৭ই নভেম্বরঃ জনৈক বাংলাদেশী তরুণের চোখে
লিখেছেন লিখেছেন শাহাদাত মাহমুদ সিদ্দিকী ০৭ নভেম্বর, ২০১৫, ১১:৪৪:৩৬ রাত
৭ নভেম্বর আজ।
জাতীয় বিপ্লব ও সংহতি দিবস।
নামটাই কেমন শক্তিশালী আর তাৎপর্যপূর্ণ! একদিকে 'বিপ্লব' অন্যদিকে 'সংহতি'!
কোনো মনোযোগী ইতিহাস পাঠক যদি বলে বসেন- দিনটি এদেশের ইতিহাসের উজ্জলতম দিন, খুব বেশী কিছু মনে হয় বলার থাকবে না তাকে। কেউ কেউ হয়তো বিজয় দিবসকে টেনে এনে ডিবেট করতে চাইবেন। কিন্তু ৭ই নভেম্বর আসলে ১৬ই ডিসেম্বরেরই প্রলম্বিত পরিণতি!
শুধু তাই নয়- আরো কথা আছে। তিনি বলতে পারেন- বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ এদেশের জনমানুষের প্রস্তুতিতে শুরু হয়নি, আবার শেষেও ছিল তারা অপাঙতেয়! সর্বাবস্থায় তাদের সম্মতি ছিলো নিষ্প্রয়োজন, অবিবেচ্য! তারা মরেছে আহত হয়েছে পালিয়ে বেড়িয়েছে- সবই অপরিকল্পিত ভাবে! যখনি তারা একটু স্থিরভাবে তাকালো- কি হচ্ছে বোঝার চেষ্টা করলো- দেখলো- আরো একটি পাক-ভারত যুদ্ধের অসমাপ্ত অবসান! পূর্ব-পাকিস্থান স্বাধীন হয়ে গেছে! বাংলাদেশের স্বাধীনতার নিষ্পত্তি হলো দু’জন পাঞ্জাবীর স্বাক্ষরে- একজনের নাম অরোরা, অন্যজন নিয়াজী!!
দলীয় রাজনৈতিক পরিমন্ডলের বাইরে এসে নির্মোহ হয়ে যদি কেউ সেই ইতিহাসে প্রবেশ করেন বাকরুদ্ধ হয়ে দেখবেন- এবংকি এমাজউদ্দিন, ফরহাদ মজহার প্রমুখরাও মুক্তিযুদ্ধের প্রসঙ্গ এনে জাতীয় ঐক্যের যে অভূতপূর্ব দৃষ্টান্ত দেখান- তা কতোটা অসার! দেখবেন- কতো গ্রুপ, কতো পক্ষ। আরো দেখবেন কতোই না বিচিত্র উদ্দেশ্য, কতো বৈপরিত্ব্য, আঞ্চলিক ও আন্তঃর্জাতিক প্রভুদের কতো এজেন্ডা নিয়ে কতো আত্ম-বিধংসী সিদ্ধান্তে আবিষ্ট হয়ে যুদ্ধ করেছেন একেকটি পক্ষ। তারই হাত ধরেই তো স্বাধীনতা পরবর্তী ভিন্নমত নির্মূলের মহাযজ্ঞ! একটি বিশেষ মতাদর্শের স্বার্থে, এবং সেই প্রভুদের সন্তুষ্টিকল্পে! তারপর ইন্ডিয়ার সাথে পঁচিশ বছরের অযোক্তিক চুক্তি, রক্ষী-বাহিনীর পৈশাচিক দৌরাত্ম, সরকারী দলের সীমাহীন দূর্নীতি ও দুঃসাসনে দূর্ভিক্ষপীড়িত জনমানুষের নিজদেশে নিত্য শংকাসহ সামগ্রিক পরিস্থিতিই মূলত অনিবার্য করে তুলেছিল একটি ৭ই নভেম্বর!
প্রশ্ন উঠতে পারে, স্বাধীনতা পরবর্তী ঘটনাপ্রবাহ বুঝলাম- কিন্তু মুক্তিযুদ্ধ যদি এতো বিভক্তিভরাই হয়, তাহলে ৭ই নভেম্বরের সংহতি কিভাবে সেই বিভক্তিভরা মুক্তিযুদ্ধের তথা ১৬ই ডিসেম্বরের প্রলম্বিত পরিণতি হয়?
-হ্যাঁ, মুক্তিযুদ্ধে যারা অংশ নিয়েছেন সবাই দৃশ্যত পশ্চিম পাকিস্তানের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করেছেন বটে, দেখবেন- কোনো পক্ষ হয়তো যুদ্ধ করেছেন- বিপ্লবী রাজনীতির নামে এদেশের গণমানুষের জীবনের চেয়ে প্রিয় বিশ্বাস বিরোধী মতাদর্শে নিজেদের একনায়কতান্ত্রিক শাসন চাপানোর চোরাগলি পরিষ্কারের সুযোগ হিসেবে। কোনো কোনো পক্ষ ছিলো- আঞ্চলিক আধিপত্যবাদ ও আন্তঃর্জাতিক সাম্রাজ্যবাদের বিশেষ পলিসির এজেন্ডা বাস্তবায়নের স্থানীয় লাঠিয়াল। আবার নানা শাসনতান্ত্রিক জুলুমের অজুহাতে পাকিস্তান-বিরোধী এবং সেই সূত্রে ইসলাম বিদ্বেষী বিভিন্ন পক্ষও ছিলো।
কিন্তু এই সমস্ত দল-উপদলের বাইরেও এদেশের জনগণের উল্লেখযোগ্য একটি অংশ, যাদের আমরা আপামর জনসাধারণ বলি, তারা ঠিক সংগঠিত ছিলো না, হয়তো উপোরোক্ত দল-উপদলেই বিভিন্নভাবে মিশে ছিলো- তাদের দ্বারাই হয়তো প্ররোচিত হয়েছিল- কিন্তু সেই আপামর আবাল-বৃদ্ধ-বণিতা আসলে যুদ্ধ করেছিলো একান্তই খালেস নিয়তে! জালিমের বিরুদ্ধে। ইসলামের নামে কিন্তু ইসলামের বিপরীত তৎকালীন পাকিস্তানের সামরিক-আমলাতান্ত্রিক শাসন-যন্ত্রের প্রতিপক্ষে। তাদের অধিকাংশ অন্যায়ের বিরুদ্ধে দেশের জন্য যুদ্ধ করাকে সঙ্গত কারণে আল্লাহর পথে জিহাদ ভেবেছিলো! সাম্য সুশাসন ও নিরাপত্তার শ্লোগান তাদের আকৃষ্ট করেছিলো- বলার অপেক্ষা রাখেনা।
কিন্তু সেই সরলপ্রাণ আমজনতা, তাঁরা জানতো না, এবং ভাবতেও পারেনি ইন্ডিয়া ঘাপটি মেরে আছে- সুযোগমতো, তাঁদের রক্তের উপর দিয়ে বিজয় যখন আসন্ন- ঠিক তখনই একসময় হস্তক্ষেপ করবে, ‘ঘুনে খাওয়া পাকিস্তান’কে দ্বিখন্ডিত করে দূর্বলাংশকে করে ফেলবে চাইবে করায়ত্ব। অন্যদিকে পাকিস্তান-চ্যুত বাংলাদেশে- তৎকালীন সোভিয়েত ইউনিয়নের কিঞ্চিত হালুয়া-রুটি আর অকিঞ্চিত পিঠ-চাপড় খেয়ে মস্কোপন্থি কমিউনিস্টরা এদেশকেও রীতিমতো ‘এনিম্যাল ফার্ম’ ভাবা শুরু করেছিল- খুব স্বাভাবিক, তাঁরা এসব চিন্তা করতে পারেনি।
তাঁরা আরও যা চিন্তাও করতে পারেনি- যারা আজ গা বাঁচিয়ে ইন্ডিয়া ও পাকিস্তানে নিরাপদ ফূর্তিতে দিন ও রাত্রিযাপন করছে, ১৬ই ডিসেম্বরের বিজয়ের মাঠ তারাই দখল করে নেবে, তারাই সংবিধান রচনা করবে, ভাষ্যকার হয়ে উঠবে স্বাধীনতার!
৭ই নভেম্বর!
৭ই নভেম্বর এই সমস্ত জাঁহাবাজ শয়তানদের গালে কঠিন চপেটাঘাত।
৭ই নভেম্বর সেই সব গণমানুষের আধ্যাত্মিক ঐক্যের ফসল, তাদের বিশ্বাস ও দেশ প্রেমের বিশুদ্ধতার ফলশ্রুতি! কখনও কখনও হয়তো নিপীড়ক চিনতে তাদের খানিক দেরী হয়, কখনও কখনও বা খানিকটা উম্মোচন করে দিতে হয় জালিমের মুখোশ, এই যা! -যেখানে যে নামেই জালিমের খড়ক, সেখানে সেই সব নাম-পরিচয়হীন মানুষদের নিঃশর্ত লড়াই! মরণপণ-যুদ্ধ! অকাতর শাহাদাতবরণ!
কেউ মানুক আর না মানুক, তারাই মূলত এ ভূখন্ডের প্রকৃত উত্তরাধিকারী...
জিয়াউর রহমান এখানে প্রতীক মাত্র। যারা ৭ই নভেম্বরের জিয়াকে হুবহু বিএনপি প্রতিষ্ঠাতা জিয়া ভেবে একাকার করে ফেলবেন তারা জাতীয় বিপ্লব ও সংহতি দিবসের মর্ম থেকে ছিটকে পড়বেন! ভাববেন ৭ই নভেম্বর অনুরাগিরা বিএনপি ঘরনারই কিনা। না, আমরা ঠিক বিএনপি’র কেউ নই। তবে এটা বিশ্বাস করি- আপনি যে পন্থিই হন, আপনাকে ইতিহাসে প্রবেশ কারতে হবে- অতীত জানার জন্য নয়, অতীত থেকে ভবিষ্যতে আসার জন্যও নয়, আপনি যদি এই আজন্ম দুঃখী বাংলাদেশ’টুকুর পরম সুহৃদ হন- আপনাকে ইতিহাস পাঠ করতে হবে, পরাশক্তির প্রলোভন ও প্ররোচনার স্বার্থান্ধ রাজনীতির বাইরে এসে এবং আপনার বদ্ধমূল মুখস্ত প্রগতিবাদীতার জাল থেকে বেরিয়ে এসে- আগামী দিনের ইতিহাস নির্মানের প্রত্যয়ে…
বিষয়: বিবিধ
১০৫১ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন