এয়ারটেল ও বাংলালিংক এর জঘন্য নেটওয়ার্ক- জন দুর্ভোগ চরমে।

লিখেছেন লিখেছেন অনীক ইসলাম জাকী সাংবাদিক ০৩ জুন, ২০১৩, ১০:৩২:১৭ রাত

এয়ারটেল ও বাংলালিংক এর জঘন্য নেটওয়ার্ক-

জন দুর্ভোগ চরমে।

অনীক ইসলাম জাকী


আমি বিগত ২০০৭ সাল থেকে এয়ারটেল ও ২০০৫ থেকে বাংলালিংক মোবাইল সংযোগ ব্যবহার করি, ঢাকা মুগদাপাড়া তে। কিন্তু গত ১-২ বছর যাবত আমাদের এলাকায় এই দুই মোবাইল অপারেটারদের নেটওয়ার্ক উন্নয়ন হয় নাই, বরং আগেরচেয় সেবার মান অনেক নিম্ন হয়েছে।

বর্তমানে আমরা কেউ ঠিকমত এই দুই মোবাইল কোম্পানির সংযোগ ব্যবহার করতে পারছিনা।

আমরা মোবাইলের সিম পরিবর্তন করতেও পারছিনা কারন আমাদের অফিস ও আত্মীয়-স্বজন সবাই এই নাম্বারগুলো জানে।



বাংলালিংক ও এয়ারটেল কাস্টমার কেয়ারে হাজারবার বলেও কোন লাভ হয়নাই, তারা তোতা পাখির মত একই কথা বলে। ( স্যার ২৪ ঘণ্টার মধ্যে সমস্যা সমাধান করে দেওয়া হবে) ১ বছর ধরে অপেক্ষা করেও তাদের(বাংলালিংক ও এয়ারটেল) এর ২৪ ঘণ্টা শেষ হয় না। আসলে শেষ হবে কিভাবে?? **আমরা তো ৪৮ ঘণ্টার আল্টিমেটাম দেখে অভ্যস্ত।** হা হা হা।

**এবার আসা যাক দৈনিক বাংলা মোড়ে অবস্থিত এয়ারটেলের কাস্টমার কেয়ার এর কথায়, ০২-০৫-২০১৩ দুপুর-২:৪০ মিনিট। টোকেন নিয়ে বসলাম ৩০মিনিট এর কিছু বেশি সময় অপেক্ষা অতঃপর সমাধান... এই যে, আপনার মোবাইল সেটটি পরিবর্তন করেন সব ঠিক হয়ে যাবে, ভালো কথা। আর দেরি না করে বাইতুল ভিউ টাওয়ার থেকে স্যমসাং ব্রান্ড এর স্মার্ট ফোন কিনলাম। বাসায় আসতেই যেই লাউ সেই কদু। নেটওয়ার্ক এর ঝামেলা, কথা ECHO (প্রতিধ্বনি) হচ্ছে। পরদিন শুক্রবার তাই আর যাওয়া হয়নি।

৮ই মে সকাল ১১.৩৫ মিনিট।

দৈনিক বাংলা মোড়ে অবস্থিত এয়ারটেলের কাস্টমার কেয়ার বন্ধ। কোন কিছু লেখা নাই কেন বন্ধ। দৈনিক বাংলা মোড়ে অবস্থিত মেঘনা ভবন এর নীচ তলায় এয়ারটেলের আরও একটি কাস্টমার কেয়ার আছে, গেলাম সেখানে। যথারীতি টোকেন নিয়ে বসলাম ১৫ মিনিটের মাঝে ডাকল। জিজ্ঞেস করলাম দৈনিক বাংলা মোড়ে কাস্টমার কেয়ার বন্ধ কেন?? উত্তরে কাস্টমার কেয়ার প্রতিনিধি উত্তেজিত হয়ে বললেন, উনার ভাষায়—ভাই আর কইয়েন না, ৫ তারিখে (৫ই মে) বিকালে ছাত্রলীগের হাফ পেন্ট পরা পোলাপান সব লুইট্টা নিয়া গেছে... উনাকে আর বলার সুযোগ না দিয়ে বললাম থামেন ভাই... আমি এত কিছু জানতে চাই নাই, ৫ তারিখে কে কি করছে সেইটা সবাই জানে... উত্তরে তিনি বললেন ভাই জানলে হবে নাকি প্রমান থাকতে হইব না?? আমি বললাম আপনার কাছে কি প্রমান আছে যে তারা ছাত্রলীগের কর্মী?? উত্তরে বলেন- আমি নিজে সি সি ক্যামেরাতে দেখছি। আমি বললাম তো দেখছেন যখন আমারে একটা কপি দেন বাসায় নিয়া দেখি যারা হামলা করছে তাদের আই.ডি কার্ডে ছাত্রলীগ লেখা আছে নাকি ছাগুদের দল করছে। হা হা হা। উনি আর কথা বারালেন না। যাই হোক আপনার কি প্রবলেম বলেন , আমি আমার সব সমস্যা উনাকে বললাম, উনি গভীর আগ্রহ নিয়ে শুনলেন এবং ১ মিনিটে সমাধান দিলেন- হ্যান্ড সেট এ প্রবলেম ১০০% সিউর আমি। আমি বললাম যে ভাই দেখেন আমি ৭-৮ দিন হয় কিনছি সেট, উনি বললেন কি সেট দেখি, দিলাম সেট , ভিতরে নিয়ে গেলেন ৫ মিনিট পরে বিরক্তিকর মুখ নিয়ে এসে বললেন কি ভাই সেট তো নষ্ট অন হয়না, আমার তো হার্ট অ্যাটাক এর অবস্থা স্যামসাং গ্র্যান্ড কিনলাম এত টাকা দিয়ে ৭ দিনে সেট নষ্ট কি হবে এখন। কিন্তু কিছুই না, সে ৫ মিনিট চেষ্টা করে সেটের লক খুলতে ব্যর্থ হইছেন।

উনি শেষ পর্যন্ত আমার নাম্বার রাখলেন আর সেই তোতা পাখির কথা স্যার ২৪ ঘণ্টার মধ্যে সমস্যা সমাধান করে দেওয়া হবে।

সেই ৯ই মে থেকে প্রতিদিন একজন নারী/পুরুষ এয়ারটেলের কাস্টমার কেয়ার থেকে কল করে আর বলে স্যার সমস্যা সমাধান করার চেষ্টা চলছে একটু অপেক্ষা করুন, আমিও জি আফা জি আফা, জি ভাই জি ভাই বলি।

এইখানেই শেষ না, ২ জুন ২০১৩- দুপুর- ১২ টা, দৈনিক বাংলা মোড়ে মেঘনা ভবন এর নীচ তলায় এয়ারটেল কাস্টমার কেয়ারে গেলাম, গিয়ে দেখি ২ জন লোক খুব ক্ষিপ্ত হয়ে কথা বলছেন, কারন জিজ্ঞেস করতেই আমার সমস্যার মতন একই কথা বললেন, আমি বললাম আমিও একই সমস্যার জন্য এসেছি, উত্তরে ভদ্রলোক বললেন—ভাই এই কাস্টমার কেয়ারে তো সেবা দেয় না, এইখানে চলে রাজনৈতিক আলাপ ও আড্ডা, এরা এগুলা নিয়েই ব্যস্ত সেবা কিভাবে দিবে??

ভদ্রলোকের কথার সত্যতা যাচাই করতে কথা বলি জনাব শফিউল্লাহ’র সাথে তিনি তা অস্বীকার করেন, আমি দ্বিতীয় প্রশ্ন না করে সরাসরি আমার সমস্যায় চলে গেলাম, তিনি বললেন যে এই দায়িত্ব উনার না আর এটা কাস্টমার কেয়ারও না,(!!) আমি তখন আবার ভালো করে আশেপাশে দেখলাম যে আমি ভুল কোন অফিসে ঢুকে পরি নাই তো (!!) নাহ সব ঠিকই আছে, জানতে চাইলাম যে এইটা তাহলে কি??? উনি বললেন এটা ডিস্ট্রিবিউটর সেন্টার, আমি বললাম তাহলে ওইখানে ২ জন আফা কম্পিউটারে কি দেখে?? কোন বাংলা ছবি?? নাকি ফেসবুক?? উত্তর না দিয়ে উনি জানতে চান আমি কে?? আমি বললাম কাস্টমার, কি করি জানতে চাইলে বললাম সাংবাদিক, তখন তিনি বললেন ভিতরে আসেন কথা বলি, উনার চেম্বারে নিয়ে গেলেন, বললেন যে এইটা অর্ধেক ডিস্ট্রিবিউটর সেন্টার আর বাকিটা কাস্টমার কেয়ার।

আর কাস্টমার কেয়ারের দায়িত্বে আছেন জনাব নিজামুদ্দিন তিনি এখানে বসেন না, তিনি বসেন মতিঝিলের প্রিন্টারস বিল্ডিং এর ১৬ তলায়। নিজামুদ্দিন সাহেবের মোবাইলে ফোন করে আমার সমস্যা জানাই তিনি বলেন প্রায় একই কথা, নেটওয়ার্ক এর সমস্যা ঠিক করতে অনেক সময় লাগবে, কত সময় লাগবে নির্দিষ্ট ভাবে বলা কঠিন, যতদিন না নতুন টাওয়ার বসানো হবে ততদিন এমন করেই ব্যবহার করতে হবে।

এতক্ষন তো বললাম এয়ারটেলের কথা এইবার আসি বাংলালিংকের কথায়,

বাংলালিংক কাস্টমার কেয়ার বিষয়টি জানানোর পর কাস্টমার কেয়ার থেকে ফোন করে একই কথা জানানো হয়,

-- নেটওয়ার্ক এর সমস্যা ঠিক করতে অনেক সময় লাগবে, কত সময় লাগবে নির্দিষ্ট ভাবে বলা কঠিন, যতদিন না নতুন টাওয়ার বসানো হবে ততদিন এমন করেই ব্যবহার করতে হবে।

১/ বেপার টা খুবই দুঃখজনক, মাগরিবের আযান দিচ্ছে অজু করে নামায এ যাব, মসজিদ এর গেটের সামনে তখন মোবাইলে বেজে উঠল নাম্বার অপরিচিত +৮৮০২৪৬৪৩ ভাবলাম দেশের বাইরে থেকে কেউ, কিন্তু না, রিসিভ করা মাত্রই বেত্তমিজ দিল, বেত্তমিজ দিল মানে না, মানে না বলে গান ধরল, কি আর করা নামাযের পূর্ব মুহূর্তে গান শুনলাম আর নামায পরতে গেলাম।

২/ রাত ৩:৩৫ মিনিট পর পর ৩ টা এসএমএস , ঘুম ঘুম চোখে দেখি লেখা কৃষি সংবাদ জানতে ... ( আমার কথা হইল যারা কৃষক তাদের দে এসএমএস আমাদের কেন??)

এইরকম শত শত ঘটনা আছে বাংলালিংক আর এয়ারটেলের।

এখন এমন অবস্থা যে আমরা জরুরী কল পর্যন্ত করতে পারি না, আমার বাবা ব্রেন টিউমারের রুগী, প্রায়ই বাবা কে নিয়ে রাত বিরাতে স্কয়ার হসপিটালে যেতে হয়, আমি এমনও সময় পার করেছি যে হসপিটালে বাবা এটা কাউকে জানাতেও পারি নাই।

এখন কথা হচ্ছে, এই দুই অপারেটার প্রতি বছর গ্রাহকের কাছ থেকে বিপুল পরিমান অর্থ হাতিয়ে নিচ্ছে কিন্তু সেবার মান নিম্ন, এমন অবস্থায় চলা কিভাবে সম্ভব?? এদের বিরুদ্ধে সরকার কেন ব্যবস্থা নিচ্ছে না???

বিষয়: বিবিধ

১৫৮৪ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File