ফোনবালিকা’র মনস্তত্ত্ব ও অন্যান্য প্রসঙ্গ

লিখেছেন লিখেছেন শাহাদাত মাহমুদ সিদ্দিকী ২৬ জুন, ২০১৩, ০৮:৩১:৫২ সকাল



[চট্টগ্রাম থেকে প্রকাশিত, শি.কি দ্বীন দুনিয়ার ২০১১ সালের মে মাসে হাসানের (হাসানুজ্জামান হাসান) একটি হঠাৎ গল্প ছাপানো হয়েছিল। গল্পটির শিল্প গুণ/গল্পগুণ কিংবা ভাললাগা না লাগার চেয়েও যেটি একমাত্র বিবেচ্য হয়ে উঠেছিল তা হল গল্পের মনস্তত্ব। মনস্তত্ত্ব ফোন বালিকার, বালকেরও। চমকে গিয়ে দেখলাম এদেশের তরুণ প্রজন্মের বিশেষত যারা ধার্মিকতা ও ইউরোপ আগত আধুনিকতার সন্ধিক্ষণের দোলা চলে- তাদের মনস্তত্ত্বের একটি সাদাসিধে ব্যাখ্যা এই গল্পের প্রেক্ষাপটে পর্যালোচনা সম্ভব। যা আমাদের আগামী দিনের সমাজের একটি বৈপ্লবিক রূপান্তরে আমাদের স্বনিয়ন্ত্রিত, স্বেচ্ছাচালিত এবং সার্বক্ষণিক আত্মপর্যালোচনা বোধের অনুভূতি তৈরি করে দিতে পারে। এই ভাবের বিন্দু থেকে বসেছিলাম, খসড়াও হয়েছিল ঠিক পরবর্তী কিংবা তার পরবর্তী সংখ্যার জন্যে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত ঠিক গুছিয়ে তুলতে পারিনি- বাস্তব কোন কারণ হয়তো ছিল কিংবা কাল্পনিক অকারণে! আবার মাথা থেকেও সরাতে পারছিলাম না। মনের খুতখুতেপনা দূর করাই ক্রমাগত কাম্য হয়ে উঠছিল। তাছাড়া, বিষয়টি এখন আরো অধিকতর এবং অন্তত সমান প্রাসঙ্গিক। এর সাথে আপনারা ‘ফেসবুকবালিকা’/ ‘চ্যাটবালিকার’ মনস্তত্ত্বের স্বরুপটাও দেখে নিতে পারেন নিজনিজ অভিজ্ঞতায়। তাই, ব্লগের ভাইদের জন্যে…]



যাই হোক, যে কারণেই হোক হাসানের ফোন বালিকা (গল্পের নায়িকা) তার একান্ত পৃথিবীতে ফিরে গেছে। যত তুচ্ছই হোক অন্য কোন পৃথিবীর সাথে অবৈধ কোন লেনদেন, কাজ কারবারে সে নেই। (‘আমি আর আপনার সাথে কথা বলবো না’- প্যারা ৫) ইচ্ছে হচ্ছে বলি- আলহামদুলিল্লাহ!

উৎকৃষ্ট কোন দুনিয়ার সাথে বৈধ, প্রকাশ্য এবং সুস্পষ্ট চুক্তিভিত্তিক লেনদেন ছাড়া নিজস্ব পৃথিবীই মূলত সুন্দরতর, সুউচ্চ পবিত্রতর। কিন্তু কেন সে নেমে এসেছিল স্বেচ্ছায়? আপন মেলডি (melody) শোনাতে গিয়েছিল ফোনবালককে? (‘রিসিভ করতেই ওপ্রান্ত থেকে ভেসে আসে সুমিষ্ট এক মেয়েলী কণ্ঠ।’ প্যারা- ১)

‘অবৈধ ফল দ্বিগুণ মিঠে’ বলা সওদাগর’রা কী কোনভাবে তাকে প্রলুব্ধ করেছিল? কীভাবে? আচ্ছা, সে না হয় ভুল করলো! কিন্তু তার প্রতিপক্ষ কেন তাকে প্রথম দিনই সতর্ক করে দেয়নি? সেদিন কেন প্রশ্নটি আসেনি যে- ‘প্রেম করা কী জায়েজ?’ সেই ধার্মিক বন্ধুর সাথে ঐ রাতের আলোচনার আগে ফোন বালক সত্যিই কি জানতো না যে- ‘গাইরে মাহরাম নারী পুরুষ বিনা প্রয়োজনে পরস্পর দেখা করা, কথা বলা বৈধ নয়’?(প্যারা- ৫)

সেই বা কি ভেবেছিল? সবাই কি তবে একই গঙ্গায় স্নানার্থী? সেই একই ভাইরাসে আক্রান্ত? এইভাবে এত কাছাকাছি এসে- [(‘‘কিছুই না’ হয়ে উঠে আমার ‘সব কিছু’। প্রায় প্রতিদিন কথা বলি। একে অপরের আরো ঘনিষ্ট হই’।(প্যারা -২) তারপর? ‘সত্যি বলতে কি তোমার সাথে কথা না বলে আমি থাকতে পারি না’।(প্যারা- ৫)] কোন এক সন্ধিক্ষণে হঠাৎ বিকর্ষিত হয়ে ছিটকে পড়াই কি এর ভবিতব্য? কেন? কতটুকু স্থায়িত্বের এই প্রশান্তি?

একেকটি একাকী দুপুর, নিদ্রাহীন কোন রজনী, উচ্ছসিত আনন্দের কোন শ্যামলিমা, শরত বিকেলের কোন নীল নিটোল নিলীমা কি তাদের ক্ষমা করবে কোনদিন? হায়! আত্মার নাটাই থেকে মন যতটুকু প্রশ্রয় পেয়েছিল হৃদয়ের ততটুকু রক্তক্ষরণই সমাধান। আহ্! আসন্ন ফালগুনী প্রভাতগুলো, উত্তাল সমুদ্র সৈকতের কোন এক বিষন্ন বিকেল, বেকারার বিরহে অশ্রু প্লাবিত চাঁদ কি তাদের জন্য চ্যালেঞ্জ হয়ে থাকল না? আরো…. আরো কত কিছু… তাদের দেবদাসীয় চরিত্র প্রদানে একেকটা ওয়ার্ল্ড ব্যাংকে, আই এম এফ হয়ে উঠবে! তাদের সংবেদনশীলতা, ব্যক্তিত্ব এবং পারিপার্শ্বিকতাই নির্ধারণ করে দেবে তার মাত্রা, গভীরতা ও বিস্তৃতি। হায়! পারিপার্শ্বিকতার অন্য পিঠ তো বহুগামী শারীরিক করে তোলার ওস্তাদ! মনের অশান্তি শরীর শাস্তিতে নিবৃত করতে চায়। ফ্যাসীবাদের ‘ব্যালটের সমাধান বুলেটে’ করার প্রবণতার মতো। যা’ই হোক…..

\ দুই \



আসুন, লক্ষ্য করুন! ফোন বালক কথা বার্তায় পর্যাপ্ত অভিজ্ঞতার যথেষ্ট স্বাভাবিকতায় কথা সাজালেও একবারও প্রশ্ন করেনি যে- তো বলুন তো কি জন্য কল করলেন?…. কেন জিজ্ঞেস করেনি? তবে কি ফোন বালিকাদের এজাতীয় কল করার কারণ তার অন্তকরণে পূর্বেই লিপিবদ্ধ ছিল?

সেও কি একই কারণের শিকার? নাকি ‘সুমিষ্ট এক মেয়েলি কণ্ঠ’ বলেই ওসব ঘাঁটাতে যায়নি? যতই মিষ্টি হোক, অনভ্যস্ত, অপ্রস্ত্তত একটি ছেলের কাছে একটি মেয়ের কণ্ঠস্বর তৎক্ষণাৎ এতটা সুমিষ্ট ঠেকবে…?! সেও কি প্রত্যাশায় ছিল? এজন্যই কি ‘কোন মেয়ের সাথে আমার কথা হয় না’- বলা ছেলেটিই- মেয়েটির সরাসরি উক্ত ‘আপনার সাথে আমি একটি সম্পর্ক করতে চাই। বলুন, আপনি আমার কী হতে চান?’ ভয়ানক প্রশ্নতেও নিষ্কম্প? বলে ফেলল- ‘আপনি অপশন দিন।’

মেয়েটি অপশন দিল- ‘ভাই, বন্ধু….।’ শেষের পঞ্চবিন্দুতে চলমানতার সাক্ষ্য বিরাজিত। ওকি আরও কিছু বলতে গিয়ে থেমে গেল? সম্ভবত আকর্ষণের অনুভূতি চালিত রাখার সীমা ওটুক। ফোনবালকও কম যায় না। সম্ভবত বালিকার চেপে যাওয়া ভাবটা টের পেয়ে সে এগিয়ে গেল- ‘আর কিছু না?’

হৃদয় বিদারক!….

বালিকা- ‘আপাতত এদুটো থেকেই চয়েজ করুন।’ আপাতত মানে কী? ‘আপাতত’ বলার সম্ভাবনাতেও ফোনবালক নিবৃত হতে অনিচ্ছুক! সে বলে- ‘এগুলো আমার পছন্দ হয় না।’ -উদাসীন উন্মাদ! ‘ভাই’, ‘বন্ধু’ তার পছন্দ হল না। সে শুরুতেই অন্য কিছু চায়…. এই চাওয়াটা নিজেকে একটু ‘ব্যতিক্রমী’ (আমি মানুষটা একটু ব্যতিক্রমী, প্যারা- ১) সাজিয়ে সম্পর্কটাকে ‘কিছু না’ রূপে দাঁড় করিয়ে শেষ পর্যন্ত ‘সব কিছু’তে নিয়ে শেষ করলেন। (আপনি যেমন আমার কিছুই না, তেমন আবার সবকিছু। প্যারা- ১)

ফোন বালিকা মাঝখানে ‘কিছুটা আশাহতের সুর’ স্পষ্ট করলেও এই মাত্র সে সমস্ত ঘটনার পূর্বাপর অনুধাবন করতে পারল। এবং তারই প্রতিক্রিয়া সে চেপে রাখতে না পেরে খিলখিল হাসির শব্দে’ (কপিলার মতো না হলেও কুসুমের কাছাকাছি) জানিয়ে দিল।

এই হল ফোনবালকের বন্ধু খলিলের কোথাকার কোন বান্ধবী ‘ফোনবালিকা’! খলিল ফোনবালকের নাম্বার থেকে তাকে মেসেজ পাঠিয়েছিল। সে সূত্রেও ফোনবালকের সাথে দু’একবার কথা হয়েছে! আর সেই জীনের (gene) প্রভাব প্রকট হয় সেই দিন! খুবই সাধারণ স্বাভাবিক ভাবে!

আমাদের প্রশ্ন হল এই ‘অস্বাভাবিক’ বিষয়টি এতদূর স্বাভাবিক হল কি করে? এটা অবশ্য আর্থ-সামাজিক-রাজনৈতিক কাঠামোর উৎসস্থলের সাথে সম্পৃক্ত এবং দার্শনিক পর্যালোচনার ব্যাপার স্যাপার। কিন্তু ‘প্রতিদিন তাহাজ্জুদ আদায়’ করা ধার্মিক টাইপের মাদ্রাসার মেয়ের কাছেও এসব যখন এতদূর স্বাভাবিক হয়ে যায়, তখন এটিকে আর ‘অস্বাভাবিক’ বলা চলে না। হয়ে উঠে আশঙ্কাজনক। শুধু ব্যক্তি বিশেষের জন্য নয়, সমাজ-সভ্যতার জন্যই। অনাগত বীভৎস ভাঙন আশঙ্কা।

\ তিন \



‘আমি আর আপনার সাথে কথা বলবো না।’ ‘আপনাকে ধন্যবাদ; আমার চোখ খুলে দিয়েছেন। আগে এভাবে ভাবিনি।’ -আগে কীভাবে ভাবেনিও? ভাবেনি যে- ‘গাইরে মাহরাম নারী পুরুষ বিনা প্রয়োজনে পরস্পর দেখা করা কথা বলা বৈধ নয়’? ‘একারণেই প্রেম অবৈধ’?- সেদিন সকালে। (প্যারা- ৫)

ইতোপূর্বেকার সমস্ত চাপা অচলায়তন ভেঙে ‘প্রেম’ শব্দটির উচ্চারণ যথেষ্ট চমকপ্রদ। পরিস্থিতি যদি এমন বিদায়ঘন না হয়ে উঠত ‘প্রেম’ শব্দটি কৌশলগত কারণেই ফোনবালক উচ্চারণ করত না। যেমনটি সে আগেও এড়িয়ে গেছে। আর করলেও ফোনবালিকা ঠিকই আপত্তি জানাতো। ফোনবালক তাই এখানে কয়েকটা দোহাই দিয়েই প্রশ্নটি পেড়েছে। যেমন- ‘আচ্ছা তুমি তো মাদ্রাসায় পড়ো, অনেক কুরআন হাদীস জানো; নিয়মিত তাহাজ্জুদ পড়ো; ইত্যাদি। এর কোনটি তার পরিচয় সম্পর্কে সচেতন করা, কোনটি প্রশংসায় ফুলানো আবার কোনটি তাহাজ্জুদের মতো দুর্বল জায়গায় আক্রমণ….। তার মানে কি ফোন বালক আর কথা বলতে চায় না? কিন্তু কেন? শুধু খুব আদর্শিক চরিত্রবান বন্ধু রনির ইসলামিক যুক্তিই একমাত্র কারণ? সেদিন রাতে ‘উত্তেজিত কণ্ঠে’ ইসলামের rules গুলোকে বাছ-বিচারহীনভাবে ‘বাড়াবাড়ি’ বলে ওঠা ফোন বালকের হঠাৎ অতটা মুসলিম হয়ে ওঠারই হাকীকত কী? ফোন আলাপের এই ক্ষান্তদানের কাহিনী স্বাভাবিকভাবেই একপাক্ষিক হয়। সেখানে সামাজিক, মানসিক এবং কি একান্ত পার্থিব বস্ত্তগত হিসেব নিকেশও সাংঘাতিকভাবে জড়িত। যাই হোক, এ ক্ষেত্রে ফোনবালকের এই ফোনালাপ ক্ষান্তদানের মনস্তত্ত্ব আমরা একটু পরেই কিঞ্চিতে উল্টে পাল্টে দেখার চেষ্টা করবো।

\ চার \



‘প্রেম করা কী জায়েজ?’ হরেক রকম দোহাই দিয়ে করা প্রশ্নটি আমরা আগেই শুনেছি। ফোনবালিকার জবাব ছিল- ‘না’। ফোনবালক- ‘কেন জায়েজ নয়? দলীল দিতে পারবে? ফোনবালিকা- ‘অতো কিছু জানিনা। তবে আমি শুনেছি।’ সুস্পষ্ট সরল স্বীকারোক্তি- ‘অতো কিছু জানি না।’ সত্যি কথা। সে জানে যে, আসলেই সে জানে না। এই ‘না জানা’ তার কথা বলার একটি প্রধান কারণ (মৌলিক কারণটি হল শূন্যতা)। আচ্ছা জায়েজ না-জায়েজের প্রশ্ন বাদ দিলাম। যদি এমনি এমনিও প্রশ্ন করা হতো- শুনো, এই যে এত কথা বলা (প্রায় প্রতিদিনই), ‘আরো ঘনিষ্ট’ হওয়া- কেন? কেন- ‘শেয়ার করি নানা কথা’ - তোমার সাথে? মনে হয় প্রতি উত্তর হবে ঐ যে- ‘জানি না।’ ‘অতো কিছু জানি না’-র বাইরে খুব বেশী কিছু বলা কোন ফোনবালক কিংবা বালিকার পক্ষে সম্ভব নয়।

আর কিই বা বলতে পারতো- এই তো ভাল লাগে, শিখছি অনেক কিছু, নতুন একটা অভিজ্ঞতা হচ্ছে, সমস্যা কি- সবাইতো বলে, ইত্যাদি ইত্যাদি। আবার ক্ষেত্রবিশেষে প্রতিপক্ষ ক্ষেপেও উঠতে পারে- যেন কল করার কারণ জিজ্ঞেস করা বা এজাতীয় কোন প্রশ্ন অপরাধতুল্য সেকেলে বোকাদেরই প্রশ্ন-এটি! যাই হোক, আসুন এই so-called কারণ গুলোর যথার্থতা খানিকটা বিবেচনা করা যাক।

উল্লেখিত ‘এই যে শিখছি অনেক কিছু’ -এটা একটা মোহ। প্রবৃত্তির মোহ! অনেক কিছু শিখছে মনে হচ্ছে কিন্তু সাথে সাথে অনেক কিছু যে ভুলছে, শেখার যোগ্যতা হারিয়ে ফেলছে; তা সে জানে না। একটা নতুন অভিজ্ঞতা হচ্ছে- তার মানে কী? অন্যত্র এটা কাজে লাগাবে? না হয় অভিজ্ঞতা কেন? এটাও মূলত বলার জন্যে বলা- সাধু সাজতে। যুক্তি ছাড়া পুঁজিবাদ বাঁচে না- যত অন্ধ হোক, খোঁড়া হোক, এবং কি অযৌক্তিক হোক- তার একটা যুক্তি চাই- নিজের আত্মার প্রশান্তির জন্য নয় আপন উদ্যতপনার জন্য! তারপর হল- ‘সমস্যা কি?’ এর মানে দ্বিবিধ; সমস্যা আছে কিনা তাও জানে না! থাকলে, কি সমস্যা তাও না। এই হল ‘সমস্যা কী’র অবস্থা। ‘সবাই-ই তো বলে’ মানে হল- কেন বলি জানি না- সবাই বলে আমিও বলি। আসলে এই অবাঞ্ছিত মোবাইলপনার মূলে আছে- অজ্ঞতার শূন্যতা। সাথে শূন্যতার আরো কিছু ব্যষ্টিক ও সামষ্টিক রূপ। সেগুলোও সুস্পষ্ট কিছু কার্যকারণের ফলাফল মাত্র!

\ পাঁচ \



ফোনালাপ ক্ষান্তদানের কিছু ব্যাপার নিয়ে আমরা পূর্বে কিছু ইঙ্গিত পেয়েছিলাম। প্রশ্ন উঠেছিল গল্পে আমরা প্রচলিত যে ধার্মিকতার আস্ফালন দেখেছি তাই ফোনালাপ বন্ধের একমাত্র কারণ কি না? উত্তর হল সুস্পষ্ট ‘না’। কারণ আমরা দেখি সেই শুরুর দিন থেকে শেষ পর্যন্ত এমন মৌলিক কোন ঘটনা ঘটেনি যে, যাতে তাদের চরিত্রের কোন গুণগত পরিবর্তন ঘটতে পারে। যে রনির নসিহত এখানে ফোনালাপ ক্ষান্তদানের প্রেক্ষাপটে হাজির করা হয়েছে তা নিতান্তই অগভীর এবং স্থূল। এবং ফোনবালকের ইসলাম সম্পর্কিত সেই উদ্যতপনা (সাময়িক হলেও) প্রমাণ করে যে এত দ্রুত নিজেকে গুছিয়ে নেয়ার আত্মিক গভীরতা তার মোটেই ছিল না; তাছাড়া রনি তার হঠাৎ বন্ধু নয়।

মূলত ফোনালাপের উৎসেই এর নিদারুণ, হৃদয়বিদায়ক, অকল্পনীয় ক্ষান্তদান বা বিচ্ছেদের বিশ্বস্ত বীজ লুকায়িত। ব্যক্তির সততা, ব্যক্তিত্ব, লক্ষের দৃঢ়তা ইত্যাদি শুধু তার বিবেকের রক্তক্ষরণের পরিমাণে হ্রাস বৃদ্ধি করতে পারে। আবার যদি পেনোটাইপিক্যালি অর্থাৎ ব্যাহ্যিক দৃষ্টিকোণ থেকে বলি তাহলে বলতে হয়- ফোনালাপের যে পিকিউলিয়ার চঞ্চলতা সেটি ধারণ করার কষ্টের অর্থহীনতা, ক্রমহ্রাসমান আকর্ষণ বিধি (অবৈধতার আকর্ষণ যেমন তীব্র ঠিক তেমন তীব্রভাবেই হ্রাস পায়), পারস্পরিক সন্দেহপ্রবণতা, বিভিন্ন মাত্রার ব্যক্তিগত, সামাজিক, পারিবারিক অনিশ্চয়তা এবং সিদ্ধান্তহীনতা ইত্যাদি বিষয়গুলো বিভিন্ন অনুপাতে জড়িত থাকে এই ক্ষান্তদান প্রক্রিয়ায়। আর তাই যিনি ‘সবকিছু’ বানিয়ে তুলেছিলেন সেই ফোনবালকের পক্ষ থেকেই বিচ্ছেদের ব্যবস্থাপত্র হাজির হয়েছিল। ধর্মীয় কারণই যদি মুখ্য হতো তাহলে তাহাজ্জুদ পড়া মেয়েটির পক্ষ থেকে আসতে পারতো এই বিচ্ছেদ প্রস্তাব- যদি কোন দিন তার পাপবোধ তার ধার্মিক বিবেককে জড়িত করতো! তারপরও ভালো অবশ্য পুঁজিবাদী জগতের কেন্দ্রে অবস্থানকারীদের এই বিচ্ছিন্নতা আরো বিশ্রিভাবে খুন পর্যন্ত (সন্তান খুন, বন্ধু খুন, নিজে খুন, খুনি হওয়া ইত্যাদি) গড়াতে পারে অনায়াসে এবং গড়াচ্ছে ক্রমবর্ধমান হারে। আল্লাহ্ আমাদের মুহাফেজ হোন!

অজস্র প্রশ্নের অবকাশ রেখেই শেষ করতে হচ্ছে ফোনবালিকা মনস্তত্ত্ব। জটিলতার ভয়ে কোথাও কোথাও ভাসা ভাসা বলেই নিবৃত হতে হয়েছে। দেখি আপনারা কীভাবে নিচ্ছেন বিষয়গুলো, কীভাবে প্রশ্ন তুলছেন এবং কীভাবে খুব স্বাভাবিক, সচেতন ও যৌক্তিকভাবে overcome’এর সম্ভাব্য পথ-পদ্ধতি আবিষ্কার করছেন…

বিষয়: বিবিধ

২৩২২ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File