আরোপিত 'শিয়া-সুন্নি বিভেদ': অবসান অনিবার্য
লিখেছেন লিখেছেন শাহাদাত মাহমুদ সিদ্দিকী ২৭ ডিসেম্বর, ২০১৫, ০১:২৭:৫২ রাত
রাসূলুল্লাহর সুন্নাহর অনুসারিরাই যদি সুন্নি হয়,
আর হযরত আলীর অনুসারিরাই যদি শিয়া হয়-
তাহলে বিভেদ তো দূরের কথা, গুরুতর কোনো মতভেদও থাকার কথা না। আলীর অনুসারিরা তো রাসূলেরই অনুসারি-
“আমি যার মাওলা আলীও তার মাওলা। হে আল্লাহ, যে আলীর সঙ্গে বন্ধুত্ব রাখে তুমিও তার সঙ্গে বন্ধুত্ব রাখ, যে আলীর সাথে শত্রুতা রাখে তুমিও তার সাথে শত্রুতা রাখ”( মুসলিম, মুসনাদে আহমদ)।
আবার-
“যে আলীকে দোষারোপ করল, সে আমাকে দোষারোপ করল, আর যে আমাকে দোষারোপ করল সে আল্লাহকে দোষারোপ করল। এবং আল্লাহ তাকে মুখ নিচু করে দোজখে নিক্ষেপ করবেন”(বুখারী, তিরমিজি)।
কিন্তু বিভেদ আছে। গুরুতর শিয়া-সুন্নি বিভেদ!
যেহেতু রাসূলুল্লাহর সাথে আলীর সম্পর্কে কোনো সমস্যা ছিলোনা, বরং খায়বারের যুদ্ধ সাক্ষী, রাসূলুল্লাহ বলেছেন- "আগামীকাল আমি এমন একজনের হাতে পতাকা দেব যে আল্লাহ ও তাঁর রাসূলকে ভালবাসেন এবং আল্লাহ ও তাঁর রাসূলও তাঁকে ভালবাসেন"- সুতরাং, সমস্যা অনুসারীদের মাঝে।
০২.
তবে কি সুন্নিদের রাসূলের সুন্নাহ অনুসরণে ভ্রান্তি ঘটেছে ও ঘটছে? নাকি আলীকে গ্রহণ করার ক্ষেত্রে শিয়াদের বাড়াবাড়ি হয়েছে ও হচ্ছে! হতেই পারে! প্রয়োজন উভয় পক্ষের এগিয়ে আসা। কারণ শিয়া-সুন্নি যুগের পরিসমাপ্তি ঘটে গেছে। আজ থেকে নয়। আজ থেকে সহস্রাধিক বছর পূর্বে, ইমাম মাহদী যেদিন থেকে দীর্ঘকালীন অন্তর্ধানে গেছেন, ঠিক সেদিন থেকে! কিংবা তারও আগে, তাঁর উপস্থিতির দিনটি থেকে...
তাহলে আপনি এখন 'মূলধারা'র শিয়া থাকতে পারেন, কিংবা থাকতে পারেন মূলধারার সুন্নি, কোনো সমস্যা নেই। আজ সবার সমস্যা এক, ইমামও এক।
সমস্যা শিয়া-সুন্নি নয়, সাম্রাজ্যবাদ। আল্লাহর প্রভূত্বের পরিবর্তে সর্বত্র দাজ্জালের প্রভূত্ব। পৃথিবীতে যদি আল্লাহর সার্বভৌমত্বই না থাকলো, যদি দাজ্জাল-ভ্রাতাদের আধিপত্যই থেকে গেলো- তাহলে শিয়া-সুন্নি দিয়ে আর কি হবে!
আজ বাংলাদেশের মূলধারার সুন্নিরা কি শিয়াদের বিরুদ্ধে লড়ছে?
ঈজিপ্টে কি শিয়ারা প্রতিপক্ষ!
বিশ্বব্যাপী সুন্নিরা আজ দেশে দেশে সাম্রাজ্যবাদ ও তার দেশীয় দালালদের প্রতিপক্ষে জীবন দিচ্ছে। শিয়া-সুন্নি বিভেদের হোতারা তো কই কোথাও সুন্নিদের পক্ষ নিলো না। সর্বত্র নিয়েছে ও নিচ্ছে- পাশ্চাত্যের পিশাচদের পক্ষ, প্রকাশ্যে এবং অতীতের যেকোনো নির্লজ্জতাকে অতিক্রম করে!!
০৩.
তাই শিয়াদের মতো সুন্নিদেরও আজ প্রার্থনা- আল্লাহ ইমাম মাহদীর আবির্ভাব ত্বরান্বিত করুন। সময় এসেছে- আজকের এই ঝঞ্ছা বিক্ষুব্ধ দিনে- শিয়া-সুন্নি নির্বিশেষে সেইসব মহান ইমামদের যুগান্তকারী চিন্তা ও আমরণ আপোসহীন সংগ্রামী জীবনগুলোকে আত্মস্থ করার। ফিকহগত বিতর্কগুলোর রাজনীতিকীকরণ না করে যুগের ফকীহদের হাতেই ছেড়ে দিন। কারণ শিয়ারা যদি রাসূলুল্লাহ, আলী ও পরবর্তী ইমামদের অনুসারী হয়, আর সুন্নি যদি রাসূলের সুন্নাহ, হিদায়াতপ্রাপ্ত সাহাবী ও পরবর্তী সত্যপন্থি ইমামদের মান্য করেন- তাহলে লড়াই এবং সংগ্রাম ছাড়া আর কোনো পথ, কারো জন্যই অবশিষ্ট নেই।
তাদেরকে লড়তে হবে তাদের অভ্যন্তরে সাম্রাজ্যবাদের এজেন্ট 'শিয়া', ছদ্মবেশী দালাল সুন্নিদের প্রতিপক্ষে। একই সাথে দাজ্জাল-গর্ভা এই পৈশাচিক সভ্যতার প্রতিপক্ষে তো বটেই।
সুতরাং, আল্লাহর পথে সংগ্রামী শিয়া ও সংগ্রামী সুন্নিদের বিভেদ হারাম। সে তো মুহাম্মদ ও আলীকে আলাদা করে ফেলারই নামান্তর। অথচ রাসূলুল্লাহ বলেছেন-
"হে আলী, আমার কাছে তুমি ঠিক তদ্রূপ, যেমন হারুন (আ.) ছিলেন মুসা (আ.) এর কাছে। তবে পার্থক্য এই যে, আমার পরে আর কোনা নবী নেই"(বুখারী ও মুসলিম)।
বিষয়: রাজনীতি
১২৩১ বার পঠিত, ৭ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
আজ?
তারা বুঝেছে রক্তক্ষয় নয়, সমঝোতাই সমাধান।
এটাই হচ্ছে ট্রায়াল এন্ড এরোর, এক পর্যায়ে সে সমাধানে পৌঁছে, ভারসাম্যপূর্ণ সিনথিসিস করতে সমর্থ হয়।
শিয়া-সুন্নি ব্যাপারটাও অনেকটা তেমনই। দু'পক্ষই এগিয়ে আসবে, আসতে বাধ্য হবে- লড়াইয়ের ময়দানে মিত্রের খোঁজে। তখন উভয়পক্ষ দেখবে তাদের পার্থক্য বিভেদের মতো গুরুতর নয়!
আরো একটু সময় লাগবে বৈ কী!
অনেক ধন্যবাদ আপনাকে!
ইসলাম কারো ওপর অন্যায় যুদ্ধ, হত্যা, আধিপত্য অনুমোদন করেনা, বরং প্রতিহত করে। যে ঘটনাগুলোর উল্লেখ করলেন সেগুলোর কনসিকোয়েন্সই মুসলিম উম্মাহ আজও বয়ে বেড়াচ্ছে, জানিনা কতোদিন বয়ে বেড়াবে...
আপনি ইসলাম সম্পর্কে অনেক খোঁজ-খবর রাখেন দেখছি। ধন্যবাদ আবারও!
হীরার কদর বাদশা বোঝে
আর যে বোঝে স্বর্ণকার,
কেমন করে চিনবে তারে,
বাইদানী আর কর্মকার?
শিয়া ভাইদের সাথে আমাদের মূল পার্থক্য হলো- ইমামাত নিয়ে। এরমধ্যে আবার ইমামাত ও খিলাফাত দুটো কন্সেপ্ট দাঁড়িয়েছে। সো, সবকিছুকে বিবেচনায় এনে শিয়াদের ব্যাপারে কথা বলতে হবে।
১০০বছর আগে শিয়ারা কি ছিল, তাদের নিয়ে ইমাম শাফি কি বলেছে, ইবনে তাইমিয়া কি বলেছে- এগুলো চূড়ান্ত ব্যাপার না। উনারা যা দেখেছে, যা তথ্য তাদের কাছে ছিলো, তা'ই বলেছে। আমরাও তো দেখছি... ইরানে সর্বোচ্চ ধর্মীয় নেতা সম্প্রতি বলেছেন- সুন্নি সম্প্রদায়ের সম্মানিত ব্যক্তিদের কটুক্তি করা হারাম। মানে কি? সবার উপলব্ধিতে গভীরতা আসা উচিত।
যাই হোক, যদি সুযোগ হয়- এ বিষয়ে আরো খানিকটা লিখার ইচ্ছে আছে। আল্লাহ সবার মঙ্গল করুক...
মন্তব্য করতে লগইন করুন