সাকা-মুজাহিদ ‘পাকিস্তানপ্রেমী’; মি. সোহরাব হাসান, আপনি?...
লিখেছেন লিখেছেন শাহাদাত মাহমুদ সিদ্দিকী ২৭ নভেম্বর, ২০১৫, ০৮:৩০:৩২ রাত
বাংলাদেশে অনেক বড় বড় মন্ত্রী, রাজনীতিক আছেন, যাদের কথা-বার্তা প্রায়ই স্বাভাবিক কান্ডজ্ঞান-সীমা অতিক্রম করে। সেই অস্বাভাবিক ‘বাগ্মীতা’ কখনও নির্জলা মিথ্যাচার, কখনও অশালীন গালাগালি, আবার কখনও বা বিশেষ কোনো পক্ষের নির্ভেজাল দালালিতে পর্যবসিত হয়। ঠিক একই অসুখের শিকার আমাদের কবি, বুদ্ধিজীবী, সাংবাদিক কিংবা কলামিস্টদেরও উল্লেখযোগ্য অংশ! মি. সোহরাব হাসান কোন ক্যাটাগরিতে পড়বেন সেই শ্রেণিবিন্যাসের দায়িত্ব পাঠকের হাতেই থাকুক। আসুন-‘দুই পাকিস্তানপ্রেমী’র জন্য পাকিস্তানের দরদ’ শিরোনামে গত ২৫নভেম্বর প্রথম আলোতে প্রকাশিত তার কলামটি দেখা যাক। কোনো প্রকার রাখঢাক না করে প্রথম লাইনেই তিনি লিখেছেন-
“মানবতাবিরোধী অপরাধের দায়ে বিএনপির নেতা সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরী ও জামায়াতে ইসলামীর নেতা আলী আহসান মোহাম্মাদ মুজাহিদের মৃত্যুদণ্ড নিয়ে পাকিস্তান সরকার এবং সেই দেশের গণমাধ্যম ও একাধিক রাজনৈতিক দল যে প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেছে, তাতে এটা মনে হওয়া স্বাভাবিক যে বাংলাদেশ নয়, পাকিস্তান রাষ্ট্রটির প্রতিই তাঁদের অধিক আনুগত্য ছিল।”
বলা যায় ডিডাকটিভ পদ্ধতিতে লিখা কলামে, অর্থাৎ, প্রথমেই উপসংহারে গিয়ে- পরে ইনিয়ে বিনিয়ে সেটিকেই প্রমাণ করার ব্যর্থ চেষ্টা করেছেন। সাথে ১৯৭৪ সালের ত্রিদেশীয় চুক্তি সম্পর্কে ভাসাভাসা এলোমেলো ক্যারিক্যাচার।
মজার ব্যাপার হলো- তার কলামের কোথাও সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরী কিংবা আলী আহসান মোহাম্মাদ মুজাহিদের জীবন থেকে তাদের ‘পাকিস্তানপ্রেম’ বা পাকিস্তানের প্রতি আনুগত্যের কোনো নিদর্শন হাজির করেননি। হতে পারে করতে পারেননি। কিভাবে পারবেন? তার তো অজানা থাকার কথা নয় যে, আমাদের ইন্ডিয়াপন্থি ভাইয়েরা যেভাবে নানা অশ্লীল যুক্তির ধুয়া তুলে ভারতপ্রেমে হাবুডুবু খান, জাতীয় স্বার্থ জলাঞ্জলি দিতেও দ্বিধাহীন নগ্ন হয়ে ওঠেন, সে প্রেক্ষিতে সালাহউদ্দিন কাদের চৌধুরী কিংবা আলী আহসান মোহাম্মদ মুজাহিদের পাকিস্তানপ্রেম প্রসঙ্গ তোলা রীতিমতো মহাপাপের পর্যায়ে পড়ে।
তাছাড়া বাংলাদেশের মানুষের কাছে তাঁদের জীবন, রাজনৈতিক কর্মকান্ড কিংবা বাংলাদেশ সরকারের মন্ত্রী হিসেবে তাদের ভূমিকা প্রকাশ্য।
সুতরাং বলা যায়, কোথাও পাকিস্তানের প্রতি তাদের অনুগত্য ছিল এমন কিছু আবিষ্কারের দুঃসাহস স্বয়ং সোহরাবই করেননি। ‘অধিক আনুগত্য’ তো দূরে থাক! এখানেই জনাব সোহরাবের প্রথম পরাজয়।
০২.
মি.সোহরাব এরপর ব্যর্থ হয়েছেন, পাকিস্তানের সাথে তাদের আদর্শগত কিংবা স্বার্থগত সম্পর্কের কোনো কারণ পেশ করতে। তাছাড়া, পাকিস্তান এবংকি ইন্ডিয়াসহ পৃথিবীর যেকোনো অঞ্চলের মুসলমানদের সাথে আদর্শিক ও আত্মিক সম্পর্কের বাইরে পাকিস্তানের প্রতি বিশেষ কোনো আনুগত্যের প্রশ্নই-বা কেনো উঠবে।
মুক্তপাঠক, মক্তচিন্তক মাত্রই জানে, অখন্ড ভারতে প্রতিষ্ঠিত জামায়াতের মাধ্যমে আলী আহসান মোহাম্মদ মুজাহিদ যে ইসলামী রাজনীতি করতেন, তার সাথে ভূখন্ডের বিশেষ কোন যোগ নেই। আর কে না জানে জামায়াত সর্বপ্রথম নিষিদ্ধ হয়েছিল পাকিস্তানেই। ক’দিন পরে হয়তো বাংলাদেশেও তা’ই হবে। সুতরাং, জামায়াতের ইসলামী আদর্শের বিশেষ কোনো নৃতাত্ত্বিক বা ভূখন্ডগত আনুগত্য নেই- যেমন আছে হিন্দুত্ববাদী বা ইহুদীবাদী রাজনীতির। ইসলামে একজন মুমিন যেখানে বসবাস করবে সেটিই হয়ে উঠে তার কর্মক্ষেত্র। সেখান থেকেই, সেই স্থানে ও কালে আল্লাহর ইচ্ছাকে ম্যাটেরিয়ালাইজ তথা বাস্তবায়ন করাই তার জিহাদ বা সংগ্রাম। সেখানে কারো আধিপত্যবাদ মেনে নেয়া তো দূরে থাক, সংক্ষিপ্ত কোনো পথের সন্ধানে সামান্য কোনো হঠকারীতারও সুযোগ নেই।
অন্যদিকে- সালাহউদ্দিন কাদের ছিলেন বাংলাদেশী জাতীয়তাবাদের নেতৃস্থানীয় ব্যক্তিত্ব। তাঁর আদর্শ এদেশের মানুষ প্রকৃতি পরিবেশের এতটুকু সম্পৃক্ত ছিল যে, নিজের শক্তিশালী অবস্থানের প্রয়োজনে তাঁকে সাম্রাজ্যবাদের জারজ কোনো শক্তিকেন্দ্রে মুছলেকা দিয়ে আসতে হতো না, হয়ওনি। যারা ক্ষমতার চোরাগলিতে বিশ্বাসী তদেরই নিয়তি সেই বিশ্বাসঘতক গোলামীর পথ।
মি. হাসান জানেন না, কারো সম্পর্কে মন্তব্য করতে হলে, শুধু নিজের সংকীর্ণ দৃষ্টি দিয়ে নয়, তাদেরকে তাদের নিজ নিজ দৃষ্টিসহ আরো দশজন মানুষের চোখ দিয়ে দেখার চেষ্টা করতে হয়। সংগত কারণে হোক, কিংবা দূর্ভাগ্যজনক ভাবে হোক, তিনি তাতে সাংঘাতিক অমার্জিতভাবে ব্যর্থ হয়েছেন। এটি তার এবং তার একচোখা পক্ষপাতিত্বের দ্বিতীয় পরাজয়।
এ পর্যায়ে এটুকু খুব স্পষ্ট যে, সালাহউদ্দিন কাদের চৌধুরী কিংবা আলী আহসান মোহাম্মদ মুজাহিদকে ‘পাকিস্তানের অনুগত’ কিংবা ‘পাকিস্তানপ্রেমী’ বলতে গিয়ে তাঁদের জীবন থেকে সাক্ষ্য-প্রমাণের দিকে না গিয়ে হাস্যকরভাবে তাদের ‘মৃত্যুদণ্ড নিয়ে পাকিস্তান সরকার এবং সেই দেশের গণমাধ্যম ও একাধিক রাজনৈতিক দল যে প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেছে’- সে দিকে যাওয়ার অর্থ, মি.সোহরাব চোরাগলিতে হাটতে চাইছেন। তিনি হয়তো জানেন না, দু’জন মৃত মানুষকে ঘৃণ্য মনোবৃত্তিতে ‘পাকিস্তানপ্রেমী’ সাজানোর অসার প্রয়াস শেষে সেই সব ছদ্মবেশধারী দালালদের মুখোশই উম্মোচন করে ফেলবে।
বাংলাদেশের মানুষকে কেউ শিখিয়ে দিতে হয় না যে- কারা কিভাবে বাংলাদেশের আলোচনায় বাংলাদেশে না থেকে, এজেন্টের ভূমিকায় পরিকল্পিতভাবে পাক-ভারত রাজনীতিতে প্রবেশ করে। এবং বাংলাদেশের নামেই বিখন্ডিত ভাসাভাসা ইতিহাস তুলে পাকিস্তানের নিন্দা করে। একইভাবে বাংলাদেশের নামেই লিপ্ত হয়ে পড়ে ভারতের দালালিতে।
এদেশের মানুষ এও খুব স্বতঃস্ফূর্তভাবে জানে- এদের কেউ কেউ এতোটাই অসুস্থ নেশাগ্রস্থ হয়ে উঠেছে যে- দালালির বাইরে তারা ভাবতে পারেনা কিছুই। একটি দ্বিখন্ডিত দেশের প্রত্যাশায় তাদের শয়ন-স্বপন-নিদ্রা কিংবা জাগরণ। ‘ভারতপূজারি’ আর ‘পাকিস্তানপ্রেমী’ ছাড়া এদেশে কোনো মানুষ দেখে না তারা। মনে হয় তাদের ভারতপূজার প্রতিপক্ষে সবাই বুঝি পাকিস্তানপ্রেমী।
এর ভেতর দিয়ে এদেশের মজলুম গণমানুষের প্রতিপক্ষে নিজেদের বিশ্বাসঘাতকতার যন্ত্রণায় খানিকটা সান্ত্বনা হয়তো পায় তারা। এরমধ্যে পাকিস্তানের সামান্য বক্তিতা বিবৃতি কেনো তাদের অসামান্য অস্বাভাবিক করে তোলে তা’র মনঃস্তত্ত্বও কারো অগোচরে থাকেনা।
(চলবে...)
বিষয়: বিবিধ
১১৬০ বার পঠিত, ২ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
যাদের কমেন্ট অন্যদের অনুপ্রাণিত করে আপনি সেই বাঞ্ছিত দলের!
যাজাকাল্লাহ...
মন্তব্য করতে লগইন করুন