নারীমুক্তি আন্দোলনে বাংলাদেশ: আধুনিক নারীবাদ ও ইসলাম
লিখেছেন লিখেছেন শাহাদাত মাহমুদ সিদ্দিকী ১০ সেপ্টেম্বর, ২০১৫, ০৭:২৪:৪৪ সকাল
আমরা দেখেছি- আগ্রাসী, হঠকারী ও বেলেল্লে নারীবাদ তার নিজস্ব পংকিলতার কানাগলিতে আটকে গেছে। তার পহেলা এবং শেষ কারণ হলো এটি মানব স্বভাব ও সমাজের মূলে কুঠারাঘাত। ইতিহাস এমন কোনো সভ্যতার স্বীকৃতি দেয় না, যেটি বেলেল্লেপনা ও নারীপুরুষের বিবাদের ভিত্তির উপর প্রতিষ্ঠিত ছিলো। বরং বর্তমান পুজিবাদী সভ্যতাও নারী-পুরুষের আস্থা-বিশ্বাস-ভালোবাসা যৌথ-কর্মযজ্ঞসহ মৌলিক মানবীয় নৈতিকতার উপরই প্রতিষ্ঠিত হয়। যেটি পুঁজির স্বাভাবিক স্বার্থপরতা পাশবিক প্রবৃত্তিগত তাড়নায় ক্রমাগত ভূলুন্ঠিত হয়ে আজ তলানিতে ঠেকেছে। ম্যাক্স ওয়েবার যেমন বলেছেন- পুজির তান্ডবে তাদের মূল্যবোধের প্রাণপাখি ঊর্ধ্বঃশ্বাসে পালিয়ে গেছে। এখন পুঁজির সন্তিষ্টিই ওদের সাফল্য। পুঁজি (Money) ওদের সেকেন্ড গড নয়, একমাত্র গড। এবং সেই পুঁজির গোলামিই আজ ওদের সভ্যতার মান্দন্ড। এক্ষেত্রে তাদের সভ্যতা- পড়াশোনার ব্যয় নির্বাহে তাদের তরুণীদের কুমারিত্ব প্রকাশ্যে নিলামে তোলার পর্যায়ে পৌঁছে গেছে।
মজার ব্যপার হলো- নারীমুক্তির নামে এদেশের যৌনজীবীরা এসব বেলেল্লেপনা যে সব দেবতা-দেশ থেকে আমদানি করেছেন তাদের দেশের নারীরাই মুক্তির অন্বেষায় ওষ্ঠাগত-প্রাণ। বিজাতীয় ধর্ম(বিশেষত ইসলাম) গ্রহণেও কুন্ঠিত হচ্ছে না, অজস্র প্রতিবন্ধকতা সত্ত্বেও। সুতরাং, বাস্তব ভেদ-বুদ্ধি ও সত্যান্বেষি জ্ঞানের সতেজ শ্যমলিমা ছেড়ে উনারা- ইসলাম বিরোধিতায় বেলেল্লেপনা কিংবা বেলেল্লেপনার প্রয়োজনে ইসলাম বিরোধিতার যে রাজনীতি শুরু করেছেন তার দৌড় দিল্লির প্রযোজনায়, বশংবদ সরকারের পরিচালনায়, বাঙ্গালী জাতীয়তাবাদের ‘উচ্ছল’ পরিবেশনায় গলা ফাটিয়ে শাহবাগে রাত্রিযাপন পর্যন্ত...।
তাই বলে কী নারীমুক্তির প্রশ্নো শেষ হয়ে গেলো?
-না। বরং আরো গুরুতর হয়ে উঠলো। এবং আরো গুরুত্বপুর্ণ হয়ে উঠবে বৈকি! ইতোমধ্যেই নারী মুক্তির একটি অধিকতর যৌক্তিক ধারা তৈরী হয়ে গেছে। ধারাটি থাকবে। এবং ক্রমাগত শক্তিশালী হয়ে উঠবে। এদেশের মোল্লা-মৌলভীরা যতোই পর্দা-পর্দা চিৎকার করুক। কানের পর্দা ফাটাক। ফক্কিকার। -বাঙ্গালী নারীর মন মুক্তি পায়নি। দেহ মুক্তি পায়নি। এখনও সন্ধান পায়নি আত্মার।
-তাঁকে আত্মার সন্ধান দাও- তাঁর মন মানুষের মতো বড় হয়ে উঠুক। তাঁর দেহ নিয়ে ‘টানা-হেঁচড়া’ বন্ধ কর। পরিতৃপ্তপরিতৃপ্ত আত্মার প্রেরণায় মনের আনন্দে নিজেকে মর্যাদাশিন করে তুলুক সে। পর্দা তো মর্যাদা সম্পন্ন নারী-পুরুষের জন্যই। (লম্পটের কোনো পর্দা থাকেনা, থাকেনা কোন দয়িতাও।)প
কিন্তু কে? কে পারবেন?...
এদেশের এভারেজ মাওলানা মৌলভীরাই বা কতোটুকু পর্দা বোঝে?...
এটাই বা কয়জন ভাবেন যে শুধু মোল্লা-মৌলভীদের ফোতোয়া দিয়ে ব্যক্তির সাধারণ জীবন হয়তো চলে, কোনোভাবেই বিশেষ জীবন নয়! মানুষ মাত্রই তো বিশেষ, স্বতন্ত্র।এ একজন মানুষ যতটুকু স্বতন্ত্র তাকে ততটুকু ফতোয়া উৎপাদনের অধিকার ইসলাম দিয়েছে। এবং এই আধিকার ভোগ করার মতো নিরাপদ পরিবেশ সৃষ্টি(সমাজ ও সংস্কৃতি), স্রষ্টা প্রদত্ত মূলনীতির স্বচ্ছ ও পর্যাপ্ত জ্ঞান(নাগরিক, রাষ্ট্র ও আইন) এবং আল্লাহ-ভীতি সঞ্চার(মৌলিক মানবীয় নৈতিকতা)ই মানবমুক্তির সর্বোৎকৃষ্ট পথ। এর কৌশল সময় ও স্থানভেদে ভিন্নভিন্ন হতে পারে। কিন্তু এর পরিবর্তে আর যতো ভাবে, যে নামে, যারাই, যত রকম শক্তি, যতোই প্রয়োগ করি- শেষ পর্যন্ত পন্ডশ্রমে পর্যবসিত হবে। (এবং কি, বল প্রয়োগে বিষয়/বস্তুর অনাকাংখিত সরণের ফলে পিজিক্সের দৃষ্টিতে কেউ কেউ তাকে ঋণাত্মক কাজের তালিকায়ও ফেলে দিতে পারেন।)
আবার নারিমুক্তির ভেকধারি এই ঐতিহাসিক দুশমনরা নিজেরাই নিজেদের শয়তানি হঠকারিতা এবং ইবলিসী প্রবৃত্তির অচ্ছেদ্য কারাগারে অসহায় বন্দী। একজন মানুষ ক্রমাগত আত্ম-ব্যবস্থাপনায় যতটুকু সচেতন সংহতি লাভ করে সে তো ততটুকুই মুক্ত হতে পারে। ততটুকুই স্বাধীন। আর অর্থহীন অহংকার, বাড়াবাড়ি, হঠকারিতা সেই বিতাড়িত শয়তানেরই বৈশিষ্ট্য। এবং অশ্লীলতা ছড়ানোর ইতিহাসই তো শয়তানের ইতিহাস। তার প্রথম উদ্দেশ্য। সেও মুক্তির কথা বলেই আকৃষ্ট করেছিলো নিষিদ্ধ গন্ধমে। কে না জানে আদম ও ঈভকে বিবস্ত্র করার সেই শয়তানি যুক্তির প্ররোচণা...! সেই অভিশপ্ত শয়তানের বৈশিষ্ট্য ও উদ্দেশ্য- দু’টোই ধারণ করে আছে এই অসভ্য কথিত নারীবাদীরা।
তাহলে এখানে এসে আমরা যে বিষয়টি নতুন করা টের পেলাম- দলান্ডহদলান্ধ, ধর্মান্ধ, স্থানান্ধ কিংবা কালান্ধতা-জনিত যে কোনো চরমপন্থার নিদারুণ অসারতা। যে সত্যটি স্পষ্টই প্রতিভাত হচ্ছে- নারীমুক্তির নামে যারা কথায় কথায় ন্যাংটো হতে বলে, সাম্রাজ্যবাদী শক্তির এজেন্ডা বাস্তবায়নে নানা জাতের ‘শাহবাগে’ রাত্রিযাপনে নারীমুক্তি সম্পাদন করতে চায়, এবং বলে একাধিক অবৈধ পুরুষের সাথে শুইতে পারলে তোমার অধিক মুক্তি ঘটবে- নারি হোক পুরুষ হোক, ওরা- নারীমুক্তির পহেলা দুশমন! প্রধান শত্রু!
আর যেসব নরাধম, বেকুব প্রতিক্রিয়াশীল ধর্মের নামে প্রতিনিয়ত এসব বেলেল্লেদের হাতে তুলে দিচ্ছে সহূহ-বিভ্রান্তির মাল-মশলা, নারীমুক্তির দুশমনদের তালিকায় ওদের পরেই তাদের অবস্থান...
বিষয়: বিবিধ
১১৩৬ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন