রমজান মাসে হাজারো সাংবাদিক বেকার! মুক্ত-স্বাধীন গণমাধ্যমে বিশ্বাসীদের কী কোন দায়িত্ব নেই?
লিখেছেন লিখেছেন প্রেস২৪ ১৮ জুলাই, ২০১৩, ১১:৫৩:০২ সকাল
সবাইকে মাহে রমজানের শুভেচ্ছা। এ মাস রহমত, বরকত এ মাগফিরাতের। আসুন, পবিত্র এ মাসের হক আদায়ে সবাই সচেষ্ট হই। ইহ ও পরকালীন কল্যাণে আত্মনিয়োগ করি। রোজাদারদের কষ্ট হয়- এমন কোনো কাজে জড়িত না হই। এ রমজান মাসে হাজারো সাংবাদিক বেকার। তাদের প্রতিষ্ঠানগুলো সরকার নির্দয়ভাবে বন্ধ করে দিয়েছে।রমজানে পরিবার পরিজন নিয়ে তাদের কষ্টকর জীবন যাপনের কথা ভেবে দায়িত্বশীলদের প্রতি প্রতিষ্ঠানগুলো খুলে দেয়ার সবিনয় অনুরোধ করছি।
সাগর-রুনিসহ বর্তমান সরকারের সময়ে ১৯ জন সাংবাদিককে হত্যা করা হয়েছে। অনেক সাংবাদিক হুমকির সম্মুখীন। দৈনিক আমার দেশ বন্ধ, দৈনিকটির সম্পাদককে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। দিগন্ত ও ইসলামিক টিভির সম্প্রচার বন্ধ। এ প্রতিষ্ঠনগুলোর অসংখ্য সাংবাদিক-কর্মচারী বেকার। রমজানে তাদের পরিবার-পরিজন নিয়ে কী যাতনাই না ভোগ করতে হবে।
গণমাধ্যমে অশনিসংকেত বিরাজ করছে। সংবাদপত্র সেবীরা কষ্টকর জীবন যাপন করছেন।
ওয়েজ বোর্ড আজো ঘোষিত হয়নি। অথচ দ্রব্যমূল্য আকাশ ছোঁয়া। এদিকে দৈনিক আমার দেশ বন্ধ, দিগন্ত টেলিভিশন, ইসলামিক টেলিভিশন ও চ্যানেল ওয়ানের সম্প্রচার বন্ধ করে দিয়ে হাজারো সাংবাদিক-কর্মচারীকে দুঃসহ যন্ত্রণার দিকে ঠেলে দেওয়া হয়েছে।
এসব প্রতিষ্ঠানে কর্মরত সাংবাদিক-কর্মচারীরা পরিবার-পরিজন নিয়ে অনিশ্চিত ভবিষ্যতের দিকে ধাবিত হচ্ছেন। গণমাধ্যমের উদ্ভূত সমস্যা অচিরেই সমাধান করে ওয়েজ বোর্ড ঘোষণা ও বন্ধ প্রতিষ্ঠানগুলো খুলে দেওয়া সময়ের দাবি। সাংবাদিকতা ঝুঁকিপূর্ণ পেশা হিসেবে প্রতিষ্ঠা পেতে যাচ্ছে! এর থেকে পরিত্রাণ সময়ের দাবি নয় কি?
সাংবাদিকদের মধ্যে সাংগঠনিক ঐক্য না থাকায় আমরা বঞ্চনার শেষ সীমায় পৌঁছে গেছি। যাকে বলে একেবারে খাদের কিনারে। দেয়ালে পিঠ ঠেকে গেলে সেখান থেকে উদ্ধারের পথ একটাই- আর সেটা হলো সর্বশক্তি নিয়োগ। সুপ্রিয় সুধী, আসুন- ঐক্যবদ্ধ সাংবাদিক ইউনিয়ন গঠনের মাধ্যমে বঞ্চনার অভিশাপ থেকে মুক্ত হয়ে সম্মিলিত শক্তি প্রয়োগের মিছিলকে এগিয়ে নিই।
অধিকার আদায়ের লড়াইকে শানিত করতে জেগে জেগে ঘুমানোর অবসান ঘটাতে হবে। অন্যথায় ফরহাদ খাঁ-রহিমা ও সাগর-রুনি দম্পতির মতো সাংবাদিক হত্যাকাণ্ডের মিছিল যে থামবে না। আর হায়েনার কবল থেকে ঝুঁকিপূর্ণ সাংবাদিকতা কাঙ্ক্ষিত মুক্তি পাবে না।
চলে গেলেন নির্ভীক সাংবাদিক নির্মল সেন। সাংবাদিক সমাজের প্রিয় নির্মল দা। 'স্বাভাবিক মৃত্যুর গ্যারান্টি চাই' শীর্ষক প্রতিবেদন খ্যাত দাদা শোকসাগরে ভাসিয়ে এমন জায়গায় গেলেন, যেখান থেকে আর ফিরে আসা যায় না। তিনি তার আদর্শ আমাদের মাঝে রেখে গেছেন। সে আদর্শ নির্ভীক ও সৎ সাংবাদিকতা। শত বাধা-হুমকির মুখেও সত্য প্রকাশে অবিচল থাকা। আর সব দল-মতের ঊর্ধ্বে ইউনিয়নকে রাখা। রাজনীতি যার যার, ইউনিয়ন সবার।
ঐক্য না থাকায় আজ আমাদের সার্বিক অবস্থা প্রশ্নবিদ্ধ। এখান থেকে বেরিয়ে আসার জন্য নির্মল দার আদর্শে বিশ্বাসীরা এগিয়ে আসবেন, বিবেকের প্রতিনিধিদের কাছে বিনীতভাবে সে প্রত্যাশা।
পেশাগত মর্যাদা বৃদ্ধি ও অধিকার আদায়ে ঐক্যের বিকল্প নেই। এ বাস্তব সত্য উপলব্ধি করতে নিশ্চয় কারো জজ-ব্যারিস্টার হওয়ার প্রয়োজন নেই। বিবেকের প্রতিনিধি হিসেবে সদা-সর্বদা অন্যের শুভাকাঙ্ক্ষী এবং দেশ ও জাতির সমৃদ্ধি কামনায় বিশ্বাসীরা আর কত নিজেদের স্বার্থ থেকে দূরে থাকবেন! সাংবাদিক সংগঠনগুলোর ঐক্যের জন্য বজ্রকণ্ঠে আওয়াজ তুলে আকাশ-বাতাস প্রকম্পিত করার সময় যে অনেকটা পেরিয়ে গেছে। আসুন, আর সময় নষ্ট না করে সব ভেদাভেদ ভুলে যার যার অবস্থান থেকে সময়ের অন্যতম দাবি ঐক্যবদ্ধ সাংবাদিক ইউনিয়নের যৌক্তিকতার পক্ষে অবস্থান নিই।
সাংবাদিকরা আজ চরম সংকটকাল অতিক্রম করছে। বেঘোরে প্রাণ দিচ্ছেন অনেকে। বর্তমান সরকারের সময়ে যে সংখ্যা ১৯ । ইতিমধ্যে দৈনিক আমার দেশ, দিগন্ত টিভি, ইসলামিক টিভি, চ্যানেল ওয়ানসহ অনেক গণমাধ্যম বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। ফলে বেকার হয়েছেন প্রায় ২০০০ সাংবাদিক-কর্মচারী। অন্যদিকে দৈনিক ইনিকলাবে ১২ মাস ও জনকণ্ঠে ১৫ মাসের বেতন বকেয়া।
যাদের পাশে দাঁড়ানো অতীব জরুরি মুক্ত-স্বাধীন গণমাধ্যমে বিশ্বাসীদের।
প্রিয় সহকর্মীবৃন্দ আসুন, প্রতিটি প্রতিটি সংবাদপত্র, সংবাদ সংস্থা ও ইলেকট্রনিক মিডিয়ায় আমরা ঐক্যবদ্ধ সাংবাদিক ইউনিয়নের অপরিহার্য প্রয়োজনীয়তা নিয়ে পরস্পর আলোচনা শুরু করি। সহকর্মীকে উদ্বুদ্ধ করি। নেতৃবৃন্দকে অনুরোধ করি। বিন্দু থেকে যেমন সিন্ধু হয়, তেমনি আমরাও একেক করে ঐক্যের বন্ধন রচনায় সেতুবন্ধ তৈরি করি। এভাবে শতভাগ আন্তরিকতা নিয়ে আন্দোলনটা চালিয়ে গেলে কাঙ্ক্ষিত সুফল একদিন মিলবেই।
লেখাটা লিখেছেন জাহাঙ্গীর আলম প্রধান, ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়নের নেতা
বিষয়: বিবিধ
১৩৭৪ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন