বর্তমান বিশ্ব-প্রেক্ষাপটে ডা. জাকির নায়েক : আমাদের অধ্যয়ন সমস্যা ও মূল্যায়ন প্রসঙ্গ
লিখেছেন লিখেছেন শাহাদাত মাহমুদ সিদ্দিকী ২২ জুন, ২০১৩, ০৮:৫৯:০০ রাত
(চট্টগ্রাম থেকে প্রকাশিত একটি মাসিকে ডা. জাকির নায়েক’কে নিয়ে তুমুল বিতর্ক তখন। বিতর্কে জড়াবোনা জড়াবোনা করেও জড়িয়ে গিয়েছিলাম। সেই প্রেক্ষিতেই এই লিখা। সমালোচনার জবাবের চেয়ে মনস্তত্ত্ব বোঝাই গুরুত্বপুর্ণ মনে হয়েছিলো তখন। লিখাটি প্রকাশ হয়েছে গত বছরের ডিসেম্বর সংখ্যায়। এখনও সমান প্রাসঙ্গিক ভেবে, বিশেষ কোনো পরিবর্তন ছাড়াই পোস্ট করলাম…)
যে কোন আলোচনারই antithesis হলো সমালোচনা। সমালোচনা যথার্থ হলে আমরা সহজেই একটি synthesis বা সংশ্লেষে পৌঁছতে পারি। তবে সমালোচনার প্রকরণ আছে। প্রকরণভেদে আছে স্থান-কাল-পাত্রগত প্রভেদ এবং আছে আলাদা ভাষা ও… ভাষাভেদ। তাই বন্ধুর সমালোচনা ও শত্রুর সমালোচেনার প্রকৃতি অভিন্ন নয়। পক্ষের কারো যুক্তির প্রতিউত্তর কিংবা প্রতিপক্ষের যুক্তিখন্ডনের ভাষাও পৃথক। সুতরাং দেখতে হবে, কোথায় দাঁড়িয়ে কোন সময়, কার সমালোচনা করছি।
ডা. জাকিরের সমালোচনার সর্বত্র ক্যামোন যেন ছিদ্রান্বেষী ছাইচাপা ঈর্ষাকাতরতার প্রবল প্রভাব। যেন অবচেতন তড়িঘড়িতে hypothesis(অনুমান) করে নিচ্ছি আগেভাগেই- ‘ফেতনা’! ‘একবিংশের ভয়াবহ জাকির ফেতনা’! নইলে একজন বিশ্বখ্যাত ধর্মতাত্ত্বিক যেখানে- তাঁর একটি চিন্তা প্রকাশ করতে দশটি বাক্যের আশ্রয় নিলেন- সেখানে আমি কিভাবে যথাযথ পর্যালোচনার পথ এড়িয়ে এক আধখান বিখন্ডিত বাক্যতুলে সমালোচনা শুরু করে দিতে পারলাম!?
খুব স্বাভাবিকভাবেই তখন আর ‘সম্মানিত’ সমালোচকবৃন্দের নিয়াতের বিশুদ্ধতায় নি:সন্দেহ থাকা যায় না। ‘এই সমালোচনার উৎস কোথায়?’- এটাও প্রশ্ন জাগে, খুব সহজ না হলেও- সহজেই! (কারও ব্যাপারে কোন সমালোচনা গ্রহণের পূর্বে সেই সমালোচনার উৎস পর্যালোচনা একটি অপরিহার্য অনুষঙ্গ।) নিজস্ব গোষ্ঠীগত সংজ্ঞায়- আলেম, মাদ্রাসা এবং পোশাক-আশাকের বিষয়টি যখন অতটা তীব্র ও তীক্ষ্ণভাবে নির্দেশিত হয়- তখন সমালোচনার মনোবৃত্তিও থলের বাইরে উঁকি দেয়! দেখুন না! সামান্য (ঈমান-আকীদার তুলনায়) হুর প্রসঙ্গে জনৈক আমিনুল ইসলাম হুসাইনী কি বলে ফেললেন- ‘‘আসলে তিনি কিছুই জানেন না।’’ না জানার কারণও বললেন- ‘‘জানবেই বা কি করে তিনি তো কোন মাদ্রাসায় পড়েননি।’’…. এসেছে কুরআন তিলাওয়াত অশুদ্ধতার অভিযোগ পর্যন্ত!! (জুলাই ’১২ সংখ্যা।) জনাব জিসান মেহবুব আরো খানিকটা গলা চড়িয়ে বললেন- ‘‘কার দিয়ে ইসলামের কী উপকার হচ্ছে তা পরে দেখা যাবে। আগে জানতে হবে….।’’ আগে কি জানতে হবে? হুঁ…. জানতে হবে- ‘‘ডা. জাকির নায়েক আলেম কি না? … থামুন! থামুন!…. উত্তর তিনি নিজেই দিচ্ছেন- ‘‘যতটুকু জানা গেছে তিনি আলেম নন।’’ ‘কতটুকু’ জানা গেছে আমরা জানি না। তবে এটুকু বুঝলাম- সম্ভবত ‘অমুক তমুক’ মাদ্রাসায় পড়ার সৌভাগ্য উনার হয়নি। তা ডা. জাকির কি সেই উৎসের ধারক- বাহকদের আর্থ-সামাজিক, রাজনৈতিক, মনস্তাত্ত্বিক অথবা অন্য কোন স্বার্থহানি ঘটিয়েছেন?- এটিও কি সঙ্গত প্রশ্ন নয়?
তা না হলে ডা. জাকিরের প্রতি সমালোচনার ভাষা অমন প্রতিহিংসাপরায়ণ, সলিমুদ্দি-কলিমুদ্দি-টাইপ হচ্ছে কেন? (জনাব মেহবুবকে কিছুটা serious মনে হলেও দেখবেন- তা শুধু আপন সমালোচনার ব্যাপারে, ডা. জাকিরকে তাঁর দৈশিক পরিস্থিতি, আন্তর্জাতিক পরিপ্রেক্ষিত কিংবা তাঁর শ্রোতাদের জ্ঞান ও মনস্তাত্ত্বিক প্রেক্ষাপট উপলব্ধিতে নয়।) জনাব আরজুর কথাই ধরা যাক- যিনি ‘‘বিপরীত আদর্শের হলেও (যেমন হুমায়ুন আজাদ) মেধাবী ও প্রতিভাবান প্রতি বরাবরই শ্রদ্ধাশীল।’’ (মার্চ ’১২) তিনি এই copy-paste criticism-এর primary source’এর সন্ধান দিতে গিয়ে ডা. জাকিরকে কিভাবে পরিচয় করিয়ে দিলেন?- ‘‘ইসলামিক টিভির হাস্যকর চলচ্ছিত্রের নায়ক’’, তারপর বললেন- ‘‘ডা. জাকির সাহেবের ল্যাজে-গোবরে বক্তৃতার আরো রহস্য জানতে হলে মাসিক আদর্শ নারীর মার্চ ও এপ্রিল ২০১২ সংখ্যাদ্বয় পড়তে পারেন’’ (মে ’১২)। অসাধারণ….. তবে তথাকথিত ultra-modern মেয়েদের প্রতি তীব্র নসিহতে (নভেম্বর ’১২) আরকানুল ইসলামের বাক্যটি মনে হয় এখানেও সমান প্রাসঙ্গিক- ‘‘স্টার প্লাস দেখো ঠিক আছে, কিন্তু তা এভাবে গিলতে হবে কেন?’’
যাই হোক, জনাব আরজু ‘আদর্শ নারী’ উদ্ভূত এসব ‘রহস্যের’ গোলক ধাঁধাঁয় পড়ে শেষ পর্যন্ত মাস ছয়েক না যেতেই (অক্টোবর ’১২) কলমের এক খোঁচায় হালকা পাতলা ডা. জাকিরকে ইসলামের ‘মূলধারা’ থেকেই ‘অনেক দূরে’ সরিয়ে দিলেন। [‘মূলধারা’ বলতে উনি কি বুঝিয়েছেন, সেই মূলধারা নির্ণয়ের সর্বজনগাহ্য মানদন্ড কি, কারা এই মূলধারায় আছে, কোন মানদন্ডের (আদর্শ নারীর সেই দু’সংখ্যার সমালোচনা?) ভিত্তিতে তিনি ডা. জাকিরকে ইসলামের মূলধারা থেকে খারিজ করে দিলেন- কিছুই বলেননি। এবং কেউ যদি ইসলামসম্মত পূর্ণ যুক্তি সহকারে উনার নিকট গ্রহণযোগ্য যে কোন ধারার মোকাবেলায় ডা. জাকিরকেই মূলধারার অন্তর্ভুক্ত করেন তাহলে উনার পাল্টা অবস্থান কি হবে- জানাননি তাও!]
\ ২ \
আপাত দৃষ্টিতে মনে হতে পারে ডা. জাকিরের সমালোচনা করছি ইসলামের মাদন্ডে, কিন্তু হচ্ছে মূলত আপন আপন গোষ্ঠীগত সংকীর্ণতার অতল থেকে- উপমহাদেশীয় ভ্রান্তি এবং বহুল প্রচলিত ইসলামিক (?) কুসংস্কার উদ্ভূত চিন্তা-চেতনা থেকে, আপন অবচেতন জানাটাকে খাই-না-খাই সত্য মনে করা এবং আরব সংস্কৃতির সাথে ইসলামকে একাকার করে দেখার একগুঁয়ে প্রবণতার কুয়াসাচ্ছন্নতা থেকে….।
অথচ ইসলামী মানদন্ডের ভিত্তিতে কাউকে সমালোচনার পূর্বে প্রথমত, স্থান-কাল-পাত্র নিরপেক্ষভাবে ইসলামকে উপলব্ধি অপরিহার্য (ফরজ) এবং একইভাবে গুরুত্বপূর্ণ স্থান-কাল-পাত্রের ভিত্তিতে ইসলামী শরীয়তের নমনীয়তা এবং vary করার ব্যাপারটি সম্পর্কে স্পষ্ট থাকা। ডা. জাকিরের ক্ষেত্রে এর কোনটাই পালিত তো হয়নি-ই, বরং পদদলিত হয়েছে। বিভিন্ন ধর্মাবলম্বী heterogenous শ্রোতাদের সম্মুখে ইসলামী দাওয়াতের ‘হিকমত’ এবং কুরআনের হৃদয় গলানো- সবাইকে আপন করার গভীর আকুতি সম্পন্ন অনন্য আহবান- ‘‘….. হে আহলে কিতাব! আসো এমন একটি কথার দিকে, যা তোমাদের ও আমাদের মধ্যে (সুন্দর) মিল…’’ (০৩ : ৬৪) বিবেচনা না করে করা- অসম্পূর্ণ অগভীর, বিখন্ডিত এবং ইসলামের উদার দৃষ্টিকোণ থেকে নিতান্তই স্থূল এই সমালোচনার সাথে আমাদের উপমহাদেশের একটি ঐতিহাসিক যোগসূত্রের অলিগলিগুলোর সম্পৃক্ততাও ভেবে দেখার মতো।
বলা যায় এই ঈর্ষাকাতর মন:স্তত্ত্বের ফ্লেভার জমে উঠেছিল ১৮৫৭ সালে উপমহাদেশের ‘প্রথম সর্বাত্মক স্বাধীনতা আন্দোলন’ আপাত ব্যর্থতা পরবর্তী সময়ে। এরপর উপনিবেশিক যাঁতাকলে পিষ্ট আর্থ-সামাজিক রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে সেটি পরিণত হয় গোষ্ঠীগত সংকীর্ণতায়, যা ‘পাকিস্তান প্রস্তাবে’র প্রেক্ষিতে অখন্ড ভারততত্ত্বের পক্ষে-বিপক্ষে এসে কচ্ছপ-টাইপ কুপমুন্ডুকতায় পর্যবসিত হয়ে বর্তমান অবস্থায় বিরাজিত। (আরো গভীরভাবে দেখার ব্যাপার- যে শ্রেণীটির নেতৃবৃন্দ এবং অন্ধভক্তরা কবি নজরুলকে ‘কাফের’ ফতোয়া দিয়েছিল, সকাল-সন্ধ্যা মুখর ছিল ড. ইকবালের সমালোচনায় এবং ‘ফেতনা’ অপবাদে মাওলানা মওদূদীর প্রতি অকল্পনীয় অযৌক্তিক গালাগালির আগুনে ফুঁসে উঠেছিল তারাই এখন ডা. জাকির নায়েককে নিয়ে অবাঞ্ছিত ধারার নিন্দায় মেতে উঠল কি না?)
আল্লাহ্ মাফ করুন! এই পরাজয়ের পর ঈমান হারানোর তীব্র ভীতিতে- যা তৎকালীন সময়ে খুবই স্বাভাবিক ছিল- প্রচন্ড মানসিক অস্থিরতা এবং কোন কোন ক্ষেত্রে উদভ্রান্তির শিকার (ঘর পোড়া গরু, চুন খেয়ে জিহবা পোড়া মানুষ, কিংবা বলেতে পারেন সদ্য রাজ্যহারা কোন রাজার মতো) এই লেবাসমুখী (লেবাসধারী বলবো না) ধার্মিক শ্রেণীটির উদ্ভব ঘটেছিল। একই সাথে ফিরিঙ্গি টাইপ মুসলমানদের উপস্থিতিতে আবির্ভাব ঘটে স্যুট-টাই ফোবিয়ার।
\ ৩ \
তাই বলে আমরা বলছি না যে, জনাব আরমান আরজু কিংবা জিসান মেহবুব ভাই কেউই এ ধরনের কোন জনবিচ্ছিন্ন গ্রুপের একান্ত নিজস্ব সংকীর্ণতার প্রতিনিধিত্ব করছেন। তবে উনারা যেহেতু secondary source থেকে সমালোচনায় যোগ দিয়েছেন, তাই উনারাই বিচার করবেন উনারা কার/কাদের কতটুকু শিকার হয়েছেন। ‘শিকার’ বিষয়টি আরো স্পষ্ট হবে যদি আপনি জনাব মেহবুবের জুলাই ’১২ সংখ্যা থেকে নভেম্বর ’১২ সংখ্যায় উনার গুণগত উত্তোরণ দেখেন। প্রথমোক্ত সংখ্যার সমালোচনায় তিনি আলেম, প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা, টাই ইত্যাদিতে মুখর থাকলেও নভেম্বরে এসে অধিকতর স্পর্শকতার, অধিকতর নয়- সর্বাধিক স্পর্শকাতর topic‘ঈমান-আকিদা’র উদ্বোধন ঘটান। এবং ডা. জাকিরের প্রতি ‘‘ইসলামের অনেক মৌলিক আকিদা সম্পর্কে মনগড়া উক্তি করে মুসলমানদের ঈমান নষ্ট করার পথ রচনা’’ তারপর- ‘‘মানবতার সমাধানের নামে মুসলিম মিল্লাতের মাঝে বিভেদের বীজ বুনা’’ ইত্যাদি অভিযোগে আক্রমণাত্মক হয়ে উঠেন। অতপর ‘‘এ জাতীয় কিছু দৃষ্টান্ত অতি উৎসাহী জাকির ভক্তদের উদ্দেশ্যে তুলে ধরেন।’’ (কারও ‘ভক্ত’ তো নই-ই, কিছুতেই হতে পারি না অতি উৎসাহী; ততক্ষণ সমর্থন করি ততটুকু, যতক্ষণ যতটুকু তাকে সমর্থন- ইসলাম সমর্থনের সমার্থক।)
আবার জনাব জিসানের মতে- অন্যান্য বিরোধ ‘সমস্যার কথা নয়’ ‘‘সমস্যা সৃষ্টি হয় তখনই যখন মতভেদটা হয়ে দাঁড়ায় ঈমান- আকিদার পরিপন্থি।’’ তাহলে ডা. জাকিরের সেই একই বক্তৃতাগুলো সম্মুখে থাকা সত্ত্বেও ইতোপূর্বেকার সমালোচনায় (বিশেষত জুলাই’ ১২) আলেম, নন-আলেম; মাদ্রাসা-স্কুল কিংবা পোশাক-আশাকের মতো তুচ্ছ বিষয়কে কেন এতো গুরুত্ব দেয়া হল?- প্রশ্নটি কি প্রকাশিত হতে বিদ্রোহ শুরু করে না? প্রথমেই কেন ঈমান-আকিদার মতো গুরুতর প্রসঙ্গটি এলো না? এটা কি সেই সমালোচক গোষ্ঠীর আসল দৃষ্টিভঙ্গি, সস্তা মনোভাবের বিস্ফোরণ ঘটিয়ে দেয় না?? এর আরো একটি মানে কি এই নয় যে- ‘সমস্যা সৃষ্টি করা’ বিরোধগুলি না পেলেও ‘সমস্যার কথা নয়’ বিরোধগুলিতে হলেও ডা. জাকিরের সমালোচনা অব্যাহত রাখতে হবে?!?...
\ ৪ \
যদি এই-ই হয়, তাহলে বলতে হবে- সমালোচনার সত্যাসত্য নির্ণিত হওয়ার পূর্বেই (কারণ ব্যক্তিগত ভুল-চুক, স্লিপ অপ টাং, কিংবা বিশেষ বিশেষ পরিস্থিতিতে কোন কোন বিষয় ভিন্নভাবে বিবৃত হতেই পারে)- উনাদের নৈতিক ভিত্তি বাজেয়াপ্ত হয়! উল্লিখিত অভিযোগগুলোর পর্যাপ্ত পর্যালোচনা করা গেলে হয়তো বিষয়টি আরো স্পষ্ট হতো। কিন্তু তাতে লিখাটির কলেবর দ্বিগুণ কিংবা তারও বেশী হয়ে যাওয়ার আশঙ্কা করছি। তবে এটুকু বলতে পারি- কেউ যদি একবারও মনখোলা মনোযোগ দিয়ে ডা. জাকিরের আলোচনাগুলো পড়েন তাহলে অনেক অভিযোগের জবাব পেয়ে যাবেন। এখানে যে একুশটি অভিযোগের অবতারণা মেহবুব ভাই করেছেন তার মধ্যে শেষ চৌদ্দটির সাথে ঈমান আকিদার কোন সম্পর্ক নেই- এগুলো ফিকাহ্গত তর্ক-বিতর্কের মাধ্যমে নিষ্পত্তির বিষয়- কোন কোনটির হয়তো সার্বজনীন নিষ্পত্তি কখনোই সম্ভব হবে না। অন্য অভিযোগ গুলোর ব্যাপারে কিঞ্চিত hints দেয়া প্রয়োজন মনে করছি-
(১) আল্লাহকে ব্রাহ্ম/বিষ্ণু নামে ডাকা প্রসঙ্গে।
-এ আলোচনাটি আল্লাহ্ তা’লাকে গুণগত পরিচয়ে চেনা অর্থে। কালিমা-ই তামজিদে যে ‘অর্থে’ আমরা আল্লাহ্ পাক’কে স্বীকৃতি দেই। ডা. জাকিরের ব্যাখ্যার এখানে বিশেষ স্থান-কাল-পাত্রগুণে ইসলামের ব্যাপকতা, শ্রেষ্ঠত্ব, সর্বময়তা এবং সত্যতাকে উদ্ভাসিত করেছে। রয়েছে প্রচ্ছন্ন অথচ সুগভীর দাওয়াত। [ব্রাহ্ম=স্রষ্টা=খালিক; কিষ্ণু=পালনকর্তা=রব] তবে ‘আল্লাহ্’ নামটি ‘গড’ নামের চেয়েও অধিকতর পছন্দনীয়- কেন? পড়ুন বিস্তারিত- তাঁর ‘ইসলাম ও হিন্দু ধর্মের সাদৃশ্য’ বইটিতে।
(২) ‘মহিলা নবী’ বিষয়ে অসাধারণ হিকমতপূর্ণ অপূর্ব জবাব। ‘কোন অর্থে’ মহিলা নবী এসেছেন এবং ‘ইসলাম যে অর্থে’ নবী বলে ‘সে অর্থে’ কেন কোন মহিলা নবী আসেনি- তার চমকপ্রদ ব্যাখ্যা। পড়ুন ‘প্রশ্নোত্তরে নারীর অধিকার’- একেবারে প্রথম প্রশ্ন, করেছিলেন জনৈক সায়মা কাদরী।
(৩) ও (৭) রাম ও কৃষ্ণের নবী হওয়া এবং বেদ’এর আল্লাহর বাণী হওয়ার ‘সম্ভাবনা’ প্রসঙ্গে।
- যৌক্তিক কিছু কারণের ভিত্তিতে, সবাইকে ধারণ করার ইসলামী সক্ষমতা অর্থে- দাওয়াতের একান্ত অভিপ্রায়ে এ শুধু সাময়িক স্থানগত (সেই সমাবেশের) ধারণা। এক অর্থে বলা যায়- ইসলাম সে সম্ভাবনা রেখেছেও। কারণ একশটি সহীফার নাম-ধাম আমরা জানি না। আবার অসংখ্য (এক লক্ষ চবিবশ হাজার/দুই লক্ষ চবিবশ হাজার) নবী রাসূলের মধ্যে আমরা জানি মাত্র ২৫/২৬ জনের নাম।
(৪) রাসূলুল্লাহ তাঁর রওজা শরীফে মৃত প্রসঙ্গে।
- এ অভিযোগটি নিতান্তই বিতর্কিত। এ জাতীয় আরো বিতর্ক চলমান। যেমন- রাসূল (সা.) মাটির তৈরি কি নূরের তৈরি, এবং কি উনার প্রশ্রাব-পায়খানার পবিত্রতা-অপবিত্রতা নিয়েও তর্কের শেষ নেই। এগুলো ঈমান-আকিদার সাথে কতটুকু সম্পর্কিত কে জানে!
(৫) কুরানের ব্যাকরণগত ভুল আছে স্বীকার করা প্রসঙ্গে।
- এই অভিযোগটি আপাদমস্তক হাস্যকর। ডা. জাকির বহু জায়গায় বলেছেন এবং ইতিহাসও তা বলে যে- আরবি ব্যাকরণের উৎসটি হল আল কুরআন। সুতরাং, কোথাও বৈপরীত্য দেখা দিলে আরবি ব্যাকরণকেই উৎসের সাথে নিজেকে সংগতিপূর্ণ করে নিতে হবে।
(৬) ‘সাহাবীরা রাসূলুল্লাহ সম্পর্কে মিথ্যা হাদীস বর্ণনা করেছেন’ সুত্রে গিয়ে দেখলাম তিনি মোটেই তা বলেননি। এবং এটি কোন অভিযোগই নয় বরং মুসলমানদের আকিদা সম্পর্কে জনাব মেহবুব যে ধারণা প্রকাশ করেছেন তা-ই প্রশ্নবিদ্ধ! সমূহ প্রশ্নবিদ্ধ!! কারণ বিচ্ছিন্ন কোনো সাহাবী সত্যের মানদন্ড নয়।(যদিও একটি জাল-হাদীস প্রচলিত আছে যে, 'আমার সাহাবীরা আকাশের নক্ষত্র বিশেষ, যাকেই অনুসরণ করবে- হিদায়াত প্রাপ্ত হবে'।) মূলত, সত্যের একমাত্র মানদন্ড হলো- মুহাম্মদ, দি গ্রেটেস্ট(স)। সাহাবীরা হচ্ছেন উনাকে অনুসরণের ক্ষেত্রে আদর্শ! দু'টি ব্যাপার সম্পূর্ণ আলাদা, গুলিয়ে ফেলা যাবে না..
যাই হোক, এরপরও যদি কোথাও কারো খটকা লাগে- আশা করি আল্লাহ্র এই নগন্য বান্দাকেও আপনার চিন্তার অংশীদার করবেন….। আমরা আমাদের অস্তিত্বের অর্থময়তার প্রয়োজনেই ইসলামের জন্য, ইসলামের ভিত্তিতেই বিতর্ক করছি। শুধু পৌঁছুতে একটি সুন্দর সমাধানের সফলতায়….
(পরিশিষ্টঃ
‘ইসলাম মানে শান্তি, শক্তি’। তারপর ‘গভীর জঙ্গল’, ‘বাঘের সালাম’ ইত্যাদি বলে জনাব আরমান আরজু জাকিরকে জড়িয়ে তার প্রতিকুলে যে আধ্যাত্মিক উপাখ্যান রচনা করলেন- সে সংশ্লিষ্ট কিছু বলার দু:সাহস এখনও আমার হয়নি। তবে এটুকু বলি- পীর-ফকির, সুফী-আউলিয়া ইত্যাকার অসংজ্ঞায়িত বায়বীয় বিষয় নিয়ে আপনি বিগত অন্তত এক দশক বাক্য ব্যয় করে আসছেন- বিভিন্ন প্রসঙ্গে। এসব খুচরা আলোচনার পরিবর্তে আপনার আধ্যাত্মিক ভাবনার একটা অখন্ড চিত্র যদি শি.কি দ্বীন দুনিয়ার পৃষ্ঠায় অংকিত হয় তাহলে এর পাঠক-পাঠিকারা যুগপৎ উপকৃত ও কৃতজ্ঞ হই। কি বলেন আরজু ভাই?…)
বিষয়: বিবিধ
২৩৮৭ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন