চ্যালেঞ্জ রবীন্দ্রনাথঃ বাঙ্গালী মুসলমানের বহুধা বিভক্তি
লিখেছেন লিখেছেন শাহাদাত মাহমুদ সিদ্দিকী ০৭ আগস্ট, ২০১৩, ০৪:৫৮:০৯ রাত
গতকাল ছিলো ২২শে শ্রাবণ। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ৭২তম প্রয়াণ দিবস। তাঁকে নিয়ে অনেক এলোমেলো ভাবনাই মনে সময়ে অসময়ে ভীড় করে। কয়েকটি কথা বলা হয়ে যাক আজই। তা উগ্র সাম্প্রদায়িক মডারেট অমৌলবাদী কিংবা মৌলবাদী হিন্দুদের কথা থাক। মুসলমানদের দৃষ্টিভঙ্গিই, আসুন একটু খতিয়ে দেখি-
রবীন্দ্র প্রশ্নে বাঙালী মুসলমানরাও অজস্র ভগ্নাংশে বিভক্ত! শুধু মোটা দাগগুলোও যদি বিবেচনা করেন দেখবেন-
একটি শ্রেণির দৃষ্টিতে রবীন্দ্রনাথ দেবতাপ্রতিম। কখনো বা দেবতার অধিক! এদের কাছে পুঁজো-অর্চনা এবং সাষ্ঠাঙ্গে প্রণত হওয়াই রবীন্দ্রনাথকে গ্রহণ করার মাধ্যম!
তারপর একটি শ্রেণি পাবেন-
যারা কোনো দিক থেকেই রবীন্দ্রনাথকে হজম করার যোগ্যতা রাখেনা। এই ‘অযোগ্যতা’ রবীন্দ্রনাথকে দেখার ক্ষেত্রে তাদের চোখে একটি আল্ট্রা মাইক্রোস্কোপ যন্ত্র ফিট করে দেয়! তখন রবীন্দনাথের একেকটি পশম তাদের কাছে বিশাল বিশাল বটবৃক্ষ হয়ে ধরা দেয়! দাঁড়িগুচ্ছ ধারণ করে মহা সমুদ্র! আলখেল্লা হয়ে যায় মহাবিশ্বের ক্রমবিস্তৃত ব্যাপকতা!
সাগরের বিশালতা হৃদয়ের বিশালতায় উপলব্ধিতে অক্ষম মানব সন্তানরা যেমন হাঙ্গরের বাচ্চার মতো সমুদ্রের ঢেউয়ের সাথে উন্মাদ হয়ে উঠে- এদের অবস্থাও তাই! রবীন্দ্র সাহিত্য আস্বাদনের অক্ষমতাকে এরা পায়ের মাটি মাথায় তুলে শোধ করে! পাশের বাড়ীর ডা. জাকিরের বক্তব্য হয়তো শোনা হয়নি, কিন্তু সাত সমুদ্র তের নদী ওপারে কোথায় কোন কোন রোগের চিকিৎসায় রবীন্দ্রসংগীতের হাস্যকর ব্যবহার হচ্ছে- তা বলে বেড়ায় স্ফিত বক্ষে, উদ্যত কন্ঠে! রবীন্দ্রনাথ কোথায়(!)- এ যেনো তাদের মাথাকেই ঠেকিয়ে দিলো আকাশের সাথে!
তৃতীয় ভগ্নাংশটি-
বলা যায় সাহিত্য থেকে মোটামুটি নিরাপদ দূরত্বে অবস্থান করে। এদের একটা প্রব্লেম হলো- কতিপয় অবোধ যুক্তিতে রবীন্দ্রনাথের বিপরীতে যত্রতত্র নজরুলকে টেনে আনেন। এবং এতো বড় করে তোলেন যে- স্বয়ং নজরুলই দেখলে হয়তো লজ্জা পেতেন! আবার- 'নজরুল কোথাও কোথাও এতো বড় যে- রবীন্দ্রনাথ সেদিকে কোনোদিন তাকানোরও দূঃসাহস করেননি এবং আজীবন সে কষ্ট ভুলে থাকার প্রয়োজনে তাবৎ অভিধা উপাধি ‘বিশ্ব কবিত্ব’সহ উটের মত মুখ লুকানোর ভঙ্গিতে অভ্যস্ত হয়ে উঠেছিলেন' সেদিক সম্পর্কেও এ শ্রেণি পূর্ণমাত্রায় অন্ধকারে!
তারপর আপনি দেখবেন-
একটি গ্রুপ- মুখেমুখে যথেষ্ট রবীন্দ্র বিরোধিতায় পারঙ্গম! অবশ্য রবীন্দ্রনাথ মোটেই ধোয়া কচু বা তুলসি পাতা নয়! বিরোধিতার বিস্তর গুরুতর কারণ তাঁর জীবনজুড়ে বিদ্যমান! কিন্তু এদের বিরোধিতা তাদের শ্রেণিস্বার্থে! অর্থাৎ, তারা তাদের রবীন্দ্র বিরোধী পরিমন্ডল রক্ষার্থেই তা করেন! এদের কেউ কেউ ভেতরে ভেতরে রবীন্দ্রমুগ্ধ। অন্তত ততটুকু বিরোধী নন যতটুকু তারা তাদের পরিমন্ডল রবীন্দ্র বিরোধী হওয়ায় জোরগলায় প্রচার করেন। সুস্পষ্ট রবীন্দ্রবোধ-শূন্যতার ফলে অনেক ইসলামপন্থি জনপ্রিয় বুদ্ধিজীবীও এ গ্রুপের সদস্য!
তবে একটু পরেই আপনি দেখবেন পঞ্চম দলটিতেই-
সর্বাধিক উগ্র এবং কথিত ইসলামপন্থি ব্যাক্তিবর্গের অবস্থান। এরা রবীন্দনাথকে সরাসরি অস্বীকার করে। কোন অগ্র-পশ্চাত বিবেচনা ছাড়াই! কিন্তু রাজনীতির বুলেট যে- কোনো অবস্থায় সাংস্কৃতিক ব্যালটের জবাব হতে পারে না- এ সত্য বোঝার ক্ষেত্রে তারা অজ্ঞতার পরাকাষ্ঠা প্রদর্শন করে থাকেন! তাই রবীন্দ্র-শক্তির উৎসমূল উদ্ঘাটনের পরিবর্তে তাকে প্রত্যাখ্যান, অস্বীকার এবংকি সরকারীভাবে নিষিদ্ধ করাও কোনো গ্রহণযোগ্য কিংবা কার্যকর সমাধান হতে পারে না। ববং ভালোর জন্যে দেয়া এই ‘জল পড়া’য় শেষপর্যন্ত ‘কপাল পোড়া’ যাওয়ারই সমুহ সম্ভাবনা ধারণ করে!
মোটা দাগে সর্বশেষ যে শ্রেণিটি আপনি পাবেন-
তারা রবীন্দ্রনাথের ব্যাপ্তি-গভীরতা তথা দৌঁড় সম্পর্কে মোটামুটি ওয়াকিবহাল। ফলে নিজেদের চ্যালেঞ্জ হিসেবে এরা রবীন্দ্রনাথকে ভয় পেয়ে আঁতকে উঠেন! এই ভয়কে লুকোনোর প্রয়োজনেই তারা মাঝে মাঝে একে রবীন্দ্রনিন্দায় রুপান্তরিত করার প্রয়াস চালান! কিন্তু দুঃখজনক মজার ব্যাপার হলো- এই নিন্দা সাধারণত রবীন্দ্র-বৃক্ষের ডাল-পালারই হয়ে থাকে! এবং মূলে যাওয়ার দুঃসাহস এই শ্রেণিরও কোনোদিন হয়নি! সুতরাং, তাদের নিন্দা এক অর্থে রবীন্দ্রনাথকে অধিকতর শক্তিশালীই করে থাকে! এ যেনো পুকুরের উপর রাগ করে বালকসুলভ উত্তেজনায় ঢিল ছোঁড়া আর পুকুরের পুলকিত তরঙ্গায়িত হয়ে উঠা!
সমূহ দূর্ভাগ্যের ব্যাপার হলো-
বাঙ্গালী মুসলমান সমাজ এখন পর্যন্ত সপ্তম কোনো উল্লেখযোগ্য শিবির গঠন করতে পারেনি- রবীন্দ্রপানে যারা মানবিক দুঃসাহসী, মাতাল হওয়ার পরিবর্তে উঠে গা-ঝাড়া দিয়ে! যাদের বদ হজম হয়না, বরং রবীন্দ্-নদীর সুপেয় অংশটুকু পান করে নিন্দিত অংশে নিন্দার পরিবর্তে(নিন্দার সুযোগ রেখে দিতে হবে তার পুজারিদের জন্য) নিজেদের নিন্দিত অংশটুকু ত্যাগ করে আসতে পারেন!...
বিষয়: বিবিধ
১১৪৭ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন