সাম্রাজ্যবাদ বনাম ইসলাম: অসার উপসংহারে অধ্যাপক আনু মুহাম্মদ
লিখেছেন লিখেছেন শাহাদাত মাহমুদ সিদ্দিকী ২১ নভেম্বর, ২০১৫, ০৮:৪৬:৩৮ রাত
(৫নভেম্বর প্রথম আলোতে প্রকাশিত ‘বাংলাদেশের পাঁচ বিপদ’ কলামের প্রেক্ষিতে)
“…ধর্মপন্থী রাজনীতি, তার কাঠামোগত ও পরিচয়গত সীমাবদ্ধতার কারণেই বর্তমান দানবীয় বিশ্বব্যবস্থার বিরুদ্ধে সব মানুষের একটি মানবিক সমাজ প্রতিষ্ঠার লড়াই এগিয়ে নিতে কোনোভাবেই সক্ষম নয়…” -আনু মুহাম্মদ।
সত্য যতটুকু সত্য, ঠিক ততটুকুই সত্য মানুষে মানুষে সাম্য। সেই সাম্যের নূন্যতমটুকু হলো- আর যাই হোক, মানুষ মানুষের প্রভু নয়; হতে পারে না, কোন অর্থে- কোন ভাবেই না। মানুষের পোষাক-পরিচ্ছদ, সহায়-সম্পদ, লিখা-পড়া, দায়িত্ব-কর্তৃত্বের পার্থক্য যা’ই হোক তার মৌলক মানবীয় মর্যাদার কোন তারতম্য ঘটেনা। ধর্ম-বর্ণ-দেশ-লিঙ্গ কিংবা মতাদর্শগত পার্থক্যের পরও না। তার সাথে অনিবার্য এবং সংগত রণাঙ্গনেও এ সত্য ভোলার অনুমতি নেই। অন্তত ইসলাম দেয়নি।
অন্যদিকে সাম্রাজ্যবাদ মানেই অসাম্যের উস্কানি। অসার খোদাদের প্রভুত্ব; মানুষের উপর তো বটেই, প্রাণ-প্রকৃতি-পরিবেশের উপরও! এখানে সাম্রাজ্যবাদ মানে শুধু লেলিনের ‘পুঁজিবাদের সর্বোচ্চ স্তর’ নয়। সাম্রাজ্যবাদকে আধুনিক কিছু বিশেষ বৈশিষ্ট্যে, বিশেষ অর্থে বোঝার জন্য লেলিনের কথাটা সুন্দর। কিন্তু ইসলামকে এতো কাহিনী করে, স্তর ভেদ করে সাম্রাজ্যবাদ চিনতে হয় না। কারণ চিনতেই যদি এতো অকারণ গলি-গুপ্সি ঘুরতে হয়, মোকাবিলার ক্ষেত্রে আপনি পিছিয়ে পড়তে বাধ্য।
এই চেনার পদ্ধতিটা ইসলামে অনন্য-সাধারণ। ইসলামের জৈবিক ও আধ্যাত্মিক কাঠামোটাই এমন যে, সাম্রাজ্যবাদ তার উদ্ভব মুহূর্তেই চিহ্নিত হয়ে পড়ে। আল্লাহর নিরংকুশ সার্বভৌমত্বের অস্বীকৃতির ফলশ্রুতিতে মানবিক সাম্য অস্বীকার করে মানুষের উপর আধিপত্য করার সংঘবদ্ধ প্রয়াসই সাম্রাজ্যবাদ। আমরা তাকে তাকে চিহ্নিত করছি অনেক ঘুরেফিরে। সেটি যখন সাম্রাজ্যের পরিসরে পরিব্যপ্ত হয়ে কালক্রমে দাজ্জাল দানব হয়ে উঠলো! আজ কারো সেই অর্থে কারো সাম্রাজ্য নেই, কিন্তু সাম্রাজ্যবাদ আছে, সর্বত্র; অতীতের যেকোনো সময়ের চেয়ে আষ্টেপৃষ্ঠে, পৈশাচিকভাবে! এই সর্বগ্রাসী সাম্রাজ্যবাদকে তার ঊষালগ্ন হতেই ইসলামে চিহ্নিত। তার সমগ্র কাঠামোই যেন সাম্রাজ্যবাদের তীব্র প্রতিপক্ষে!
তবে আশ্চর্যের ব্যাপার হলো- সাম্রাজ্যবাদের সাথে ইসলামের সর্বব্যাপী এই আজন্ম-আমৃত্যু বৈরীতা সত্ত্বেও ইসলাম পুঁজিবাদ-সাম্রাজ্যবাদের মতো মোটেই এগ্রেসিভ নয়। আবার সাম্রাজ্যবাদ মোকাবিলায় হালের মার্ক্সিজমের মতো অতো অদূরদর্শী হঠকারীও নয়। ইসলামের সংগ্রাম ইতিহাসের সর্বত্র বৈপ্লবিক কিন্তু সংশোধন ও সংস্কারমূলক। এবংকি সাম্রাজ্যবাদের প্রতিপক্ষেও ইসলামের সংগ্রাম মূলত, মানুষে মানুষে সাম্যের সত্যে সীমালংঘন থেকে বিরত থাকা এবং রাখার প্রক্রিয়া বৈ কিছুই নয়।
কিন্তু সাম্রাজ্যবাদ মোকাবেলায় ইসলামের এই সরল-সূক্ষ্ণ ও কার্যকর প্রক্রিয়া কেউ না বুঝে যদি সেখানে উলটো ইসলামের ‘কাঠামোগত সীমাবদ্ধতা’ খুঁজে পান, তিনি জনাব আনু মুহাম্মদ কিংবা যেই হোন না কেন, এটি মূলত তারই সীমাবদ্ধতা! ইসলাম বিষয়ে তারই বোকার স্বর্গে বসবাস!...
০২.
এতো গেলো সাম্রাজ্যবাদ চিহ্নিতকরণ ও মোকাবিলার প্রশ্ন। কিন্তু সাংঘাতিক ব্যপার হলো- সাম্রাজ্যবাদ না থাকলেও, সাম্রাজ্যবাদের বিরোধীতা দিয়েই ইসলাম নিজেকে উপস্থাপন করে। তখনও সেই ‘লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ’ই ইসলামের একমাত্র প্রবেশ দ্বার।(বিস্তারিত দেখুন নিচের লিঙ্কে) কেনো?...
কারণ, ইসলাম শুধু বাইরের তথা বিরাজমান সাম্রাজ্যবাদের প্রতিপক্ষ নয়। আজ যারা সাম্রাজ্যবাদ বিরোধী তাদের ভেতরকার সম্ভাব্য সাম্রাজ্যবাদেরও প্রতিপক্ষ। মানুষের মধ্যে সেই সাম্রাজ্যবাদ প্রোথিত হয় শির্কের মাধ্যমে। কারণ শির্ক সরাসরি আল্লাহর সার্বভৌমত্ব অস্বীকার না করে, তার সাথে কৌশলে বা অজ্ঞাতসারে অংশীদার মেনে নেয়। যা সাম্রাজ্যবাদেরই গুরুত্বপূর্ণ মিত্রে পর্যবসিত হয়। এজন্য ইসলামে শির্কই একমাত্র অমার্জনীয় অপরাধ! একইভাবে ইসলাম সালাত তথা মানবিক সাম্যের প্রাত্যহিক ও আবশ্যিক অনুশীলন ছেড়ে দেয়াকে কুফরির সাথে সমতুল্য করে দেখেছে। যে সাম্যের সীমা অতিক্রম করেই অঙ্কুরিত হয় সাম্রাজ্যবাদের বীজ।
রাসূলুল্লাহ ইসলামের কাঠামোকে একটি বৃক্ষের উপমায় বর্ণনা করতে গিয়ে আল্লাহর সার্বভৌমত্বকে ইসলামের মূল, এবং সালাতকে কান্ড হিসেবে অবিহিত করার পর বলেছেন- আল্লাহর পথে জিহাদ হচ্ছে তার চূড়া। এই চূড়া হচ্ছে ইসলামের পাহারাদার, একই সাথে প্রতিরক্ষার প্রতীক! পাহারাদার- ভেতরকার সাম্রাজ্যবাদী প্রবৃত্তি দমনে। প্রতিরক্ষা- বাইরের যেকোন আগ্রাসনে!
এখানে আপনি দেখবেন- ইসলামের জিহাদে আকবর ও আসগরের ধারনা। যেখানে নিজের সাম্রাজ্যবাদী-পুঁজিবাদী প্রবৃত্তি ও মনোবৃত্তির প্রতিপক্ষে সংগ্রামই হচ্ছে বড় জিহাদ। এ যুদ্ধ নিজের নিজের সাথে নিজের; ক্রমাগত, প্রতিনিয়ত…।
আর ছোট জিহাদ হচ্ছে তাদের বিরুদ্ধে যারা সেই সাম্রাজ্যবাদের পৈশাচিক শয়তানি প্রবৃত্তি ও মনোবৃত্তিকেই সত্য করে তুলতে চায়, প্রতিষ্ঠিত করতে চায় পুঁজিবাদের দখলদারিত্ব। কেউ কেউ দুটো কে আলাদা করে ভেবে শান্তি পেলেও দুটো আসলে হাত ধরাধরি করে চলে। একটা তা’মুরুনা বিল মারুফ হলে অন্যটা নেহি আনিল মুনকার, একটা শিষ্টের লালন হলে অন্যটা দুষ্টের দমন, একটা সাম্রাজ্যবাদের মূলোৎপাটনে অন্যটা নির্ভেজাল মানবতাবাদের প্রতিষ্ঠায়, এভাবে আরো বলতে পারেন। তার মানে, অন্তর্গত ও বহির্গত যেকোনো ধরণের সাম্রাজ্যবাদী পদক্ষেপ মোকাবিলার মাল-মসলা ইসলাম মানবসৃষ্টির প্রথম দিন থেকে হাজির রেখেছে।
সুতরাং, জৈবিক(organic) কাঠামো বলেন কিংবা আধ্যাত্মিক কাঠামো বলেন, ইসলাম আপাদ-মস্তক সাম্রাজ্যবিরোধী। এবং সেই কাঠামো এতোটা মানবিক ও শক্তিশালী যে, পৃথিবীর কোথাও একজন মানুষ, দ্বিতীয় কোনো সঙ্গী-সমর্থক ছাড়াও দাঁড়িয়েছেন, তাঁর উপস্থিতি হয়ে উঠেছিল যুগের সাম্রাজ্যবাদীদের মূর্তীমান আতঙ্ক! তাঁকে হত্যা বা বিতাড়িত করা পর্যন্ত তিনিই ছিলেন তাদের তাবৎ অস্বস্তি ও আশঙ্কার উৎস। ইতিহাস সাক্ষী, যুগের সাম্রাজ্যবাদীরা কতটা পৈশাচিকভাবে খুন করেছে আল্লাহর নবীদের, তাঁদের নিরপরাধ সাথীদের! একজন অনুসারিও ছিলো না, এমন নবীও রেহাই পায়নি তাদের হাত থেকে!
এ হলো ইসলামের সাম্রাজ্যবাদ বিরোধী কাঠামোর প্রথমিক ও কিঞ্চিত নমুনা।
এরপর ইসলামের পরিচয়গত কাঠামো…চলবে...
সাম্রাজ্যবাদের প্রতিপক্ষে ইসলাম: আনু মুহাম্মদের গুরুতর তাত্ত্বিক বিভ্রান্তি
http://www.bdfirst.net/blog/blogdetail/detail/6441/shahadat.fbw/71460
বিষয়: বিবিধ
১১৭৮ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন