এক মঞ্চে দুই ফাঁসি: চূড়ান্ত ফায়সালার অভিমুখে মানব জাতির ইতিহাস

লিখেছেন লিখেছেন শাহাদাত মাহমুদ সিদ্দিকী ০২ ডিসেম্বর, ২০১৫, ০২:৪৭:৪৪ রাত



ক্যাপিটালিজমের পশ্চিমা উদারতাবাদী গণতন্ত্র, সাথে যুক্তরাষ্ট্রের মোড়লীপনা। একেই মানব ইতিহাসের শেষ গন্তব্য, মানবজাতির অন্তিম নিয়তি ঘোষনা করেছেন মার্কিন সাম্রাজ্যবাদের এক ধ্বজাধারী- ফান্সিস ফুকুয়ামা। মার্কিন এই রাষ্ট্র চিন্তক কতোই না অজ্ঞ ছিলেন সমাজতত্ত্বে! তিনি জানতেন না- ‘ এ – তো কালের উত্থান পতন মাত্র, মানুষের মধ্যে আমি এর আবর্তন করে থাকি ‘(০৩:১৪০)৷ আরও যা তিনি ভাবতে পারেননি- মানব ইতিহাসে রক্তের দু’টো ধারা আজও উত্তাল, প্রবল প্রবহমান। আর যা-ই হোক এ দু’টো রক্ত স্রোতের দায় না মিটিয়ে ইতিহাস মরতে পারেনা। এর কিয়দংশ বুঝেছিলেন স্যামুয়েল হান্টিংটন! সেই থেকেই তো ইতিহাসকেই তাদের যতো ভয়। তাকে খুন করতেই ‘সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে অনন্ত যুদ্ধ’! ইতিহাসই আজ সন্ত্রাসী তাদের কাছে! হায়! ফুকুয়ামার সভ্যতা জানেনা যে- ইতিহাসের অস্বাভাবিক মৃত্যুর কোনো ইতিহাস ইতিহাসে নেই!

০২.

মানব ইতিহাসের সমস্ত কায়েমী স্বার্থবাদী ধর্ম কিংবা মতাদর্শের অনুচর আপাদ-মস্তক ভন্ডদের মুখোশ চিরতরে উম্মোচিত করার ধারায় সৃষ্ট রক্তের এই যুগল যোজনা। শুধু তাই নয়, পৃথিবীর শেষ সম্ভাবনাময় দিনটি পর্যন্ত তা বিদ্যমান রাখার যাবতীয় উপায় উপকরণ মজুদ থাকার প্রেক্ষিতে সে ইতিহাস উত্তাল হয়ে ছিলো এবং আছে। এবং দু’টো ধারার মোহনায় দাঁড়িয়ে আছেন একজন মানুষ। বর্তমান ও ভবিষ্যত ইতিহাস নির্মাতা একমাত্র মহামানব। বিশ্বনবী মুহাম্মদ। (তাঁর অনুসারিরা কি পড়বেন, পড়বেন। আবার ইসহাক নিউটনের নামের আগে যারা ‘স্যার’ উচ্চারণ করেন, আলেকজান্ডারের নামের পরে ‘দ্য গ্রেট’ না বলে যারা থামতে পারেন না কিংবা মোহন দাস গান্ধীকে ‘মহাত্মা’ না বললে যাদের জাত যাওয়ার ভয় হয়- তারাও সংগত কারণেই এই মহামনবের নামের সাথে কি পড়বেন নিজ গরজে পড়ে নেবেন। আপনাদের প্রগতিশীলতা সাক্ষী, উনাকে আখেরি রসূল বিশ্বাস না করলেও তার অমোঘ মহত্তে কোন দাগ পড়েনা।)

মানব ইতিহাসের এই সর্বোত্তম মহামানবের প্রতিপক্ষে রক্তের পয়েলা ধারা সৃষ্টি করেছিল আরবের কুরাইশরা। আরো সুনির্দিষ্ট করে বললে- বণি উমাইয়া গোত্র। রাসূলকে রাসূল হিসেবে জানার পরও এই রক্তপাত থেকে তারা সরে দাঁড়ায়নি। একটাই কারণ- গোত্রীয় কায়েমী স্বার্থবাদ। গোত্রীয় পূঁজিবাদ। বলতে পারেন গোত্রীয় সাম্রাজ্যবাদ। বিশ্বনবীর মক্কা বিজয়ের পর উমাইয়া সর্দার আবু সুফিয়ান, তার স্ত্রী হিন্দা এবং তাদের সন্তান মুয়াবিয়ার নিরুপায় ইসলাম গ্রহণের ভেতর দিয়ে আপাত স্থগিত হয়েছিল টানা দুই দশক ধরে প্রমত্ত এই রক্তের ধারা। কিছু দিন না যেতেই হযরত উসমানের শাহাদাতের সূত্র ধরে সেই জাহেলিয়াত আবার আচ্ছন্ন করে তোলে পৃথিবীকে। সেই নিদারুণ জটিল জাহেলিয়াত থেকে আল্লাহর সার্বোভৌমত্বের আলোকে পৃথিবীকে আবার খিলাফাতে রাশেদায় উদ্ভাসিত করার ভূমিকায় সৃষ্টি হয়েছিল কারবালা।

সেই থেকে সেই কারবালার রক্ত-স্রোত বয়ে চলছে… খিলাফাতে রাশেদার বিরহে… মুসলানরুপী মুনাফিকদের কর্তৃত্ব হতে খিলাফাত মিন হাজিন নবুয়াতের অভিমুখে…

অন্য রক্ত ধারাটি তৈরী করেছিল বণি ইসরাইল। বিস্তৃত অর্থে আহলে কিতাব’রা। পৃথিবীর সমস্ত নবী এবং আসমানি কিতাব বিশ্বনবীর আগমন সংবাদ প্রচার করলেও দূর্ভাগ্যজনকভাবে তারা তাকে জেনে বুঝে অস্বীকার করেছে। শুধু অস্বীকার করেই ক্ষান্ত হয়নি। মানুষকে আল্লাহর পথ থেকে বিরত রাখাই হয়ে উঠেছিলো তাদের কর্মনীতি(০৩:৯৯)। শেষ পর্যন্ত তারা নিজেরাই নিজেদেরকে বিপথগামী করে ছাড়লো(০৩:৬৯)। এখানেও সেই কায়েমী স্বার্থবাদ। ধর্মের খোলসে মানবগোষ্ঠীর ওপর একটি বিশেষ শ্রেণির প্রভূত্বকে মানুষের নিয়তি করে তোলার প্রয়াস। নইলে ইসলাম যখন প্রকাশ্যে বলছে- “আমরা আল্লাহকে মানি, আমাদের ওপর অবতীর্ণ শিক্ষাকে মানি, ইবরাহীম, ইসমাঈল, ইসহাক , ইয়াকূব(ইসরাইল) ও ইয়াকূব সন্তানদের(বণি ইসরাইলদের) ওপর অবতীর্ণ শিক্ষাকেও মানি এবং মূসা, ঈসা ও অন্যান্য নবীদেরকে তাদের রবের পক্ষ থেকে যে হিদায়াত দান করা হয় তার ওপরও ঈমান রাখি৷ আমরা তাদের মধ্যে পার্থক্য করি না এবং আল্লাহর হুকুমের অনুগত (মুসলিম)”(০৩:৮৪); অর্থাৎ, তাদের চেনা জানা বহুল আলোচিত নবীদের শিক্ষা মেনে নেয়ার ঘোষণা দেয়ার পর যখন সাদরে সর্বোত্তম উদারতায় আহ্বান করা হয়- “হে আহলি কিতাব! এসো এমন একটি কথার দিকে, যা আমাদের ও তোমাদের মধ্যে একই ধরনের ৷ তা হচ্ছেঃ আমরা আল্লাহ ছাড়া কারোর বন্দেগী ও দাসত্ব করবো না৷ তাঁর সাথে কাউকে শরীক করবো না৷ আর আমাদের কেউ আল্লাহ ছাড়া আর কাউকেও নিজের রব হিসেবে গ্রহন করবে না …’’(০৩:৬৪)- সে কথা আস্বীকার করার আর কি কারণ থাকতে পার?

ফলে যা হবার তা’ই হলো। আল্লাহকে বাদ দিয়ে আল্লাহর নামে অপূর্ণাঙ্গ, খন্ডিত, বিকৃত ধর্মগ্রন্থের মাধ্যমে অসার পীর-পুরোহিতদের সার্বভৌমত্ব মানার ভেতর দিয়ে, যা তাদের অনেক পুরাতন বিমার(০৯:৩১), কালক্রমে ইউরোপে চেপে বসেছিল যাজকতন্ত্র। এবং সেই ভ্রান্ততন্ত্র ধরে রাখার বিস্ফোরক আবেগে থেকে ক্রুসেডের বাড়াবাড়ি। মজার ব্যাপার যেটি- পাদ্রী-পুরোহিতদের প্রোপাগান্ডায় বিভ্রান্ত ধারণার বশবর্তী সাধরণ ক্রুসেডাররা ইসলামী আদর্শ ও সভ্যাতার যে ক্ষয়িষ্ণু ছিঁটে-ফোটা দেখেছিল নিজেদের অসভ্যতা, বর্বরতা উপলব্ধির জন্য সেটুকুই যথেষ্ট ছিল। এবং তাতেই শুরু হয়েছিলো ইউরোপের রেনেসাঁ। আজ ফুকুয়ামা কিংবা হান্টিংটনের সভ্যতার ‘সভ্য’রা কথায় কথায় মুসলমানদের অসভ্য, বর্বর বলা- ক্রুসেডারদের সভ্যতার ইনফিরিয়রিটি কমপ্লেক্স ছাড়া কিছুই নয়। তারপরের ইতিহাস নিতান্তই সাম্প্রতিক। হাঁকডাক করে সেকুলারিজম এলো। মানুষের উপর প্রণীত হলো মানবরচিত সংবিধান। সেই পাদ্রীদের মতোই। আখেরী রাসূলকে আস্বীকার করে পাদ্রীরা আল্লাহর নামে নিজেদের প্রভূত্ব চাপিয়ে দিয়েছিলো। আর এরা সেকুলারিজমের মোড়কে পার্লামেন্টের নাম দিয়ে প্রভূত্ব করলো। অর্থাৎ, ঘটনাক্রমে সেই একই স্বার্থপরতা আবার ফিরে আসলো।

মার্ক্সিজম যখন একে এবড়ো-থেবড়ো চিনতে লাগলো ততদিনে সেটি লেবিয়াথান হয়ে উঠেছে, দানব হয়ে উঠেছে, দাজ্জাল প্রসবের আয়োজন শুরু করেছে… তারপর সেই ঔপনীবেশীক লুন্ঠনযজ্ঞ, সাম্রাজ্যবাদের খুন প্রবাহের ইতিহাস। ইতিহাস- আল্লাহর সার্বভৌমত্বের পরিবর্তে মানুষের ওপর মানুষের প্রভূত্বের। ফেরাউন-নমরুদ’দের উত্তরসূরী কায়সার ও কিসরার থেকে ইসলাম মানবজাতিকে মুক্তি দেয়ার পর সেই জাহেলিয়াত আবার মানবজাতির ওপর চেপে বসেছে। ফিলিস্তিন থেকে শুরু করে পৃথিবীর সর্বত্র মজলুম বিশেষত মুসলমানদের খুন প্রবাহিত হচ্ছে অকাতরে…

০৩.

লক্ষ করলে দেখা যাবে, এই- ইসলামের নামে উদ্ভূত মুসলিম উম্মাহর ওপর চেপে বসা রাজতান্ত্রিক সাম্রাজ্যবাদ এবং পাশ্চাত্যের পুঁজিবাদী সাম্রাজ্যবাদের যুগল উত্থান অনেকটা হাত ধরাধরি করেই। যদি রাজতান্ত্রিক সাম্রাজ্যবাদে রুপান্তরিত না হয়ে খিলাফাতে রাশেদা একটা মিনিমাম শক্তি নিয়ে টিকে থাকত তাহলে পাশ্চাত্য সভ্যতা কোনো দিনও দাজ্জাল তৈরীর পর্যায়ে আসতে পারতো না।

ইন্টারেস্টিং হলো আজও তারা এক সাথেই আছেন। তাদের হাজারও রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক, সাংস্কৃতিক পার্থক্যসহ আরো অনেক প্রকাশ্য-অপ্রপকাশ্য বৈপরিত্ব্য সত্ত্বেও! এবং চোখ বন্ধ করে বলে দিতে পারেন- ইতিহাসের এমন অমোঘ বন্ধন তাদের একসাথ করেছে যে চূড়ান্ত ফয়সালা পর্যন্ত ইতিহাসের আর কোনো উত্থান-পতন তাদের গাঁট-ছড়ায় বিঘ্ন ঘটাতে পারবে না।

তাহলে দেখা যাচ্ছে, সুস্পষ্ট নিদর্শনাবলী সত্ত্বেও, এবংকি তাদের ধর্মগ্রন্থে হযরত ঈসা মাসীহের দ্ব্যর্থহীন শেষ উপদেশ সত্ত্বেও(তথাপি আমি তোমাদিগকে সত্য বলছি, আমার যাওয়া তোমাদের পক্ষে ভালো, কারণ আমি না গেলে সেই সহায় তোমাদের নিকট আসবেন না: কিন্তু আমি যদি যাই তবে তোমাদের নিকট তাকে পাঠিয়ে দেব। –যোহন(১৬:০৭), আহমদ দীদাত রচনাবলী, ইফাবা-দ্বিতীয় সংস্করণ।) বিশ্বনবী মুহাম্মদকে অস্বীকারের ভেতর দিয়ে মানুষের/পুঁজির সার্বভৌমত্বে তৈরী করলো পুঁজিবাদ। তারপর ক্রুসেডের উন্মাদনায় বিশেষত মুসলিম উপনীবেশিক দেশগুলোতে বৃটেন, ফ্রান্স, ইতালী, পূর্তগীজসহ তাদের সাঙ্গ-পাঙ্গরা যে রক্তের স্রোত বইয়ে দিয়েছিলো… যে সভ্যতা তাদের অর্থহীন অহংকারের আগ্রাসনে কোটি-কোটি বণি আদমকে বলি দিয়েছিলো, তার শেষ ফায়সালা না হওয়া পর্যন্ত ইতিহাস শেষ হওয়া তো দূরা থাক একমাইক্রো সেকেন্ড থামতেও পারবে না।

আবার আল্লাহর নিরংকুশ সার্বভৌমত্বের পরিবর্তে গোত্রীয় আধিপত্যের চেতনায় যারা মুসলিম উম্মাহ এবং বৃহত্তর অর্থে সমগ্র মানবজাতিকে মানুষের গোলামী সূত্রে নিক্ষেপ করেছে এবং সেই অশ্লীল শয়তানি অহংকারে মানবজাতির সাম্য ও ঐক্যকে সর্বোচ্চ কূট-কৌশলে বিধ্বস্ত করে রেখেছে… যারা কারবালার দিবস থেকে মুসলিম উম্মাহর ওপর কারবালার স্থায়ী খড়গ খাড়া করে রেখেছে… কারবালা থেকে শুরু করে মুসলিম উম্মাহ এবং তাদের কলিজার আবেগ ইমামদেরকে একের পর এক রক্ত গোসল দিয়েছে… তার প্রতি ফোটা রক্তের প্রতিশোধ না নেয়া পর্যন্ত,… সেই মুয়াবিয়াতন্ত্র-এজিদতন্ত্রের চূড়ান্ত দাফন-পরবর্তী খিলাফাত মিন হাজিন নবুয়াত প্রতিষ্ঠা পর্যন্ত… ইতিহাস পরিসমাপ্ত হতে পারেনা। সেই সম্ভাবনা ইতিহাস নিজেই নাকচ করে রেখেছে।

০৪.

ইতিহাস সেই একই মঞ্চে ইসলামের লেবাসে পরিচালিত আল্লাহর সার্বভৌমত্ব ও মানবিক সাম্য বিরোধী রাজতান্ত্রিক সাম্রাজ্যবাদ, এবং তার প্রেতাত্মা দানবিক পিশাস পাশ্চাত্য সাম্রাজ্যবাদের ফাঁসির চূড়ান্ত রায় দিয়ে রেখেছে। তার আগে ইতিহাসের কোন সমাপ্তি নেই, অবসরও নেই। ইতিহাস সুস্পষ্ট সমীকরণে এগুচ্ছে। ইঙ্গ-মার্কিন-সৌদি-ইসরাইল ব্লকে(দাজ্জাল ইহুদী জাতির মধ্য থেকে এবং ইহুদী ও মুনাফিকরা তার অনুসারি হবে-মুসলিম) সংগত কারণেই যুক্ত হচ্ছে মানব ইতিহাসের আরেক নিকৃষ্ট বিভেদ-বাদক সাম্য-হন্তারক ব্রাহ্মণ্যবাদ। ইতিহাস যেন বলে কয়েই শুরু করেছে সে দন্ড কার্যকরেরই কর্মযজ্ঞ। এক মঞ্চে দুই ফাঁসি। তাদের শেষ কৃত্যের জন্য, অভিশপ্ত কফিনে শেষ পেরেক ঠুকে দিতে দুইজন মহামানবকে চূড়ান্তও করে রেখেছে ইতিহাস। দুজনই ইব্রাহীমের বংশধর। তার সুযোগ্য উত্তরসূরি, অনুসারি বিশ্বনবীর। “তারা বলে, তোমরা ইহুদী অথবা খ্রীষ্টান হয়ে যাও, তবেই সুপথ পাবে। আপনি বলুন, কখনই নয়; বরং আমরা ইব্রাহীমের ধর্মে আছি যাতে বক্রতা নেই। সে মুশরিকদের অন্তর্ভুক্ত ছিল না (০২:১৩৫)। একজন ইসহাকের সন্তান ইয়াকুব(ইসরাইল)হতে। বণি ইসরাইলের সর্বশেষ মহাপুরুষ। অন্যজন ইসমাইল হতে আখেরি রাসূল হয়ে আহলে বাইতের সর্বশেষ মহাপুরুষ।

কারো ঋণ রেখে ইতিহাস শেষ হয় না, রক্তের ঋণ রেখে তো নয়ই, হতে পারে না- মি. ফুকুয়ামা।

কারো ব্রাহ্মণ্যের ধার ইতিহাস ধারে না। ইতিহাস বড়ই নির্মম সমতা চর্চায় অভ্যস্ত, মি. হান্টিংটন!...

(এরপর ‘এক মঞ্চে দুই ফাঁসি: বাংলাদেশ পর্ব’)

বিষয়: রাজনীতি

১৫১৭ বার পঠিত, ৮ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

352355
০২ ডিসেম্বর ২০১৫ রাত ০৪:১৫
সাদাচোখে লিখেছেন : আসসালামুআলাইকুম।

শক্তিশালী রচনা। কিছু বিষয় সাধারনভাবে না দেখলে, লিখাটি আরো পূর্নতা পেত বলে মনে হয়েছে।

যেমনঃ মুসলিম উম্মাহর ওপর চেপে বসা রাজতান্ত্রিক সাম্রাজ্যবাদ এবং পাশ্চাত্যের পুঁজিবাদী সাম্রাজ্যবাদের যুগল উত্থান অনেকটা হাত ধরাধরি করেই।

>>> আমার বিশ্বাস মুসলিমদের এ্যালায়েন্স এর পেছনে কিংবা এই হাত ধরাধরির পেছনে - কোরানের ভবিষ্যতবানী তুল্য সুরা মায়েদার ৫১ নং আয়াতটি কাজ করেছে।

যদি রাজতান্ত্রিক সাম্রাজ্যবাদে রুপান্তরিত না হয়ে খিলাফাতে রাশেদা একটা মিনিমাম শক্তি নিয়ে টিকে থাকত তাহলে পাশ্চাত্য সভ্যতা কোনো দিনও দাজ্জাল তৈরীর পর্যায়ে আসতে পারতো না।
>>> ফ্যাক্টস্‌ বরং এটাকে বেশী সাপোর্ট করে যে - দজ্জাল কিংবা দাজ্জালিক ফোর্স এর নিউক্লিয়াস তথা ভ্যাটিকান - জেরুজালেমকে ইসলামের হাত হতে মুক্ত করার নিমিত্তে যে ক্রুসেডের সূচনা করেছিল তাতে ব্যার্থ হয়ে (দাজ্জালিক ফোর্স এর শরীর তথা ইংল্যান্ডকে) খেলাফত ভাংগা গড়ার জন্য কাজ করিয়েছে এবং চুড়ান্ত প্রতারনাকে সম্বল করে সাফল্যের সূচনা করতে পেরেছে বিভিন্ন ভাংগা গড়ায় ইন্দন দিয়ে দিয়ে অটোম্যান খেলাফত স্টাবলিশ করার মাধ্যমে - যার চুড়ান্ত সাফল্য নিশ্চিত হয়েছে ১৯২৩ এ এসে।

ধন্যবাদ লিখাটি শেয়ার করার জন্য।
০৪ ডিসেম্বর ২০১৫ সকাল ০৫:৫৫
292773
শাহাদাত মাহমুদ সিদ্দিকী লিখেছেন : সালা্ম...
আল্লাহ আপনার মঙ্গল করুন আয়াতটির সন্ধান দিলেন...মুসলমানদের সাথে শত্রুতায় ইহুদী ও মুশরিকদের বাড়াবাড়ি নিয়ে এরকম আরো একটি আয়াত আছে- লিখার সময় খুঁজে পাইনি। পেলে একসময় সংযুক্ত করে নেবো।
এরপর যেটি বললেন, আসলে আমরা যে বলি উমাইয়া খিলাফাত, আব্বাসীয় খিলাফাত- এগুলো কি আসলে খিলাফাত? উদ্দেশ্য ও প্রকৃতির দিক থেকে এগুলো কি রাজতন্ত্র/সাম্রাজ্য নয়? শাসকদের মধ্যে কেউ কেউ হয়তো ব্যতিক্রম আছেন, কিন্তু as a whole এগুলোর একটিও খিলাফাত অর্থে খিলাফাত নয়। অটোম্যান বা উসমানীরা ইসলামের অনেক খেদমত করেছেন, ঠিক; কিন্তু পরিপূর্ণ বিচারে সেটিও খিলাফাতের সামগ্রিক মূলনীতিকে ধারণ করতে পারেনি।
আমরা যেটি দেখি, যে কোনো পরিস্থিতিতে আমাদের প্রাণপ্রিয় ইমামেরা আল্লাহর নিরংকুশ সার্বভৌমত্বের ভিত্তিতে এবং উম্মাহর স্বাধীন ও অংশগ্রহণমূলক সম্মতিতে(বাইয়াত)খিলাফাতে রাশেদার নীতিতে যে ব্যবস্থার স্বপ্ন দেখতেন,সেটাই বরং রোমাঞ্চকর, বেশী গুরুত্বপূর্ণ। আমাদের জন্য, যারা 'খিলাফাত মিন হাজিন নবুয়াত' প্রত্যাশী, সেটাই প্রাসঙ্গিক- রাশেদার ধারাবাহিকতায় আমাদের সত্যপন্থি ইমামরা কি চেয়েছেন, কি স্বপ্ন বুকে নিয়ে নিজেদের নিবেদিত করেছেন...।
তাহলে মনে হয়, আমাদের চারপাশে বিক্ষিপ্ত খিলাফাত বিতর্ক অর্থপূর্ণ গতি পাবে...

যা-ই হোক, গুরুত্বপূর্ণ মন্তব্যের জন্য অনেক ধন্যবাদ আপনাকে...
০৫ ডিসেম্বর ২০১৫ রাত ০৯:৫৯
292901
সাদাচোখে লিখেছেন : খেলাফত নিয়ে ইদানিং আমার আন্ডারস্ট্যান্ডিং অনেক টা এমন শেইফ পাচ্ছে - যেখানে খেলাফতের হার্ট হিসাবে 'শরীয়াহ' বর্তমান কিংবা অনুপোস্থিত - এটা প্রধান বিবেচ্য বলে মনে হয়। এ্যাজ লং এ্যাজ শরীয়াহ বর্তমান ছিল - উম্মাহ এ্যাজ এ হোল স্প্রিচুয়ালী প্রটেকটেড ছিল, গাইডেড ছিল। শরীয়াহ বর্তমান থাকলে উম্মাহর জন্য গাইডেড থাকার সুযোগ ও বর্তমান থাকতো। এবং এ বিষয়ে আমার আন্ডারস্ট্যান্ডিং বলছে শরীয়াহ্‌ খেলাফতের প্রধানতম অনুষংগ কিংবা নিয়ন্ত্রক।

খেলাফতের অপরাংশ তথা শাসকের ভূমিকা আমার কাছে তুলনামূলক সেকেন্ডারী অনুষংগ কিংবা নিয়ন্ত্রক বলে মনে হচ্ছে। উম্মাহ এ্যাজ এ হোল একজন 'পাপী, স্বেচ্ছাচারী, রাজতান্ত্রিক ইত্যাদি অনুষংগে সম্পৃক্ত শাসক' দ্বারা উচ্ছন্নে যেতে পারে না, ধ্বংশ হতে পারেনা। বড় জোর ট্রায়াল ও টারময়েল এ পড়তে পারে - কিন্তু ঈমানে দৃৃ্ঢ়তা বজায় রাখতে পারে - এবং আখেরে রিওয়ার্ডেড হবার জন্য ধর্মীয় বিষয়াদিতে অটল থাকতে পারে।

হয়তো সে জন্য ইসলাম আমাদেরকে লিডারশীফ ফর্মের জন্য ক্লিয়ার কাট কোন নীতিমালা দেয়না বরং বিভিন্ন ফর্মে লিডারশীপ তৈরীর অপশান কিংবা ফর্মূলা উপহার দিয়েছে।

দূর্ভাগ্য জনক ভাবে আমরা মুসলিম রা খেলাফত নিয়ে আলাপ আলোচনায়, দ্বন্ধ-সংঘাতে - লিডারশীপকে অধিক প্রায়োরিটি দিয়েছি বলে আমরা এতভাগে ভাগ হয়েছি কিংবা ইউজড হয়েছি। আমাদের উচিত ছিল আসলে ডিফাইন শরীয়াহর দিকে গুরুত্ব দেওয়া কারন সেটায় বিবেদের সম্ভাবনা যেমন কম ছিল - সেটায় ইউনিটি হওয়ার ও সম্ভাবনা বেশী ছিল।
আল্লাহ ভাল জানেন।
০৬ ডিসেম্বর ২০১৫ রাত ১২:৫৪
292904
শাহাদাত মাহমুদ সিদ্দিকী লিখেছেন : সালাম... আপনার মন্তব্যের প্রথম প্যারার সাথে আমরা একমত। তবে শরীয়াহ 'খেলাফতের হার্ট' তো বটেই, বলতে পারেন সবই। এর প্রতিষ্ঠা পূর্ববর্তী, প্রতিষ্ঠিত থাকা অবস্থায়, এর যে কোনো চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় কিংবা এর পুনরুদ্ধার প্রক্রিয়া সর্বত্রই শরীয়া। আল্লাহর নিরংকুশ সার্বভৌমত্ব বলতে মূলত শরীয়ার এই সর্বব্যাপীতাকেই বোঝানো হয়।

আপনি যথার্থই বলেছেন, "এ্যাজ লং এ্যাজ শরীয়াহ বর্তমান ছিল - উম্মাহ এ্যাজ এ হোল স্প্রিচুয়ালী প্রটেকটেড ছিল, গাইডেড ছিল"- অবশ্যই। শুধু 'স্প্রিচুয়ালি'ই-না, আরো বলতে পারেন আর্থ-সামাজিক-সাংস্কৃতিক-রাজিনৈতিক দিক থেকেও! এখন প্রশ্ন হচ্ছে- শরীয়াকে কে শরীয়া হিসেবে চিহ্নিত করবে? নিশ্চয়ই যুগের সবচেয়ে বড় বড় জ্ঞানী-ফকীহ'রা। কিন্তু দেখা গেলো আপনি জোরপূর্বক 'খলিফা' সেজে আপনার মন মতো উলামা এনে শরীয়ার মুখপাত্র বানালেন। শরীয়া হলো? -হলো না। বরং উল্টোটা হলো, শরীয়ার নামে আপনি প্রকারান্তরে আপনার রাজত্বই ফলাচ্ছেন। সুতরাং, শরীয়াকে মুক্ত রাখার জন্য, কুক্ষিগত হওয়ার যে কোনো সম্ভাবনা রুখে দেওয়ার প্রয়োজনে আপনাকে আল্লাহভীরু ফকীহদের মত প্রকাশের স্বাধীনতা অবাধ করতে হবে। এখানে এসেই যত গন্ডগোল।

কায়েমী স্বার্থবাদী 'খলিফা'রা তা মানতে নারাজ। যুগের ইমামরা তাদের এতো দূর চক্ষুশূল হলো যে- তাদের চাবুক মেরে, জেলে পুরে, বিষ প্রয়োগে শহীদ করে মনের ঝাল মিটিয়েছেন। তার মানে হচ্ছে, ফকীহ বা শরীয়া বিশেষজ্ঞদের মুক্ত রাখার জন্য এবার প্রয়োজন হয়ে দাঁড়াচ্ছে শরীয়া অনুগত আল্লাহভীরু নেতৃত্ব বা খলিফা।

আল্লহভীরু খলিফাকে কিভাবে চেনা যাবে?... হ্যাঁ, তাকে অন্তত এটুকু হতে হবে যে, সে জোরপূর্বক উম্মাহর উপর চেপে বসবে না এবং শরীয়ার সিদ্ধান্তের ব্যাপারে ফকীহদের স্বাধীনতায় হস্তক্ষেপ করবে না, বরং নিজে মানবেন এবং সমাজে ও রাষ্ট্রে তা কার্যকর করবেন।
০৬ ডিসেম্বর ২০১৫ রাত ০১:৩৩
292906
শাহাদাত মাহমুদ সিদ্দিকী লিখেছেন : এটা ঠিক "ইসলাম আমাদেরকে লিডারশীফ ফর্মের জন্য ক্লিয়ার কাট কোন নীতিমালা দেয়না বরং বিভিন্ন ফর্মে লিডারশীপ তৈরীর অপশান কিংবা ফর্মূলা উপহার দিয়েছে"- কিন্তু কোনো অপশন বা ফর্মের মধ্যে 'আমি' নেই, আছি 'আমরা'; কারণ ব্যাপারটা 'উনা'র বা 'আমার' নয়, আমাদের।

তাই আমরা কাউকে জোর করে খলিফা বানাতে পারি, সে অধিকার আমাদের আছে। কিন্তু আমি বলতে পারিনা যে, আমিই খলিফা হবো, সে অধিকার শরীয়া আমাকে দেয়নি। বরং শরীয়া বলছে খলিফা হওয়া তো দূরে থাক, সামাণ্য কেরানির পদও যদি কেউ চায়- এই পদ চাওয়াই তাকে পদ না দেওয়ার জন্য যথেষ্ট কারণ।

এই 'আমি' থেকেই এসেছে রাজতন্ত্রের ব্যাপারটা। তাও 'আমি' মানে শুধু 'ব্যক্তি আমি' নয়, বংশানুক্রমিক 'আমি'।
ফলে ব্যাপারটা বিচ্ছিন্ন কোনো ঘটনা না থেকে একটি সিস্টেমে রুপান্তরিত হয়েছে। যেহেতু প্রত্যেকটি সিস্টেমের নিজস্ব প্রটেকশন-ব্যবস্থা থাকে, রাজতন্ত্রেরও আছে। এবং শেষপর্যন্ত এও হতে পারে সে তার সুরক্ষার জন্য আল্লাহর দুশমনদের দারস্থ হতেও দ্বিধা করেনা।

সুতরাং, রাজতন্ত্র তো নয়ই, বরং খিলাফাত হচ্ছে সেই শাসনব্যাবস্থা, সেই সমাজিক রাষ্ট্রব্যবস্থা, সেই শাসক নির্বাচন ও আপসারণ ব্যবস্থা যেখানে শরীয়াই সার্বভৌম, শরীয়া-বিশেষজ্ঞরা নিঃশর্ত স্বাধীন সত্য যাছাইয়ে শঙ্কাহীন উম্মাহর প্রতিটি সদস্য।

এর বাইরে এবার বিশেষ বিশেষ পরিস্থিতির ব্যাপার-স্যাপার আসতে পারে, সে সব নিয়ে আলোচনা হতে পারে, সে আমাদের কারোই আপত্তি থাকার কথা না...
০৬ ডিসেম্বর ২০১৫ রাত ০১:৫৩
292907
সাদাচোখে লিখেছেন : আমার ভাবনাটা এখানে পোষ্ট করলাম। আশা করি এতে আমার চিন্তাটি আর একটু খোলাসা করতে পেরেছি।

http://www.bdfirst.net/blog/blogdetail/detail/5064/dishaastha/72269#.VmNAbr-8onQ
352401
০২ ডিসেম্বর ২০১৫ দুপুর ১২:৪৫
জেদ্দাবাসী লিখেছেন : মনে করেছিলাম চৌধুরী আর মুজাহিদের এক মঞ্চে দুই ফাঁসি।এতো দেখছি সভ্যতাগুলির ফাঁসি।

ইঙ্গ-মার্কিন ব্লক ও নিকৃষ্ট ব্রাহ্মণ্যবাদের একমাত্র চাওয়া হচ্ছে মুমিনের তাজা রক্ত। চুষতে চুষতে মশা যেমন এক সময় আর সচ্ছন্দে উড়তে পারে না, এই সভ্য নামের অসভ্যগুলির অবস্তাও ক্রমে তায় হতে ব্যাধ্য। তবে এটাও টিক যে তাদের মধ্য এখনো কিছু সৎ লোক আছে।

জাযাকাল্লাহ খায়ের

বাংলাদেশ পর্বএর অপেক্ষায় রইলাম

০৪ ডিসেম্বর ২০১৫ সকাল ০৬:০৫
292774
শাহাদাত মাহমুদ সিদ্দিকী লিখেছেন : ঐ ফাঁসি নিয়েই লিখতে বসেছিলাম। ভূমিকা করতেই দেখলাম এই পর্যন্ত! কি আর করা- প্রসঙ্গ মিলিয়ে ওভাবেই পোস্ট করলামDon't Tell Anyone , ব্লগ তো আর পুস্তক রচনার জায়াগা না...

যা-ই হোক, দোয়া করবেন, ভুল-শুদ্ধ যা-ই হোক, যেন লিখে ফেলতে পারি...
যাজাকাল্লাহ...

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File