নারীমুক্তি প্রসঙ্গঃ আধুনিক নারীবাদ, পুরুষতন্ত্রের কাল্পনিক বয়ান ও ইসলাম

লিখেছেন লিখেছেন শাহাদাত মাহমুদ সিদ্দিকী ০৫ সেপ্টেম্বর, ২০১৫, ০৩:৪০:২২ দুপুর

খসড়া-০১

বাংলাদেশে নারীমুক্তি আন্দোলনঃ হঠকারী নারীবাদের পর্যাবসান



‘কোথাও নারীর মুক্তি নেই’- এটিই ছিলো একটি জাতীয় দৈনিকের বিশেষ পাতায় প্রকাশিত তিন প্রশ্ন বিশিষ্ট একটি সাক্ষাৎকারের শিরোনাম(প্রথম আলো,২৮মার্চ২০১৫)। - সাক্ষাৎকারটি জীবনযুদ্ধে শ্রান্ত হয়ে পড়া হতাশ কোনো গড়পড়তা বাঙালী নারীর ছিলো না। কোনো হঠকারী নারীবাদীরও নয়। বরং একজন পুরুষের। না, হুমায়ুন আজাদ সাহেব ঘ্যানর ঘ্যানর করে যে পুরুষতন্ত্র সৃষ্টি করেছেন, ইনি সে তন্ত্রের পুরুষ নন। বরং তার শক্তিশালী প্রতিপক্ষ, হাঁকডাকে অন্তত। তাপপর আবার বিশ্ববিদ্যালয়ের নামীদামী ‘প্রগতিশীল’ অধ্যাপক। এখানেই আমাদের দৃষ্টি আকর্ষণ।

নারীর কি আসলেই কোনো মুক্তি নেই? (এ কী ঈভের আদি পাপের পার্থিব প্রায়শ্চিত্য!)

এদেশে নারীমুক্তির লম্পঝম্পে সর্বাধিক অগ্রসর কতিপয় বাগাডম্বর ‘বুদ্ধিরজীবী’, কথিত নারীবাদীকে দেখলাম- শতাব্দীর পর শতাব্দী পৈশাচিক ঔপনিবেশিক গোলামীতে আত্ম-বিস্মৃত- ভয়াবহ লুন্ঠণে শোষিত বঞ্চিত, অন্যদিকে সাম্প্রদায়িক দাংগা ও তীব্র আত্মকলহে নিতান্তই বিধ্বস্ত একটি অধপতিত সমাজের নারীদের মুক্তি দিতে- বলা নেই কওয়া নেই- হঠাৎ করে ফাংকেস্টাইনের কাল্পনিক দানব তৈরী করে ফেললন। সেই দানবের নাম আর কিছু নয়, পুরুষতন্ত্র। নারীকে(‘পুরুষতন্ত্র’ যাদের অসহায়, অবলা, অন্ধ করে রেখেছে) দেখালো তার চারদিকের সবাই তার শত্রু। বাপ শত্রু, ভাই শত্রু, স্বামী তো অবশ্যই। ছেলে থাকলে সেও। বাকীদের কথা আর কি!

অবশ্য সেই সব কতিপয় বর্ণচোরা বুদ্ধিজীবী এবং তাদের লম্পট চেলা-পেলারা সেই শত্রুতা থেকে রক্ষা পেলো। নারীমুক্তির যোদ্ধারা এভাবেই তাদের প্রকাশ্যে ‘স্বাধীন রক্ষিতা’ হওয়ার দর্শন দাঁড় করালো! কাল্পনিক পুরুষতন্ত্র-ভীতিতে আচ্ছন্ন নারীরা এর চেয়ে ‘বড় মুক্তি’ আর ভাবতে পারেনি! এদেশের নারীমুক্তির ইতিহাসে হঠকারী নারীবাদ এভাবেই তৈরী করেছিল নারীমুক্তি চিন্তায় প্রথম অন্তরায়। তারপর আর কি! নারীমুক্তির পরিবর্তে আবহমান রক্ষণশীল সংস্কৃতির জালে এ জাতির ডিএনএ’তে যেটুকু ঐতিহাসিক বেলেল্লেপনা প্রচ্ছন্ন ছিল, এদের অবৈধ মিলনে তা’ই নিষ্ক্রান্ত হলো। ওদের কাছে অবশ্য বৈধ-অবৈধের ধারনা ছাড়া আর সবই বৈধ ছিলো। এবং সমাজে যা কিছু অবৈধ বলে প্রচলিত ছিল তাদের কাছে তা’ই ছিলো সর্বাধিক বৈধ। তাদের মন না চাইলেও তারা তা করত। এবং করার চেয়েও বেশী মজা পেতো লোক দেখিয়ে।

বলার অপেক্ষা রাখে না, স্বভাবতই, সমাজ তাদের বাধ সাধলো। আর এ যেহেতু মুসলমানেরই সমাজ খুব সহজে চলে এলো ইসলাম প্রসঙ্গ। হঠকারী নারীবাদ যে কাল্পনিক পুরুষতন্ত্র সৃষ্টি করেছিলো- তারা ভাবল এই তো পাইছি। এরাই নারীর শত্রু। এরাই পুরুষতন্ত্র…। -এই নারীবাদীরা পাশ্চাত্য ঔপনিবেশেরই সৃষ্টি। এবং ইউরোপীয় সেকিউলারিজমের বলে ধর্মকে তারা শুরুতেই শত্রু-জ্ঞান করতো। সাথে তাদের বেলেল্লে প্রবৃত্তি এই ধর্মবিদ্বেষকে আপন অস্তিত্বের মতো অপরিহার্য করে দিলো।

-এই হলো পুরুষতন্ত্রের সাথে ইসলামকে গুলিয়ে ইসলাম-অজ্ঞ সাধারণ নারী-পুরুষকে বিভ্রান্ত করে ঘোলা পানিতে মাছ শিকার প্রচেষ্টার নেপথ্য কাহিনী।

কেউ কেউ হয়তো বলবেন- এদেশে হঠকারী নারীবাদ ব্যর্থ হয়েছে। আপাতদৃষ্টিতে হয়তো তা’ই- একটি সমাজকে হয়তো হুট করে মুক্তির কথা বলে প্রতারিত করতে পারেনি। কিন্তু সমাজ কি নারীকে মুক্তির পথ দেখাতে পেরেছে? না, পারেনি। তাহলে তো প্রশ্ন উঠবেই। উঠতেই হবে...

কিন্তু সংকট অন্যত্র।

ইসলাম আসার সাথে সাথে রাজনীতি চলে এলো। আমাদের মোল্লা-মৌলভীরা যতোই রাজনীতি নিরপেক্ষতার সুফীপনা প্রদর্শন করুক- ইসলাম আসলেই রাজনীতি আসবে। দেশীয় শুধু নয়, উপমহাদেশীয় ব্রাহ্মণ্যবাদী রাজনীতিও। সাথে স্নায়ু-যুদ্ধোত্তর ‘সভ্যতার সংঘাত’ এবং ‘সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে অনন্ত যুদ্ধ’…।

-এতে অবার নারীমুক্তির সংকট কোথায়?..

.হ্যাঁ, হঠকারী নারীবাদীরা কাল্পনিক পুরুষতন্ত্রের সাথে ইসলামকে মিশিয়ে, ইসলামের সুসংহত পূর্ণাঙ্গ বিধানাবলি থেকে কতিপয় দূরভীসন্ধিমূলক সিলেকশন’কে সেই পুরুষতন্ত্রের সূক্ষ্ণ মুখোশ পরিয়ে যে কাপুরুষোচিত বুদ্ধি-চর্চা করেছে তার জ্ঞান-তাত্ত্বিক মীমাংসা হওয়ার পুর্বেই রাজনীতির অনুপ্রবেশ- নারীমুক্তি আন্দোলনকে আর চিন্তার ধারায় কিংবা সমন্বিত সমাধানের ধারায় থাকতে দিলো না। তার আগেই রক্তাক্ত সমাধানের দিকে পা বাড়ালো।

টিকে থাকতে চাইলো কথিত আবহমান বাঙ্গালী সংস্কৃতির আড়ালে। সে আড়াল যথেষ্ট হলো না, নিরাপত্তা সংকটে এলো বাংগালী জাতীয়তাবাদের রাজনৈতিক ছত্রছায়ায়। তারপর ভারতীয় আধিপত্যবাদের গোলাম হিসেবে নাম লিখিয়ে টিকে থাকতে চাইছে। থাকবে হয়তো চূড়ান্ত সমাধানের পূর্ব পর্যন্ত...

বিষয়: বিবিধ

১০০০ বার পঠিত, ৪ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

339744
০৫ সেপ্টেম্বর ২০১৫ সন্ধ্যা ০৬:১৯
রিদওয়ান কবির সবুজ লিখেছেন : ভালো লাগলো অনেক ধন্যবাদ
০৬ সেপ্টেম্বর ২০১৫ রাত ০৮:৪৩
281404
শাহাদাত মাহমুদ সিদ্দিকী লিখেছেন : অনেক ধন্যবাদ
339758
০৫ সেপ্টেম্বর ২০১৫ সন্ধ্যা ০৭:১৯
শেখের পোলা লিখেছেন : সেই চুড়ান্ত সমাধন যতশিঘ্র আসে ততই মঙ্গল৷ধন্যবাদ৷
339997
০৬ সেপ্টেম্বর ২০১৫ রাত ০৮:৪৬
শাহাদাত মাহমুদ সিদ্দিকী লিখেছেন : ..তা যথা সময়েই আসবে... অনেক ধন্যবাদ।

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File