতে পারে তার অনোন্যপায় পরাধীন জীবনের নিয়তি হিসেবেই সে তা করে। কারণ-

দায়িত্বপালন আসলে ধর্মমতে দান করা কন্যা দিয়ে হয় না। দায়িত্ব পালন হয় স্বাধীন ইচ্ছে শক্তির অধিকারী মানুষের জবাবদিহিতার অনুভূতি থেকে। এবং সেটি একজন মুসলিম নারীই করতে পারে। ইসলাম তাকে দায়িত্ব পালনের উপযোগি অধিকার এবং স্ট্যাটাস দিয়েছে। একই সাথে রয়েছে স্রষ্টার নিকট তার জবাবদিহিতা, পুরষ্কার ও শাস্তির যোগসূত্র।

মিসেস রাবেয়া যেটিকে শ্বশুড়বাড়ির প্রতি দায়িত্বপালন বলছেন, অন্যভাবে বললে সেটি মুলত পরিবারের প্রতিই দায়িত্বপালন। দায়িত্বপালন আত্মীয়-স্বজনের প্রতি।

একজন মুসলিম নিশ্চয় তার পরিবার, আত্মীয়-স্বজনদের প্রতি দায়িত্বজ্ঞানহীন হতে পারেনা। প্রতিবেশীর প্রতি দায়িত্বের তাগিদ শুনে রাসূলুল্লাহর সাহাবীরা যখন মনে করে নেয়, হতে পারে প্রতিবেশীকে আমাদের উত্তরাধিকারি বানিয়ে দেবে- তখন নিজের পরিবারের প্রতি, একান্তভাবে সংযুক্ত আত্মীয়-স্বজনের প্রতি দায়িত্ব পালনের ক্ষেত্রে আমরা কিভাবে ঘুরে ঘুরে ফরজ-ওয়াজিবের ছুঁতো খুঁজতে পারি? শরীয়ার মাকাসিদকে তুচ্ছ-জ্ঞান করে কিভাবে বলতে পারি ওটা আমার জন্য ওয়াজিব না। ওটা আমার নাম ধরে ডেকে ডেকে বলা হয়নি?...

০৭.

যারা বিতর্কে জড়ানোর জন্য বিষয়বস্তু হৃদয়ঙ্গম না করে অপ্রাসঙ্গিক মন্তব্য করছেন, তাদেরকে বিনয়ের সাথে আমরা আবারও ক্লিয়ার করতে চাচ্ছি- আমরা এখানে কোনো পক্ষ নই।

আমরা একপাক্ষিক দায়িত্বের কথাও বলিনি, বলছিনা। বউয়ের প্রতি শ্বাশুড়ির দায়িত্ব আছে। শ্বাশুড়ির প্রতি বউয়ের দায়িত্ব আছে। ইসলাম যে সুন্দর ভালোবাসা-স্নেহ-শ্রদ্ধা-সহানুভূতিপূর্ণ পরিবারের রুপকল্প আমাদের দেখায় সেখানে সবাই দায়িত্বশীল। সবাই গুরুত্বপূর্ণ। হতে পারে আমাদের সংস্কৃতিগত দোষ-ত্রুটি, বদস্বভাব-অভ্যাসবশত কখনো বউয়ের প্রতি, কখনো শ্বাশুড়ির প্রতি, কখনো কখনো পরিবারের অন্য কারো প্রতি বাড়াবাড়ি হয়ে যায়, জুলুম হয়ে যায়। বিশেষত একটি মেয়ে যখন শ্বশুড়বাড়ি যায়, আমাদের দু-পক্ষেরই মনস্তাত্ত্বিক সংকীর্ণতার কারণে এক ধরণের টানা-পোড়েন তৈরী হয়। একপর্যায়ে একটি অঘোষিত দ্বান্দ্বিক সমঝোতা না হওয়া পর্যন্ত, এই সমস্যার খানিকটা প্রকট উপস্থিতি থেকে যায়।

সেই সুযোগে শয়তান যেনো সুফিরিওরিটি কমপ্লেক্সের ভেতর দিয়ে আমাদের এতোদূর বাড়াবাড়িতে না নিয়ে যায় যে- আমরা বলে বসবো ছেলেকে বিয়ে দিলেই যতো সমস্যা! কিংবা ইনফিরিওরিটি কম্পলেক্স-বশে এও যেনো ধারণা করে না বসি- ধ্যাত, শ্বশুড়বাড়ির প্রতি আমার কোন দায়িত্বই নেই! তারপর ইসলামের সামগ্রিক মাকাসিদের বিপরীতে দাঁড়িয়ে নিজেকে জাস্টিফাই করার ব্যর্থ প্রচেষ্টা! আসুন না, প্রয়াসটা আমরা নানা অজুহাতে(যেমন- পর্দা ইত্যাদি) বিভেদ ও বিচ্ছিনতার দিকে না নিয়ে সহানুভূতি-সহাবস্থান ও সহযোগিতার অভিমুখে সঞ্চালিত করি। মুমিন পুরুষ ও মুমিন নারী, না পরস্পরের বন্ধু ও সহযোগী!(০৯:৭১)। রাসূলুল্লাহ না বলেছেন- তুমি তোমার ভাই(বোন)কে সাহায্য করো, যদি সে মজলুম হয়। এবংকি যদি যে জালিমও হয়! -জালিমকে সহযোগিতা? হ্যাঁ। তাকে জুলুম থেকে ফিরিয়ে রাখা, ফিরিয়ে আনাই তার প্রতি সহযোগিতা। হায়! আমার বউ, আমার শ্বাশুড়ি, আমার স্বামী অন্যের প্রতি জুলুম করে তো সে প্রকৃতপক্ষে নিজের ওপরই জুলুম করছে, আমি তাকে সাহায্য না করে ছেড়ে যাবো!! আমি না মুসলিম, ইসলামিস্ট!

০৮.

তবে হ্যাঁ, ইসলাম নাম ধরে কেনো বলেনি- ‘হে নারী জাতি। শ্বশুরবাড়ীর মানুষদের প্রতি তোমাদের এই এই দায়িত্ব’? সেটি একটি প্রশ্ন হতে পারে বটে। কেন হবে না? ফজর নামাজের এতো দীর্ঘ ওয়াক্ত থাকার পরও কেন নামাজ মাত্র দুই রাকাত হলো- সেই প্রশ্নও তো সাহাবীরা তুলেছে। তুলেনি!? তাহলে শ্বশুড়বাড়ির প্রতি নারীর দায়িত্ব ইসলাম কেনো ওয়াজিব করেনি, কেনো একটা একটা করে বলে দেয়নি, সে ব্যাপারে আমরা শরীয়া প্রিন্সিপলস’এর আলোকে পরবর্তীতে আলোচনার জন্য তোলা থাক।

বিষয়: বিবিধ

১৫৫৬ বার পঠিত, ১ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

357278
২০ জানুয়ারি ২০১৬ সকাল ০৬:৫৫
বিবর্ন সন্ধা লিখেছেন : আমি যে টা বুঝি সেটা হল, সবাই যদি ইসলামিমনা হয় ,তবে যোওথ পরিবার কোন কঠিন বিষয় ই নয় , একদম পানিভাত..
Cook
আললাহ আমাদের বুজার বুঝ দিক . আমিন

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File