অশিক্ষিত সংসার জীবন বনাম শিক্ষিত সংসার জীবন
লিখেছেন লিখেছেন রিদওয়ানের আম্মু ০২ জুলাই, ২০১৩, ০২:১১:১৫ দুপুর
অনার্স পড়া অবস্থায় বিয়ে হয়ে ঢাকা আসলাম। স্বামী কাজের বুয়ার কথা বলল কিন্তু আমি না করলাম। পড়াশুনা আপাতত বাদ পড়ল অর্থাৎ অশিক্ষিত সংসার জীবন। সুন্দর সুখী টুনাটুনির সংসার। ভোরে ঘুম থেকে উঠে স্বামী-স্ত্রী একসাথে জামায়াতে ফজর নামাজ আদায় করে কোরআন তেলাওয়াত করা। আবার ঘন্টাখানিক সানি ঘুম। তারপর উঠে ঘর পরিস্কার, রান্না, সকালের নাস্তা তৈরী, স্বামী-স্ত্রী একসাথে খেয়ে তাঁকে হাসিমুখে বিদায় দেওয়া। এরপর পত্রিকা পড়া, ঘর গোছানো, হাড়ি-পাতিল পরিস্কার করা, বাজার করা, রান্নার জোগার, রান্না করা, কাপড়-চোপড় পরিস্কার ইত্যাদি করতেই দুপুর। দুপুরে দুজন খাবার পর বিশ্রাম নিয়ে বই পড়া, বিকালে বিভিন্ন প্রোগ্রাম করা, সন্ধায় স্বামী আসলে তাকে বরন করা, তার সাথে গল্প করা, কোন কোন দিন সন্ধার পর মার্কেটে যাওয়া বা লেকের পাশ দিয়ে হাটা-হাটি করা, রাত্রে রান্না করে খাওয়া-দাওয়া করে কোরআন-হাদীস পড়ে সুরা ওয়াকেয়া তেলাওয়াত করে ঘুমাতে যাওয়া ছিল আমাদের নিয়মিত রুটিন।
রিদওয়ান ভুমিষ্ট হওয়ার পর আর রাতে ঠিকমত ঘুম হয় না । রাতে উঠে বাবুকে খাওয়ান, ফজরে উঠে নামাজ পড়ে বাবু ঘুম থেকে ওঠার আগেই ঘরের সব কাজ করতে হয়। ও ঘুম থেকে উঠলে খাওয়ান, ওর কাপড় পরিস্কার, সময়মত খাওয়ান, তার অসুখ-বিসুখ সামলান, কান্না সামলান, ওর সাথে খেলা করা, গল্প করা, এসব করতেই সময় শেষ। ওর চোখের আড়াল হওয়া যায় না, রান্না ঘর, বাথরুম সব সময় ওকে কাছে রাখতে হয়।
আগে স্বামী থাকতেই ঘর-সংসার সামলাতে সময় শেষ হয়ে যেত এখন রিদওয়ান হওয়ার পর ওর সব কিছুই দেখতে হয়। সব মিলিয়ে এসব করার পর বাস্তবিক অর্থেই সময় পাওয়া যায় না।
আরও আছে আমাদের আত্বীয়-স্বজন, প্রতিবেশী সবার সাথে হক আদায় করা এসব করতেও প্রচুর সময় ব্যয় হয়।
বিয়ের কয়েকমাস পর বিভিন্নজনের সুপরামর্শে পড়াশোনার শখ হয়েছিল। একটি বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হলাম। সকাল ৮টায় ক্লাস। সেজন্য সকাল আর দিনদুপুরের রান্না একসাথে করতে হতো। এখন ভোরে উঠে নামাজ পড়ে ক্লাসের পড়া তৈরী করতে হতো, সকাল ৭টা মধ্যেই বাসা থেকে বের হতে হতো। কোন রকম রান্না করে দৌড়। অনেক দিন রান্নাও ঠিকমত হতো না। সকালে উঠে স্বামী ঠিকমত খেতে পারত না। দুপুরে কাজ শেসে এসে আমাকে বাসায় পেত না। অনেক সময় বেচারী সকালে নাস্তা না করেই বাসা থেকে কাজে যেত, দুপুরেও একই অবস্থা বাইরে খেত। আমিও কোনরকম কিছু খেয়ে সময় পার করতাম। ভার্সিটির ক্লাস শেষ করে বিকালে বাসায় এসে শুয়ে পড়তাম, সন্ধায় পড়তে বসতাম। রান্না-বান্না, ঘর-সংসার সব কিছুর উপর কেমন যেন অনীহা। স্বামী-স্ত্রী একসাথে ঘুরে বেড়ানো, গল্প করা, আনন্দ, সুখ-শান্তি এসব যেন সংসার থেকে উড়ে গেল। সারাদিন বাইরে থাকার জন্য মেজাজ খিটখিটে থাকত তার উপর পড়ার চাপ। স্বামী কিছু বললেই রেগে যেতাম, কয়েকদিন পর সেও আমার সাথে রাগারাগি শুরু করল। সংসারে অশান্তি শুরু হলো। আগে তাকে না দেখলে মন খারাপ থাকত, খাওয়া বন্ধ হয়ে যেত, চারিদিক বিষন্নতা আর একাকীত্ব আর এখন তার উল্টা। সেও একই অবস্থা। আমাদের সংসার ভেঙ্গে যাওয়ার উপক্রম এবং আরও অনেক কিছু.....।
অনেক ঝড়-ঝাপটার পর আমাদের মিল-মিশ হলো। কিন্তু সেই সুন্দর দিনগুলি আর ফিরে পাই না।
বিষয়: বিবিধ
২৩৮৮ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন