প্রসঙ্গ ইসলামী আন্দোলনঃ রবীন্দ্র মোকাবিলার প্রশ্নে নজরুল পর্যালোচনার অনিবার্যতা

লিখেছেন লিখেছেন শাহাদাত মাহমুদ সিদ্দিকী ১৭ জুন, ২০১৩, ০৮:৪৪:০৩ রাত



মাত্র কয়েক দিন আগে পেরিয়ে গেল মানবতার অন্যতম প্রতিশ্রুত কবি কাজী নজরুল ইসলামের ১১৪তম জন্মজয়ন্তী। একজন কবিকে গ্রহণ করা বলতে যা বোঝায় সে অর্থে তিনি, বলা চলে- নিগৃহীত! এ দেশের ইসলামপন্থিরাও নজরুলকে মেনে নেন অনেক কষ্টে সৃষ্টে(কিছু ‘অ’কারণ আছে বটে!)। এবং শুধুই কবি হিসেবে। তাও ঠিক বুঝে শুনে নয়। তাঁর কিছু কবিতার পঙতি, কিছু দরদি গান, কিছু বক্তিতা বিবৃতি তাদের মাঝে যে অন্ধ আবেগ সৃষ্টি করে তাতেই তাদের তৃপ্তির ঢেকুর! নজরুলকে নিয়ে তর্ক-বাহাসের বন্যা বইয়ে দিতে চান। এবং প্রায়ই একই সাথে লিপ্ত হন ‘অর্থহীন’ রবীন্দ্র-বিরোধীতায়।

রবীদ্রনাথকে যারা এক-আধটু হলেও অধ্যয়ন করেছেন তারা নিশ্চয়ই জানেন- রবীদ্রনাথ কি ‘জিনিস’! এটা ঠিক যে- শিবাজী সাম্প্রদায়িকতার কলঙ্ক তিলক, কিংবা বঙ্গভঙ্গ-রদ পরবর্তি তীব্র ব্যথিত, যুগ যুগ ধরে কল্পনাতীত অংকে বঞ্চিত এ জ়াতির প্রাণের দাবী যে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়’টুকু’, সেটুকুরও বিরোধীতায় সভাপতিত্ব করার সুস্পষ্ট গুরুতর অপরাধ তার আমলনামায় আছে। তবু সেই ‘এক ধর্মরাজ্য মহাভারতকে সম্বল করা তীব্র সাম্প্রদায়িক’ রবীন্দ্রনাথের নামে ঢাবি’তে বহু লম্ফঝম্ফ হচ্ছে, হবেও অনেক আরো! এবং এতাও তো সত্য যে- মুমূর্ষু বাংলার হৃদপিন্ডে কিঞ্চিত অক্সিজেন সরবরাহকারী ‘বঙ্গভঙ্গ’ উৎখাত ষড়যন্ত্রে ‘সর্বদা কায়েমী-সাম্রাজ্যবাদী স্বার্থঘেষা’ রবীন্দ্রনাথ যে গান লিখেছেন তা’ই হল সে বাংলাদেশের জাতীয় সঙ্গীত- তাও স্বাধীন হওয়ার পর। একাটি জাতির এর চেয়ে তীব্রতর নপুংশকতা কী হতে পারে আর!

এ সমস্ত ঐতিহাসিক নির্মমতা স্মরন করে আমরা বুঝতে চাই যে- রবীন্দ্রনাথ এবং রবীন্দ্রকেন্দ্রীক ষড়যন্ত্র বহু পূর্ব হতেই আমাদের বিষধর নৃশংসতায় ঘিরে রেখেছে। সুতরাং, ভাঙ্গাচোরা নজরুল পাঠক হয়ে রবীন্দ্রনাথের তুলনায় নজরুলকে বড় করার সাধনা- বাগাড়ম্বরই হয়ে উঠবে, এবং ঠেকবেও। আগেই বলেছি- এ রবীন্দ্রনাথ! বড্ড ভয়ানক। বঙ্কিমের চেয়েও! বাগাড়মম্বর দিয়ে একে মোকাবিলার চিন্তাও- তার শক্তিই শুধু বৃদ্ধি করবে!

ভুলে গেলে চলবে না যে- রবীন্দ্রনাথকে বারবার বাঙ্গালীর আদর্শ দিশারী হিসেবে প্রতিষ্ঠার নগ্ন সেকিউলার ব্রাহ্মণ্যবাদী প্রচেষ্টা থেমে থাকবে না, বরং তীব্রতর হবে! আবার- রবীন্দ্র সঙ্গীত দিয়ে সকাল শুরু করা, একে ইবাদৎ আখ্যা দেয়া, এবং কী নিজের মৃত্যুর সময়/ জানাজার পরিবর্তে রবীন্দ্র সঙ্গীত বাজাতে অসিয়ত করার মতো অনেক বড় বড় সম্মানিত কুলাঙ্গার এ জাতির ভেতর পয়দা হয়েছে, আরও হবেও হয়তো! একইভাবে- ‘নিষিদ্ধ’ রবিন্দ্রনাথকে অধিকতর সিদ্ধ এবং শক্তিশালী করার সমস্ত উপকরণ রবীন্দ্র পুজারিদের হাতে রেখে নিষিদ্ধ করার বোকামিও রবীন্দ্র ষড়যন্ত্রকে বৈধতাই দেবে শুধু। এর বেশী কিছুই হবেনা।



তাহলে?...

তাহলে আর কি…,

নজরুল! নজরুল কথা বলবেন।

কবিতায়, সাহিত্যে, গানে, বক্তিতায়… যেখানে যখন যে অবস্থায় ভুল-শুদ্ধ যাই বলেন- শোনা এবং আত্মস্থ করাই প্রথম কাজ। তারপর পর্যালোচনা…। যারা নজরুল উত্থাপিত সুগভীর-ইসলামের সুউচ্চ মানবিক বৈপ্লবিকতার স্পর্শ ধারণ করেন তারা জানেন বিশ্ব, বিশেষত এ উপমহাদেশের ইসলামি আন্দোলনকে এগিয়ে নিতে এ নজরুল-পর্যালোচনা গুরুত্বপুর্ণই শুধু নয়, অনিবার্য। এবং অপরিহার্য রবীন্দ্র ও রবীন্দ্রকেন্দ্রীক ষড়যন্ত্র মোকাবিলাও! এবং এ দু’টো কাজ একসাথে করাই হবে সর্বাধিক ফলপ্রসু, এবং তা করার সবচেয়ে উত্তম পদ্ধতি হলো রবীন্দ্রনাথকে মোকাবেলার প্রশ্নে নজরুল পর্যালোচনা। কিন্তু তার আগে এ প্রশ্নের মীমাংসা করতে হবে যে-

রবীন্দ্র-মোকাবেলায় নজরুলের প্রাসঙ্গিকতা ও প্রয়জনীয়তা এতো তীব্র কেন?... নজরুলের কথা আসলেই কেন রবীন্দ্রনাথ এসে পড়েন? কিংবা রবীন্দ্রনাথ আসলে নজরুল? এর মূল কারণ কি তাঁদের সমসাময়িকতা?... কাব্য-সাহিত্য কেন্দ্রিক কোনো গোপন প্রতিযোগিতা?... নাকি সম্পুর্ণ অন্যরকম ভিন্নতর কিছু??...

(দেখুন- http://www.bdtomorrow.net/blog/blogdetail/detail/6441/shahadat.fbw/19306#.Ub8gXMi_7IU )

বিষয়: সাহিত্য

২০১০ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File