পদ-পদবী ভিত্তিক সম্পর্কনীতি, আনুগত্যের মানদন্ড এবং ইসলামী আন্দোলনের ভবিষ্যত
লিখেছেন লিখেছেন শাহাদাত মাহমুদ সিদ্দিকী ১৯ জুন, ২০১৩, ০৮:১০:২৬ সকাল
‘উহাদের’ সাথে ‘তাহাদের’ কিংবা ‘তাহাদের’ সাথে ‘উহাদের’- সম্ভবত, সম্পর্কহীন এক আদৃশ্য বন্ধন আছে! (তাকাওয়ার সীমায় এ অবশ্য দোষের কিছু নয়!) কিন্তু পদ-পদবিগত কারণ সেটিকে হয়তো আরো ঘনীভূত করছে দেখছি। এ খানিকটা আশংকাজনক বটে! আল্লাহ না করুন, তার সাথে যদি আল্লাহভীতির চেয়ে উমাইয়া-ইসলামের নেতৃত্ব প্রবণতা যুক্ত হয়, তাহলে তো কথাই নেই। বিষয়টি হয়ে পড়ে নিদারুণ বিপজ্জনক!
কিভাবে?...
০২
তার আগে জেনে রাখা ভাল- কোনো একটি প্রথা উদ্ভবের কারণ এবং টিকে থাকার কারণ অধিকাংশ ক্ষেত্রে এক না’ও হতে পারে। তাকাওয়া উদ্ভূত একটি রেওয়াজ প্রচলিত হওয়ার পর এমন হতে পারে যে, পরবর্তীতে তাকাওয়ার সাথে এর দূরতম সম্পর্কও থাকলো না। এ হতেই পারে। রাসূলুল্লাহর ওফাতের মাত্র তিন দশকের মধ্যেই এর প্রাদূর্ভাব আমাদের দেখতে হয়েছে। দেখতে হয়েছে সত্যের সৈনিকদের সামান্য ‘উদাসীনতা’য় কিভাবে তছনছ হয়ে গেছে- বিশ্বনবীর মানবিক ব্যবস্থা- সীমাহীন ত্যাগে, প্রেমে, রক্তে, ভালোবাসায় সাজানো, অসংখ্য জীবন্ত সাহাবীদের উপস্থিতিতে…! এর দুই দশক পরেই তো ঘটলো মানব ইতিহাসের নৃশংসতম হত্যাকান্ড, হত্যাই শুধু নয়- আরো অনেক বেশী কিছু! অনেক অনেক বেশী! হয়েছিল শাসনতান্ত্রিক বিদআতের উদগাতা ‘অনেক অনেক বড়(?)’ এক ‘সাহাবী’র সুস্পষ্ট অঙ্গুলি-সংকেতে!
০৩
কতিপয় ব্যতিক্রমছাড়া ইতোপূর্বেও বহু সভাপতি-সভানেত্রী মিলনে উল্লেখযোগ্যসংখ্যক ‘আদর্শ ইসলামী পরিবার’ বিনির্মিত হয়েছে, তা যে কারণেই হোক(কিছু মহৎ উদ্দেশ্য হয়তো ছিলো)। এবং বাকীরাও সমাদৃত শক্তি কেন্দ্রসমূহের সাথেই নিজেদের গাঁটছড়া(love-knot) বেঁধেছেন। পরিকল্পিতভাবেই হোক বা না হোক, সামাজিক বা সাংগাঠনিক ভালোলাগাবশতই হোক, ‘সেলিব্রেটি’ হওয়ার বাসনাজনিত কারণ কিংবা অন্য যে কারণেই হোক- সেখানে আল্লাহভীতির তুলোনায় কিসের প্রাইওরিটি ছিলো, অথবা তাকাওয়ারই বিবেচনা কতটুকু ছিলো- আদৌ ছিলো কিনা কে জানে? কারণ তাকাওয়া যদি শুধু সভাপতি, সভানেত্রী কিংবা আমীর-ওমরাহদের কেন্দ্র করে আবর্তিত হত তাহলে নাম গোত্রহীন কোনো এক বুড়ির মেয়ে- খলিফা উমরের পূত্রবধূ হওয়ার সমস্ত সম্ভাবনা বাজেয়াপ্ত হয়ে যেতো। একটি সামান্য ব্যাপার, কিন্তু যথেষ্ট গুরুত্বপুর্ণ ও লক্ষণীয়। সে যাই হোক...
০৪
ব্যাপারটি হাস্যকর বটে!
হ্যাঁ, হাস্যকরই হতো। এই কথাগুলোর কোনো যৌক্তিকতাই থাকতো না! এবং আমরা এই স্ট্যাটাস নিয়ে কৌঁতুকও করতে পারতাম। যদি না এসব ব্যাপার-স্যাপার ‘সংবাদ’ হয়ে উঠতো। সাধারণ কর্মীদের উপর যদি ভয়ানক অর্থহীন ‘নেতিবাচক’ প্রভাব না রাখতো! যদি ক্ষমতার প্রতি দূর্বলতার কোনো উপসর্গ পরিলক্ষিত না হতো! অন্তত এই গন্ডীবদ্ধতার ভেতর থেকে প্রতিধ্বনিত হতো যদি বিপ্লবের আওয়াজ! নইলে এ সমস্ত সংবাদই তো- সেই পুঁজিবাদ নির্মিত পৃথিবীর নোংরামি মাত্র।(কে কোথায় প্রমোদ উড়াল দিচ্ছে, ডেটিং করছে, কার সাথে কার বিয়ের গুঞ্জন উঠছে, এবং কি- কোন অভিনেত্রী কতদিনের সন্তানসম্ভবা ইত্যাদি হাবিজাবি- তাদের কাছেই অনেক বেশী গুরুত্তপুর্ণ সংবাদ!) এখন দেখছি নতুন বোতলে পুরান মদের মত এই পুঁজিবাদী সেকিউলার ‘সেলিব্রেটি’ ধারণা ইসলামী আন্দোলনকে অক্টোপাসের মতো ঘিরে ফেলতে চাইছে।
০৪
এই যে নেতৃত্ব কিছু পরিবারে যে ভাবেই হোক ‘কুক্ষিগত’ হয়ে যাওয়া। যদিও কুক্ষিগত হওয়ার মতো পর্যাপ্ত ক্ষমতা এখনও সঞ্চিত হয়নি। কিন্তু কুক্ষিগত এ অর্থে যে- সংগঠনটির ব্যক্তিগঠন প্রক্রিয়ায় তাকাওয়ার চেয়ে 'নানা প্রকৃতির গ্লামারের' প্রতি অন্ধভক্তির আস্ফালন দৃশ্যমান হলেও কর্তৃত্ববানরা সর্বত্র নীরব! যেন কথাও কিছুই হয়নি, হচ্ছে না। চলছে-চলুক টাইপ একটা ভাব! এ অবস্থা অপরবর্তিত থাকলে যে 'উমাইয়া-ইসলামের' প্রতিপক্ষে ‘তাদের’ উত্থান- সে উমাইয়া ইসলামের আভিজাত্য-কেন্দ্রিক আবর্তনই তাদের ভবিতব্য হয়ে উঠবে। (বিপরীতে তৈরী হবে জীবনের-অধিক-মৃত্যু অভিমুখী হোসাইনের সাথীরা!)
০৫
এ লিখা তাদের জন্যই- যারা প্রচলিত কোনো অন্ধ মুক্তির খোঁজে অন্ধ আনুগত্যে বুঁদ হয়ে যায় না। যারা তাকাওয়ার বৈপ্লবিক অনাড়ম্বর নেতৃত্বের সপক্ষে অন্য সমস্ত বৈষয়িক আভিজাত্যকে থোড়াই কেয়ার করে। তারা প্রত্যাশা করে অখন্ড সংগঠন (খিলাফাত)। কিন্তু যদি জঙ্গে জামাল, যদি সিফফিন উপস্থিত হয়ে যায়- সন্দেহাতীতভাবে তাদের পক্ষ হয়ে উঠে 'প্রাসাদের-প্রতিপক্ষ' হজরত আলী, দ্যা গ্রেট। নইলে কারবালা তো আছেই…
০৬
সবসময় সবকথা বোকার মতো প্রকাশ করা নিষ্প্রয়োজন। চাই- সমস্ত শক্তিকেন্দ্রের সাথে সংশ্লিষ্ট, তা তুচ্ছাতিতুচ্ছ ব্যাপারেই হোক, আন্দোলনের নবীনতম কর্মীটিরও সব ক’টি এন্টেনা সজাগ থাকুক…
বিষয়: বিবিধ
১৫৩১ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন