দাম্পত্য জীবনে স্ত্রীর কর্তব্য

লিখেছেন লিখেছেন মোগলে আজম ২৮ আগস্ট, ২০১৩, ১১:১৪:৫৬ রাত

১. স্বামীর অসন্তুষ্টি থেকে বিরত থাকা।

রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, “তিনজন ব্যক্তির নামাজ তাদের মাথার উপরে উঠে না। (ক). পলাতক গোলামের নামাজ, যতক্ষণ না সে মনিবের নিকট ফিরে আসে। (খ). সে নারীর নামাজ, যে নিজ স্বামীকে রাগান্বিত রেখে রাত যাপন করে। (গ). সে আমিরের নামাজ, যার উপর তার অধীনরা অসন্তুষ্ট।”

২. স্বামীকে কষ্ট দেওয়া থেকে বিরত থাকা।

ইমাম আহমদ ও অন্যান্য মুহাদ্দিস বর্ণনা করেন, “দুনিয়াতে যে নারী তার স্বামীকে কষ্ট দেয়, জান্নাতে তার হুরগণ (স্ত্রীগণ) সে নারীকে লক্ষ্য করে বলে, তাকে কষ্ট দিয়ো না, আল্লাহ তোমার সর্বনাশ করুন। সে তো তোমার কাছে ক’দিনের মেহমান মাত্র, অতি শীঘ্রই তোমাকে ছেড়ে আমাদের কাছে চলে আসবে।”

৩. স্বামীর অকৃতজ্ঞ না হওয়া।

রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, “আল্লাহ তা’আলা সে নারীর দিকে দৃষ্টি দেবেন না, যে নিজ স্বামীর কৃতজ্ঞতা স্বীকার করে না, অথচ সে স্বামী ব্যতীত স্বয়ংসম্পূর্ণ নয়।” ইমাম মুসলিম বর্ণনা করেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, “আমি জাহান্নাম কয়েক বার দেখেছি, কিন্তু আজকের ন্যায় ভয়ানক দৃশ্য আর কোন দিন দেখিনি। তার মধ্যে নারীর সংখ্যাই বেশী দেখেছি। তারা বলল, আল্লাহর রাসূল কেন? তিনি বললেন, তাদের না শুকরির কারণে। জিজ্ঞাসা করা হল, তারা কি আল্লাহর না শুকরি করে? বললেন, না, তারা স্বামীর না শুকরি করে, তার কৃতজ্ঞতা স্বীকার করে না। তুমি যদি তাদের কারো উপর যুগ-যুগ ধরে ইহসান কর, অতঃপর কোন দিন তোমার কাছে তার বাসনা পূণ না হলে সে বলবে, আজ পর্যন্ত তোমার কাছে কোন কল্যাণই পেলাম না।”

৪. কারণ ছাড়া তালাক তলব না করা।

ইমাম তিরমিজি, আবু দাউদ প্রমুখগণ সওবান রাদিআল্লাহ আনহু থেকে বর্ণনা করেন, “যে নারী কোন কারণ ছাড়া স্বামীর কাছে তালাক তলব করল, তার উপর জান্নাতের ঘ্রাণ পর্যন্ত হারাম।”

৫. অবৈধ ক্ষেত্রে স্বামীর আনুগত্য না করা।

রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, “আল্লাহর অবাধ্যতায় মানুষের আনুগত্য করা যাবে না।” এখানে নারীদের শয়তানের একটি ধোঁকা থেকে সতর্ক করছি, দোয়া করি আল্লাহ তাদের সুপথ দান করুন। কারণ দেখা যায় স্বামী যখন তাকে কোন জিনিসের হুকুম করে, সে এ হাদিসের দোহাই দিয়ে বলে এটা হারাম, এটা নাজায়েজ, এটা জরুরি নয়। উদ্দেশ্য স্বামীর নির্দেশ উপেক্ষা করা। আমি তাদেরকে আল্লাহর নিম্নোক্ত বাণীটি স্মরণ করিয়ে দিচ্ছি, আল্লাহ তা’আলা বলেন, “যারা আল্লাহর উপর মিথ্যা আরোপ করেছে, কিয়ামতের দিন তাদের চেহারা কালো দেখবেন।” হাসান বসরি রহ. বলেন, “হালাল ও হারামের ব্যাপারে আল্লাহ ও তার রাসূলের উপর মিথ্যা বলা নিরেট কুফরি।”

৬. স্বামীর বর্তমানে তার অনুমতি ব্যতীত রোজা না রাখা।

সহিহ মুসলিমে আবু হুরায়রা থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, “কোন নারী স্বামীর উপস্থিতিতে তার অনুমতি ব্যতীত রোজা রাখবে না।” যেহেতু স্ত্রীর রোজার কারণে স্বামী নিজ প্রাপ্য অধিকার থেকে বঞ্চিত থাকে, যা কখনো গুনার কারণ হতে পারে। এখানে রোজা দ্বারা স্বাভাবিকভাবেই নফল রোজা উদ্দেশ্য। কারণ ফরজ রোজা আল্লাহর অধিকার, আল্লাহর অধিকার স্বামীর অধিকারের চেয়ে বড়।

৭. স্বামীর ডাকে সাড়া না দেওয়া :

রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, “কোন পুরুষ যখন তার স্ত্রীকে নিজের বিছানায় ডাকে, আর স্ত্রী তার ডাকে সাড়া না দেয়, এভাবেই স্বামী রাত যাপন করে, সে স্ত্রীর উপর ফেরেশতারা সকাল পর্যন্ত অভিসম্পাত করে।”

৮. স্বামী-স্ত্রীর একান্ত গোপনীয়তা প্রকাশ না করা :

আসমা বিনতে ইয়াজিদ থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, “কিছু পুরুষ আছে যারা নিজ স্ত্রীর সাথে কৃত আচরণের কথা বলে বেড়ায়, তদ্রুপ কিছু নারীও আছে যারা আপন স্বামীর গোপন ব্যাপারগুলো প্রচার করে বেড়ায়?! এ কথা শুনে সবাই চুপ হয়ে গেল, কেউ কোন শব্দ করল না। আমি বললাম, হ্যাঁ, হে আল্লাহর রাসূল! নারী-পুরুষেরা এমন করে থাকে। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, এমন করো না। এটা তো শয়তানের মতো যে রাস্তার মাঝে নারী শয়তানের সাক্ষাৎ পেল, আর অমনি তাকে জড়িয়ে ধরল, এদিকে লোকজন তাদের দিকে তাকিয়ে আছে!”

৯. স্বামীর ঘর ছাড়া অন্য কোথাও বিবস্ত্র না হওয়া।

রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, যে নারী স্বামীর ঘর ব্যতীত অন্য কোথাও বিবস্ত্র হল, আল্লাহ তার গোপনীয়তা নষ্ট করে দেবেন।”

১০. স্বামীর অনুমতি ব্যতীত কাউকে তার ঘরে ঢুকতে না দেয়া।

বুখারিতে আবু হুরায়রা থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, “নারী তার স্বামীর উপস্থিতিতে অনুমিত ছাড়া রোজা রাখবে না এবং তার অনুমতি ছাড়া তার ঘরে কাউকে প্রবেশ করতে দেবে না।”

১১. স্বামীর অনুমতি ছাড়া ঘর থেকে বের না হওয়া।

আল্লাহ তা’আলা বলেন, “তোমরা ঘরে অবস্থান কর” ইবনে কাসির রহ. এর ব্যাখ্যায় বলেন, “তোমরা ঘরকে আঁকড়িয়ে ধর, কোন প্রয়োজন ছাড়া ঘর থেকে বের হয়ো না।” নারীর জন্য স্বামীর আনুগত্য যেমন ওয়াজিব, তেমন ঘর থেকে বের হওয়ার জন্য তার অনুমতি ওয়াজিব।

স্বামীর খেদমতের উদাহরণ: মুসলিম বোন! স্বামীর খেদমতের ব্যাপারে একজন সাহাবির স্ত্রীর একটি ঘটনার উল্লেখ যথেষ্ট হবে বলে আমার ধারণা। তারা কীভাবে স্বামীর খেদমত করেছেন, স্বামীর কাজে সহযোগিতার স্বাক্ষর রেখেছেন ইত্যাদি বিষয় বুঝার জন্য দীর্ঘ উপস্থাপনার পরিবর্তে একটি উদাহরণই যথেষ্ট হবে, আমার দৃঢ় বিশ্বাস। আসমা বিনতে আবু বকর থেকে সহিহ মুসলিমে বর্ণিত, তিনি বলেন, জুবায়ের আমাকে যখন বিয়ে করে, দুনিয়াতে তখন তার ব্যবহারের ঘোড়া ব্যতীত ধন-সম্পদ বলতে আর কিছু ছিল না। তিনি বলেন, আমি তার ঘোড়ার ঘাস সংগ্রহ করতাম, ঘোড়া মাঠে চরাতাম, পানি পান করানোর জন্য খেজুর আঁটি পিষতাম, পানি পান করাতাম, পানির বালতিতে দানা ভিজাতাম। তার সব কাজ আমি নিজেই আঞ্জাম দিতাম। আমি ভাল করে রুটি বানাতে জানতাম না, আনসারদের কিছু মেয়েরা আমাকে এ জন্য সাহায্য করত। তারা আমার প্রকৃত বান্ধবী ছিল। সে বলল, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর দান করা জুবায়েরের জমি থেকে মাথায় করে শস্য আনতাম, যা প্রায় এক মাইল দূরত্বে ছিল।” রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, যদি নারীরা পুরুষের অধিকার সম্পর্কে জানত, দুপুর কিংবা রাতের খাবারের সময় হলে, তাদের খানা না দেওয়া পর্যন্ত বিশ্রাম নিত না।”

বিয়ের পর মেয়েকে উদ্দেশ্য করে উম্মে আকেলার উপদেশ: আদরের মেয়ে, যেখানে তুমি বড় হয়েছ, যারা তোমার আপন জন ছিল, তাদের ছেড়ে একজন অপরিচিত লোকের কাছে যাচ্ছ, যার স্বভাব চরিত্র সম্পর্কে তুমি কিছু জান না। তুমি যদি তার দাসী হতে পার, সে তোমার দাস হবে। আর এসব বিষয়ের প্রতি খুব নজর রাখবে।

• ১- অল্পতে তুষ্টি থাকবে।

• ২– তার তার অনুসরণ করবে ও তার সাথে বিনয়ী থাকবে।

• ৩– তার চোখ ও নাকের আবেদন পূর্ণ করবে।

• ৪– তার অপছন্দ হালতে থাকবে না, তার অপ্রিয় গন্ধ শরীরে রাখবে না।

• ৫– তার ঘুম ও খাবারের প্রতি সজাগ দৃষ্টি রাখবে।

• ৬– মনে রাখবে, ক্ষুধার তাড়নায় গোস্বার উদ্রেক হয়, ঘুমের স্বল্পতার কারণে বিসন্নতার সৃষ্টি হয়।

• ৭– তার সম্পদ হেফাজত করবে, তার সন্তান ও বৃদ্ধ আত্মীয়দের সেবা করবে।

• ৮– মনে রাখবে, সব কিছুর মূল হচ্ছে সম্পদের সঠিক ব্যবহার, সন্তানদের সুষ্ঠু ব্যবস্থাপনা।

বিষয়: বিবিধ

১৪৬৮ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File