ইসলাম এবং বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীঃ দূরত্ব পরিমাপক পদ্ধতি পর্ব-০১ স্যাক্রিফাইসের মানদন্ডে
লিখেছেন লিখেছেন শাহাদাত মাহমুদ সিদ্দিকী ০১ জুলাই, ২০১৩, ১১:৪০:৪৩ রাত
ইসলাম মানে- হয় 'সংগ্রাম', নয়তো 'শাসন'।
এর মাঝামাঝি কোনো কানাগলি দেখিনা।
এখানে বৈরাগ্যবাদী জাহিলিয়াতের যেমন কোনো স্থান নেই,
তেমনি অসম্ভব শাসনের নামে সাম্রাজ্যবাদী শোষণও!
ইসলাম, সংগ্রামে চায় কুন্ঠাহীনতা
শাসনে চায় দ্ব্যর্থহীন জাস্টিস!
এই দু’টি সমীকরণকে সমাধান করলে যা দাঁড়ায় তা হলো-
'স্যাক্রিফাইস'!
এখন দেখার বিষয়, এই ‘সংগ্রামে’- কে কিভাবে নিজের জান-মাল উপস্থাপন করছেন। কিভাবে উচ্চারণ করছেন- ‘ইন্না সালাতি ওয়া নুসুকি ওয়া মাহইয়া…’। এবং কিভাবে নিজেকে অভিজাত, সেলিব্রেটি ইত্যাদি ভগিজগি ভাবার চেয়ে প্রাপ্ত সুযোগকে সংগ্রামের অনুকূলে ব্যবহার করছেন। তারপর নাফসুল মুৎমাইন্না বা প্রশান্ত আত্মার ভেতর দিয়ে অর্জন করছেন আরশের অধিপতির নৈকট্য!
‘জিহাদে আকবার’ বলতে আমরা যা বুঝি- প্রথম ক্ষেত্রে, অর্থাৎ সংগ্রামের ক্ষেত্রে তা বুঝায় যে,
সংগ্রামই যথেষ্ট নয় শুধু, সংগ্রাম তো খালেদা জিয়া-শেখ হাসিনাও করে। করে না? এবং করে তাদের চেলা চামুন্ডা’রাও। আজকের পৃথিবীতে ‘পুঁজিবাদের' যে নিকৃষ্টতম পৈশাচিক জুলুম-শোষণ, তাও কিন্তু সামন্ত নিপীড়নের প্রতিপক্ষে সংগ্রামের ভেতর দিয়েই ‘মুক্তি’ রুপে পৃথিবীতে এসেছিলো! সুতরাং, ‘মাহমুদুর রাহমান’, কিংবা ‘সালাহ উদ্দিন কাদেরে’র জেল খাটার সাথে ‘আব্দুল্লাহ তাহের’ বা ‘শফিকুল ইসলাম মাসুদে’র জেলে যাওয়ার ‘গুণগত’ পার্থক্য দেখতে হবে। কারণ জামায়াতে ইসলামী করে কেউ জেলে গেলে তা আল্লাহর জন্য হলো, আর আ’লীগ-বিএনপি করে জেলে গেলে সেটি আল্লাহর জন্য নয়- এ তো হতে পারে না।
পারেও!...
প্রশ্ন হলো- কখন পারে আর কখন পারেনা?...
এবং কি মনে রাখতে হবে- রাসূলুল্লাহর সাথে যুদ্ধ করে বীরত্ব প্রদর্শনপূর্বক মৃত্যু বরণ করাও- কখনও কখনও আল্লাহর জন্য হয় না। এবং রাসূল প্রকাশ্যে বলে দেন যে লোকটি জাহান্নামী! তার মানে, ইসলামী দল করা এবং দলে থাকাই যথেষ্ট নয়। যথেষ্ট নয়- সদস্য হওয়া, রুকন হওয়া, কেন্দ্রীয় সভাপতি হওয়া এবং কি আমীরে জামায়াত হওয়াও! তাহলে ‘যথেষ্ট’ কি? ‘যথেষ্ট’টা হলো- ‘স্যাক্রিফাইস’! আপনার কতটুকুর কতটুকু স্যাক্রিফাইস করলেন। এই ‘স্যাক্রিফাইস’- আল্লাহর জন্যে! শুধু আল্লাহর জন্যে এই ‘স্যাক্রিফাইস’ই- সত্যিকার ইসলামী আন্দোলনে ব্যক্তি মূল্যায়নের ‘একমাত্র’ মানদন্ড হতে পারে! আদর্শের জন্য এই নির্ভেজাল ‘স্যাক্রিফাইস’কে সর্বোচ্চ প্রাইওরিটি না দিতে পারলে, সমস্ত আদর্শবাদী দলই কোনো-না-কোনো মোড়কে- দ্রুতগতিতে অথবা ধীরে ধীরে শেষ পর্যন্ত- প্রচলিত গোষ্ঠী বা শ্রেণিস্বার্থবাদী রাজনীতিতেই পর্যবসিত হবে। পতিত হবে সবার অগোচরে! তারপর নিপতিত হবে… ইতিহাসে যার ভূরিভূরি দৃষ্টান্ত!
তাই, ইসলামের সৈনিক দাবীকারী হে ভাই আমার,
দেখুন,
আপনার মতো, কিংবা আপনার চেয়ে অনেক বেশী প্রচলিত-সামাজিক যোগ্যতাসম্পন্ন ব্যক্তির তুলনায় আল্লাহ আপনাকে অধিক দেয়ার পরও যদি অনাহুত আভিজ্যাত্যের খায়েশে- জনশক্তির বিশ্বাস ও সরলতাকে কাজে লাগিয়ে, আপনি শুধু বড় বড় কোম্পানীর চেয়ারম্যান/এমডি হওয়ার তালে টালমাটাল হয়ে পড়েন, তাহলে আপনাকে রেসপেক্ট করার, আপনার গ্রহণযোগ্যতা মেনে নেয়ার এটাই শুধু কারণ হতে পারে না যে- আপনি একদা ‘অমুক-তমুক’ জায়গার ‘অমুক-তমুক’ ছিলেন। মনে রাখবেন- ‘একদা’র কথা ‘উহারা’ই ভাব নিয়ে বলে থাকেন- যাদের বর্তমান’টা তারা অভিশপ্ত করে ফেলেছে বা ফেলতে চায়, হতে পারে তাদের অজান্তেই! আবার বর্তমান পরিচয়কে তারাই গর্বোদ্যত তৃপ্তিতে বলেন- যাদের দিয়ে আন্দোলনের কিংবা বিপ্লবের কোনো ভবিষ্যত নেই!
বিপ্লবকে তাঁরাই শুধু এগিয়ে নিতে পারে- যারা, তাঁদের গন্তব্যের তুলনায় নিজের অযোগ্যতা অবলোকন করে প্রকম্পিত হয়। নিজের অযোগ্যতাকে অনুভব করতে করতে ক্রমাগত রক্তাক্ত করে ফেলে তাবৎ হৃদয়! তারপর আবিষ্কার করে ভালোবাসা। এবং সেই ভালোবাসার আহ্বানেই আগমণ ঘটে নতুন নতুন ‘যোগ্যতা’র! বাংলাদেশে আজকের জামায়াতে ইসলামীর ‘যোগ্য’দের আবির্ভাব- সেই নিজেদের ‘অযোগ্য’-ভাবা(গন্তব্য বিবেচনায়) মানুষগুলোর ভালোবাসার হাত ধরেই! আজ আমরাও যদি তাদের মতো নিজেদের ‘অযোগ্য’(ভারত-ইসরাঈল-আমেরিকা এবং পুঁজিবাদী বিশ্বব্যবস্থার মোকাবিলায় একটি শক্তিশালী ম্যাচিউরড্ বিপ্লবের যোগ্যতা অর্জন পূর্ববর্তী অবস্থাকে আমরা অযোগ্যতা বলবো) বলে, পূর্বোক্ত পন্থায় মানুষের প্রতি ভালোবাসার হাত না বাড়াতে পারি, এই সমস্ত কিছুই- সমস্ত পদ-পদবি, অর্জিত সমস্ত ফক্কিকার আভিজাত্য, সমস্ত বড়লোকিপনা, আমাদের অযোগ্যতা ছাড়া আর কিছুই বৃদ্ধি করবে না।
বিষয়: রাজনীতি
১৩৭২ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন