ব্যাডমিন্টন একটি আনন্দঘন ক্রীড়া
লিখেছেন লিখেছেন যুবক ছেলে ১৮ জানুয়ারি, ২০১৪, ১১:৩৯:২২ সকাল
১। ভূমিকাঃ
শীত আসলেই আমাদের দেশের শহরগুলিতে এবং বর্তমান সময়ে কিছু গ্রামাঞ্চলেও এই খেলা বেশ খেলতে দেখা যায়। বলার অপেক্ষা রাখেনা দিন দিন এই খেলা আমাদের দেশে জনপ্রিয় হচ্ছে। যেহেতু খেলাটি সবাই খেলে তাই এর সম্পর্কে সকলের সম্যক ধারণা থাকা দরকার। তাই পাঠকদের সমীপে এই আয়োজন।
২। পরিচয়ঃ
বলা হয়ে থাকে ব্যাডমিন্টন একটি র্যাকেট ক্রীড়া।ক্রীড়া বলতে কি বুঝায়? এই বিষয়টি বুঝার জন্য ব্যাডমিন্টন (Badminton) শব্দটির সাথে পরিচিত হবার আগে র্যাকেট (Racket) শব্দটির পরিচিতি ও তাৎপর্য বুঝে নেয়া দরকার। আমেরিকানদের ডিকশনারীনুযায়ী (Racket) র্যাকেট হচ্ছে একটি বিশেষ ধরনের ক্রীড়া যা হস্তচালিত তাল আকৃতি ফ্রেম বা র্যাকেটের সাহায্যে নির্দিষ্ট আয়তনের আয়তক্ষেত্রের মধ্যে খেলা হয়। প্রাচীন ব্রিটিশরা এই একই ধরনের খেলাকে (Racquet) শব্দটি দ্বারা প্রকাশ করত। ব্রিটিশদের ডিকশনারীনুযায়ী (Racket) র্যাকেট হচ্ছে বিশেষ ধরনের ব্যবসা যার মাধ্যমে কতিপয় লোক অবৈধ উপায়ে অর্থ উপার্জন করে। এখানে আমেরিকান ও ব্রিটিশদের ভাষায় একই শব্দের মধ্যে অর্থের তারতম্য থাকলেও আধুনিক ব্রিটিশরা কিন্তু জনপ্রিয় খেলাটিকে প্রকাশের জন্য (Racket) শব্দটিকেই বেছে নিয়েছে। বলছিলাম র্যাকেট একটি বিশেষ ধরনের ক্রীড়া পদ্ধতি যাতে হস্তচালিত তাল বা ডিম্বাকৃতি ফ্রেম দ্বারা খেলা হয়। এই ধরনের সকল খেলা র্যাকেট ক্রীড়ার অন্তর্ভূক্ত। যেমন ব্যাড মিন্টন, টেনিস, স্কুয়াস ইত্যাদি। ব্যাপারটি এ্যাথলেটিকসের সাথে তুলনা করা যায়, এ্যাথলেটিকস বলতে অনেক খেলার সমন্বয় বুঝায় যেমন দৌড়, বর্ষা নিক্ষেপ, গোলক নিক্ষেপ, সাঁতার ইত্যাদি আরো কত কি। এই সকল খেলা সম্মিলিতভাবে এ্যাথলেটিকসের অন্তর্ভূক্ত, তদ্রুপ ব্যাডমিন্টন, টেনিস, স্কুয়াস এ ধরনের সকল খেলা র্যাকেট ক্রীড়ার অন্তর্ভূক্ত। ব্যাডমিন্টন একটি বিশেষ ধরনের র্যাকেট ক্রীড়া যা নির্দিষ্ট আয়তনের আয়তক্ষেত্রের মধ্যে দুটি দল হস্তচালিত র্যাকেট সাহায্যে খেলে থাকে। এই খেলাতে গোলাকৃতি বলের পরিবর্তে পালক বা প্লাস্টিক নির্মিত হালকা সাটলকক ব্যবহার করা হয়।
৩। উৎপত্তি, ইতিহাস ও ক্রমবিকাশঃ
প্রায় ২০০০ বছর পূর্বে যীশু খ্রীষ্টের জন্ম সংলগ্ন সময়ে প্রাচীন গ্রীসে এক বিশেষ ধরণের খেলা প্রচলন ছিল, যাতে প্রচীন গ্রীকরা সাটলকক ব্যবহার করতো। বিশেষজ্ঞগণ মনে করেন এই খেলাটি পরবর্তী সময়ে পূর্ব দিকের দেশগুলির অধিবাসীগণ পছন্দ করেন ও খেলা শুরু করেন। কাল ক্রমে এই ক্রীড়া রীতিটি পূর্বদিকের ব্রিটিশ, ভারত, চীন ও থাইল্যান্ডে ছড়িয়ে পরে। ব্রিটিশদের মাঝে এই খেলাটি (Battledore and shuttlecock) ব্যাটলডোর এন্ড শাটলকক নামে পরিচিত ছিল। মধ্যযুগ (medieval) হতে ষোড়শ শতাব্দীর শেষ পর্যন্ত এই ক্রীড়াটি ব্রিটেনের গ্রামগুলিতে শিশুদের মাঝে বেশ জনপ্রিয় হয়ে ওঠে। সপ্তদশ শতাব্দীতে বিভিন্ন ইউরোপীয়ান দেশসমূহে ব্যাটলডোর এন্ড শাটলকক ক্রীড়াটি একটি উচ্চ শ্রেনীর আধুনিক খেলা হিসাবে পরিচিতি লাভ করে।
এদিকে ভারতের তামিলনারু প্রদেশে বিশেষ এক ক্রীড়ার উৎপত্তি হয়েছিল যার সাথে আধুনিক ব্যাডমিন্টনের অনেকাংশে সদৃশ্যন খুজে পাওয়া যায়। এই খেলাটি ১৮৫৬ সালের পূর্ববর্তী সময়ে তামিলনারুর অন্তর্গত তানজুর জেলার রাজকীয় পরিবারের সদস্যরা খেলতো। এই খেলাতে শাটলককের পরিবর্তে উলের তৈরী হলুদ রঙের একটি বল ব্যবহার করা হতো এবং তা হস্তচালিত র্যা কেটের সাহায্যে খেলা হতো। এই খেলাটি দক্ষিণ ভারতীয় তরুন ছাত্রদের মাঝে বেশ জনপ্রিয়তা পায় যা বর্তমানে বল ব্যাডমিন্টন নামে (Ball Badminton) পরিচিত ও বর্তমানে বেশ খেলা হয়।
জাপানে আধুনিক ব্যাডমিন্টনের সদৃশ একটি খেলার উৎপত্তি হয়েছিল যাকে (Hanetsuki) নামে ডাকা হতো। এই খেলাতেও কাঠের তৈরী চৌকোনাকৃতি হস্ত চালিত র্যাকেট দ্বারা খেলা হয়। এবং উজ্জল বর্ণের শাটলকক ব্যবহার হয়। জাপানের গৃহস্থলির নারীগণ নববর্ষের দিনে এই খেলা আনন্দের সাথে খেলে থাকেন।
দেখা যায় পৃথিবীর অধিকাংশ স্থানে আধুনিক ব্যাডমিন্টনের সদৃশ কিছু কিছু প্রাচীন ক্রীড়া পদ্ধতি বিভিন্ন নামে চালু ছিল। তবে আধুনিক ব্যাডমিন্টনের সূচনা হয়েছে খুব সম্ভবত অষ্টাদশ শতকের (১৭৫৭ – ১৭৮০) মাঝামাঝিতে ভারতবর্ষে, যখন ভারতবর্ষ ব্রিটিশ কলোনির অন্তর্ভূক্ত ছিল। এই সময়ে ভারতবর্ষের পুনা (Pune অথবা Poona) অঞ্চলে ব্রিটিশ সেনা অফিসারগণ ১৮৬০ সালে ব্যাডমিন্টনের এই আধুনিক রূপটি উদ্ভাবন করেন। ১৮৬৭ সালে এই খেলায় উভয় প্রতিপক্ষের মধ্যে নির্দিষ্ট উচ্চতার জাল স্থাপন পদ্ধতি চালু হয় এবং কিছু নিয়ম কানুনের নির্ধারণ হয়, ফলে এই খেলাটি একটি বিশেষ প্রতিযোগীতামূলক খেলায় রূপান্তর হয় যা তৎকালীন সময়ে ‘পুনা’ (Poona) নামে পরিচিত ছিল। ১৮৭৩ সালে প্রাচীন ইংলিশ ডিউকগন Gloucestershire তে অবস্থিত তাদের বিখ্যাত প্রাসাদ ব্যাডমিন্টন হাউসের (Badminton House) নামানুসারে পুনা নামের এই খেলাটির পূনঃ নামকরন করেন ব্যাডমিন্টন। খেলাটি নতুন নামকরনের পরে এর অধিক জনপ্রিয়তার কারনে ১৮৭৭ সালে ব্রিটেনের Bath অঙ্গরাজ্যের ব্যাডমিন্ট ক্লাবে (Bath Badminton Club) সর্বপ্রথম নিয়ম কানুনের লিখিতরূপ সংকলিত হয়। এর ১৬ বছর পর ব্রিটেনে ব্যাডমিন্টন ফেডারেশন গঠিত হয় যার তত্ত্বাবধানে ১৮৯৯ সালে সর্বপ্রথম জাতীয় ইংল্যান্ড ব্যাডমিন্টন চ্যাম্পিয়নশীপ অনুষ্ঠিত হয়।
১৯৩৪ সালে ব্রিটেনের Gloucestershire অঙ্গরাজ্যের Cheltenham শহরে আন্তর্জাতিক ব্যাডমিন্টন ফেডারেশন গঠিত হওয়ার পরে এই খেলাটি বিশ্বব্যাপি একক নিয়মের অধীনে জনপ্রিয়তা লাভ করে। ১৯৭২ সালে Munich এ অবস্থিত অলিম্পিক গেমসে ব্যাডমিন্টনকে প্রতিযোগীতামূলক খেলা হিসাবে উপস্থাপন করা হয়, এরপর ১৯৮৮ সালের অলিম্পিক গেমসে একই ভাবে প্রতিযোগীতামূলক খেলা হিসাবে ব্যাডমিন্টনকে বিশ্বব্যাপী প্রদর্শন বা পরিচয় করানো হয়, এবং ১৯৯২ সালে Barcelona তে অনুষ্ঠিত অলিম্পিকে ব্যাডমিন্টনকে প্রথমবারের মত পদক বিজয়ী প্রতিযোগীতামূলক ইভেন্ট/খেলা হিসাবে চুড়ান্তভাবে নির্ধারণ করা হয়। এভাবে ব্যাডমিন্টন এখন একটি আন্তর্জাতিক অলিম্পিক ইভেন্ট হিসাবে বিশ্বব্যাপী জনপ্রিয় খেলা।
৪। ব্যাডমিন্টনের আন্তর্জাতিক সংস্থাঃ
পৃথিবীতে ব্যাডমিন্টনের সবোর্চ্চ আন্তর্জাতিক সংস্থা হলো Badminton World Federation, BWF যা ২০০৬ সালের পূর্বে International Badminton Federation, IBF নামে পরিচিত ছিল। ১৯৩৪ সালে ব্রিটেনের Gloucestershire অঙ্গরাজ্যের Cheltenham শহরে (International Badminton Federation) আন্তর্জাতিক ব্যাডমিন্টন ফেডারেশন গঠিত হয়। ১ অক্টোবর ২০০৫ সালে এই আন্তর্জাতিক সংস্থাটির প্রধান কার্যালয় ব্রিটেন হতে কুয়ালালামপুর, মালয়েশিয়াতে স্থানান্তর করা হয়। ২৪ সেপটেম্বর ২০০৬ সালে স্পেনের মাদ্রিদে (Madrid of Spain) অনুষ্ঠিত সদস্য দেশগুলির অংশগ্রহণে এক সাধারণ সভায় এই সংস্থাটির নাম পরিবর্তন করে (Badminton World Federation, BWF) ব্যাডমিন্টন ওয়ার্ল্ড ফেডারেশন রাখা হয়। নিচে BWF লগো দেয়া হলো।
BWF আন্তর্জাতিকভাবে ব্যাডমিন্টনকে মানুষের নিক জনপ্রিয় করে তোলা, নীতি নির্ধারণ, আন্তর্জাতিক ম্যাচসমূহ আয়োজন ও পরিচালনা করে থাকেন। এখন পর্যন্ত এর সদস্য দেশের সংখ্যা ১৬৯, বাংলাদেশও এই আন্তর্জাতিক সংস্থার এক সদস্য।
৪। খেলার উপকরণঃ
৪.১। র্যাকেট/ব্যাড
ব্যাডমিন্টন খেলায় হস্তচালিত যে উপকরনটি প্রয়োজন হয় তার নাম র্যাকেট। অন্যান্য র্যাকেট ক্রীড়ার তুলনায় ব্যাডমিন্টনের র্যাকেটটি মাপে এবং ওজনে একটু ভিন্ন প্রকৃতির হয়। BWF কর্তৃক নির্ধারিত কিছু মাপ রয়েছে যা আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত এবং এই মাপ অনুযায়ী বিভিন্ন র্যাকেট তৈরীকারী প্রতিষ্ঠান বণিজ্যিকভাবে র্যাকেট উৎপাদন করে থাকে। যেহেতু খেলার সময় এটিকে এক হাত দ্বারা অতি দ্রুত চালনা করার প্রয়োজন হয় তাই র্যাকেট যত ওজনে হালকা হয় ততই সুবিধা।
আধুনিক র্যাকেটের মাথার কাঠামোটি ডিম্বাকৃতি বা তাল আকৃতি একটি কাঠামো, এটি এলুমিনিয়াম ধাতুর তৈরী বলে ওজনে বেশ হালকা হয়। এর শ্যাফটটি স্টীলের তৈরী যা একটি কাঠের হাতলের মধ্যে শক্তভাবে প্রবিষ্ট থাকে। কাঠের হাতলের উপরে নরম প্লাষ্টিকের গ্রীপ লাগানো থাকে বলে হাতে ধরতে ও চালাতে আরামদায়ক হয়। শ্যাফটটিকে মাথার ফ্রেমের সাথে অতিরিক্ত একটি ধাতব টুকরার মাধ্যমে জোড়া লাগানো হয়, উক্ত জোড়াকে throat/গলা বলা হয়। বর্তমান সময়ের বিভিন্ন আধুনিক র্যাকেটে এই জোড়াতে থাতব টুকরা থাকেনা। আধুনিক র্যাকেটের শ্যাফটটি বেশ নমণীয় কার্বন ফাইবারের তৈরী যা স্প্রীং এর মত চাপে আঁকা বাঁকা হয় ফলে শাটলকককে সজোরে পেটানোর ফলে হাত খুব বেশী ব্যাথা হয়না। Yonex 25 SP এরূপ র্যাকেটের উদাহরণ। র্যাকেটের মাথার ফ্রেমটি শক্ত String/সূতার জাল দ্বারা উচ্চ টানে বোনা থাকে এবং এই অংশের মাধ্যমেই শাটলকককে পেটাতে হয়। একটি আদর্শ র্যাকেটের ওজন ৭৫ থেকে ৯৫ গ্রামের মধ্যে হয়ে থাকে। BWF এর নীতি অনুযায়ী একটি র্যাকেটের দৈর্ঘ্য সর্বাধিক ৬৮ সেঃমিঃ চেয়ে বেশী হবেনা, এবং প্রস্থ ২৩ সেঃমিঃ চেয়ে বেশী হবেনা। জাল বোনা মাথার দৈর্ঘ্য সর্বাধিক ২৮ সেঃমিঃ চেয়ে বেশী হবেনা এবং জাল বোনা মাথার প্রস্থ সর্বাধিক ২২ সেঃমিঃ চেয়ে বেশী হবেনা। তবে বাস্তব ক্ষেত্রে আধুনিক র্যাকেটসমূহের মাপ সর্বোচ্চ মাপের তুলনায় কিছুটা ছোট হয় যেমন নিচের চিত্রে দেখানো হয়েছে।
৪.২। শাটলককঃ
শাটলকক ব্যাডমিন্টন খেলার দ্বিতীয় প্রধান উপকরণ। আমেরিকানরা একে (Bird অথবা Birdie) শব্দ দ্বারা উপস্থাপন করে থাকে। এটি এক প্রকার কোনক আকৃতির নিক্ষিপ্ত বস্তু যাকে র্যাকেটের সাহায্যে সজোড়ে পিটিয়ে প্রতিপক্ষের দিকে নিক্ষেপ করা হয়। শাটলকক দুই ধরণের বস্তু দ্বারা তৈরী করা হয় (১) রাজহাঁস অথবা অন্য কোন পাখির পালক দ্বারা (২) সিনথেটিক/নাইলনের পাতলা বস্তু দ্বারা। তবে যে পদার্থ দ্বারা তৈরী করা হোক না কেন তাদের উড়ার বৈশিষ্ট্য প্রায় একই রকম হয়।
শাটলককের কোন সংলগ্ন স্থানে একটি পাতলা কর্ক নির্মিত অর্ধগোলক আকৃতির বেজ বা ভিত্তি থাকে। উক্ত বেজকে ছিদ্র করে পালক সমূহকে ছিদ্রপথে প্রবেশ করিয়ে শক্ত আঠার সাহায্যে লাগানো হয়। একটি শাটলককের বেজের উপর অবশ্যই ১৬ টি নির্দিষ্ট সম আকৃতির পালক লাগানো থাকে। প্রতিটি পালকের দৈর্ঘ্য বেজের উপরিতল হতে পালকের মাথা পর্যন্ত ৬২ হতে ৭০ মিঃমিঃ এর মধ্যে হতে হয়। এর ছড়ানো প্রান্তটি বৃত্তাকার যার ব্যাস ৫৮ থেকে ৬৮ মিঃমিঃ এর মধ্যে হতে হয়। বেজের/ভিত্তির ব্যাস ২৫ থেকে ২৮ মিঃমিঃ এর মধ্যে হতে হয়। এর ওজন ৪.৭৪ হতে ৫.৫ গ্রামের মধ্যে হতে হয়। পালক নির্মত শাটল এবং নাইলন শাটলের আকৃতি সর্বদা একই রূপ হয়। আর এ সকল নিয়মাবলী BWF কর্তৃক নির্দেশিত।
পালকের তৈরী শাটলককের তুলনায় নাইলনের তৈরী শাটলকক বেশী টেকসই হয় বলে বর্তমানে নাইলনের তৈরী শাটলকক বশী জনপ্রিয় এবং এর দাম পালকের তৈরী শাটলককের তুলনায় অনেক বেশী। বর্তমানে আন্তর্জাতিক খেলাসমূহ নাইলনের তৈরী শাটলকক দ্বারা খেলা হয়।
৪.৩। পোষাকঃ
ব্যাডমিন্টন খেলাতে প্রচুর পরিমান মাতামাতি করার প্রয়োজন হয় ফলে শরীর খুব তাড়াতাড়ি উত্তপ্ত হয়ে প্রচুর ঘাম নির্গত হয় তাই যথা সম্ভব হালকা জার্সি, ট্রাওজার পরে খেলা উচিত। হাতের কনুইতে ও বাহুতে ব্যাথা হলে রবারের তৈরী বেল্ট হাতে লাগালে কিছুটা আরামদায়ক হতে পারে। পায়ে পাতলা ও নরম সুকতলা বিশিষ্ট কেডস ব্যবহার করলে তা আরামদায়ক হতে পারে।
৪.৪। মাঠ/কোর্ট
ব্যাডমিন্টনের মাঠ চার বাহু দ্বারা বেষ্টিত একটি আয়তক্ষেত্র, একে অনেকে কোর্ট বলে থাকেন, এর মেঝে কংক্রিট নির্মিত সমতল ভূমি অথবা সমতল মাটির মেঝে হতে পারে। একক ও দ্বৈত উভয় ক্ষেত্রে যার দৈর্ঘ্য ৪৪ ফুট। তবে মাঠের প্রস্থ খেলার প্রকৃতির উপর নির্ভর করে। একক খেলার জন্য প্রস্থ ১৭ ফুট এবং দ্বৈত খেলার জন্য প্রস্থ ২০ ফুট হয়ে থাকে। কোর্টের দৈর্ঘ্যের দুই প্রান্ত হতে ২ ফুট ৬ ইঞ্চি করে লং সার্ভিস লাইন কেটে নেয়া হয় ফলে উভয় পার্শ্বের লং সার্ভিস লাইনের মধ্যবর্তী স্থানে মোট ৩৯ ফুট ফাকা জায়গা অবশিষ্ট থাকে যাকে সমান তিন ভাগ করে দাগ কাটা হয় ফলে প্রতি ভাগে ১৩ ফুট করে তিনটি ঘর তৈরী হবে। এবার উভয় শর্ট সার্ভিস লাইনের মধ্যবর্তী স্থান ব্যাতিত দুই পাশের ঘরগুলিকে কোর্টের দৈর্ঘ্য বরাবর ঠিক মাঝখান দিয়ে দাগ কেটে দুই ভাগে ভাগ করতে হবে। বাস্ তৈরী হয়ে গেল দ্বৈত খেলার কোর্ট। এবার এই কোর্টের উভয় পার্শ্ব রেখার ১ ফুট ৬ ইঞ্চি অভ্যন্তরে দৈর্ঘ্য বরাবর আরো দুটি দাগ কেটে নিলে তৈরী হবে একক খেলার কোর্ট। নিচের চিত্রটি দেখুন।
একক ম্যাচের জন্য কোর্টের দৈর্ঘ্যের শেষ প্রান্তের লাইনটিকে লং সার্ভিস লাইন হিসাবে বিবেচনা করা হয়, চিত্রের মত। আবার দ্বৈত খেলার জন্য কোর্টের দৈর্ঘ্যের শেষ প্রান্ত লাইন হতে ২ ফুট ৬ ইঞ্চি ভিতরের লাইনকে লং সার্ভিস লাইন বিবেচনা করা হয়
৪.৫। জাল
ব্যাডমিন্টন জাল শক্ত সুতা দিয়ে বোনা এক প্রকার জাল, যার পূর্ন দৈর্ঘ্য ২০ ফুট হতে ২২ ফুটের মধ্যে হয়ে থাকে এবং প্রস্থ ২ ফুট ৬ ইঞ্চি হতে ৩ ফুটের মধ্যে হয়ে থাকে। এর প্রতিটি কুঠুরীর প্রসস্ততা ১.৫ সেঃমিঃ হতে ২ সেঃমিঃ এর মধ্যে হয়ে থাকে। জলের চার ধার ৭.৫ সেঃমিঃ প্রসস্ত কাপর অথবা সিনথেটিক পদার্থের টেপ দ্বারা শক্ত শেলাইয়ের মাধ্যমে আটকানো হয়। এই টেপের মধ্যে দিয়ে জালের দৈর্ঘ্য বরাবর একটি শক্ত দড়ি প্রবেশ করিয়ে নেট পোস্টের সাথে বাঁধা হয়। এই জালকে কোর্টের দৈর্ঘ্যের ঠিক মধ্য স্থানে দুই পাশে স্থাপিত দুটি নেট পোষ্টের সাথে কোর্টের দৈর্ঘ্যের আড়াআড়িতে বাধা হয়। নেট পোষ্টের সাথে জালকে বাধার সময় জালের সবোর্চ্চ উচ্চতা ৫ ফুট ১ ইঞ্চি হতে হবে।
৪.৬। বায়ু প্রবাহ বিহীন স্থানঃ
ব্যাডমিন্টন খেলার জন্য বায়ুপ্রবাহ বিহীন স্থান উপযুক্ত কারণ বায়ু প্রবাহ থাকলে তাতে শাটলককের উড়ার বৈশিষ্ট নিয়মতান্ত্রিক হয় না, বাতাসের ধাক্কায় শাটলককটি নির্দিষ্ট স্থনে না পৌছে দিক পরিবর্তন করে অন্য স্থানে চলে যায় ফলে খেলায় অসুবিধার সৃষ্টি হয়। এজন্য ইডোর ষ্টেডিয়াম হলো এই খেলার আদর্শ স্থান। তবে আউটডোরে খেললে উঁচু দেয়াল বা প্রতিবন্ধকের আড়ালে খেললে ভাল ফল পাওয়া যায়।
৪.৭। আলোক উৎসঃ
দিবালোকে খেললে কৃত্তিম আলাকের উৎসের প্রয়োজন নেই তবে রাত্রিকালীন ম্যাচ খেললে উভয় নেটপোষ্টের পাশে দুটি বৈদ্যূতিক আলোক উৎস লাগিয়ে আলোক সৃষ্টি করা যেতে পারে। ইনডোর ষ্টেডিয়ামে খেললে ষ্টেডিয়ামের বৈদ্যূতিক আলোক উৎস দ্বারা মাঠ আলোকিত করা হয়।
৪.৮। খেলোয়ারঃ
একক ম্যাচে প্রতি পক্ষে ১ জন করে সর্বমোট ২ জন খেলোয়ার অংশ গ্রহণ করে। দ্বৈত খেলায় প্রতি পক্ষে ২ জন করে সর্বমোট ৪ জন খেলোয়ার অংশগ্রহণ করে।
৫। খেলার কিছু নিয়ম কানুনঃ
খেলার শুরুতে ম্যাচ রেফারীর তত্ত্বাবধানে উভয় পক্ষের একজন করে খেলোয়ার টসে অংশগ্রহণ করেন। টসে বিজয়ী খেলোয়ার (১) সার্ভিস ও (২) কোর্টের সাইড এই দুটি অপশনের মধ্যে যে কোন একটি পছন্দের সুযোগ পান। সার্ভিস পছন্দ করলে সাইড পছন্দ করতে পারবেন না, আবার সাইড পছন্দ করলে প্রতিপক্ষকে প্রথমে সার্ভিস করার সুযোগ দিয়ে দিতে হবে।
এরপর সার্ভিসের মাধ্যমে খেলা শুরু হবে। যিনি সার্ভিস করেন তাকে সার্ভার বলা হয়। সার্ভার যে ঘরে থাকেন তার কোনাকুনি বিপরীত ঘরে সার্ভিস করতে হয় চিত্রের মত। যদি সার্ভিস সঠিক ঘরে গিয়ে না পড়ে তবে তা ভুল সার্ভিস বলে বিবেচিত এতে সার্ভার কোন পয়েন্ট পাবেন না।
সর্ভিস সঠিক হলে এবং সার্ভার দল শাটলককটি প্রতিপক্ষের মেঝেতে ফেলতে পারলে ১টি করে পয়েন্ট পাবে। আর নিজেরা পরাস্ত হলে একজন সার্ভার বাতিল হবে। এরপর দ্বিতীয় সার্ভার পরাস্ত হলে সার্ভিস প্রতিপক্ষের অনুকূলে চলে যাবে। প্রতিপক্ষ সার্ভিসের মাধ্যমে পয়েন্ট অর্জন করবে এবং যথারীতি পরাস্ত হবে। এভাবে যে পক্ষ আগে ১৫ পয়েন্ট অর্জন করতে পারবে তারাই উক্ত সেটে জয়ী বিবেচিত হবে এবং ১ টি সেট খেলা সম্পন্ন হবে। এরূপ কয়েকটি বেজোড় সংখ্যাক সেট খেলার গড়ের মাধ্যমে বিজয়ী দল নির্বাচিত হবে।
৬। উপকারিতাঃ
ব্যডমিন্টন একটি উচ্চ শারিরীক কসরতের খেলা। এই খেলার জন্য উচ্চ মানের শারিরীক ফিটনেস প্রয়োজন হয়। দিক বিদিক মাতামাতি ছুটাছুটি করার কারনে প্রচুর শারীরিক পরিশ্রম ও ব্যায়াম হয়, শরীরের মেদ কমাতে সাহায্য করে। নিয়মিত খেললে শারীরিক ফিটনেস বৃদ্ধি পায়। অলসতার কারনে যাদের শরীরে মেদ জমেছে কিংবা রক্তে গ্লুকোজ বেড়ে গিয়ে ডায়াবেটিসের লক্ষণ প্রকাশ পেয়েছে তারা নিয়মিত খেলে মেদ ও রক্তের গ্লুকোজ নিয়ন্ত্রনে রাখতে পারেন। বিষয়টি আপনার ডাক্তারের নিকট থেকে জেনে নিন।
৭। সতর্কতা
কোর্টের মেঝেটি অবশ্যই সমতল হতে হবে, উচু নিচু হলে তাতে আছার খেয়ে পা ভাঙ্গার সম্ভাবনা রয়েছে। যাদের রাত কানা রোগ অথবা চোখের সমস্যা আছে তারা দিবালোকে অথবা পর্যাপ্ত আলোতে খেলুন নতুবা উচ্চ গতিতে ছুটে আসা শাটলকক চোখে লেগে চোখে সমস্যা হতে পারে। পায়ে অবশ্যই কেডস ব্যবহার করুন। ঢিলা জোড়া ও ত্রুটিপূর্ণ র্যাকেট পরিহার করুন এটি অন্য খেলোয়ারদের আহত করতে পারে।
অনেক অপূর্ণতা ও সীমাদ্ধতা থাকতে পারে। অপূর্ণতা দূর করতে আপনারা মতামত পেশ করতে পারেন।
বিষয়: বিবিধ
১০৪৩০ বার পঠিত, ২ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন