‘ওয়ারিশ-বেওয়ারিশ’

লিখেছেন লিখেছেন অনীক ইসলাম জাকী সাংবাদিক ০৩ জুন, ২০১৩, ১১:৫৩:২৯ রাত

‘ওয়ারিশ-বেওয়ারিশ’

অনীক ইসলাম জাকী

রাস্তার পাশে ফেলা আবর্জনার স্তুপে নিজের আহার খুঁজছে কুকুর। কুকুরটি বেওয়ারশি নয়, কারণ তার গলায় একটি বেল্ট দেখা যাচ্ছে, যা ইঙ্গিত করে আমাদের মধ্য থেকে কেউ না কেউ এর মালিক। তার সামনে বসে আবর্জনা থেকে বাতিল কাগজ আর ভাঙ্গারি জিনিসপত্র বেছে নিজের বস্তায় ভরছেন একজন ছিন্নমূল। তারও উদ্দেশ্য প্রায় একই, এগুলো বিক্রি করে নিজের এবং পরিবারের আহারের ব্যবস্থা করা।



রমনা পার্কে ইঞ্জিনিয়ার্স ইন্সটিটিউটের সামনের রাস্তার দৃশ্য এটি। দুপুরে এ পথে চলাচলকারীদের কেউ কেউ এ দৃশ্য দেখে থমকে দাঁড়িয়েছেন। নাগরিক ব্যস্ততার কঠিন নিগড়ে নিত্য চিড়ে-চ্যাপ্টা হওয়া পথচারী আর গাড়ির আরোহী বাদ-বাকিরা পাশ কাটিয়ে বা নজর বাঁচিয়ে গেছেন অসহ্য এ দৃশ্যকে।

ভোজনরত কুকুর আর কাগজ কুড়ানো লোকটির একটু দূরে মাটিতে বসা শিশুটি বয়ষ্ক লোকটির মত চিন্তা-চেতনায় চালিত নয়। সে বরং কুকুরটির মতই নগদে নগদে তার ক্ষুধা নিবৃত্ত করার জন্য মানুষেরই ফেলে দেওয়া উচ্ছিষ্ট খাবার খেয়ে নিচ্ছে পরম তৃপ্তিতে। উপযুক্ত ভাগ পাওয়ার আশায় তাকে ঘিরে ধরেছে এই নগরীতে সিটি কর্পোরেশনের চেয়ে দায়িত্ব সচেতন হিসেবে পরিচিত প্রকৃতির ঝাড়ুদার রূপী কিছু কাক। উন্মুক্ত ওই ডাস্টবিনের আবর্জনায় কত হাজার-কোটি রোগ জীবাণু গিজগিজ করছে সে ব্যাপারে শিশুটির কোনো হুঁশ-হদিশ নেই, থাকার কথাও না। এতই মজা করে শিশুটি সে খাবার খাচ্ছে যে একটি ফ্রেমে দেখা যাচ্ছে তার দাঁতে মাংসও আটকে গেছে এবং তা সে ছাড়ানোর চেষ্টা করছে।

আমরা নিশ্চয়ই লক্ষ করেছি, শিশুটির গলায় কোনো বেল্ট বা বন্ধনী নেই। কারণ, মানুষের ‘ওয়ারিশ-বেওয়ারিশ’ পরিচয়ের জন্য সে ধরনের কোনো ব্যবস্থা অন্তত হাল আমলে প্রচলিত নেই। শিশুটির নিশ্চয়ই একটি নাম আছে। আমরা সেই নামটিও জানি না। তবে নগর জুড়ে ছড়িয়ে ছিটিয়ে ধাকা এ ধরনের হাজার হাজার শিশুকে এদের সামাজিক বা গোত্রগত নামে আমরা চিনি— টোকাই। দেশের গুণী কার্টুনিস্ট রণবী’র আদর করে দেওয়া এ নামকে ছাপিয়ে আরও একটি নামে এদেরকে পরিচয় করিয়ে দেওয়ার চেষ্টা হয়েছে একসময়। এ নামে ট্রাস্টও হয়েছে। মুখভরা সে নামটি হচ্ছে ‘পথকলি’।

তবে পথকলি ট্রাস্ট যিনি করেছিলেন এবং তার আগে পরে যারা বাংলাদেশ নামের এই ভূ-খণ্ডে যুগে যুগে দণ্ডমুণ্ডের কর্তা হয়েছেন, তারা কি আসলেও মনে-প্রাণে কিছু করেছেন তাদের জন্য? কিংবা অন্যসব ‘জন-দরদী সমাজ সেবকরা’?

এই ছবিগুলোতে অন্য অনেক গুরুতর প্রসঙ্গ ছাড়াও আরও কিছু বিষয় হয়তো নজর এড়িয়ে যাচ্ছে আপনার। বড় বিষয়গুলো নিয়ে কোনো আলোচনা বা পদক্ষেপে হয়তো আমরা অজ্ঞাত কারণে নিষ্পৃহ; তাই আসুন, ছোট বিষয়গুলোতে একটু নজর দেই।

১। এভাবে উন্মুক্ত স্থানে যখন তখন আবর্জনা ফেলা আমাদের নাগরিক দায়িত্ব কি না? এ ধরনের অনুমতি দিয়ে সন্মানিত নগরবাসীদের কোনো লাইসেন্স দেওয়া হয়েছে কি না?

২। সিটি কর্পোরেশন বা পরিবেশ অধিদফতরের সংশ্লিষ্ট বিভাগের নজরে এসব ‘দৃষ্টিনন্দন’ দৃশ্য কোনো আবেদন সৃষ্টি করে কি না? এসব দেখার জন্য নিয়োজিত সিটি কর্পোরেশনের বর্জ্য অপসারণ বিভাগের কর্মীরা বেতন-টেতন পান কি না?

৩।. এ ধরনের দৃশ্য পথ দিয়ে যাওয়া বিদেশিদের নজরে পড়লে তা আমাদের জন্য কতটা শোভন হতে পারে?

বিষয়: বিবিধ

১০৩৪ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File